১০২৩

পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্

তিলাওয়াতে সিজদার হুকুম সম্পর্কে ’আলিমগণের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে।

শাফি’ঈ এবং হানাবেলাদের নিকট তিলাওয়াতের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। মালিকীদের নিকট সাধারণ সুন্নাত আর হানাফীদের মতে তা ওয়াজিব। যারা ওয়াজিব বলেন তাদের দলীলঃ

১. হাদীসঃ ’আদম সন্তানকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে আদেশ করা হয়েছিল তারা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে জান্নাতের অধিকারী হয়েছে। আর আমাকেও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে আদেশ করা হয়েছিল আমি তা অস্বীকার করে জাহান্নামী হয়েছি’। অত্র হাদীসে আদম সন্তানের প্রতি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার নির্দেশ রয়েছে। আর নির্দেশ হলো ওয়াজিব হওয়ার দলীল। আর আয়াত দ্বারাও অনুরূপ বুঝা যায়। কেননা আয়াত তিন প্রকারেরঃ

১ম প্রকার- যাতে সিজদা্ করার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যেমন আল্লাহর বাণী ’’আল্লাহর উদ্দেশে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) কর এবং ’ইবাদাত কর’’- (সূরাহ্ আন্ নাজম ৫৩: ৬২)। ’’সিজদা্ কর এবং নৈকট্য অর্জন কর’’- (সূরাহ্ আল ’আলাক্ব ৯৬: ১৯)।

২য় প্রকার- যাতে সাজদার নির্দেশ সত্ত্বেও তা থেকে কাফিরদের বিরত থাকার বর্ণনা। যেমন আল্লাহর বাণী ’’তাদের কি হলো যে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং তাদের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করা হলে তারা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে না’’- (সূরাহ্ আল ইনশিক্বাক্ব ৮৪: ২০-২১)।

’’আর যখন তাদের বলা হয় তোমরা রহমানের উদ্দেশে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) কর তারা বললো রহমান কে? তুমি যাকে সিজদা্ করতে আদেশ করবে তাকেই কি আমরা সিজদা্ করব? তাদের অমান্য আরো বেড়ে গেল’’- (সূরাহ্ আল ফুরক্বান ২৫: ৬০)।

৩য় প্রকার- নবীদের সিজদা্ করার ঘটনা বর্ণনা এবং আল্লাহর কালাম শুনে যারা সাজদাতে লুটিয়ে পড়ে তাদের প্রশংসা। আল্লাহর নির্দেশ পালন করা, কাফিরদের বিরোধিতা করা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের অনুসরণ করা এসবই ওয়াজিব।

উপরোক্ত দলীলের জওয়াবে বলা হয় যে, উল্লেখিত দুই আয়াতের নির্দেশ এবং ইবলীসের উক্তির দ্বারা ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি মতবিরোধপূর্ণ বিষয় বরং ঐ নির্দেশ দ্বারা মানদূব (সুন্নাত) সাব্যস্ত হয়। এর দলীল যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সূরাহ্ আন্ নাজম পাঠ করলাম তাতে তিনি সিজদা্ করলেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা্ না করা সিজদা্ পরিত্যাগ করা বৈধতার প্রমাণ। ইমাম শাফি’ঈ এমনটিই বলেছেন, কেননা যদি তা ওয়াজিব হতো তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তীতে হলেও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার নির্দেশ দিতেন।


১০২৩-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ্ আন্ নাজম-এ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছেন। তার সাথে মুসলিম, মুশরিক, জিন্ ও মানুষ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছে। (বুখারী)[1]

بَابُ سُجُوْدِ الْقُرْانِ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: سَجَدَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم بِالنَّجْمِ وَسَجَدَ مَعَهُ الْمُسْلِمُونَ وَالْمُشْرِكُونَ وَالْجِنُّ وَالْإِنْسُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن ابن عباس قال سجد النبي صلى الله عليه وسلم بالنجم وسجد معه المسلمون والمشركون والجن والانس رواه البخاري

ব্যাখ্যা: ‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ্ আন্ নাজম পাঠান্তে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছেন’ ত্ববারানীতে ‘মক্কা’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে। এতে বুঝা যায় অত্র অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদে ইবনু মাস্‘ঊদ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীস একই ঘটনার বর্ণনা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছিলেন তাঁর প্রতি সিজদা্ করার আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে এবং তাঁর প্রতি মহান আল্লাহর মহা নি‘আমাতের শুকরিয়া তথা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নিমিত্তে। এ হাদীসটি মুফাস্‌সাল সূরাগুলোতে সিজদা্ করার বিষয় বিধিবদ্ধ হওয়ার প্রমাণ বহন করে।

‘মুসলিমগণও তাঁর সাথে সিজদা্ করলেন’ মুসলিমগণের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণের নিমিত্তে (وَالْمُشْرِكُونَ) ‘মুশরিকগণও সিজদা্ করে’ অর্থাৎ যে সকল মুশরিক তার নিকট উপস্থিত ছিল তারাও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে। মুশরিকগণের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার কারণ ছিল উক্ত সূরাতে তাদের দেব-দেবীর নাম যথা লাত, উজ্জা ও মানাতের উচ্চারণ। অর্থাৎ এগুলোর নাম শুনার কারণে তারা সিজদা্ করেছিল।

হাদীসের এ অংশ থেকে প্রমাণিত হয়, কোন ব্যক্তি সাজদার আয়াত পাঠ করলে তার শ্রবণকারীর জন্যও সিজদা্ করার বিধান বিধিবদ্ধ।

(وَالْجِنُّ) জিনেরাও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এ কথাটি হয়তো বা সরাসরি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখ থেকে পরবর্তীতে শুনেছেন অথবা অন্য কোন সাহাবী থেকে শুনেছেন। কেননা তার বয়স অল্প থাকাতে তিনি ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)