১৪২৬

পরিচ্ছেদঃ ৪৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - দু’ ঈদের সালাত

(بَاب صَلَاة الْعِيْدَيْنِ) তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। الْعِيْدُ শব্দটি الْعَيْدُ হতে নির্গত। শাব্দিক অর্থ اَلرَّجُوْعُ তথা প্রত্যাবর্তন করা।

দু’ ঈদকে ’ঈদ’ হিসেবে নামকরণ করার কারণঃ

১। ঈদের দিনে আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ অবতীর্ণ হতে থাকে। ২। অথবা এ দিনের মধ্যে লোকেরা একের পর এক পরস্পরে মিলিত হয় বলে। ৩। প্রতি বছর পুনরায় আগমন করে বলে। ৪। বার বার আনন্দ ফিরে আসে। ৫। কারও মতে আল্লাহ তা’আলা বান্দার ওপর ক্ষমা ও রহমত পুনরাবৃত্তি করেন। ৬। কারও মতে ঈদের সালাতে বারবার তাকবীর বলতে হয় বিধায় একে ঈদ (عَيْدٌ) নামে আখ্যায়িত করেছে।

আর ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রবর্তনের তাৎপর্য সম্পর্কে আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ (রহঃ) হুজ্জাতুল্লাহি বালিগাহ্ কিতাবের দ্বিতীয় খন্ডের ২৩ পৃষ্ঠায় চমৎকার তথ্য উপস্থাপন করেছেন আপনি তা দেখে নিবেন। সবাই ঐকমত্য হয়েছেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রথম ঈদুল ফিতর শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় হিজরীতে, অতঃপর ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এর উপর অটুট ছিলেন।

আবার কারও মতে ঈদুল আযহাও দ্বিতীয় হিজরীতে শুরু হয়েছিল। দু’ঈদের সালাতের হুকুম নিয়ে ’উলামাদের নিকট মতভেদ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফার সহীহ মতে তাঁর নিকট ওয়াজিব। যাদের ওপর জুমু’আর সালাত ওয়াজিব। ইমাম মালিক ও শাফি’ঈর মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্। আর আহমাদের মতে ফারযে কিফায়াহ্ সালাতুল জানাযার মতো যদি কেউ পড়ে তাহলে অন্যদের ওপর ফরয রহিত হয়ে যাবে। আর আমার (ভাষ্যকারের) নিকট আবূ হানীফার মতই ’ওয়াজিব’ অধিক বরণীয়। কেননা আল্লাহ তা’আলার বাণী فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَر ’’তুমি তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’’- (সূরাহ্ আল কাওসার ১০৮: ২) এখানে ’আমর তথা আদেশ আবশ্যক কামনা করে। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সারা জীবনে নিরবিচ্ছিন্ন আদায় ওয়াজিব। প্রমাণ করে বিশেষ করে দীনের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও ওয়াজিবের দিকে নিয়ে যায়।

শর্তের ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফার মত জুমু’আর যা শর্ত ঈদেরও তা শর্ত, তবে খুতবাহ্ (খুতবা) শর্ত না বরং তা সুন্নাত সালাতের পরে। আর ইমাম মালিক শাফি’ঈর মতে পুরুষ, মহিলা, দাস, মুসাফিরদের মধ্যে যারা চায় একাকী সালাত আদায় করতে তা বৈধ।


১৪২৬-[১] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন (ঘর থেকে) বের হয়ে ঈদগাহের ময়দানে গমন করতেন। প্রথমে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে গিয়ে সালাত আদায় করাতেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষের দিকে মুখ ফিরে দাঁড়াতেন। মানুষরা সে সময় নিজ নিজ সারিতে বসে থাকতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদেরকে ভাষণ শুনাতেন, উপদেশ দিতেন। আর যদি কোন দিকে কোন সেনাবাহিনী পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তাদেরকে নির্বাচন করতেন। অথবা কাউকে কোন নির্দেশ দেয়ার থাকলে তা দিতেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) [ঈদগাহ] হতে ফিরে প্রত্যাবর্তন করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَلَاةِ الْعِيْدَيْنِ

