১০৪৩

পরিচ্ছেদঃ ২২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাত নিষিদ্ধ সময়ের বিবরণ

১০৪৩-[৫] কুরায়ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ’আব্বাস, মিস্ওয়ার ইবনু মাখরামাহ্ ও ’আবদুর রহমান ইবনু আযহার (রাঃ)তারা সকলে তাকে ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। তারা তাকে বলে দিলেন, ’আয়িশাকে তাদের সালাম দিয়ে ’আসরের সালাতের পর দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার ব্যাপারে প্রশ্ন করতে। কুরায়ব বলেন, আমি ’আয়িশার নিকট হাযির হলাম। ঐ তিনজন যে খবর নিয়ে আমাকে পাঠালেন আমি সে খবর তার কাছে পৌঁছালাম। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করো। অতঃপর তাদের কাছে গেলাম, তারপর তারা আমাকে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। অতঃপর উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। তিনি এ দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। তারপর আমি দেখলাম, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই এ দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করছেন। তিনি (এ দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করে) ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন, আমি খাদিমকে রসূলের দরবারে পাঠালাম এবং তাকে বলে দিলাম, তুমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গিয়ে বলবে যে, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলছেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে বলতে শুনেছি এ দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। অথচ আমি আপনাকে এ দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতে দেখেছি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ উমাইয়্যার মেয়ে! তুমি ’আসরের পরে দু’ রাক্’আত সালাত আদায়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছ। ’আবদুল ক্বায়স গোত্রের কিছু লোক (ইসলামী শিক্ষা ও দীনের হুকুম আহকাম জানার জন্য) আমার কাছে আসে। (তাদের দীনের ব্যাপারে আহকাম বলতে বলতে) তারা আমাকে যুহরের পরের দু’ রাক্’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা থেকে ব্যস্ত রাখেন। সেটাই এ দু’ রাক্’আত (যে দু’ রাক্’আত সালাত এখন ’আসরের পরে পড়লাম)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ أَوْقَاتِ النَّهْيِ

وَعَنْ كُرَيْبٍ: أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ وَالْمِسْوَرَ بْنَ مخرمَة وَعبد الرَّحْمَن بن أَزْهَر رَضِي اللَّهُمَّ عَنْهُم وأرسلوه إِلَى عَائِشَةَ فَقَالُوا اقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَسَلْهَا عَن [ص:329] الرَّكْعَتَيْنِ بعدالعصرقال: فَدَخَلْتُ عَلَى عَائِشَةَ فَبَلَّغْتُهَا مَا أَرْسَلُونِي فَقَالَتْ سَلْ أُمَّ سَلَمَةَ فَخَرَجْتُ إِلَيْهِمْ فَرَدُّونِي إِلَى أم سَلمَة فَقَالَت أم سَلمَة رَضِي اللَّهُمَّ عَنْهَا سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَى عَنْهُمَا ثُمَّ رَأَيْتُهُ يُصَلِّيهِمَا ثُمَّ دَخَلَ فَأَرْسَلْتُ إِلَيْهِ الْجَارِيَةَ فَقُلْتُ: قُولِي لَهُ تَقُولُ أُمُّ سَلَمَةَ يَا رَسُولَ اللَّهِ سَمِعْتُكَ تَنْهَى عَنْ هَاتين وَأَرَاكَ تُصَلِّيهِمَا؟ قَالَ: «يَا ابْنَةَ أَبِي أُمَيَّةَ سَأَلْتِ عَنِ الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعَصْرِ وَإِنَّهُ أَتَانِي نَاسٌ مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ فَشَغَلُونِي عَنِ الرَّكْعَتَيْنِ اللَّتَيْنِ بعد الظّهْر فهما هَاتَانِ»

وعن كريب ان ابن عباس والمسور بن مخرمة وعبد الرحمن بن ازهر رضي اللهم عنهم وارسلوه الى عاىشة فقالوا اقرا عليها السلام وسلها عن ص329 الركعتين بعدالعصرقال فدخلت على عاىشة فبلغتها ما ارسلوني فقالت سل ام سلمة فخرجت اليهم فردوني الى ام سلمة فقالت ام سلمة رضي اللهم عنها سمعت النبي صلى الله عليه وسلم ينهى عنهما ثم رايته يصليهما ثم دخل فارسلت اليه الجارية فقلت قولي له تقول ام سلمة يا رسول الله سمعتك تنهى عن هاتين واراك تصليهما قال يا ابنة ابي امية سالت عن الركعتين بعد العصر وانه اتاني ناس من عبد القيس فشغلوني عن الركعتين اللتين بعد الظهر فهما هاتان

ব্যাখ্যা: (سَلْهَا عَن الرَّكْعَتَيْنِ بعدالعصر) ‘‘তাকে ‘আসরের পরের দু’ রাক্‘আত সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর’’। অন্য বর্ণনায় এতটুকু বর্ণিত আছে যে, তুমি তাকে বলবে, আমাদের নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, আপনি এ দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে থাকেন, অথচ আমাদের নিকট এ মর্মে সংবাদ পৌঁছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আদায় করতে নিষেধ করেছেন।

