১৬৩৪

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাইয়্যিতের গোসল ও কাফন

’মৃত্যুর গোসল ও কাফন দান’ তথা তার হুকুম আহকাম ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা। জ্ঞাতব্য যে মৃত ব্যক্তি গোসলের হুকুম সম্পর্কে মতানৈক্য রয়েছে।

জমহূরদের মতে মৃত ব্যক্তিকে গোসলদান করা ফারযে কিফায়াহ্ জীবিতদের ওপর। আর এ ব্যাপারে মালিকীদের মাঝে মতভেদ রয়েছে তাদের কেউ বলেছে ওয়াজিব। জমহূরদের মতে আবার কেউ বলেছে সুন্নাতে কিফায়াহ্। এরূপ মতভেদ ইবনু রুশদ বিদায়াতে ও হাফিয ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন।

ওয়াজিব এর স্বপক্ষে দলীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম মৃত্যু ব্যক্তির ব্যাপারে বলেছেন(اغسلوه) তাকে গোসল দান করা আর আগত উম্মু ’আত্বিয়্যার হাদীস (اغسلنها) তোমরা তাকে গোসল করাবে।

আমি (ভাষ্যকার) বলি, মৃতদের গোসলের বিষয়টি এই শারী’আতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় এমনটি শোনা যায়নি যে, শাহীদ ব্যতিরেকে কেউ মৃত্যুবরণ করেছে আর তার গোসল করা হয়নি। বরং এই শারী’আতে মৃত্যুদের গোসল আমাদের পিতা আদম (আঃ) হতে প্রমাণিত।

মুসতাদরাক হাকিম-এর বর্ণনায় উবাই ইবনে কা’ব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যখন আদম (আঃ) মারা গেলেন তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) বেজোড়ভাবে গোসল করালেন পানি দ্বারা এবং তার জন্য লাহদ কবরের ব্যবস্থা করলেন এবং মালায়িকাহ্ বললেন, এটা আদম সন্তানদের সুন্নাহ।

আর মতানৈক্য রয়েছে মৃত ব্যক্তির গোসল কি ’ইবাদাত না শুধুমাত্র ময়লা হতে পরিষ্কার। প্রসিদ্ধ মত জমহূরের নিকট গোসল হল এটা ’ইবাদাত। এতে শর্তারোপ করা হয় যা শর্ত করা ওয়াজিব ও মানদুব গোসলে।


১৬৩৪-[১] উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (যায়নাবকে) গোসল করাচ্ছিলাম। এ সময় তিনি আমাদের কাছে এলেন। তিনি বললেন, তোমরা তিনবার, পাঁচবার, প্রয়োজন বোধ করলে এর চেয়ে বেশী বার; পানি ও বরই পাতা দিয়ে তাকে গোসল দাও। আর শেষ বার দিকে ’কাফূর’। অথবা বলেছেন, কাফূরের কিছু অংশ পানিতে ঢেলে দিবে, গোসল করাবার পর আমাকে খবর দিবে। তাঁকে গোসল করাবার পর আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খবর দিলাম। তিনি এসে তহবন্দ বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, এ তহবন্দটি তাঁর শরীরের সাথে লাগিয়ে দাও। আর এক বর্ণনার ভাষা হলো, তাকে বেজোড় তিন অথবা পাঁচ অথবা সাতবার (পানি ঢেলে) গোসল দাও। আর গোসল ডানদিক থেকে উযূর জায়গাগুলো দিয়ে শুরু করবে। তিনি (উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্) বলেন, আমরা তার চুলকে তিনটি বেনী বানিয়ে পেছনের দিকে ছেড়ে দিলাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ غُسْلِ الْمَيِّتِ وَتَكْفِيْنِه

عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نُغَسِّلُ ابْنَتَهُ فَقَالَ: اغْسِلْنَهَا ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكِ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذَلِكَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَاجْعَلْنَ فِي الْآخِرَةِ كَافُورًا أَوْ شَيْئًا مِنْ كَافُورٍ فَإِذَا فَرَغْتُنَّ فَآذِنَّنِي فَلَمَّا فَرَغْنَا آذناه فَألْقى إِلَيْنَا حقوه وَقَالَ: «أَشْعِرْنَهَا إِيَّاهُ» وَفِي رِوَايَةٍ: اغْسِلْنَهَا وِتْرًا: ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا وَابْدَأْنَ بِمَيَامِنِهَا وَمَوَاضِعِ الْوُضُوءِ مِنْهَا . وَقَالَتْ فَضَفَّرْنَا شَعَرَهَا ثَلَاثَةَ قُرُونٍ فألقيناها خلفهَا

