৯৪৯

পরিচ্ছেদঃ ১৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ

৯৪৯-[১১] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, হে মু’আয! আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমিও সবিনয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দু’আ পাঠ করতে ভুল করো নাঃ ’’রব্বি আ’ইন্নী ’আলা- যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ’ইবা-দাতিকা।’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিকর, শুকর ও উত্তমরূপে ’ইবাদাত করতে সাহায্য কর)। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1] কিন্তু আবূ দাঊদ, ’’ক্ব-লা মু’আ-যুন ওয়া আনা- উহিব্বুকা’’ বাক্য বর্ণনা করেননি।

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: أَخَذَ بِيَدِي رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ: «إِنِّي لَأُحِبُّكَ يَا مُعَاذُ» . فَقُلْتُ: وَأَنَا أُحِبُّكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: فَلَا تَدَعْ أَنْ تَقُولَ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ: رَبِّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ إِلَّا أَنَّ أَبَا دَاوُدَ لَمْ يَذْكُرْ: قَالَ معَاذ وَأَنا أحبك

عن معاذ بن جبل قال اخذ بيدي رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال اني لاحبك يا معاذ فقلت وانا احبك يا رسول الله قال فلا تدع ان تقول في دبر كل صلاة رب اعني على ذكرك وشكرك وحسن عبادتك رواه احمد وابو داود والنساىي الا ان ابا داود لم يذكر قال معاذ وانا احبك

ব্যাখ্যা: (إِنِّيْ لَاحِبُّكَ يَا مُعَاذُ) হে মু‘আয! আমি তোমাকে ভালোবাসি, এটা মু‘আয  (রাঃ) এর জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে মর্যাদা বৃদ্ধির পরিচায়ক।

(قَالَ فَلَا تَدَعْ) দু‘আ বলা ছাড়বে না তথা যদি আমাকে ভালোবাস অথবা যদি তোমার এবং আমার মাঝে ভালোবাসা থাকে বা যদি এ ভালোবাসার উপর অঁটুট থাকতে চাও তাহলে (এ দু‘আ) ছাড়বে না। আর নিষেধের মূলনীতি হলো হারাম। সুতরাং এ বাক্য দ্বারা দু‘আ করা ওয়াজিব এর উপর প্রমাণ বহন করে।

সালাতের শেষের দিকে তা হতে বের হওয়ার পূর্বে। কারো মতে অর্থ হলো সালাতের পরে, কেননা دُبُرِ শব্দ অভিধানে সম্মুখের বিপরীত এবং প্রত্যেক জিনিসের পরে।

আর লেখক (রহঃ) এ দু‘আকে তাশাহুদের দু‘আর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং তিনি প্রথমের অর্থটি তথা তাশাহহুদের শেষে সালামের পূর্বে গ্রহণ করেছেন। আর এর সমর্থনে আহমাদ-এর বর্ণনার শব্দ إِِنِّيْ أُوْصِيْكَ بِكَلِمَاتٍ تَقُوْلَهُنَّ فِيْ كُلِّ صَلَاةٍ আমি তোমাকে এমন কিছু বাক্য বা দু‘আ ওয়াসীত করছি যা তুমি প্রত্যেক সালাতে বলবে।

(رَبِّ أَعِنِّيْ عَلـى ذِكْرِكَ) ‘‘তুমি আমাকে তোমার স্মরনে সাহায্য করো।’’

ইমাম তীববী বলেন, এটা রবী‘আহ্ ইবনু কা‘ব এর হাদীস-এর অর্থে অতি নিকটবর্তী যা সাজদার অধ্যায়। যখন তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নৈকট্য বা বন্ধুত্ব কামনা করছিলেন তখন বলেছিলেন, বেশি বেশি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দেয়ার মাধ্যমে তোমার স্মরণে আমাকে সাহায্য করো। এমনকি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভালোবাসা প্রমাণ করবে ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে সর্বদাই আল্লাহর স্মরণ ও বেশি বেশি সাজদার মাধ্যমে।

(أَعِنِّيْ عَلـى ذِكْرِكَ) ‘তোমার স্মরণে আমাকে সাহায্য করো’ দ্বারা উদ্দেশ্য হৃদয়ের প্রশস্ততা কর্মের সহজতা ও জিহবার সচলতা যেদিকে মূসা (আঃ)-এর দু‘আ ইঙ্গিত করে।

﴿رَبِّ اشْرَحْ لِىْ صَدْرِىْ ۝ وَيَسِّرْ لِىْ اَمْرِىْ ۝ وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِىْ ۝ يَفْقَهُوا قَوْلِىْ﴾ [20: 25- 27] ﴿ كىْ نُسَبِّحَكَ كَثِيْرًا ۝ وَنَذْكُرَكَ كَثِيْرًا﴾[: 33، 34]

‘‘হে আমার পালনকর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে এবং আমার পরিবারবর্গ হতে মধ্য হতে আমার একজন সাহায্যকারী করে দিন আমার ভাই হারূনকে। তার মাধ্যমে আমার কোমরকে মজবুত করে দিন এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন যাতে আমরা বেশি করে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি এবং বেশি পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি।’’ (সূরাহ্ ত্বা-হা- ২০ : ২৫-৩৪)

তোমার কৃতজ্ঞতা উদ্দেশ্যঃ আগত নি‘আমাতের ধারাবাহিকতার উপর ক্রমাগত কৃতজ্ঞতা বা শুকর আদায় করা। এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপর সাহায্য কামনা করা আর তা অত্যন্ত কঠিন, কেননা আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘আমার বান্দাদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই কৃতজ্ঞ’’। (সূরাহ্ সাবা- ৩৪ : ৩৪)

(وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ) উদ্দেশ্য ঐ সমস্ত কার্যক্রম হতে মুক্ত রাখা যা আল্লাহ হতে অমনোযোগী করে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ‘ইবাদাত হতে দূরে রাখে। যা আল্লাহর সাথে মুনাজাতে ব্যাস্ত থাকে যেমনটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিত করেছেন, ‘‘সালাতে আমার চক্ষুকে শীতল করো।’’ ইহসান দ্বারা এ স্থান আরো সংবাদ হতে পারে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ الإحسان أن تعبد الله كأنك تراه ‘‘ইহসান হলো তুমি যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত এমনভাবে করছো যেন তুমি আল্লাহকে দেখছো।’’

আর এ সমস্ত বাক্য দ্বারা উপদেশ খাস করার উদ্দেশ্য হলো দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণ অন্তর্ভুক্ত করা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)