১১৪৭

পরিচ্ছেদঃ ২৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম

১১৪৭-[১২] ’উবায়দুল্লাহ (রাঃ) ইবনু ’আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একদিন আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে বললাম। আপনি কি আমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থ অবস্থার (সালাত আদায় করার ব্যাপারে) কিছু বলবেন না? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ! (বলব শুনো)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লেন সালাতের সময়ের কথা জিজ্ঞেস করলেন, লোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রসূল! তারা আপনার অপেক্ষা করছে্ (এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার জন্যে পাত্র ভরে পানি আনো। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁর জন্যে পাত্র ভরে পানি আনলাম। সে পানি দিয়ে গোসল করলেন। চাইলেন দাঁড়াতে। (কিন্তু দুর্বলতার কারণে) তিনি বেহুঁশ্ হয়ে পড়লেন। হুঁশ ফিরে আসলে তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন। লোকেরা কি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম না। এখনো পড়েনি। লোকেরা আপনার অপেক্ষায় আছে হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, আমার জন্যে পাত্র ভরে পানি নিয়ে আসো।

’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে বসলেন। আবার গোসল করলেন। চেয়েছিলেন দাঁড়াতে। কিন্তু (এ সময়) বেহুঁশ হয়ে পড়লেন, যখন হুঁশ হয়েছে আবার জিজ্ঞেস করেছেন, লোকেরা কি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, এখনো পড়েনি। লোকেরা আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন পাত্র ভরে পানি নিয়ে আসো। আমরা পানি নিয়ে আসলাম। তিনি বসলেন, গোসল করলেন। তারপর আবার যখন উঠতে চাইলেন বেহুঁশ হয়ে গেলেন। যখন হুঁশ ফিরে আসলো তখন বললেন, লোকেরা কি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না; তারা আপনার অপেক্ষায় আছে, হে আল্লাহর রসূল। লোকেরা মসজিদে বসে বসে ’ঈশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পড়ার জন্য আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে দিয়ে (বিলাল) আবূ বকরের নিকট খবর পাঠালেন লোকদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পড়িয়ে দেয়ার জন্যে। তাই দূত [বেলাল (রাঃ)] তাঁর নিকট এলেন। বললেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে লোকদের সালাত আদায় করার জন্যে আদেশ করেছেন। আবূ বকর ছিলেন কোমলমতি মানুষ।

তিনি এ কথা শুনে ’উমার (রাঃ) কে বললেন। ’উমার! তুমিই লোকদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পড়িয়ে দাও। কিন্তু ’উমার (রাঃ) বললেন। আপনিই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করান এর জন্যে আপনিই সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত। এরপর আবূ বকর রসূলের অসুখের এ সময়ে (সতের ওয়াক্ত) সালাত সাহাবীদেরকে নিয়ে আদায় করালেন। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু সুস্থতাবোধ করলে দু’লোকের ওপর ভর করে (এদের একজন ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) ছিলেন) যুহরের সালাতে (মসজিদে গমন করলেন। তখন আবূ বকর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পড়াচ্ছিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর আগমন টের পেয়ে আবূ বকর পেছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারা দিয়ে তাঁকে পেছনে সরে আসতে নিষেধ করলেন। যাদের ওপরে ভর করে তিনি মসজিদে এসেছিলেন তাদের বললেন। আমাকে আবূ বকরের পাশে বসিয়ে দাও। ফলে তারা তাঁকে আবূ বকরের পাশে বসিয়ে দিলেন। তিনি বসে বসে সালাত পড়াতে লাগলেন।