عن ام عطية قالت دخل علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم ونحن نغسل ابنته فقال اغسلنها ثلاثا او خمسا او اكثر من ذلك ان رايتن ذلك بماء وسدر واجعلن في الاخرة كافورا او شيىا من كافور فاذا فرغتن فاذنني فلما فرغنا اذناه فالقى الينا حقوه وقال اشعرنها اياه وفي رواية اغسلنها وترا ثلاثا او خمسا او سبعا وابدان بميامنها ومواضع الوضوء منها وقالت فضفرنا شعرها ثلاثة قرون فالقيناها خلفها

ব্যাখ্যা: (دَخَلَ عَلَيْنَا) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মহিলা দলে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় তাঁর কন্যাদের গোসল দিচ্ছিলাম। আর প্রসিদ্ধ হল তার মেয়ে যায়নাব যিনি আবিল ‘আস বিন রবী‘আহ্-এর স্ত্রী ও উমামাহ্-এর মা। যেমন মুসলিমের বর্ণনা উম্মু ‘আত্বিয়াহ্ বলেন, যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেয়ে যায়নাব মারা গেলেন (اغْسِلْنَهَا) তাকে গোসল দান ইবনু বাযীযাহ্ প্রমাণ করেন এতে যে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ওয়াজিব। তবে ইবনু দাকীক বলেন, তিনবার ধৌত করা প্রসিদ্ধ মতে ওয়াজিব না। ‘উলামাদের মতে, তিন বার পাঁচবার ধৌত করা। নাসায়ীর বর্ণনা, (اغْسِلْنَهَا وِتْرًا: ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا) গোসল দান কর বেজোড়ভাবে তিনবার অথবা পাঁচ বার। ইমাম নাবাবী বলেন, গোসল দান কর তাকে বেজোড়ভাবে আর তা যেন তিনবার হয়, এরপরেও যদিও প্রয়োজন হয় তাহলে পাঁচবার। মোদ্দাকথা হল, বেজোড় উদ্দেশ্য আর তিনবার করা মুস্তাহাব। আর যদি তিনবার দিয়ে পরিষ্কার হয় তাহলে অতিরিক্ত করা শারী‘আত অনুমোদন করেননি। আর অতিরিক্ত যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তা যেন বেজোড় হয়।

ইবনে ‘আরাবী বলেন, অথবা পাঁচবার এতে ইঙ্গিত বহন করে শারী‘আত সম্মত হল বেজোড়। কেননা বলা হয়েছে তিন হতে পাঁচ আর চার হতে বিরত থাকা হয়েছে।

(أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذلِكِ) ‘‘এটা অপেক্ষা অধিকবার’’ হাদীস প্রমাণ করে মৃত ব্যক্তিকে গোসলের ব্যাপারে কোন সীমানা নির্ধারণ নেই বরং উদ্দেশ্য পরিষ্কারকরণ তবে অবশ্যই বেজোড়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

বরই দ্বারা বরই পাতা উদ্দেশ্য আর হিকমাহ্ হল বরই পাতা ময়লাকে সমূলে উৎপাটিত করে এবং চামড়াকে পরিচ্ছন্ন করে।

কুরতুবী বলেন, বরই পাতা পানিতে মিশাবে তা যেন ফুটন্ত পর্যন্ত থাকে এবং তা দ্বারা শরীর ঘষবে অতঃপর তার উপর বিশুদ্ধ পানি ঢালবে। এটা প্রথম গোসল বা ধৌত। কারও মতে বরই পাতা পানিতে নিক্ষেপ করবে যাতে পানির সাথে না মিশে যাতে পানির সাধারণ রং পরিবর্তন হয় (আহমাদ বিন হাম্মাল এমনটি অপছন্দ করেছেন)।

কারও মতে প্রথমবার শুধুমাত্র পানি দ্বারা গোসল এবং দ্বিতীয়বার পানি ও বরইপাতাসহ কেননা প্রথম ধৌত ফরয আর তা যেন শুধুমাত্র পানি দ্বারা হয় এর পরে না হয় তা হয় পরিষ্কার করা উদ্দেশ্য সুতরাং অতিরিক্ত যা মিশানো হয় তা ক্ষতি না।