(سَلْ أُمَّ سَلَمَةَ) ‘‘তুমি এ বিষয়ে উম্মু সালামাকে জিজ্ঞেস কর’’- এতে এ বিষয়ের প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ‘আলিমের জন্য মুস্তাহাব হল, যখন তার নিকট কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় আর সে জানে যে, এ বিষয়ে তার চেয়ে অভিজ্ঞ লোক রয়েছেন যিনি ঐ বিষয়ে প্রকৃত ও বাস্তব বিষয় অবহিত আছেন তাহলে ঐ বিষয়ে জানার জন্য তার নিকট প্রেরণ করা যদি তা সম্ভব হয়। আর এতে অন্যের মর্যাদার স্বীকৃতিও রয়েছে।

(سَمِعْتُكَ تَنْهى عَنْ هَاتين وَأَرَاكَ تُصَلِّيهِمَا) ‘‘আপনাকে এ দু’ রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা থেকে বারণ করতে শুনেছি অথচ আমি আপনাকে তা আদায় করতে দেখছি’’ এর কারণ কি? এতে এ শিক্ষা রয়েছে যে, অনুসারী ব্যক্তি যদি অনুসৃত ব্যক্তির মধ্যে এমন কিছু দেখতে পায় যা তার সাধারণ অভ্যাসের বিরোধী, তাহলে ভদ্রতার সাথে তাকে তা অবহিত করা। যদি তিনি তা ভুল করে থাকেন তবে তা পরিহার করবেন। আর যদি ইচ্ছকৃতভাবেই করে থাকেন এবং এর কোন কারণ থাকে তাহলে তিনি তা অনুসারীকে অবহিত করবেন যাতে সে তা থেকে উপকৃত হতে পারে।

(فَشَغَلُونِي عَنِ الرَّكْعَتَيْنِ اللَّتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ) তারা আমাকে যুহরের পরের দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করা থেকে ব্যাস্ত রেখেছিল। এতে বুঝা যায়, দু’টি কল্যাণমূলক কাজের মাঝে যদি সংঘর্ষ দেখা দেয় তাহলে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আগে সম্পাদন করতে হবে। এজন্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সুন্নাত সালাত বাদ রেখে আগত লোকদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে কথাবার্তা বললেন।

(فَهُمَا هَاتَانِ) ‘‘এ দু’ রাক্‘আত সেই সালাত’’। অর্থাৎ ‘আসরের পরে আমি যে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করেছি তা হলো সেই দুই রাক্‘আত যা আমি যুহরের পরে ব্যাস্ততার কারণে আদায় করতে পারিনি। তা আমি এখন আদায় করলাম। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল যে, তিনি ‘ইবাদাত জাতীয় কোন কাজ একবার করলে তা আর পরিত্যাগ করতেন না। তাই এ দু’ রাক্‘আত সালাত তিনি অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছিলেন। এতে প্রমাণ পাওয়া যায়, যুহরের সালাতের পরের দু’ রাক্‘আত সুন্নাত ‘আসরের সালাতের পরেও ক্বাযা হিসেবে আদায় করা যায়।

যদি প্রশ্ন তোলা হয় যে, এটি তো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন খাস। কেননা আবূ দাঊদে ও বায়হাক্বীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসরের পর সালাত আদায় করতেন কিন্তু তিনি অন্যদের তা আদায় করতে বারণ করতেন। তিনি সাওমে বিশাল পালন করতেন অথচ অন্যদের তা পালন করতে বারণ করতেন।

ইমাম আহমাদ, ইবনু হিব্বান ও ত্বহাবী উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি তা ছুটে যায় তবে আপনি কি তা ক্বাযা করবেন? তিনি বললেনঃ না।

এর জবাব এই যে, সকল বিষয়েই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ আসল নিয়ম, যতক্ষণ না কোন বিষয় তাঁর জন্য খাস হওয়ার সঠিক দলীল পাওয়া যায়। উল্লেখিত ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের সানাদের একজন রাবী মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব তিনি মুদাল্লিস। তাছাড়া ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলের তা ধারাবাহিকভাবে আদায় করাকে রসূলের জন্য খাস মনে করতেন, ক্বাযা করাকে তাঁর জন্য খাস মনে করতেন না।

আর উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটিও যথাযথ দলীলযোগ্য নয়।

হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনঃ উল্লেখিত সময়ে সালাত আদায় করা ও তা আদায় করতে নিষেধ করা এ দুই বর্ণনার মধ্যে মূলত কোন সংঘর্ষ নেই। কেননা যাতে সালাত আদায় করার বর্ণনা রয়েছে তার কারণ বিদ্যমান রয়েছে। অতএব কারণবশতঃ যা আদায় করা হবে তা ঐ হাদীসের সাথে যুক্ত হবে যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারণবশতঃ আদায় করেছিলেন। আর ঐ সালাত নিষিদ্ধ থাকবে যার কোন কারণ নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)