২১০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২১০-[১৩] জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা দিনের প্রথম বেলায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। এমন সময়ে কাঁধে তরবারি ঝুলিয়ে একদল লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছল। তাদের শরীর প্রায় উলঙ্গ, ’আবা’ বা কালো ডোরা চাদর দিয়ে কোন রকমে শরীর ঢেকে রেখেছিল। তাদের অধিকাংশ লোক, বরং সকলেই ’মুযার’ গোত্রের ছিল। তাদের চেহারায় ক্ষুধার লক্ষণ প্রকাশ পেতে দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে গেল এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খাবারের খোঁজে ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর কিছু না পেয়ে বেরিয়ে আসলেন এবং বিলাল (রাঃ)-কে (আযান ও ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিতে) নির্দেশ করলেন। বিলাল (রাঃ)আযান ও ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিলেন এবং সকলকে নিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুতবাহ্ (খুতবা) দিলেন এবং এ আয়াত পড়লেনঃ

ياَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِىْ خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَّاحِدَةٍ إِلى اخِرِ الْايَةِ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا

’’হে মানুষেরা! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তা হতে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন, এরপর এ জোড়া হতে বহু নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা পরস্পর (নিজেদের অধিকার) দাবি করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কেও সতর্ক থাক। আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।’’

(সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ১)

অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ্ আল্ হাশর-এর এ আয়াত পড়লেনঃ

اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ

’’হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের প্রত্যেকে ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য (কিয়ামতের (কিয়ামতের) জন্য) কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।’’ (সূরাহ্ আল হাশর ৫৯: ১৮)

(অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের) প্রত্যেকেরই তাদের দীনার, দিরহাম, কাপড়-চোপড়, গম ও খেজুরের ভান্ডার হতে দান করা উচিত। অবশেষে তিনি বললেন, যদি খেজুরের এক টুকরাও হয়। বর্ণনাকারী (জারীর) বলেন, এটা শুনে আনসারদের এক ব্যক্তি একটি থলে নিয়ে এলো, যা সে বহন করতে পারছিল না। অতঃপর লোকেরা একের পর এক জিনিসপত্র আনতে লাগলো। এমনকি আমি দেখলাম, শস্যে ও কাপড়-চোপড়ে দু’টি স্ত্তপ হয়ে গেছে এবং দেখলাম, (আনন্দে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা ঝকমক করছে, যেন তা স্বর্ণে জড়ানো।

অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলামে যে ব্যক্তি কোন নেক কাজ চালু করলো সে এ চালু করার সাওয়াব তো পাবেই, তার পরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর ’আমল করবে তাদেরও সমপরিমাণ সাওয়াব সে পাবে। অথচ এদের সাওয়াব কিছু কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করলো, তার জন্য তো এ কাজের গুনাহ আছেই। এরপর যারা এ মন্দ রীতির উপর ’আমল করবে তাদের জন্য গুনাহও তার ভাগে আসবে, অথচ এতে ’আমলকারীদের গুনাহ কম করবে না। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَن جرير قَالَ: (كُنَّا فِي صدر النهارعند رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَهُ قَوْمٌ عُرَاةٌ مُجْتَابِي النِّمَارِ أَوِ الْعَبَاءِ مُتَقَلِّدِي السُّيُوفِ عَامَّتُهُمْ مِنْ مُضَرَ بَلْ كُلُّهُمْ مِنْ مُضَرَ فَتَمَعَّرَ وَجْهُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَا رَأَى بِهِمْ مِنَ الْفَاقَةِ فَدَخَلَ ثُمَّ خَرَجَ فَأَمَرَ بِلَالًا فَأَذَّنَ وَأَقَامَ فَصَلَّى ثُمَّ خَطَبَ فَقَالَ: (يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ)
إِلَى آخَرِ الْآيَةِ (إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رقيبا)
وَالْآيَةُ الَّتِي فِي الْحَشْرِ (اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ)
تَصَدَّقَ رَجُلٌ مِنْ دِينَارِهِ مِنْ دِرْهَمِهِ مِنْ ثَوْبِهِ مِنْ صَاعِ بُرِّهِ مِنْ صَاعِ تَمْرِهِ حَتَّى قَالَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ قَالَ فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ بِصُرَّةٍ كَادَتْ كَفُّهُ تَعْجَزُ عَنْهَا بل قد عجزت قَالَ ثُمَّ تَتَابَعَ النَّاسُ حَتَّى رَأَيْتُ كَوْمَيْنِ مِنْ طَعَامٍ وَثِيَابٍ حَتَّى رَأَيْتُ وَجْهُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَهَلَّلُ كَأَنَّهُ مُذْهَبَةٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْء» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جرير قال كنا في صدر النهارعند رسول الله صلى الله عليه وسلم فجاءه قوم عراة مجتابي النمار او العباء متقلدي السيوف عامتهم من مضر بل كلهم من مضر فتمعر وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم لما راى بهم من الفاقة فدخل ثم خرج فامر بلالا فاذن واقام فصلى ثم خطب فقال يا ايها الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم من نفس واحدةالى اخر الاية ان الله كان عليكم رقيباوالاية التي في الحشر اتقوا الله ولتنظر نفس ما قدمت لغدتصدق رجل من ديناره من درهمه من ثوبه من صاع بره من صاع تمره حتى قال ولو بشق تمرة قال فجاء رجل من الانصار بصرة كادت كفه تعجز عنها بل قد عجزت قال ثم تتابع الناس حتى رايت كومين من طعام وثياب حتى رايت وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتهلل كانه مذهبة فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سن في الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده من غير ان ينقص من اجورهم شيء ومن سن في الاسلام سنة سيىة كان عليه وزرها ووزر من عمل بها من بعده من غير ان ينقص من اوزارهم شيء رواه مسلم

ব্যাখ্যা: হাদীসে কল্যাণকর বিষয় সূচনার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে যাতে সমাজে তার ধারা চলতে থাকে। পক্ষান্তরে অকল্যাণকর কাজ সমাজে প্রসার ঘটবে এ আশংকায় অকল্যাণকর কাজ চালু করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। ‘ইলম অধ্যায়ের সাথে হাদীসটির সামঞ্জস্যতা হচ্ছে- নিঃশ্চয়ই সন্তোষজনক সুন্নাত চালু করা উপকারী ‘ইলম অধ্যায়েরই আওতাভুক্ত। ভালো কাজের প্রচলন বলতে এমন কাজ যা রসূলের সুন্নাতের বহির্ভূত নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم)