১১১৭

পরিচ্ছেদঃ ২৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইমামতির বর্ণনা

১১১৭-[১] আবূ মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জাতির ইমামতি এমন লোক করবেন, যিনি আল্লাহর কিতাব সবচেয়ে উত্তম পড়তে পারেন। উপস্থিতদের মাঝে যদি সকলেই উত্তম ক্বারী হন তাহলে ইমামতি করবেন ঐ লোক যিনি সুন্নাতের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জানেন। যদি সুন্নাতের ব্যাপারে সকলে সমপর্যায়ের জ্ঞানী হন তবে যে সবার আগে হিজরত করেছেন। হিজরত করায়ও যদি সবাই এক সমান হন। তাহলে ইমামাত করবেন যিনি বয়সে সকলের চেয়ে বড়। আর কোন লোক অন্য লোকের ক্ষমতাসীন এলাকায় গিয়ে ইমামতি করবে না এবং কেউ কোন বাড়ী গিয়ে যেন অনুমতি ছাড়া বাড়ীওয়ালার আসনে না বসে। (মুসলিম; তাঁর অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ’’আর কোন লোক অন্য লোকের গৃহে গিয়ে [অনুমতি ব্যতীত] ইমামতি করবে না।’’)[1]

بَابُ الْإِمَامَةِ

عَن أَبِي مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ سِنًّا وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ وَلَا يَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إِلَّا بِإِذْنِهِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: «وَلَا يَؤُمَّنَّ الرجل الرجل فِي أَهله»

عن ابي مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم القوم اقروهم لكتاب الله فان كانوا في القراءة سواء فاعلمهم بالسنة فان كانوا في السنة سواء فاقدمهم هجرة فان كانوا في الهجرة سواء فاقدمهم سنا ولا يومن الرجل الرجل في سلطانه ولا يقعد في بيته على تكرمته الا باذنه رواه مسلم وفي رواية له ولا يومن الرجل الرجل في اهله

ব্যাখ্যা: (أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللّهِ) এ অংশের ব্যাপারে মতানৈক্য করা হয়েছে। কেউ বলেছেন, কুরআনের ব্যাপারে বেশি জ্ঞানী। কেউ বলেছেন, কুরআনের হুকুম আহকাম ও অর্থ সম্পর্কে বেশি জ্ঞানী। কেউ বলেছেন, কুরআন পাঠ করার দিক দিয়ে বেশি উত্তম যদিও মুখস্থের দিক থেকে কম। কেউ বলেছেন, বাক্যাংশ থেকে বাহ্যিকভাবে যা বুঝা যায় তাই অর্থাৎ কুরআন অধিক মুখস্থকারী। এ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে ত্ববারানী কাবীর গ্রন্থে যা উল্লেখ করেছেন। এর রাবীগণ সহীহ এর রাবী যেমন ‘আমর বিন সালামাহ্ থেকে বর্ণিত, আমি আমার পিতার সাথে তার সম্প্রদায়ের ইসলাম গ্রহণের বিষয় নিয়ে নাবীর কাছে গেলাম তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা ওয়াসিয়্যাত করেছিলেন তা হচ্ছে তোমাদের মাঝে যে অধিক কুরআন জানে সে যেন তোমাদের ইমামতি করে।

অতঃপর তাদের মাঝে আমি সর্বাধিক কুরআন সংরক্ষণকারী ছিলাম ফলে তারা আমাকে এগিয়ে দিলেন ইমামতির জন্য। ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ) মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, ‘আমর বিন সালামাহ্ এর হাদীস ও অন্যান্য তাফসীরকারী বর্ণনাগুলোর আলোকে এটিই আমার কাছে প্রাধান্যতর কথা।

(فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ) ত্বীবী বলেন, উল্লেখিত ভাষ্যটুকুতে সুন্নাহ দ্বারা হাদীসসমূহ উদ্দেশ্য।

সিনদী বলেন, সুন্নাহ দ্বারা সালাতের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী উদ্দেশ্য নিয়েছেন (মুহাদ্দিসগণ)।

(فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً) ক্বারী বলেন, অর্থাৎ মক্কা বিজয়ের পূর্বে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করা সুতরাং যে প্রথমে হিজরত করেছে তার সম্মান মক্কা বিজয়ের পর যে হিজরত করেছে তার অপেক্ষা বেশি। আল্লাহ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি মক্কা বিজয়ের পূর্বে খরচ ও যুদ্ধ করেছে তার মর্যাদা যে মক্কা বিজয়ের পর খরচ ও যুদ্ধ করেছে তাদের অপেক্ষা বেশি’’- (সূরাহ্ আল হাদীদ ৫৭ : ১০)।

আর একটি মতে বলা হয়েছে, এ হিজরত ঐ ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করবে, যে ব্যক্তি পূর্বে হিজরত করেছে চাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে হিজরত করুক বা পরে যেমন কোন ব্যক্তি (মুসলিম) কাফির রাষ্ট্র হতে মুসলিম রাষ্ট্রে হিজরত করে। পক্ষান্তরে (لَا هِجْرَةَ بَعْدَ الْفَتْحِ) হাদীসাংশ থেকে উদ্দেশ্য মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করা। কেননা মক্কা মদীনাহ্ বর্তমানে উভয় শহরই ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

শাওকানী (রহঃ) বলেন, (هِجْرَةٌ مُقَدَّمَةٌ) তথা পূর্ববর্তী হিজরত দ্বারা ইমামতির ক্ষেত্রে হিজরত উদ্দেশ্য; তাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগের হিজরতের সাথে খাস করা যাবে না, বরং তা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) অবধি সমাপ্ত হবে না, যেমন এ ব্যাপারে হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে। এটি জমহূরের মত এবং (لا هجرة بعد الفتح) দ্বারা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করা উদ্দেশ্য অথবা (لا هجرة بعد الفتح) দ্বারা উদ্দেশ্য মক্কা বিজয়ের পরের হিজরতের মর্যাদা রয়েছে পূর্বে হিজরতের মর্যাদার ন্যায়।

(فَأَقْدَمُهُمْ سِنًّا) অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণের দিক দিয়ে যে অধিক বয়সের অধিকারী বা অগ্রগামী। কেননা ইসলাম গ্রহণ করা শ্রেষ্ঠত্বের কাজ, মৌলিক বয়সের উপর এ দিকটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলব যে, ব্যাখ্যা করা হল মুসলিমের এক বর্ণনা তাকে সমর্থন করেছে। (فَأَقْدَمُهُمْ سِلفا) অর্থাৎ তাদের মাঝে ইসলাম গ্রহণে যে অগ্রগামী মোট কথা যে ব্যক্তি পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছে তাকে পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণকারীর উপর প্রাধান্য দিতে হবে।

যারা বলে কুরআন পাঠে অগ্রগামীকে সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক অবগত ব্যক্তির ওপর প্রাধান্য দিতে হবে হাদীসটি তাদের স্বপক্ষে দলীল। এ মত ইমাম আহমাদ, আবূ ইউসুফ ও ইসহাক গ্রহণ করেছেন। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেছেন, সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক অবগত ব্যক্তিকে কুরআন পাঠে অধিক অবগত ব্যক্তির ওপর প্রাধান্য দিতে হবে। ‘আয়নী (রহঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি ইমামতির অধিক উপযুক্ত তার ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতানৈক্য করেছেন। একদল ‘আলিমগণ বলেছেন, ইমামতির উপযুক্ত ঐ ব্যক্তি যে বড় ফাক্বীহ, এ ব্যাপারে উক্তি করেছেন আবূ হানীফাহ্, মালিক ও জমহূর। আবূ ইউসুফ, আহমাদ ও ইসহাক বলেছেন, যে কুরআন পাঠে অধিক ভাল তিনি ইমামতির অধিক উপযুক্ত। আর এটা ইবনু সীরীন ও কতিপয় শাফি‘ঈ মতাবলম্বীদের মত।