কারও মতেঃ প্রথমবার পানি ও বরই পাতা সহকারে অতঃপর শুধুমাত্র পানি। তবে আমাদের নিকট অধিকতর গ্রহণযোগ্য হল প্রত্যেক বারই পানি ও বরই পাতা সহকারে ধৌত করবে আর পানি যেন বরই পাতাকে নিয়ে ফুটন্ত হয়। কেননা আবূ দাঊদে গৃহীত সানাদে ইবনে সিরীন তিনি উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ হতে বর্ণনা করেন গোসলের বিষয়টি প্রথম দু’বার বরই পাতা সহকারে গোসল দান করবে।

তৃতীয়বার পানি ও কাফুর দিয়ে। শেষবার কাফুর মিশানোর হিকমাহ্ হল কেননা কাফূর স্থানে সুগন্ধি ছড়ায় বিশেষ করে মালায়িকার মধ্যে থেকে যারা যেখানে উপস্থিত থাকে আরও অন্যন্য যারা থাকে তাদের জন্য। তাছাড়া এটা ঠান্ডা ও শুষ্ক রাখতে বাস্তবায়নকারী বিশেষ করে লাশকে মজবুত রাখে এবং বিষাক্ত কীটকে দূরীভূত করে রাখে আর লাশকে দ্রুত নষ্ট হওয়া হতে বাধা দান করে আর এ ব্যাপারে শক্তিশালী সুগন্ধ।

(فَألْقى إِلَيْنَا حقوه) অতঃপর তিনি তার লুঙ্গি ছুঁড়ে দিলেন। হাদীসে পুরুষের কাপড় দিয়ে মহিলাদের কাফন দেয়া বৈধতা প্রমাণ করে। আর ইবনু বাত্তাল বর্ণনা করেছেন এ ব্যাপারে সবাই ঐকমত্য।

(اغْسِلْنَهَا وِتْرًا: ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا) অন্য রিওয়ায়াতে রয়েছে গোসলদান করবে তিনবার অথবা পাঁচবার অথবা সাতবার। হাদীসে দৃশ্যত সাতের অধিকবার করা বৈধ না, কেননা পবিত্রতার গণনার সবশেষ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে তবে বুখারী ও মুসলিমের এবং অন্যান্য বর্ণনায় প্রয়োজনে অতিরিক্ত ধৌতের ব্যাপারে অনুমোদন রয়েছে।

আয়নী বলেন, মৃত ব্যক্তির উযূ (ওযু/ওজু/অজু) সুন্নাহ যেমন জীবিত অবস্থায় গোসলে, তবে কুলি ও নাকে পানি দেয়া ব্যতিরেকে। কেননা তা কঠিন নাক ও মুখ হতে পানি বের করা। ইবনু কুদামাহ্ মুগনীতে বলেনঃ তাকে (মৃত ব্যক্তিকে) উযূ করানো সালাতের উযূর মতো দু’ হাতের তালু ধৌত করাবে, অতঃপর খসখসে কাপড়ের টুকরো নিবে তা ভিজাবে এবং তা আঙ্গুলে নিয়ে দাঁত ও নাক মাসাহ করবে যাতে তা পরিষ্কার হয় তবে খুব নরমভাবে করবে, অতঃপর তার চেহারা ধৌত করাবে এবং উযূ সম্পূর্ণ করাবে। আর তিনি বলেন, মুখে ও নাকের ছিদ্রতে পানি ঢুকাবে না অধিকাংশ আহলে ‘ইলমের মতে।

আর শাফি‘ঈ বলেন, কুলি ও নাকে পানি দিবে জীবিত ব্যক্তির মতো।

(فَضَفَّرْنَا شَعَرَهَا ثَلَاثَةَ قُرُونٍ) আমরা তার চুলকে তিনটি বেনীতে ভাগ করলাম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, মাথার অগ্রভাগের চুলকে একটি বেনীতে আর মাথার দু’ পাশে চুলকে দু’ বেনীতে করেছি। অপর এক বর্ননায় এসেছে, আমরা তা চুলকে চিরুণি দিয়ে অাঁচড়ালাম, অতঃপর তিনটি বেনীতে ভাগ করলাম। ইমাম শাফি‘ঈ এতে দলীল গ্রহণ করেছেন এবং তার সাথে যারা ঐকমত্য হয়েছেন যে, মৃত মহিলার চুলকে সুবিন্যস্ত করা এবং তিনটি ভাগে বেনী করা এবং পিছনদিকে ছড়িয়ে দেয়া। আর আয়নী বলেন যে, দু’টি বেনী করে বুকের উপর দিয়ে জামার উপর ছড়াবে। আবার কেউ বলেন, চুল ওড়নার নীচে দু’ জনের মাঝ দিয়ে দু’পাশে সকল চুল ছড়াবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز)