১৫৩২

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব

১৫৩২-[১০] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে(مُعَوِّذَاتِ) ’’মু’আব্বিযা-ত’’ অর্থাৎ সূরাহ্ আন্ নাস ও সূরাহ্ আল ফালাক্ব পড়ে নিজের শরীরের উপর ফুঁ দিতেন এবং নিজের হাত দিয়ে শরীর মুছে ফেলতেন। তিনি মৃত্যুজনিত রোগে আক্রান্ত হলে আমি মু্বিব্বিযাত পড়ে তাঁর শরীরে ফুঁ দিতাম, যেসব মু’আব্বিযাত পড়ে তিনি নিজে ফুঁ দিতেন। তবে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত দিয়েই তাঁর শরীর মুছে দিতাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, তাঁর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি ’’মু’আব্বিযাত’’ পড়ে তার গায়ে ফুঁ দিতেন।

بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اشْتَكَى نَفَثَ عَلَى نَفْسِهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ وَمَسَحَ عَنْهُ بِيَدِهِ فَلَمَّا اشْتَكَى وَجَعَهُ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ كُنْتُ أَنْفِثُ عَلَيْهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ الَّتِي كَانَ يَنْفِثُ وَأَمْسَحُ بِيَدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَتْ: كَانَ إِذَا مَرِضَ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ نَفَثَ عَلَيْهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ

وعن عائشة رضي الله عنها قالت: كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا اشتكى نفث على نفسه بالمعوذات ومسح عنه بيده فلما اشتكى وجعه الذي توفي فيه كنت أنفث عليه بالمعوذات التي كان ينفث وأمسح بيد النبي صلى الله عليه وسلم وفي رواية لمسلم قالت: كان إذا مرض أحد من أهل بيته نفث عليه بالمعوذات

ব্যাখ্যা: (مُعَوِّذَاتِ) ‘‘মু‘আব্বিযা-ত’’ দ্বারা উদ্দেশ্য সূরাহ্ নাস, ফালাক্ব ও ইখলাস অথবা শুধুমাত্র সূরাহ্ নাস ও ফালাক্ব। আবার কারও মতে কুরআনের প্রত্যেক ঐ আয়াত আশ্রয় হিসেবে এসেছে যেমন আল্লাহর বাণীঃ

وَقُلْ رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ ۝ وَأَعُوْذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُوْنِ

‘‘বলুন, হে আমার পালনকর্তা! আমি শায়ত্বনের (শয়তানের) প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।’’ (সূরাহ্ আল মু’মিনূন ২৩ : ৯৭-৯৮)

(مَسَحَ عَنْهُ بِيَدِه) নিজের হাত দ্বারা শরীর মুছতেন। বুখারীতে অন্য হাদীসে মাসাহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে এসেছে, ‘‘মা‘মার বলেন, আমি ইবনু শিহাবকে জিজ্ঞেস করি তিনি কিভাবে ফুঁ দিতেন, জবাবে বললেন তার দু’হাতে ফুঁ দিতেন, অতঃপর তা দ্বারা নিজের চেহারা মুছতেন।’’

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় আসতেন সূরাহ্ ইখলাস নাস ও ফালাক্ব পড়ার মাধ্যমে হাতের দু’তালুতে ফুঁ দিতেন, অতঃপর তা দ্বারা তাঁর চেহারা আর তাঁর দু’হাত শরীরে যতদূর পর্যন্ত পৌঁছত মুছতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, যখন ব্যথা অনুভব করতেন আমাকে বলতেন অনুরূপ যেন করি।

হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর কালাম দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা ও ফুঁ দেয়া সুন্নাহ। নাবাবী বলেন, ঝাড়ফুঁকের সময় ফুঁ দেয়া মুস্তাহাব। এরূপ বৈধতার ব্যপারে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন আর এমনটি মুস্তাহাব মনে করেছেন সাহাবীরা, তাবি‘ঈরা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম।

হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ ‘উলামারা ঝাড়ফুঁক বৈধ বলেছেন তিনটি শর্তের উপর

১। ঝাড়ফুঁকের শব্দ হবে আল্লাহর কালাম বা তার নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে আরবী ভাষায়

২। যে পড়বে সে যেন পঠিত বিষয়ের অর্থ বুঝতে পারে।

৩। এ বিশ্বাস রাখতে হবে ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোন প্রভাব নেই বরং আল্লাহ তা‘আলা ভাল করবেন।

রবী‘ বলেনঃ আমি শাফি‘ঈকে ঝাড়ফুঁক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি জবাবে বললেন, এতে বাধা নেই যদি আল্লাহর কিতাব দিয়ে ও এমন আল্লাহর যিকর-আযকার দিয়ে যা পরিচিত ঝাড়ফুঁক হয়।

আমি বললাম, ইয়াহূদীরা কি মুসলিমদেরকে ঝাড়ফুঁক করতে পারবে? জবাবে বললেন, হ্যাঁ তবে যদি ঝাড়ফুঁক করে আল্লাহর কিতাব ও যিকর-আযকার দিয়ে।

মুয়াত্ত্বায় রয়েছেঃ আবূ বাকর সিদ্দীক্ব (রাঃ) ইয়াহূদী মহিলাকে বললেন, যে মহিলা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে ঝাড়ফুঁক করেছিল তুমি তাকে ঝাড়ফুঁক কর আল্লাহর কিতাব দিয়ে।

ইবনু ওয়াহ্ব মালিক হতে বর্ননা করে বলেন, তিনি ঘৃণা করতেন লোহা, লবণ এবং সুতায় গিরা দেয়া আর যা সুলায়মান-এর আংটিতে লেখা হত ইত্যাদি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। আরো বলেন, পূর্ববর্তী লোকের এমন প্রথা ছিল না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৫: জানাযা (كتاب الجنائز)