৯৯১

পরিচ্ছেদঃ ১৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের মাঝে যে সব কাজ করা নাজায়িয ও যে সব কাজ করা জায়িয

৯৯১-[১৪] ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বিলালকে প্রশ্ন করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত থাকা অবস্থায় তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিলে তিনি সালামের জবাব কিভাবে দিতেন? বিলাল উত্তরে বললেন, তিনি হাত দিয়ে (সালামের জবাবে) ইশারা করতেন। (তিরমিযী; নাসায়ীর বর্ণনাও এমনই। তবে তাতে বিলাল-এর স্থলে সুহায়ব (রাঃ)থেকে বর্ণিত হয়েছে বলে উল্লেখ হয়েছে।)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قُلْتُ لِبِلَالٍ: كَيْفَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرُدُّ عَلَيْهِم حِين حانوا يُسَلِّمُونَ عَلَيْهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ؟ قَالَ: كَانَ يُشِيرُ بِيَدِهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَفِي رِوَايَةِ النَّسَائِيِّ نَحوه وَعوض بِلَال صُهَيْب

وعن ابن عمر قال قلت لبلال كيف كان النبي صلى الله عليه وسلم يرد عليهم حين حانوا يسلمون عليه وهو في الصلاة قال كان يشير بيده رواه الترمذي وفي رواية النساىي نحوه وعوض بلال صهيب

ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসে প্রশ্ন করা হয়েছে সাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতরত অবস্থায় সালাম দিলে তিনি কিভাবে উত্তর দিতেন এ প্রশ্ন কখন করা হয়েছিল? এতে দু’টি সম্ভাবনা রয়েছে, (১) সালাতে কথা বলার বৈধতা রহিত হওয়ার পর। (২) সালাতে কথা বলার বৈধতা রহিত হওয়ার আগে। মুল্লা ‘আলী আলী ক্বারী বলেনঃ এটি সালাতে কথা বলার বৈধতা রহিত হওয়ার আগের ঘটনা। আর এটিই প্রকাশমান। পক্ষান্তরে শাইখ ‘আবদুল হক দেহলভী বলেন, এটি সালাতে কথা বলার বৈধতা রহিত হওয়ার পরের ঘটনা। আর এটিই প্রকাশমান।

হাদীসের শিক্ষা:

সালাতরত অবস্থায় হাতের ইশারায় সালামের জওয়াব দেয়া বৈধ। জমহূর ‘উলামাদের মত এটাই। হানাফী ‘আলিম এক্ষেত্রে মতভেদ করেছেন। ইমাম তাহাবী বলেনঃ ইশারায় সালামের জওয়াব দেয়া মাকরূহ। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এতে কোন ক্ষতি নেই। আমি (মুবারকপূরী) বলছিঃ জমহূর ‘উলামাদের অভিমতই সঠিক। অনেক সহীহ হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে।

১. বিলাল (রাঃ)-এর অত্র হাদীস।

২. সুহায়ব (রাঃ) বর্ণিত হাদীস, ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত অবস্থায় ছিলেন এমন সময় আমি তাঁর নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইশারায় আমার সালামের জওয়াব দিলেন। তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটিকে হাসান বলেছেন।

৩. ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-মসজিদে কুবায় প্রবেশ করলেন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য। এমতাবস্থায় লোকজন তাঁর নিকট গিয়ে তাঁকে সালাম দিতে থাকলো। সুহায়ব (রাঃ) তার সাথে থাকায় আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিলে তিনি কি করতেন? তিনি বললেনঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাত দ্বারা ইশারা করতেন। হাদীসটি মুসনাদ আহমাদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, দারিমী হাকিম ও বায়হাক্বী সংকলন করেছেন।

৪. আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস, ‘‘এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইশারাতে সালামের জওয়াব দিলেন এবং বললেনঃ আমরা সালাতরত অবস্থায় সালামের জওয়াব দিতাম। অতঃপর আমাদেরকে তা নিষেধ করা হয়েছে। হাদীসটি ইমাম তাহাবী এবং বাযযার সংকলন করেছেন

পক্ষান্তরে যারা সালাতরত অবস্থায় ইশারাতে সালামের জওয়াব দেয়া অবৈধ মনে করেন তাদের দলীলঃ

১. আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস, ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে পুরষের জন্য ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ বলা এবং নারীদের জন্য হাতে তালি বাজানোর বিধান। যে ব্যক্তি সালাতরত অবস্থায় ইশারা দিয়ে কিছু বুঝায় সে যেন উক্ত সালাত পুনরায় আদায় করে। হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ সংকলন করেছেন। এর জওয়াব হল হাদীসটি য‘ঈফ যা দলীলযোগ্য নয়। কেননা এর সানাদে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক নামক এক রাবী আছেন। আর তিনি মুদাল্লিস।

২. তাদের অপর দলীলঃ সালাতরত অবস্থায় ইশারাতে সালামের জওয়াব দেয়ার বিধান রহিত হয়ে গেছে। কেননা অর্থগত দিক থেকে তা কথা বলার স্থলাভিষিক্ত। আর সালাতে কথা বলা নিষেধ, অতএব ইশারা করাও নিষেধ। এর জওয়াব এই যে, ইশারা করা কথা বলার স্থলাভিষিক্ত নয়। কেননা চোখের ইশারা কথা বলার স্থলাভিষিক্ত নয়। আর ইশারা শরীরের যে কোন অঙ্গ সঞ্চালন দ্বারা হয়ে থাকে। হাত ব্যতীত শরীরের অন্য কোন অঙ্গ দ্বারা ইশারা করলে যেমন সালাত বিনষ্ট হয় না অনুরূপ হাত দ্বারা ইশারা করলেও সালাত বিনষ্ট হয় না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)