‘আয়নী (রহঃ) বলেন, আমাদের সাথীবর্গ (হানাফী ‘আলিমগণ) বলেছেন, মানুষের মাঝে সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক অবগত ব্যক্তি ইমামতির অধিক উপযুক্ত। অর্থাৎ ফিকাহ ও শারী‘আতী হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জানার সাথে সাথে ব্যক্তি যখন এ পরিমাণ কুরআন ভালভাবে জানবে যা সালাতের জন্য যথেষ্ট হবে। এটা জমহূরের উক্তি। এ মত পোষণ করেছেন ‘আত্বা, আওযা‘ঈ, মালিক ও শাফি‘ঈ।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেছেন, আমি বলবঃ ভাষ্যের মুখোমুখিতে এ প্রত্যেকটিই ত্রুটিযুক্ত। সুতরাং এদিকে ভ্রক্ষেপ করা যাবে না। বরং এর প্রবক্তা যেই হোক না কেন তার কথা প্রত্যাখ্যান করে দিতে হবে। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি তোমাদের মাঝে কুরআন পাঠে উবাই সর্বাধিক ভালো সত্ত্বেও স্বীয় মরণের পীড়াতে সালাতের ক্ষেত্রে আবূ বাকরকে অন্যের উপর প্রাধান্য দেয়া ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে, যে কুরআন পাঠে ভালো এমন ব্যক্তির উপর সুন্নাহ সম্পর্কে বেশি জানে এমন ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে। যেমন আবূ বাকরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল সুন্নাহ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞান থাকার কারণে।

ইবনুল হুমাম বলেন, জমহূরের চমৎকার কথার পক্ষে দলীল স্বরূপ যা গ্রহণ করা হয় তার মাঝে সর্বোত্তম ঐ হাদীস ‘‘তোমরা আবূ বাকর (রাঃ)-কে নির্দেশ কর সে যেন সালাত আদায় করিয়ে দেয়’’ এ অবস্থায় সেখানে আবূ বাকর অপেক্ষা কুরআন পাঠে অধিক ভাল ব্যক্তি ছিলেন তবে অধিক জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন না। প্রথম কথাটির দলীল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি উবাই (রাঃ) তোমাদের মাঝে কুরআন পাঠে সর্বোত্তম, দ্বিতীয় কথাটির দলীল আবূ সা‘ঈদ-এর উক্তি আবূ বাকর আমাদের মাঝে অধিক জ্ঞানী ছিলেন, আর এটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে শেষ নির্দেশ, সুতরাং এটি নির্ভরযোগ্য উক্তি।

‘আয়নী বলেন, আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীস প্রথম আদেশ; আবূ বাকর (রাঃ)-এর হাদীস শেষ আদেশ এবং সাহাবীগণ সকলেই কুরআন সম্পর্কে জ্ঞানী ছিলেন। আর আবূ বাকর প্রতিটি বিষয় সর্বাধিক জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ছিলেন। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলব, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মরণের পীড়াতে আবূ বাকর (রাঃ)-এর ইমামতির ঘটনা নির্দিষ্ট একটি ঘটনা। তা ব্যাপকতাকে গ্রহণ করবে না যা আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীসের বিপরীত, কেননা তা স্বয়ংসম্পন্ন এক স্থিরকৃত কায়িদাহ্ যা ব্যাপকতার উপকারিতা দেয়। সুতরাং আবূ বাকর (রাঃ)-এর ঘটনার কারণে কুরআন পাঠে অধিক ভালো ব্যক্তির ওপর সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানীকে প্রাধান্য দেয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করা বিশুদ্ধ হবে না। তদ্রুপ আবূ বাকর (রাঃ)-এর ঘটনাকে আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীসের নাসেখ বা রহিতকারী স্থির করাও বিশুদ্ধ হবে না। বাযল গ্রন্থকার বলেন, ঘটনাটি খলীফাহ্ নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করেছে। সম্ভবত ঘটনাটি নির্দিষ্ট। এর কোন ব্যাপকতা নেই।