’উবায়দুল্লাহ (রাঃ) (এ হাদীসের বর্ণনাকারী) বলেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীস শুনে আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস-এর নিকট গেলাম। তাঁকে আমি বললাম, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর অসুখের সময়ের যে হাদীসটি ’আয়িশার নিকট শুনলাম তা-কি আপনার নিকট বর্ণনা করব না? ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, শুনাও। তাই আমি তাঁর সামনে ’আয়িশার নিকট শুনা হাদীসটি বর্ণনা করলাম। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) এ হাদীসের কোন কথা অস্বীকার করলেন না। অবশ্য তিনি বললেন, ’আয়িশাহ্ (রাঃ) তোমাকে এ লোকের নাম বলেননি যিনি ইবনু ’আব্বাসের সঙ্গে ছিলেন! আমি বললাম, না, বলেননি। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বললেন। তিনি ছিলেন ’আলী। (বুখারী, মুসলিম)[1]

عَن عبيد الله بن عبد الله بن عتبَة قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى عَائِشَةَ فَقُلْتُ أَلَا تُحَدِّثِينِي عَنْ مَرَضِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ بَلَى ثَقُلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ: «أصلى النَّاس؟» قُلْنَا لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ فَقَالَ: «ضَعُوا لِي مَاءً فِي الْمِخْضَبِ» قَالَتْ فَفَعَلْنَا فَاغْتَسَلَ فَذَهَبَ لِيَنُوءَ فَأُغْمِيَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «أَصَلَّى النَّاسُ؟» قُلْنَا لَا هُمْ يَنْتَظِرُونَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «ضَعُوا لِي مَاءً فِي الْمِخْضَبِ» قَالَتْ فَقَعَدَ فَاغْتَسَلَ ثُمَّ ذَهَبَ لِيَنُوءَ فَأُغْمِيَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ: «أَصَلَّى النَّاسُ؟» قُلْنَا لَا هُمْ يَنْتَظِرُونَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ: «ضَعُوا لِي مَاءً فِي الْمِخْضَبِ» فَقَعَدَ فَاغْتَسَلَ ثُمَّ ذَهَبَ لِيَنُوءَ فَأُغْمِيَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ: «أَصَلَّى النَّاسُ» . قُلْنَا لَا هُمْ يَنْتَظِرُونَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَالنَّاسُ عُكُوفٌ فِي الْمَسْجِدِ يَنْتَظِرُونَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِصَلَاةِ الْعِشَاءِ الْآخِرَةِ. فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ بِأَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ فَأَتَاهُ الرَّسُولُ فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُكَ أَنْ تُصَلِّيَ بِالنَّاسِ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ وَكَانَ رَجُلًا رَقِيقًا يَا عُمَرُ صَلِّ بِالنَّاسِ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ أَنْتَ أَحَقُّ بِذَلِكَ فَصَلَّى أَبُو بَكْرٍ تِلْكَ الْأَيَّامَ ثُمَّ إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وجد من نَفْسِهِ خِفَّةً وَخَرَجَ بَيْنَ رَجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا الْعَبَّاسُ لِصَلَاةِ الظُّهْرِ وَأَبُو بَكْرٍ يُصَلِّي بِالنَّاسِ فَلَمَّا رَآهُ أَبُو بَكْرٍ ذَهَبَ لِيَتَأَخَّرَ فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَنْ لَا يَتَأَخَّرَ قَالَ: «أَجْلِسَانِي إِلَى جَنْبِهِ» فَأَجْلَسَاهُ إِلَى جَنْبِ أَبِي بَكْرٍ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَاعد. قَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ: فَدَخَلْتُ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ فَقُلْتُ لَهُ أَلَا أَعْرِضُ عَلَيْكَ مَا حَدَّثتنِي بِهِ عَائِشَةُ عَنْ مَرَضِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ هَاتِ فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ حَدِيثَهَا فَمَا أَنْكَرَ مِنْهُ شَيْئًا غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ أَسَمَّتْ لَكَ الرَّجُلَ الَّذِي كَانَ مَعَ الْعَبَّاسِ قلت لَا قَالَ هُوَ عَليّ رَضِي الله عَنهُ

