৬৮৪

পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিলম্বে আযান

৬৮৪-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধ হতে ফেরার পথে রাতে পথ চলছেন। এক সময়ে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষ রাতে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। বিলাল (রাঃ)-কে বলে রাখলেন, সালাতের জন্য রাতে লক্ষ্য রাখতে। এরপর বিলাল, তার পক্ষে যা সম্ভব হয়েছে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীগণ ঘুমিয়ে রইলেন। ফজরের (ফজরের) সালাতের সময় কাছাকাছি হয়ে আসলে বিলাল সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে নিজের উটের গায়ে হেলান দিলেন। বিলালকে তার চোখ দু’টো পরাজিত করে ফেলল (অর্থাৎ- তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন)। অথচ তখনো বিলাল উটের গায়ে হেলান দিয়েই আছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগলেন না। বিলালও জাগলেন না, না রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীদের কেউ। যে পর্যন্ত না সূর্যের তাপ তাদের গায়ে লাগলো।

এরপর তাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ঘুম থেকে জাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যতিব্যাস্ত হয়ে বললেন, হে বিলাল! (কী হলো তোমার)। বিলাল উত্তরে বললেন, রসূল! আপনাকে যে পরাজিত করেছে সেই পরাজিত করেছে আমাকে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সওয়ারী আগে নিয়ে চলো। উটগুলো নিয়ে কিছু সামনে এগিয়ে গেলেন। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন। বিলালকে তাকবীর দিতে বললেন, বিলাল তাকবীর দিলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতের কথা ভুলে গেলে যখনই তা মনে পড়বে তখনই আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ’’সালাত ক্বায়িম কর আমার স্মরণে’’। (মুসলিম)[1]

بَابُ تَاخِيْرِ الْاَذَانِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ قَفَلَ مِنْ غَزْوَةِ خَيْبَرَ سَارَ لَيْلَةً حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْكَرَى عَرَّسَ وَقَالَ لِبِلَالٍ: اكْلَأْ لَنَا اللَّيْلَ. فَصَلَّى بِلَالٌ مَا قُدِّرَ لَهُ وَنَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ فَلَمَّا تَقَارَبَ الْفَجْرُ اسْتَنَدَ بِلَال إِلَى رَاحِلَته موجه الْفَجْرِ فَغَلَبَتْ بِلَالًا عَيْنَاهُ وَهُوَ مُسْتَنِدٌ إِلَى رَاحِلَتِهِ فَلَمْ يَسْتَيْقِظْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا بِلَالٌ وَلَا أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ حَتَّى ضَرَبَتْهُمُ الشَّمْسُ فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوَّلَهُمُ اسْتِيقَاظًا فَفَزِعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَيْ بِلَالُ» فَقَالَ بِلَالٌ أَخَذَ بِنَفْسَيِ الَّذِي أَخَذَ بِنَفْسِكَ قَالَ: «اقْتَادُوا» فَاقْتَادَوا رَوَاحِلَهُمْ شَيْئًا ثُمَّ تَوَضَّأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَ بِلَالًا فَأَقَامَ الصَّلَاةَ فَصَلَّى بِهِمُ الصُّبْحَ فَلَمَّا قَضَى الصَّلَاةَ قَالَ: مَنْ نَسِيَ الصَّلَاةَ فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذكرهَا فَإِن الله قَالَ (أقِم الصَّلَاة لذكري)

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم حين قفل من غزوة خيبر سار ليلة حتى اذا ادركه الكرى عرس وقال لبلال اكلا لنا الليل فصلى بلال ما قدر له ونام رسول الله صلى الله عليه وسلم واصحابه فلما تقارب الفجر استند بلال الى راحلته موجه الفجر فغلبت بلالا عيناه وهو مستند الى راحلته فلم يستيقظ رسول الله صلى الله عليه وسلم ولا بلال ولا احد من اصحابه حتى ضربتهم الشمس فكان رسول الله صلى الله عليه وسلم اولهم استيقاظا ففزع رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال اي بلال فقال بلال اخذ بنفسي الذي اخذ بنفسك قال اقتادوا فاقتادوا رواحلهم شيىا ثم توضا رسول الله صلى الله عليه وسلم وامر بلالا فاقام الصلاة فصلى بهم الصبح فلما قضى الصلاة قال من نسي الصلاة فليصلها اذا ذكرها فان الله قال اقم الصلاة لذكري

ব্যাখ্যা: হাদীসটিতে যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীরা ছিলেন সেখানে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মূলতবী করে অন্য স্থানে সালাত আদায় করার কারণ বিবৃত হয়েছে। কেননা সেখানে উদাসীনতা পেয়ে বসেছিল। আরও হাদীসটিতে প্রতিবাদ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যারা দাবী করে সময়টি ছিল সালাত আদায়ের নিষিদ্ধ সময়।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার চক্ষু ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না। অন্তর জাগ্রত থাকা সত্ত্বেও তিনি সূর্যোদয় সম্পর্কে কেন জানতে পারলেন না এ প্রশ্নের জবাব দু’ভাবে।

প্রথমত এটাই প্রসিদ্ধ ও সঠিক। এতে কোন দ্বন্দ্ব নেই, কেননা অন্তরাত্মা অনুভূতির কাজে সংশ্লিষ্ট যেমন ব্যথা ইত্যাদি। তা সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এগুলো চর্মচক্ষুর কাজ আর চর্মচক্ষু ঘুমানোর কারণে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানতে পারেনি যদিও অন্তরাত্মা জাগ্রত ছিল।

দ্বিতীয়ত অন্তরাত্মার দু’টি অবস্থা। কখনো ঘুমায় আবার কখনো ঘুমায় না। তবে অধিকাংশ সময় ঘুমায় না। কিন্তু এ স্থানে অন্তরাত্মা ঘুমিয়েছিল এটি দুর্বল মন্তব্য।

(وَأَمَرَ بِلَالًا فَأَقَامَ الصَّلَاةَ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ)-কে ইক্বামাতের আদেশ দিলে তিনি ইক্বামাত দিলেন, এটা প্রমাণ করে ক্বাযা সালাতের জন্য ইক্বামাত রয়েছে আর আযান নেই। তবে আবূ ক্বাতাদার হাদীস বুখারী ও মুসলিমে আযানের কথা এসেছে।

আবূ হুরায়রার হাদীসে ক্বাযা সালাতের আযান নেই জবাব দু’টি হতে পারে।

প্রথমত তিনি আযানের বিষয়টি জানেননি।

দ্বিতীয়ত শুধু আযান বাদ দেয়ার বৈধতা প্রমাণের জন্য।

আর ইঙ্গিত করে যে, আযান আবশ্যিক তথা ওয়াজিব না বিশেষ করে সফররত ওয়াজিব হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

(مَنْ نَسِيَ الصَّلَاةَ فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا) যে ব্যক্তি সালাতের কথা ভুলে যায় সে তা পড়ে নিবে যখনই স্মরণ হয়।

এটা প্রমাণ করে যে, ক্বাযা ফরয সালাত আদায় করা ওয়াজিব। চাই তা কোন ওযরের কারণে হোক যেমন- ঘুম অথবা ভুলে যাওয়া। আর চাই ওযর ছাড়া হোক। আর যখন স্মরণ হবে তখন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নেবে- কথাটি মুস্তাহাব এর প্রমাণ বহন করে। আর ওযরের কারণে ক্বাযা সালাতকে দেরী করে আদায় করা সহীহ মতে বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)