১৯৮৬

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সওম পর্বের বিক্ষিপ্ত মাস্আলাহ্

১৯৮৬-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওমে বিসাল (অর্থাৎ- একাধারে সওম রাখতে) নিষেধ করেছেন। তখন তাঁকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো একাধারে সওম রাখেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আমার মতো? আমি তো এভাবে রাত কাটাই যে, আমার রব আমাকে খাওয়ান ও পরিতৃপ্ত করেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ فِىْ مسَائِلٍ مُّتَفَرِّقَةٍ مِّنْ كِتَابِ الصَّوْمِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْوِصَالِ فِي الصَّوْمِ. فَقَالَ لَهُ رجل: إِنَّك تواصل يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: وَأَيُّكُمْ مِثْلِي إِنِّي أَبَيْتُ يُطْعِمُنِي رَبِّي ويسقيني

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الوصال في الصوم فقال له رجل انك تواصل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال وايكم مثلي اني ابيت يطعمني ربي ويسقيني

ব্যাখ্যা: (نَهٰى رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ عَنِ الْوِصَالِ فِى الصَّوْمِ) ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওমে বিসাল করতে নিষেধ করেছেন।’’ ইমাম ত্বহাবী বলেনঃ সওমে বিসাল ঐ সওমকে বলা হয়, কোন ব্যক্তি দিনের বেলায় সিয়াম পালন করার পর সূর্যাস্তের পরে ইফতার না করে পরবর্তী দিনের সিয়ামকে পূর্ববর্তী দিনের সিয়ামের সাথে মিলিয়ে দেয়া। সওমে বিসাল ও সওমে দাহর এর মাঝে পার্থক্য এই যে, যে ব্যক্তি রাত্রে ইফতার না করেই ধারাবাহিক একাধিক দিনে সিয়াম পালন করে তা হলো সওমে বিসাল। আর যে ব্যক্তি প্রতিদিনই সিয়াম পালন করে কিন্তু রাতে ইফতার করে তাহলো সওমে দাহর। হাদীস প্রমাণ করে যে, সওমে বিসাল হারাম। তবে সন্ধ্যার সময় ইফতার না করে সাহরীর সময় পর্যন্ত বিসাল করা বৈধ। কেননা বুখারী ও মুসলিমে আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সওমে বিসাল পালন করো না, তবে কেউ যদি বিসাল করতেই চায় সে যেন সাহরী পর্যন্ত বিসাল করে।

সওমে বিসালের হুকুম সম্পর্কে ‘উলামাগণ মতভেদ করেছেন।

১. সওমে বিসাল হারাম। এ অভিমত ইবনু হাযম এবং ইবনুল ‘আরাবী মালিকী (রহঃ)-এর। শাফি‘ঈদের বিশুদ্ধ মতানুসারেও তা হারাম।

২. তা মাকরূহ। এ অভিমত ইমাম মালিক, আহমাদ, আবূ হানীফাহ্ এবং তাদের অনুসারীদের।

৩. তা বৈধ। এ অভিমত কিছু সালাফ তথা পূর্ববর্তী ‘আলিমদের।

৪. যার পক্ষে তা কষ্টকর তার জন্য তা হারাম। আর যে ব্যক্তির জন্য তা কষ্টকর নয় তার জন্য বৈধ।

যারা তা বৈধ বলেন তাদের দলীলঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওমে বিসাল পালন করতে নিষেধ করার পর যখন সাহাবীগণ তা থেকে বিরত হল না তখন তিনি তাদের নিয়ে সওমে বিসাল করতে থাকেন। দু’দিন বিসাল করার পর শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে তিনি বললেন চাঁদ উদয় হতে বিলম্ব হলে আমি তোমাদেরকে আরো বিসাল করতাম। সওমে বিসাল যদি হারামই হতো তাহলে তিনি তাদের এ কাজে সম্মতি প্রকাশ করতেন না। অতএব বুঝা গেল যে, এ নিষেধ দ্বারা হারাম বুঝাননি, বরং এ নিষেধ ছিল উম্মাতের প্রতি দয়া স্বরূপ। অতএব যার জন্য তা কষ্টকর নয় এবং এর দ্বারা আহলে কিতাবদের সাথে একাত্বতা ঘোষণার উদ্দেশ্য না থাকে তার জন্য বিসাল করা হারাম নয়।

যারা তা হারাম বলেন তাদের দলীলঃ আবূ হুরায়রাহ্, আনাস, ইবনু ‘উমার  ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে নিষেধ সম্বলিত বর্ণিত হাদীসসমূহ যা ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। কেননা নিষেধ দ্বারা প্রকৃতপক্ষে হারামকেই বুঝায় তা নিষেধ করার পর সাহাবীদের নিয়ে বিসাল করা মূলত তাঁর পক্ষ থেকে এ কাজের স্বীকৃতি নয় বরং তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য এমনটি করেছিলেন এবং বলেছিলেন لست في ذلك مثلكم। এক্ষেত্রে আমি তোমাদের মতো নই। অতএব বিসাল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস। এক্ষেত্রে চতুর্থ অভিমতটিই সঠিক বলে মনে হয়। আল্লাহই ভাল জানেন।

(يُطْعِمُنِىْ رَبِّىْ وَيَسْقِيْنِىْ) ‘‘আমার রব আমাকে খাওয়ায় ও পান করায়’’ এর ব্যাখাতে ‘উলামাগণ মতভেদ করেছেন।

১. প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট হতে তার জন্য রমাযানের রাতে খাদ্য ও পানীয় নিয়ে আসা হত তার সম্মানার্থে। আর তিনি তা গ্রহণ করতেন অর্থাৎ- তিনি তা খাইতেন ও পান করতেন।

২. এটি রূপক অর্থে বলা হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য যে, আল্লাহ তা‘আলা পানাহারকারীর মতো শক্তি দান করেন যার ফলে সকল প্রকার কাজ করতে আমার মধ্যে কোন দুর্বলতা আসে না, আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ ক্লান্ত হয় না। অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য যে, আল্লাহ তা‘আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেহে পরিতৃপ্তি সৃষ্টি করেছেন যার ফলে পানা হারের প্রয়োজন হয় না এবং তিনি ক্ষুধা তৃষ্ণা অনুভব করেন না।

অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য মহান আল্লাহ আমাকে তাঁর মহত্ব তাঁর সান্নিধ্য তার প্রতি ভালবাসা তাঁর সাথে সর্বদা মুনাজাতে ব্যস্ত রাখেন যার ফলে পানাহারের প্রতি চিন্তা জাগে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৭: সওম (রোযা) (كتاب الصوم)