عن عبيد الله بن عبد الله بن عتبة قال دخلت على عاىشة فقلت الا تحدثيني عن مرض رسول الله صلى الله عليه وسلم قالت بلى ثقل النبي صلى الله عليه وسلم فقال اصلى الناس قلنا لا يا رسول الله وهم ينتظرونك فقال ضعوا لي ماء في المخضب قالت ففعلنا فاغتسل فذهب لينوء فاغمي عليه ثم افاق فقال صلى الله عليه وسلم اصلى الناس قلنا لا هم ينتظرونك يا رسول الله قال ضعوا لي ماء في المخضب قالت فقعد فاغتسل ثم ذهب لينوء فاغمي عليه ثم افاق فقال اصلى الناس قلنا لا هم ينتظرونك يا رسول الله فقال ضعوا لي ماء في المخضب فقعد فاغتسل ثم ذهب لينوء فاغمي عليه ثم افاق فقال اصلى الناس قلنا لا هم ينتظرونك يا رسول الله والناس عكوف في المسجد ينتظرون النبي صلى الله عليه وسلم لصلاة العشاء الاخرة فارسل النبي صلى الله عليه وسلم الى ابي بكر بان يصلي بالناس فاتاه الرسول فقال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم يامرك ان تصلي بالناس فقال ابو بكر وكان رجلا رقيقا يا عمر صل بالناس فقال له عمر انت احق بذلك فصلى ابو بكر تلك الايام ثم ان النبي صلى الله عليه وسلم وجد من نفسه خفة وخرج بين رجلين احدهما العباس لصلاة الظهر وابو بكر يصلي بالناس فلما راه ابو بكر ذهب ليتاخر فاوما اليه النبي صلى الله عليه وسلم بان لا يتاخر قال اجلساني الى جنبه فاجلساه الى جنب ابي بكر والنبي صلى الله عليه وسلم قاعد قال عبيد الله فدخلت على عبد الله بن عباس فقلت له الا اعرض عليك ما حدثتني به عاىشة عن مرض رسول الله صلى الله عليه وسلم قال هات فعرضت عليه حديثها فما انكر منه شيىا غير انه قال اسمت لك الرجل الذي كان مع العباس قلت لا قال هو علي رضي الله عنه

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায়, কোন মসজিদের পেশ ইমাম সাহেব যদি অসুস্থ হয়ে যান তাহলে তিনি মুসল্লীদের নিয়ে বসে ইমামতি করানোর চেয়ে উত্তম হলো অন্য একজন যোগ্য ব্যক্তিকে তার স্থানে তারই প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করবেন। কেননা এখানে আমরা দেখতে পেলাম রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন, অতঃপর তিনি বসে বসে ইমামতি করতে পারা সত্ত্বেও আবূ বাকর (রাঃ)-কে ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছেন এবং আবূ বাকর (রাঃ) ধারাবাহিক কয়েকদিন এ গুরু দায়িত্ব পালন করলেন।

এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যায়, ওযর থাকলে কেউ বসে বসে ইমামতি করতে পারে যদিও ইমাম মালিক (রহঃ) এ মতের বিপরীত মত পোষণ করেছেন।

এ হাদীসটি থেকে নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় বুঝা যায়ঃ

১। আবূ বাকর (রাঃ)-এর মর্যাদা অন্যান্য সাহাবীদের উপর।

২। আবূ বাকর (রাঃ)-এর পরেই ‘উমার (রাঃ)-এর অবস্থান।

৩। একই স্থানে বড়দের সম্মানে যদি ছোটদের নিকট কোন ফাযীলাত গ্রহণ করার জন্য পেশ করা হয় তাহলে ছোটদের উচিত ফাযীলাতটি বড়দের জন্য দেয়া।

৪। যে উত্তম তার প্রশংসা করা বৈধ। তবে তার সম্মুখে (উৎসাহ দেয়া ব্যতীত প্রশংসা করা যাবে না)

৫। ইমাম সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়ায় যদি তিনি চান মুসল্লীদের মাঝে কাউকে তার প্রতিনিধি বানাবেন তাহলে তার উচিত মুসল্লীদের মাঝে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে প্রতিনিধি বানানো।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)