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يخرج يَوْم الْفطر وَالْأَضْحَى إِلَى الْمُصَلَّى فَأَوَّلُ شَيْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلَاةُ ثُمَّ يَنْصَرِفُ فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ وَالنَّاسُ جُلُوسٌ عَلَى صُفُوفِهِمْ فَيَعِظُهُمْ وَيُوصِيهِمْ وَيَأْمُرُهُمْ وَإِنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَقْطَعَ بَعْثًا قَطَعَهُ أَوْ يَأْمر بِشَيْء أَمر بِهِ ثمَّ ينْصَرف

عن ابي سعيد الخدري قال كان النبي صلى الله عليه وسلم يخرج يوم الفطر والاضحى الى المصلى فاول شيء يبدا به الصلاة ثم ينصرف فيقوم مقابل الناس والناس جلوس على صفوفهم فيعظهم ويوصيهم ويامرهم وان كان يريد ان يقطع بعثا قطعه او يامر بشيء امر به ثم ينصرف

ব্যাখ্যা: (يَخْرُجُ يَوْم الْفِطْرِ وَالْأَضْحى إِلَى الْمُصَلّى) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহের দিকে বের হতেন। আর নির্ধারিত একটি পরিচিত জায়গা মদীনার দরজার বাইরে। মদীনার মাসজিদ ও স্থানটির মাঝে দূরত্ব হল এক হাজার গজ। আর এটা মুসতাহাব হিসেবে প্রমাণ করে ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রশস্ত ময়দানে আদায়ের জন্য বের হওয়া যদিও সালাতের জন্য মাসজিদ উত্তম এবং মসজিদে প্রশস্ত জায়গা থাকে। এটা আবূ হানীফা। আহমাদ বিন হাম্বাল ও মালিকীর মাযহাব। আর শাফি‘ঈর মতে মসজিদে পড়া উত্তম, কেননা মাসজিদ হচ্ছে উত্তম স্থান ও পবিত্র। ভাষ্যকার বলেন, আমার নিকট অধিক বরণীয় মত আবূ হানীফাহ্ যে মতে গেছেন যে, ময়দানের উদ্দেশে বের হওয়া উত্তম যদিও মসজিদের স্থান প্রশস্ত হোক না কেন। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত মাসজিদকে ছেড়ে ময়দানে যেতেন অনুরূপ খোলাফায়ে রাশিদীনরা। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এমন কোন দলীল বর্ণিত হয়নি যে, তিনি ওযর ছাড়া মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করেছেন। আর মুসলিমদের ইজমা এ বিষয়ে। প্রত্যেক যুগের মুসলিমরা মাসজিদ প্রশস্ত থাকা সত্ত্বেও ঈদগাহে সালাত আদায় করতেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের ফাযীলাত থাকা সত্ত্বেও ঈদগাহে সালাত আদায় করতেন।

(فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ) তিনি জনতার সম্মুখে দাঁড়াতেন, সুতরাং সুন্নাত হল ঈদগাহে দাঁড়িয়ে খুতবাহ্ প্রদান করা।

(فَيَعِظُهُمْ) তাদেরকে উপদেশ দিতেন তথা তিনি পরকালের প্রতিদানের সুসংবাদ দিতেন আবার ভয়াবহ শাস্তির ভয় দেখাতেন যাতে তারা এ দিনে শুধুমাত্র আনন্দে আত্মহারা হয়ে না থাকে, অতঃপর আল্লাহর আনুগত্য হতে উদাসীন থাকে এবং পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে।

(وَيُوْصِيْهِمْ) তিনি তাক্বওয়ার উপদেশ দিতেন, যেমন আল্লাহর বাণীঃ

وَصَّيْنَا الَّذِيْنَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللّهَ

‘‘বস্ত্ততঃ আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থের অনুসারীদেরকে এবং তোমাদেরকে যে, তোমরা সবাই ভয় করতে থাক আল্লাহকে।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১৩১)

কারও মতেঃ অন্যের অধিকার আদায়ে উপদেশ করতেন। আবার কেউ বলেনঃ অনুগত্যের প্রতি অবিচল। সকল প্রকার পাপ কাজ হতে বিরত থাকা আল্লাহর অধিকার ও বান্দার অধিকারের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকার উপদেশ দিতেন। (يَأْمُرُهُمْ) সময়ের প্রেক্ষাপটের আলোকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বিরত থাকার দিক নির্দেশনা দিতেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)