এখান থেকে মাশায়েখদের একটি দল আবূ ইউসুফ-এর কথাকে গ্রহণ করেছেন। হিদায়া গ্রন্থকার ও অন্যান্যগণ আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীস সম্পর্কে উত্তর দিয়েছেন যে, আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ) ঐ দিকে বেরিয়ে গিয়েছেন যার উপর সাহাবীগণের অবস্থা বহাল ছিল আর তা হল তাদের মাঝে কুরআন পাঠে যে সর্বাধিক উত্তম ছিল সে তাঁদের মাঝে সর্বাধিক সুন্নাহের জ্ঞানে জ্ঞানী ছিলেন। তা এভাবে যে কেননা সাহাবীগণ ঐ সময়ে শারী‘আতের হুকুমসমূহের ব্যাপারে নাবীর কাছ থেকে শিক্ষালাভ করতেন। তার উপর ভিত্তি করে হাদীসে তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের যুগে বিষয়টি এমন নয়। আমরা সুন্নাহতে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তিকে আগে বাড়িয়ে দিব।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেন, রসূলের যুগে যারা ছিলেন তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে যে, তাদের মাঝে কুরআন পাঠে সর্বাধিক ভালো ব্যক্তি সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী হতেন। তার কারণ তারা বয়স্ক অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করতেন এবং কুরআন শিক্ষার পূর্বে ফিকাহ শিখে নিতেন তাঁদের থেকে যে কোন কুরআন পাঠককে ফকীহ হিসেবে পাওয়া যেত, অথচ কখনো এমন কিছু ফকীহ পাওয়া যেত যে কুরআন পাঠক নয়। এ উত্তরটিকেও এভাবে রদ করে দেয়া হয়েছে যে, যদি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ) থেকে (أَقْرَءُ) দ্বারা (أَعْلَم) তথা অধিক জ্ঞানীকে উদ্দেশ্য করা হয় তাহলে অবশ্যই হাদীসে (أَعْلَم) শব্দের বারংবার উল্লেখ হওয়া আবশ্যক হয়ে যাচ্ছে এবং তার ভাষ্য এ ধরনের হচ্ছে (يَؤُمُّ الْقَوْمَ أعْلَمُهُمْ، فَإِنْ تَسَاوُوْا فَأَعْلَمُهُمْ) অর্থাৎ সম্প্রদায়ের ইমামতি করবে তাদের মাঝে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি, অতঃপর এতে সমান হলে তাদের মাঝে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি। (অথচ এমন উদ্দেশ্য আদৌ করা হয়নি)

আমীর ইয়ামানী (রহঃ) বলেছেন, প্রকাশমান যে, এ জওয়াবকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (فإن كانوا في القراءة سواء فأعلمهم بالسنة) প্রত্যাখ্যান করে দিচ্ছে, কেননা এ বাণীটি সাধারণভাবে কুরআন পাঠে অধিক ভালো ব্যক্তি সুনণাহ সম্পর্কে সর্বাধিক ভালো ব্যক্তির ওপর প্রাধান্যের উপর দলীল, এরপরও যদি (أَقْرَءُ) দ্বারা (أَعْلَم بالمسنة) উদ্দেশ্য করা হয় তাহলে (أَقْرَءُ) ও (أَعْلَم) উভয় এক হয়ে যাচ্ছে।

যুবায়দী (রহঃ) বলেন, আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর হাদীসের বিরোধিতাকারীর অপব্যাখ্যা যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ও সাহাবীদের যুগে (أَقْرَءُ) বলতে أفقه অর্থাৎ সর্বাধিক ফকীহ বুঝাত এ অপব্যাখ্যাকে রসূলের বাণী (فأعلمهم بالسنة) প্রত্যাখ্যান করে দিচ্ছে। তবে কখনো এভাবে উত্তর দেয়া হয় যে, হাদীসে (أَقْرَءُ) দ্বারা কুরআনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক জ্ঞানী উদ্দেশ্য। অতঃপর কুরআন বোঝার ক্ষেত্রে সকলে সমান হলে দেখতে হবে সুন্নাহের জ্ঞানে কে বেশি জ্ঞানী সে ইমামতির অধিক উপযুক্ত। সুতরাং হাদীসে কুরআন পাঠে সর্বাধিক ভালো ব্যক্তিকে মুতলাক তথা সাধারণভাবে অন্যের উপর অগ্রাধিকার দেয়ার কোন প্রমাণ নেই। বরং কুরআনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ভালো পাঠ ও জ্ঞানী ব্যক্তিকে তার অপেক্ষা নিম্নস্তরের ব্যক্তির উপরে প্রাধান্য দেয়ার উপর দলীল রয়েছে এবং এ ব্যাপারে কোন বিরোধ নেই।

‘আয়নী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ) থেকে উদ্দেশ্য أَعْلَمُهُمْ অর্থাৎ তাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী। সুন্নাহের সর্বাধিক জ্ঞানী নয়। পক্ষান্তরে (أعلمهم بالسنة) দ্বারা কুরআন ও সুন্নাহের হুকুম আহকাম সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী। সুতরাং দ্বিতীয় (أَعْلَم) দ্বারা প্রথম (أَعْلَم) উদ্দেশ্য নয়। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেছেন, আমি বলবঃ আমাদের থেকে একটি মত অতিবাহিত হয়েছে তা হল প্রাধান্যতর মত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (أَقْرَأَهُمْ) দ্বারা কুরআন অধিক মুখস্থকারী উদ্দেশ্য।

অপরপক্ষে তাকে কুরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী এবং হুকুম-আহকাম ও অর্থসমূহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী ব্যক্তির অর্থে নেয়া বাহ্যিকতার পরিপন্থী। সুতরাং এদিকে দৃষ্টি দেয়া যাবে না। অপরপক্ষে হাদীসটি থেকোর্থ নেয়া সাহাবীদের ব্যাপারে কেবলমাত্র দাবি। এ ধরনের উত্তর থেকে ঐ কথা আবশ্যক হয়ে যাচ্ছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (أنه أقرأ من أبي بكر) এর অর্থ উবাই আবূ বাকর অপেক্ষা অধিক জ্ঞানী ছিলেন। ফলে আবূ বাকর অধিক জ্ঞানী ছিলেন বিধায় তাকে ইমামতিতে এগিয়ে দেয়ার যে দলীল গ্রহণ করা হয় তা বাতিল হয়ে পড়ছে।

সিনদী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি কুরআন পাঠে উত্তম ব্যক্তিকে ইমামতিতে এগিয়ে দেয়ার উপর প্রমাণ বহন করে, পক্ষান্তরে অধিকাংশ ফকীহগণ সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানীকে ইমামতিতে প্রাধান্য দেয়া মতের উপর বহাল। তাদের কাছে এ হাদীস সম্পর্কে দ্বিতীয়টি উত্তর রয়েছে যে, সাহাবীদের মাঝে উবাই (রাঃ) কুরআন পাঠে সর্বাধিক ভাল হওয়া সত্ত্বেও আবূ বাকরকে ইমামতিতে এগিয়ে দেয়া এ অবস্থায় যে, আবূ বাকর সুন্নাহ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী ছিল, মূলত এ হুকুমটি রহিত হয়েছে।

যেমন আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বলেছেন, দ্বিতীয় হুকুমটি সাহাবীদের সাথে নির্দিষ্ট করে দেয়া যে, তাদের মাঝে কুরআন পাঠে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি কুরআনের অর্থ সম্পর্কেও জ্ঞানী ছিলেন কারণ তারা অর্থসহ কুরআন মুখস্থ করতেন। প্রকাশমান যে, উত্তরদ্বয়ের মাঝে বৈপরীত্য রয়েছে এমতাবস্থায় যে, হাদীসে শব্দ হুকুমের ব্যাপকতর ফায়দা দিচ্ছে। এ ব্যাখ্যা দ্বারা প্রতীয়মান হয়, প্রাধান্য ও নির্ভরযোগ্য মত উক্তি যার উপর তা হল কুরআন পাঠে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত ব্যক্তির ওপর প্রাধান্য দিতে হবে।

আর এটা তখন যখন কুরআন পাঠে সর্বোত্তম ব্যক্তি সালাতের অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত হবে, পক্ষান্তরে যখন ঐ সম্পর্কে জ্ঞাত হবে না তখন সকলের ঐকমত্যে তাকে ইমামতির জন্য এগিয়ে দেয়া যাবে না। যুবায়দী (রহঃ) বলেন, কুরআন পাঠে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক অবগত ব্যক্তির উপর প্রাধান্য দেয়ার যে মতটি আবূ ইউসুফ অবলম্বন করেছেন তা ইমাম আবূ হানীফার একটি রিওয়ায়াতে এবং ভাষ্যের দিক থেকে তার দলীল শক্তিশালী, কেননা তিনি ফকীহ ও ক্বারী এর মাঝে পার্থক্য করেছেন।

দু’জন ব্যক্তি যতক্ষণ ক্বিরাআতে সমান না হয় ততক্ষণ তিনি ইমামতি ক্বারী ব্যক্তিকে দেয়ার ব্যাপারে মত পোষণ করেছেন তবে দু’জন ক্বিরাআতে সমান হয়ে গেলে একজন অপরজন অপেক্ষা উত্তম হবে না বিধায় তখন তিনি সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক অবগত ব্যক্তিকে ইমামতিতে প্রাধান্য দেয়ার কথা ওয়াজিব বলেছেন। (وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِه) অর্থাৎ ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কর্তৃত্বের স্থানে কর্তৃত্ব করবে না আর তা এমন একস্থান ব্যক্তি যে স্থানের কর্তৃত্ব করে অথবা যাতে ব্যক্তির কর্তৃত্বের প্রাধান্য রয়েছে। যেমন বৈঠকের কর্তা, মসজিদের ইমাম কেননা এরা অন্যদের অপেক্ষা বেশি হকদার যদিও অন্যরা এদের অপেক্ষা অধিক জ্ঞানী হয়। আর এর কারণ হচ্ছে যাতে এ ধরনের আচরণ পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ এবং এমন মতানৈক্যের দিকে ঠেলে না দেয়, যে মতানৈক্য দূর করার জন্যই জামা‘আত ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে।

ত্বীবী (রহঃ) বলেছেন, অর্থাৎ ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কর্তৃত্ব প্রকাশের স্থানে ইমামতি করবে না অথবা নেতৃত্বের স্থানে অথবা যাতে ব্যক্তি মালিকত্ব করে অথবা এমন স্থানে যে স্থানে তার হুকুম চলে। নিজ পরিবার সম্পর্কে অন্য একটি বর্ণনা এ ব্যাখ্যাকে শক্তিশালী করেছে। এর তাৎপর্য হচ্ছে নিশ্চয়ই জামা‘আত মু’মিনদের পারস্পরিক ভালোবাসা, স্নেহ ও আনুগত্যের উপর একত্রিত হওয়ার জন্যই প্রণয়ন করা হয়েছে। অতএব ব্যক্তি যখন অপর ব্যক্তির কর্তৃত্বের স্থানে ইমামতি করবে তখন এ বিষয়টি নেতার নির্দেশ হেয় প্রতিপন্ন করার দিকে গড়াবে ও আনুগত্যের রশিকে খুলে দিবে।

এমনিভাবে ব্যক্তি যখন অন্যের পরিবারের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব করবে তখন এ আচরণটিও পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, বিচ্ছিন্নতা এবং মতানৈক্য প্রকাশের দিকে ঠেলে দিবে যা দূরীভূত করার জন্য জামা‘আত প্রণয়ন করা হয়েছে। সুতরাং নের্তৃত্বের অধিকারী ব্যক্তির উপর অন্যকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। বিশেষ করে ঈদ ও জুমু‘আতে এলাকার ইমাম ও ঘরের মালিক-এর উপর তবে অনুমতিক্রমে। ইমাম নাবাবী বলেছেন, এর অর্থ নিশ্চয় ঘর, মাজলিস এবং মসজিদের ইমাম অন্যদের অপেক্ষা বেশি অধিকার রাখে।

