২২২৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২২২৫-[৩] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর কাছে দু’আ করার সময় এ কথা না বলে যে, হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমার প্রতি দয়া করো। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমাকে রিযক দান করো। বরং সে দৃঢ়তার সাথে দু’আ করবে (চাইবে)। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই প্রদান করেন। তাঁকে দিয়ে জোরপূর্বক কোন কিছু করাতে সক্ষম নয় বা তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই। (বুখারী)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلَا يقُلْ: اللهُمَّ اغفِرْ لي إِنْ شِئتَ ارْحمْني إِنْ شِئْتَ ارْزُقْنِي إِنْ شِئْتَ وَلِيَعْزِمْ مَسْأَلَتَهُ إِنَّه يفعلُ مَا يَشَاء وَلَا مكره لَهُ . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا دعا احدكم فلا يقل اللهم اغفر لي ان شىت ارحمني ان شىت ارزقني ان شىت وليعزم مسالته انه يفعل ما يشاء ولا مكره له رواه البخاري

ব্যাখ্যা: মাফাতীহ কিতাবের সম্মানিত লেখক বলেন, দু‘আ করে আবার সে দু‘আকে কবূল করার বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন করে রাখতে নিষেধ করার কারণ হলো এতে করে দু‘আ কবূলের ক্ষেত্রে বান্দার মনে সংশয় সৃষ্টি হয়। কেননা (إِنْ شِئتَ) ‘‘যদি তোমার ইচ্ছা থাকে’’ এরূপ কথা এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যে ব্যক্তির সে কথা বলার পূর্বে কোন ইখতিয়ার ছিল না। এখন এরূপ কথা বলাতে তার ওপর কাজটি অপরিহার্য হয়ে গেল। এতে তার ইচ্ছা থাকুক আর না থাকুক তাকে কাজটি করাই লাগবে। সুতরাং দু‘আকারীর এরূপ কথা বলাতে দু‘আ কবূল করতে আল্লাহকে বাধ্য করা হয়। আর এরূপ করা আল্লাহর শানে সম্পূর্ণ বেমানান। কারণ আল্লাহর ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এমন কেউ নেই। তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত করেন। সুতরাং আল্লাহর নিকট দু‘আ করলে আমাদের দৃঢ়তার সাথে দু‘আ করা উচিত।

ইমাম বাজী (রহঃ) বলেন, হাদীসটির অর্থ হলো আল্লাহর শানে তাকে ইচ্ছাধীন করে শব্দ ব্যবহার উচিত নয়, কেননা এ কথা সকলের কাছে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে, তিনি কাউকে ক্ষমা করলে নিজ ইচ্ছাই করেন এক্ষেত্রে কারো চাপের মুখে পড়ে কাউকে ক্ষমা করতে আল্লাহ বাধ্য হন না। এগুলো থেকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পূর্ণ পূতঃপবিত্র। কেননা, অত্র হাদীসের শেষেই বলা হয়েছে। (فإنه لا مكره له) অর্থাৎ- তাকে কেউ বাধ্যকারী নেই। এখানে نهى (নিষেধাজ্ঞা) টি হারামের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে কিনা অর্থাৎ- যদি কেউ এরূপ দু‘আ করে তাহলে কি তা হারাম হবে? এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে তবে অধিকাংশ ‘আলিমের মতামত হারাম হওয়ার দিকেই।

হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) ইমাম ইবুন ‘আবদিল বার (রহঃ)-এর বরাত দিয়ে বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্য এটা জায়িয নেই যে, সে এরূপ বলে, (اللهم أعطني إن شئت) অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে চাইলে কিছু দাও।

এটা ধর্মীয় বা পার্থিব যে কোন বিষয়ই হোক না কেন এরূপ দু‘আ বৈধ নয়। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা তো নিজের ইচ্ছাই সব করেন। অন্য কারো ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হওয়া থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত।

ইমাম ইবনু ‘আবদিল বার (রহঃ) হাদীসটির বাহ্যিক অর্থের প্রতি খেয়াল করে তিনি বলেছেন, অত্র হাদীসে ব্যবহৃত নিষেধাজ্ঞাটি হারাম সাব্যস্তের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

