২০০৩

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা

২০০৩-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সওম অবস্থায় ভুলে কিছু খেয়ে বা পান করে ফেলে, সে যেন সওম পূর্ণ করে। কেননা এ খাওয়ানো ও পান করানো আল্লাহর তরফ থেকেই হয়ে থাকে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ تَنْزِيْهِ الصَّوْمِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من نسي وَهُوَ صَائِم فأل أَوْ شَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وسقاه»

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من نسي وهو صاىم فال او شرب فليتم صومه فانما اطعمه الله وسقاه

ব্যাখ্যা: (فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ) ‘‘অতঃপর সে খেল অথবা পান করল’’ এ বাক্য থেকে বুঝা যায় যে, খাওয়া বা পান পরিমাণ কম বা বেশী যাই হোক না কেন তাতে সিয়াম ভঙ্গ হবে না।

(فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللّٰهُ وَسَقَاهُ) ‘‘আল্লাহ তাকে খাইয়েছে ও পান করিয়েছে।’’ অর্থাৎ- বান্দার এখানে কোন কর্তৃত্ব নেই। সিন্দী বলেনঃ এ বাক্য দ্বারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজকে বান্দার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন ভুলে যাওয়ার কারণে। ফলে তার এ কাজ সিয়াম ভঙ্গের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।

হাদীসের শিক্ষাঃ যে ব্যক্তি সিয়ামের কথা ভুলে গিয়ে কিছু খায় বা পান করে এতে তার সিয়াম ভঙ্গ হয় না। ফলে তার এ সিয়াম কাযা করতে হবে না। ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, আবূ হানীফাহ্, ইসহাক, আওযা‘ঈ, সাওরী, ‘আত্বা ও তাউস সহ জমহূর ‘উলামাগণের এ অভিমত। পক্ষান্তরে ইমাম মালিক ও তার শায়খ রবী‘আহ্-এর মত এই যে, তার সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং তাকে তা কাযা করতে হবে। এতে ফরয ও নফল সিয়ামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এদের দলীল এই যে, পানাহার থেকে বিরত থাকা সিয়ামের একটি রুকন। যখন এ রুকন হাতছাড়া হয়ে যাবে তখন সিয়ামও ভঙ্গ হয়ে যাবে তা যেভাবেই হোক না কেন।

কেউ যদি সিয়ামের কথা ভুলে গিয়ে রমাযানের দিনের বেলায় সহবাস করে তাহলে সিয়াম ভঙ্গ হবে কিনা এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।

১. সিয়াম ভঙ্গ হবে না- এ অভিমত পোষণ করেন ইমাম সাওরী, আবূ হানীফাহ্, শাফি‘ঈ, ইসহাক, হাসান বাসরী এবং মুজাহিদ। এদের দলীল আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত অত্র হাদীস। যদিও হাদীসটি ভুলে গিয়ে পানাহার সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও কারণ এই একটিই তা হল ভুলে যাওয়া। পানাহারের ক্ষেত্রে ভুলে যাওয়ার কারণে যেমন তা বান্দার কর্তৃত্বের বহির্ভূত তেমনিভাবে সহবাসের ক্ষেত্রেও তা বান্দার কর্তৃত্বের বহির্ভূত। অতএব উভয় ক্ষেত্রেই বিধান একই আর তা হল সিয়াম ভঙ্গ না হওয়া।

২. ইমাম ‘আত্বা, আওযা‘ঈ, মালিক ও লায়স ইবনু সা‘দ বলেনঃ তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। ফলে তা কাযা করতে হবে। তবে কোন কাফফারা দিতে হবে না।

৩. ইমাম আহমাদ বলেনঃ তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। ফলে তাকে তা কাযা করতে হবে এবং কাফফারাও দিতে হবে। এ মতের স্বপক্ষে তিনি দলীল হিসেবে বলেন যে, যে ব্যক্তি দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করেছিলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা অবহিত করলে তিনি এ কথা জিজ্ঞেস করেননি যে, সে কি ভুলে গিয়ে এ কাজ করেছে না ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে। যদি এ দুই অবস্থার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকত তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বিস্তারিতভাবে জানতে চাইতেন।

জমহূরের পক্ষ থেকে এর জওয়াব দেয়া হয়েছে যে, ইমাম আহমাদের অভিমত অনুযায়ী ভুলে পানাহারকারীর সিয়াম ভঙ্গ হয় না, কেননা এটি তার কোন অপরাধ নয়। অনুরূপ ভুলে সহবাসকারীও অপরাধী নয়। অতএব তার সিয়াম ভঙ্গ হবে না। ফলে তা কাযাও করতে হবে না এবং কাফফারাও দিতে হবে না। আর এ অভিমতটিই সঠিক। আল্লাহই ভাল জানেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم)