৫৯১

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাত আদায়

৫৯১-[৫] বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ঠাণ্ডা সময়ে আদায় করবে। (অর্থাৎ- আবূ হুরায়রার বর্ণনায় بِالصَّلَاةِ শব্দ ব্যবহার হয়েছে আর আবূ সা’ঈদের বর্ণনায় بِالظُّهْرِ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে) কারণ গরমের প্রকোপ জাহান্নামের তাপ। জাহান্নাম আপন প্রতিপালকের নিকট অভিযোগ করে বলেছিল, হে আমার আল্লাহ! (গরমের তীব্রতায়) আমার একাংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন আল্লাহ তাকে অনুমতি দিলেন দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার। এক নিঃশ্বাস শীতকালে, আর এক নিঃশ্বাস গরমকালে। এজন্যই তোমরা গরমকালে তাপের তীব্রতা বেশী পাও। আর শীতকালে শীতের প্রচন্ডতা বেশী। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, তোমরা গরমের যে প্রচন্ডতা অনুভব কর তা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাসের কারণেই। আর শীতের তীব্রতা যা পাও তা জাহান্নামের ঠাণ্ডা নিঃশ্বাসের কারণেই।

بَابُ تَعْجِيْلِ الصَّلَوَاتِ

وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ: بِالظُّهْرِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ وَاشْتَكَتِ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ: رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ أَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الْحر وَأَشد مَا تَجِدُونَ من الزَّمْهَرِير . وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ: «فَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الْحَرِّ فَمِنْ سَمُومِهَا وَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الْبرد فَمن زمهريرها»

وفي رواية للبخاري عن ابي سعيد بالظهر فان شدة الحر من فيح جهنم واشتكت النار الى ربها فقالت رب اكل بعضي بعضا فاذن لها بنفسين نفس في الشتاء ونفس في الصيف اشد ما تجدون من الحر واشد ما تجدون من الزمهرير وفي رواية للبخاري فاشد ما تجدون من الحر فمن سمومها واشد ما تجدون من البرد فمن زمهريرها

ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় দু’ ধরনের আলোচনা রয়েছে-

(১) জাহান্নামের শ্বাস প্রশ্বাস বলতে কী বুঝায়?

(২) যুহর বিলম্ব করা প্রচন্ড গরমের কারণে।

(১) জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাস তার আসল ও প্রকৃত অর্থে আছে।

কিছু ‘আলিম বলেন যে, প্রকৃত অর্থে নেই বরং রূপক অর্থে আছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটি যথাযথ। ইমাম নাবাবীও প্রথম উক্তিটি সমর্থন করেছেন। কিন্তু এখানে একটি আপত্তি ও প্রশ্ন দেখা দেয় যে, পৃথিবীর উপর গরমটি তো কম-বেশী হয় সূর্যের নিকট ও দূরে হওয়ার কারণে। তাহলে পৃথিবীর গরমটি সূর্যের কারণে হলো জাহান্নামের কারণে নয়। উত্তর হলো এই যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা‘আলা রব্বুল ‘আলামীন সূর্যের ও জাহান্নামের মাঝে একটি সূক্ষ্ম সংযোগ ও সম্পর্ক সৃষ্টি করে রেখেছেন। যে সংযোগের মাধ্যমে সূর্য জাহান্নাম থেকে তাপ সংগ্রহ করে পৃথিবীর বুকে ছাড়ছে। আমরা মানুষ আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে সূর্য। আর উপলব্ধি করছি সূর্যের তাপ। প্রকৃতপক্ষে যে তাপটি আমরা অনুভব করি তা হচ্ছে জাহান্নামের তাপ। আর সূর্য ঐ তাপটি আমাদের নিকট পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি যন্ত্র মাত্র।

মাঝখানে আর একটি কথা, সেটা হলো আল্লাহর নিকট জাহান্নামের অভিযোগ করা। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তাঁর নিকট জড় পদার্থ নামের কোন জিনিস নেই। জড় ও জীবের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। জড় পদার্থকে বাকশক্তি দান করতে কোন সময় লাগে না তাঁর নিকট। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিম্বারটি ছিল শুকনো একটি খেজুর গাছের কান্ড শুকনো কাঠ। সেটা হাঁওমাও করে কান্না আরম্ভ করেছিল। সাহাবাগণ শুনেছিলেন।

(২) প্রচন্ড গরমের কারণে যুহর বিলম্বিত করা যায় ততটুকুই যতটুকু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে দেখিয়েছেন। অর্থাৎ- কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত। যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস আছে যে, খাব্বাব (রাঃ) বলেন যে, আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যুহর বিলম্ব করার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করেননি। উত্তর হচ্ছে এই যে, তাঁরা আরো বেশী বিলম্বিত করার জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁদের আবেদন গ্রহণ করলে যুহরের সময় পার হয়ে যেত সেজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আবেদন কবূল করেননি। প্রকৃত সত্য আল্লাহর নিকট।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)