১২৬৫

পরিচ্ছেদঃ ৩৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত

১২৬৫-[১২] আবূ আইয়ূব (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ বিতরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) প্রত্যেক মুসলিমের আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। তাই যে লোক বিতরের সালাত পাঁচ রাক্’আত আদায় করতে চায় সে যেন পাঁচ রাক্’আত আদায় করে। যে লোক তিন রাক্’আত আদায় করতে চায় সে যেন তিন রাক্’আত আদায় করে। আর যে লোক এক রাক্’আত আদায় করতে চায় সে যেন এক রাক্’আত আদায় করে। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ أَبِي أَيُّوبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْوَتْرُ حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِخَمْسٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِثَلَاثٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِوَاحِدَةٍ فَلْيَفْعَلْ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه

وعن ابي ايوب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الوتر حق على كل مسلم فمن احب ان يوتر بخمس فليفعل ومن احب ان يوتر بثلاث فليفعل ومن احب ان يوتر بواحدة فليفعل رواه ابو داود والنساىي وابن ماجه

ব্যাখ্যা: আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন যে, الحَقٌّ শব্দের অর্থ সাব্যস্ত ও ওয়াজিব হওয়া। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ২য় অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) ১ম অর্থ গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ তা শার‘ঈভাবে সাব্যস্ত এবং সুন্নাত। ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ) মুনতাকি নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইবনু মুনযির বর্ণনা করেছেন যে, উল্লেখিত হাদীসে حَقٌّ শব্দটি ওয়াজিবের জন্য নয়। এটা স্পষ্ট যে,حَقٌّ  শব্দটি শার‘ঈভাবে সাব্যস্ত হওয়ার অর্থে ব্যবহার হয়েছে ওয়াজিবের জন্য নয়। জমহূর ‘উলামাবৃন্দ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বিতর সালাত ওয়াজিব নয়। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) তার বিরোধিতা করেছেন। অর্থাৎ তার নিকট বিতর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ওয়াজিব। অবশ্য তার দুই শাগরেদ ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ) জমহূরের মতানুপাতেই মতামত দিয়েছেন এবং তারা বলেছেন যে, বিতর ওয়াজিব নয়।

মির‘আত প্রণেতা বলেন যে, সর্বজনবিদিত ও প্রসিদ্ধ সিদ্ধান্ত হলো জমহূর ‘উলামাবৃন্দ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাই। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ্ ২য় খন্ড ১৩ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, বিতরের সালাত সুন্নাত এটাই সঠিক।

‘‘যে পাঁচ রাক্‘আত বিতরের ইচ্ছা করে সে যেন তাই আদায় করে।’’ এ পাঁচ রাক্‘আতের শেষে ছাড়া কোন বৈঠক দেয়া যাবে না যেমন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস আমরা পূর্বেই অধ্যয়ন করেছি।

যে ব্যক্তি তিন রাক্‘আত বিতর আদায়ের ইচ্ছা করবে সে তা এক সালামে ও এক তাশাহুদে তা আদায় করবে। কাজেই শেষ রাক্‘আত ব্যতীত বৈঠক দিবে না এটাই স্পষ্ট দলীল হিসেবে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসঃ

لَا تُوْتِرُوْا بِثَلَاثٍ تَشْبَهُوْا بِالْمَغْرِبِ، وَلكِنْ أَوْتِرُوْا بِخَمْسٍ أَوْ بِسَبْعٍ أَوْ بِتِسْعٍ أَوْ بِإِحْدى عَشْرَةَ أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذلِكَ.

অর্থাৎ- মাগরিবের সাথে সাদৃশ্যশীল তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করো না বরং পাঁচ, সাত, নয় অথবা এগার কিংবা তার চেয়ে বেশী বিতর আদায় কর; কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করেছেন, তবে শেষ রাক্‘আত ব্যতীত বৈঠকে বসতেন না। (বায়হাক্বী)

এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিতর তিন রাক্‘আত লাগাতার আদায় করতে হবে কোন বৈঠক ছাড়া। এ হাদীস আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণিত, ‘‘তোমরা তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করো না যা মাগরিবের সাথে সাদৃশ্য রাখে.....’’ উভয় হাদীস এর মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা উভয়ের মাঝে সমাধান করা যায় এভাবে যে, তিন রাক্‘আত বিতরের নিষেধাজ্ঞাটা তখন প্রযোজ্য হবে যখন তিন রাক্‘আতের মাঝে তাশাহুদের জন্য বৈঠক দেয়া হবে। কারণ তা মাগরিবের সালাতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে। আর যদি তিন রাক্‘আত বিতরের মাঝে কোন বৈঠক দেয়া না হয় তবে মাগরিবের সালাতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না।

আল ‘আমির আল ইয়ামানী (রহঃ) বলেন যে, এ সমাধানই উত্তম সমাধান। (সুবুলুস সালাম ২য় খন্ড, পৃঃ ৯)

হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, তিন রাক্‘আতের নিষেধাজ্ঞা বলতে দু’ বৈঠকে তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করা নিষিদ্ধ, সালফে সালিহীনগণ অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন, অর্থাৎ তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করতে হবে এক বৈঠকে। মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ্ বর্ণনা করেন যে, ‘উমার (রাঃ) তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করেছেন শেষ রাক্‘আত ব্যতীত কোন বৈঠক দিতেন না। প্রখ্যাত তাবি‘ঈ তাঊস বর্ণনা করেছেন তার বাবা থেকে, তিনি তিন রাক্‘আত বিতর আদায় করেছেন মাঝে কোন বৈঠক দেননি।

وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِوَاحِدَةٍ অর্থাৎ যে এক রাক্‘আত বিতর আদায় করতে চায় সে তাই আদায় করবে। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন যে, এখানে দলীল রয়েছে যে, বিতরের সর্বনিম্ন রাক্‘আত সংখ্যা এক এবং এক রাক্‘আত বিতর আদায় করা সঠিক বা শারী‘আত সম্মত; এটাই আমাদের মাযহাব ও জমহূর ‘উলামাগণের মাযহাব। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন যে, এক রাক্‘আত বিতর সঠিক নয় এবং এক রাক্‘আত কোন সালাত নয়। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর এ মত একাধিক সহীহ হাদীস বিরোধী মত।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)