ইমাম নাবাবী (রহঃ) অত্র হাদীসে ব্যবহৃত নিষেধাজ্ঞাটিকে হারামের অর্থে গ্রহণ না করে للتنزيه তথা হারাম নয় তবে এর থেকে বেঁচে থাকা ভাল এ অর্থে গ্রহণ করেছেন। আর ইমাম নাবাবী (রহঃ)-এর কথাই বেশি সঠিক মনে হয়। কেননা ইসতিখারার সালাতে আমরা আল্লাহ তা‘আলাকে স্বাধীনতা দিয়েই দু‘আ করে থাকি যদি সেটা একেবারে হারামই হতো তাহলে দু’ হাদীসে দু’ রকম আসতো না। আল্লাহই ভালো জানেন।

‘আল্লামা দাঊদী (রহঃ) বলেন, দু‘আ করতে গিয়ে কেউ ‘ইনশা-আল্ল-হ’ বলার মতো যা বারাকাতের জন্য বলা হয় সেরূপ না করে বরং আল্লাহ তা‘আলার নিকট ঠিক সেরূপভাবেই চাইতে হবে যেমন একজন ফকীর দুঃস্থ ও অনাথ ব্যক্তি চেয়ে থাকে।

(اِرْحَمْنِىْ إِنْ شِئْتَ) অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে রহম করুন, ইচ্ছা করলে আমাকে রিযক দিন ইত্যাদি এগুলো সবই হলো পূর্বে উল্লেখিত নিষেধকৃত দু‘আর উদাহরণ।

(لِيَعْزِمْ) অর্থাৎ- কোন প্রকার সংশয় সংশ্রব ব্যতীত দৃঢ়তার সাথে দু‘আ কবুলের আশা নিয়ে দু‘আ করার প্রতি আদেশ করা হয়েছে। হাদীসে উল্লেখিত (مَسْأَلَتَه) মাস্আলাহ্ শব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দু‘আ। অবশ্য সহীহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদএর এক বর্ণনায় (مَسْأَلَتَه) মাস্আলাহ্ শব্দের পরিবর্তে সরাসির দু‘আ শব্দ এসেছে।

ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, এখানে যে عزم শব্দটি বলা হয়েছে তার বিশ্লেষণে আমরা বলি যে, যখন কোন মানুষ কোন কর্মে তার মনস্থির করে তখনই বলা হয় عزمت অর্থাৎ- তুমি কাজে দৃঢ়চেতা হয়েছ।

অপরদিকে عزم শব্দটির শাব্দিক অর্থও দৃঢ়, অকাট্য পাকাপোক্ত ও সন্দেহ দূরীভূতকরণ। সুতরাং মোটকথা হলো, দু‘আ করতে গিয়ে দৃঢ়চেতা হও সন্দেহের ভিতর থেকো না। কেননা দু‘আ কবূল হবে এরূপ দৃঢ় মনোবল নিয়ে সেই দু‘আ করতে পারে যার আল্লাহ সম্পর্কে ভাল ধারণা রয়েছে।

ইমাম দা‘ওয়াদীও একই মতামত ব্যক্ত করেছেন।

‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলবো হাদীসটি ইমাম ত্ববারানী (রহঃ) দু‘আ অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন।

হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেন, এমন সানাদে যার সকল রাবীই নির্ভরযোগ্য তবে বাকিয়্যাহ্ বিন ওয়ালীদ এর ‘আয়িশাহ্ থেকে আন্ আন্ সূত্রে বর্ণনাটি একটু বিতর্কিত হয়েছে। হাদীসটি হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা তার ঐসব বান্দাদের পছন্দ করেন যারা তাদের দু‘আতে পিড়াপীড়ি অর্থাৎ- নাছোড় বান্দা হয়ে দু‘আ করে। ইবনু ‘উয়াইনাহ্ (রহঃ) বলেন, কারো জন্য এটা উচিত হবে না যে, তিনি নিজের অসম্পূর্ণতার দরুন দু‘আ করা বন্ধ করে দিবেন। কেননা আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা সৃষ্টিকূলের নিকৃষ্ট ইবলীসের দু‘আও কবূল করেছেন। যখন সে বলেছিল,

رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ অর্থাৎ- ‘‘হে আমার রব! তুমি আমাকে কিয়ামাত পর্যন্ত হায়াত দান করো।’’ (সূরা আল হিজর ১৫ : ৩৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৯: দু‘আ (كتاب الدعوات)