১৭৭২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেনঃ যাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। এটা শারী’আতের একটি শক্তিশালী বিষয়। যে ব্যক্তি যাকাতের ফারযিয়্যাতকে অমান্য করবে সে কাফির হয়ে যাবে। যাকাতের লাগবী অর্থ বৃদ্ধি, বারাকাত ও পবিত্র করা। যাকাত আদায় করলে মাল বৃদ্ধি পায় ও মাল পবিত্র হয়। আর যাকাত আদায়কারী গুনাহ থেকে পবিত্র হয়। আর যাকাতের শার’ঈ অর্থ হলো নিসাব পূর্ণ সম্পদে এক বৎসর অতিবাহিত হলে তা ফকীর, মিসকীন ও অন্যান্যদের মাঝে নির্ধারিত পন্থায় আদায় করা। অতঃপর যাকাতের রুকন, কারণ হিকমাত ও শর্ত রয়েছে। তা ফরয হওয়ার কারণ হলো মালের মালিক হওয়া। যাকাতের শর্ত হলো (মালের ক্ষেত্রে) নিসাব পরিমাণ হওয়া, বৎসর পূর্ণ হওয়া এবং (ব্যক্তির ক্ষেত্রে) বালেগ ও স্বাধীন হওয়া। হিকমাত হলো দুনিয়ার কর্তব্য পালন হওয়া এবং আখিরাতের সাওয়াব ও দরজা অর্জন হওয়া। আর গুনাহ হতে পবিত্র হওয়া এবং কৃপণতার দায় থেকে বাঁচা।

প্রকাশ থাকে যে, অধিকাংশ ’উলামাদের মতে যাকাত হিজরতের পর ফরয হয়। তারা দ্বিতীয় হিজরীতে ফরয হওয়ার মত ব্যক্ত করেন। কেউ কেউ বলেন, হিজরতের পূর্বে ফরয হয়েছে।


১৭৭২-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠাবার সময় বললেন, মু’আয! তুমি আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও খৃস্টান) নিকট যাচ্ছো। প্রথমতঃ তাদেরকে এ লক্ষ্যে দীনের প্রতি আহবান করবে, এক আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয় তাহলে তাদের সামনে এই ঘোষণা দেবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। তারা এটা মেনে নিলে তাদেরকে জানাবে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর যাকাত ফরয করেছেন। তাদের ধনীদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করে তাদের গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। যদি তারা এ হুকুমের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাহলে তুমি (তাদের) ভাল ভাল মাল গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে, মাযলূমের ফরিয়াদ হতে বাঁচার চেষ্টা করবে। কেননা মাযলূমের ফরিয়াদ আর আল্লাহ তা’আলার মধ্যে কোন আড়াল থাকে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ مُعَاذًا إِلَى الْيَمَنِ فَقَالَ: «إِنَّك تَأتي قوما من أهل الْكتاب. فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. فَإِنْ هُمْ أطاعوا لذَلِك. فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ. فَإِنْ هم أطاعوا لذَلِك فأعلمهم أَن الله قد فرض عَلَيْهِم صَدَقَة تُؤْخَذ من أغنيائهم فَترد فِي فُقَرَائِهِمْ. فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ. فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَين الله حجاب»

عن ابن عباس أن رسول الله صلى الله عليه وسلم بعث معاذا إلى اليمن فقال: «إنك تأتي قوما من أهل الكتاب. فادعهم إلى شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله. فإن هم أطاعوا لذلك. فأعلمهم أن الله قد فرض عليهم خمس صلوات في اليوم والليلة. فإن هم أطاعوا لذلك فأعلمهم أن الله قد فرض عليهم صدقة تؤخذ من أغنيائهم فترد في فقرائهم. فإن هم أطاعوا لذلك. فإياك وكرائم أموالهم واتق دعوة المظلوم فإنه ليس بينها وبين الله حجاب»