ইবনু রিসলান (রহঃ) বলেছেন, কেননা তা তার কর্তৃত্বের স্থান। ইমাম শাওকানী বলেন, তবে বাহ্যিক দিক সুলতান দ্বারা ঐ নেতা উদ্দেশ্য যার কাছে সকল মানুষের কর্তৃত্ব অর্পিত ঘরের ও অন্য কিছুর মালিক উদ্দেশ্য নয়। এর উপর প্রমাণ করছে আবূ দাঊদ এর বর্ণনায় (وَلَا يَؤُمَّ الرَّجُلُ فِيْ بيته وَلَا فِيْ سُلْطَانِه) শব্দ কর্তৃক যা বর্ণিত আছে। এর বাহ্যিক দিক হল সুলতান বাদশাহ অন্যের উপর প্রাধান্য পাবে। যদিও অন্য ব্যক্তি সুলতান অপেক্ষা কুরআন পাঠে, ফিকহী মাসআলাহ্, আল্লাহ ভীতিতে ও মর্যাদার দিক থেকে সুলতান অপেক্ষা বেশি ভালো হয় এ বর্ণনাটি পূর্বের বর্ণনাকে খাস করার মতো। অর্থাৎ নিশ্চয় প্রথম হাদীসটি বড় ইমাম এবং তার স্থলাভিষিক্ত যারা তারা ছাড়া অন্যান্য ইমামের ওপরে বর্তাবে। বাড়ীর মালিক সম্পর্কে একটি খাস হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বাড়ীর কর্তৃত্ব সম্পর্কে বেশি হকদার। ইমাম ত্ববারানী আবূ মাস্‘ঊদ-এর একটি হাদীস সংকলন করেছেন তিনি বলেন, সুন্নাহের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বাড়ীর মালিককে অন্যের উপর প্রাধান্য দেয়া।

হাফিয (রহঃ) বলেন, এর রাবীগণ নির্ভরশীল। হায়সামী (রঃ) বলেন, এর রাবীগুলো সহীহ গ্রন্থের রাবী। বাযযার ও ত্ববারানী আওসাত ও কাবীর গ্রন্থে ‘আবদুল্লাহ বিন হানযালাহ্ কর্তৃক মারফূ‘ সূত্রে একটি হাদীস সংকলন করেছেন। তা হল (الرجل أحق أن يؤم في بيته) অর্থাৎ ব্যক্তি নিজ বাড়ীতে কর্তৃত্ব করার বেশি হকদার। হায়সামী বলেন, এর সূত্রে ইসহাক বিন ইয়াহ্ইয়া বিন ত্বলহাহ্ (রাঃ) রয়েছে। ইমাম আহমাদ, ইবনু মা‘ঈন ও ইমাম বুখারী (রহঃ) তাকে দুর্বল বলেছেন, ইয়া‘কূব বিন শায়বাহ্ ও ইবনু হিব্বান তাকে নির্ভরশীল বলেছেন। ইমাম শাফি‘ঈর সাথীবর্গ বলেন, সুলতান এবং নায়েবে সুলতানকে ঘরের মালিক মসজিদের ইমাম এবং এতদুভয় ছাড়া অন্যান্যদের উপরে প্রাধান্য দিতে হবে। কেননা তার কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব ব্যাপক তারা বলেছে বাড়ীর মালিক-এর জন্য মুস্তাহাব হবে যে তার অপেক্ষা উত্তম তাকে কর্তৃত্বের অনুমতি দেয়া (وَلَا يَقْعُدْ فِي بَيْتِه عَلى تَكْرِمَتِه) অর্থাৎ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির বাড়ীতে তার সম্মানের স্থানে বসবে না। আর তা বিছানা ও জায়নামায এবং অনুরূপ বস্ত্তর দিক থেকে তার বাড়ীতে তাকে সম্মান দেয়া স্বরূপ। নিহায়া গ্রন্থে তিনি বলেন, সেটা বিছানা অথবা খাট এর দিক থেকে ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট স্থান যা ব্যক্তির সম্মানে গণ্য করা হয়। (إِلَّا بِإِذْنِه) ইবনুল মালিক বলেছেন, এ অংশটুকু পূর্বে সমস্ত কথার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেছেন, আমি বলবঃ এ কথাটি আরো কতিপয় রিওয়ায়াতে নস স্বরূপ এসেছে। মাজদ ইবনু তায়মিয়্যাহ্ আল মুলতাক্বা‘ গ্রন্থে বলেছেন, উল্লেখিত হাদীসটিকে সা‘ঈদ বিন মানসূর বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি সেখানে বলেছেন, ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কর্তৃত্বের স্থানে তার ইমামতি করবে না। তবে তার অনুমতিক্রমে করতে পারে এবং ব্যক্তি অপর ব্যক্তির বাড়ীতে তার সম্মানের স্থানে বসবে না। তবে তার অনুমতিক্রমে বসতে পারে। অতঃপর প্রতিটি বর্ণনায় অনুমতির কথা আছে এবং ইমাম আহমাদ ও জমহূর ‘উলামাহ্ এ ব্যাপারে বলেন, এটাই ঠিক।

এক মতে বলা হয়েছে, (إِلَّا بِإِذْنِه) উক্তিটুকু শুধুমাত্র (لَا يَقْعُدْ) উক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত- এ মতটি ইসহাক (রহঃ) পোষণ করেছেন। মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এসেছে। (وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلَ الرَّجُلُ فِيْ أََهْلِه) এবং সহীহ মুসলিমের আরো কতক নুসখায় এসেছে (وَلَا تَؤُمَّنَّ الرجل فِي أَهله) আর এ বর্ণনাটিকে সমর্থন করছে পরবর্তী বর্ণনাটি আর তা হলো (ولا في سلطانه ولا تجلس على تكرمته في بيته إلا بأذن لك أو بإذنه)।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ  শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ্’ গ্রন্থে বলেন, কুরআন পাঠে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে অন্যান্যদের উপরে মুক্বদ্দাম করার কারণ হচ্ছে নিশ্চয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইলমের জন্যে একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করেছেন। যেমন আমরা বর্ণনা করেছি এবং সেখানে সর্বপ্রথম স্থানে যা ছিল তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, কেননা তা ‘ইলমের মূল এবং তা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কুরআন পাঠে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার দেয়া আবশ্যক এবং তার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করতে হবে। যাতে করে তা কুরআন পাঠে পারস্পারিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে আহবান করেন।

আর তা শুধুমাত্র এমন নয় যে, মুসল্লী সালাতে কুরআন পাঠের প্রয়োজনমুখী হয় বিধায় কুরআন পাঠে সর্বোত্তম ব্যক্তিকে অন্যদের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। তবে মূল কারণ হল কুরআন পাঠে পারস্পরিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে মানুষকে উৎসাহিত করা। শ্রেষ্ঠত্ব কেবল পারস্পারিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনুভব করা যায়। সালাতকে পারস্পরিক প্রতিযোগিতার বিবেচনার সাথে খাস করার কারণ হলো, সালাতের ক্বিরাআতের মুখাপেক্ষী হওয়া। অতএব বিষয়টি চিন্তাশীল ব্যক্তির চিন্তা করা উচিত, অতঃপর ক্বিরাআতের পর সুন্নাত জানার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে, কেননা কিতাবুল্লাহ এরপর তার স্থান এবং এর মাধ্যমেই জাতির স্বয়ংসম্পূর্ণতা আর তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাতের মাঝে মীরাসী সম্পত্তি।

এর পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে হিজরতের বিষয়টিকে বিবেচনা করা হয়েছে। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের বিষয়কে সম্মান দিয়েছেন, এ ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন ও জোর দিয়েছেন। আর এটা পূর্ণাঙ্গ উৎসাহ ও জোরের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর বয়সের আধিক্যতা, কেননা সমস্ত জাতির মাঝে ছড়িয়ে যাওয়া সুন্নাত বড়কে সম্মানকরণ স্বরূপ। কেননা বয়সে বড় যিনি তিনি অধিক দক্ষতার অধিকারী ও বড় সহনশীলতার অধিকারী। তবে নেতার নেতৃত্বের স্থানে বড়কে অগ্রাধিকার দেয়া থেকে কেবল এ জন্য নিষেধ করা হয়েছে যে, কেননা নেতার কাছে তা কঠিন ও তার নেতৃত্ব বা ত্রুটিমুক্ত করবে এই জন্য সুলতানের মূল্যায়ন করে এ বিষয়টিকে শারী‘আতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)