ব্যাখ্যা : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয ইবনু জাবালকে ইয়ামানে বিদায়ী হাজ্জের (হজ্জের/হজের) পূর্বে ১০ হিঃ প্রেরণ করেন। ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) তার ‘‘ইসতিয়াব’’ গ্রন্থে বলেছেন, তিনি মু‘আযকে ইয়ামানের জুনদ প্রদেশে ক্বাযীরূপে এ দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেন যে, তিনি মানুষদেরকে কুরআন, ইসলামের নিদর্শনাবলী শিক্ষা দিবেন এবং যাকাত আদায়কারীদের থেকে যাকাত গ্রহণ করবেন। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ ব্যক্তির মাঝে ইয়ামানের দায়িত্ব বণ্টন করে দেন। তারা হলেন খালিদ বিন সা‘ঈদকে ‘সান্আ’র, মুহাজির বিন আবী উমাইয়্যাহ্-কে ‘কিনদার’, যিয়াদ বিন লাবিদকে ‘হাযরা মাওত’-এর, মু‘আযকে ‘জুনদ’-এর আর আবূ মূসাকে ‘যুবায়দ’, যুম্‘আহ্ আদন ও সাহিল’-এর দায়িত্ব। ইবনু হাজার বলেন, জুনদ-এ অদ্যাবধি মু‘আয-এর একটি প্রসিদ্ধ মাসজিদ রয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আযকে মানুষদের সর্বপ্রথম শাহাদাতাইনের দিকে দা‘ওয়াত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ তা হলো দীনের মৌলিক বিষয় যা ব্যতীত দীনের অন্যান্য বিষয় শুদ্ধ হবে না।

অতএব যদি কারো ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, সে নাস্তিক তাহলে তাকে উভয়টির শাহাদাহ্ দিতে হবে। আর যদি আস্তিক হয় তাহলে তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতের শাহাদাহ্ দিয়ে উভয়টির মাঝে সমন্বয় করতে হবে। সেখানে আহলে কিতাবরা বসবাস করত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে প্রথমে তাওহীদের দিকে আহবান করতে বলেন। এটি গ্রহণ করলে তারপর দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে বলেন। অতঃপর তাদেরকে যাকাত ফারযের (ফরযের/ফরজের) কথা অবহিত করতে বলেন। আর যাকাত আদায়ের সময় যুলম করতে নিষেধ করেন। কারণ মাযলূমের দু‘আ তাড়াতাড়ি আল্লাহর কাছে কবূল হয়। যদিও সে পাপী হয়, কেননা তার  পাপ তার নিজের উপর বর্তাবে।

শাহাদাতায়নের ব্যতীত শারী‘আতের অন্যান্য বিধানগুলোর ক্ষেত্রে কাফিররাও সম্বন্ধিত কিনা এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। এ হাদীসের আলোকে কেউ কেউ বলেছেন, তারা অন্যান্য বিধানের ক্ষেত্রে সম্বন্ধিত নয়। কারণ এখানে প্রথমত তাদের শুধুমাত্র ঈমানের দিকে দাওয়াতের নির্দেশ এসেছে। অতপর ঈমান গ্রহণ করলে অন্যান্য বিধানের দিকে দা‘ওয়াতের নির্দেশ এসেছে। তবে অধিকাংশদের মতে, তারা বিশ্বাস স্থাপন এবং কার্যে প্রতিফলন উভয় দিক থেকে শরীয়াতের বিভিন্ন বিধানের ক্ষেত্রে সম্বন্ধিত। হাদীসে বলা হয়েছে, ধনীদের থেকে যাকাতের মাল গ্রহণ করে তা তাদের দরিদ্রের মাঝে বিতরণ করবে ‘‘এ উক্তির আলোকে উলামাগণ মতবিরোধ করেছেন যে, এক এলাকার যাকাতের সম্পদ অন্য এলাকায়/দেশে স্থানান্তর করা যাবে কি না? এ হাদীসের আলোকে কেউ কেউ বলেছেন, স্থানান্তর করা যাবে না। যেহেতু হাদীসে ইয়ামানবাসীদের উদ্দেশে এটি বলা হয়েছে যে, তাদের যারা ধনী তাদের থেকে নিয়ে সে এলাকার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করবে। আবূ হানীফা, ইমাম বুখারীসহ আরো অনেকের মতে স্থানান্তর করা যাবে। ইমাম মালেক, শাফেয়ী এবং আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর মতে তা স্থানান্তর করা যাবে না। তবে যদি সে এলাকা যাকাত গ্রহণ করার মত কেউ না থাকে। কিংবা স্থানান্তর করাতে অধিক কল্যাণ নিহিত থাকে তাহলে করা যাবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة)