২০৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২০৫-[৮] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন প্রথমে এক শাহীদ ব্যক্তির ব্যাপারে বিচার হবে। আল্লাহ তা’আলার সামনে হাশ্‌রের (হাশরের) ময়দানে তাকে পেশ করবেন এবং তাকে তিনি তার সকল নি’আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তার এসব নি’আমাতের কথা স্মরণ হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এসব নি’আমাত পাবার পর দুনিয়াতে তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকারে কী কাজ করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি তোমার (সন্তুষ্টির) জন্য তোমার পথে (কাফিরদের বিরুদ্ধে) লড়াই করেছি, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমাকে শাহীদ করে দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তোমাকে বীরপুরুষ বলবে এজন্য তুমি লড়েছো। আর তা বলাও হয়েছে (তাই তোমার উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে)। তখন তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি- যে নিজে জ্ঞানার্জন করেছে, অন্যকেও তা শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন পড়েছে, তাকে উপস্থিত করা হবে। তাকে দেয়া সব নি’আমাত আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব নি’আমাত তার স্মরণ হবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি’আমাতের তুমি কি শোকর আদায় করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি ’ইলম অর্জন করেছি, মানুষকে ’ইলম শিক্ষা দিয়েছি, তোমার জন্য কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তোমাকে ’আলিম বলা হবে, ক্বারী বলা হবে, তাই তুমি এসব কাজ করেছ। তোমাকে দুনিয়ায় এসব বলাও হয়েছে। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং মুখের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

এরপর তৃতীয় ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তা’আলা বিভিন্ন ধরনের মাল দিয়ে সম্পদশালী করেছেন, তাকেও আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে দেয়া সব নি’আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব তারও মনে পড়ে যাবে। আল্লাহ তাকে এবার জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি’আমাত পেয়ে তুমি কি ’আমল করেছো? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি এমন কোন খাতে খরচ করা বাকী রাখিনি, যে খাতে খরচ করাকে তুমি পছন্দ কর। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তুমি খরচ করেছো, যাতে মানুষ তোমাকে দানবীর বলে। সে খিতাব তুমি দুনিয়ায় অর্জন করেছো। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْلأَوَّلُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن أول النَّاس يقْضى عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أَمر بِهِ فسحب على وَجهه حَتَّى ألقِي فِي النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعلم ليقال عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان اول الناس يقضى عليه يوم القيامة رجل استشهد فاتي به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها قال قاتلت فيك حتى استشهدت قال كذبت ولكنك قاتلت لان يقال جريء فقد قيل ثم امر به فسحب على وجهه حتى القي في النار ورجل تعلم العلم وعلمه وقرا القران فاتي به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها قال تعلمت العلم وعلمته وقرات فيك القران قال كذبت ولكنك تعلمت العلم ليقال عالم وقرات القران ليقال هو قارى فقد قيل ثم امر به فسحب على وجهه حتى القي في النار ورجل وسع الله عليه واعطاه من اصناف المال كله فاتي به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها قال ما تركت من سبيل تحب ان ينفق فيها الا انفقت فيها لك قال كذبت ولكنك فعلت ليقال هو جواد فقد قيل ثم امر به فسحب على وجهه ثم القي في النار رواه مسلم

ব্যাখ্যা: (فَعَرَّفَه نِعَمَه فَعَرَفَهَا؟) ‘‘তাকে আল্লাহ তা‘আলা তার নি‘আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন, ফলে তার তা স্মরণ হয়ে যাবে।’’ অর্থাৎ- ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিনের ভয়াবহতা অবলোকন করে পৃথিবীতে তাকে আল্লাহর দেয়া নি‘আমাতের কথা ভুলে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন তাকে দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া নি‘আমাতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন তখন তার সেসব নি‘আমাতের কথা স্মরণ হবে এবং সে তা স্বীকার করবে।

(فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا) ‘‘তোমাকে যে নি‘আমাত দান করা হয়েছিল তার মোকাবিলায় তুমি কি করেছ?’’ অর্থাৎ- সে নি‘আমাতরাজি পেয়ে তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তুমি কি করেছ?

(قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ) ‘‘আমি তোমার পথে লড়াই করে শাহীদ হয়েছি।’’ অর্থাৎ- তোমার সন্তুষ্টির জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমার জীবন বিলিয়ে দিয়েছি।

(كَذَبْتَ) ‘‘তুমি মিথ্যে বলছো’’। অর্থাৎ- ‘‘আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছি’’ তোমার এ দাবীতে তুমি মিথ্যাবাদী, তুমি সত্য বলনি।

হাদীস হতে বুঝা যায় ‘আমলে স্বচ্ছ নিয়্যাত থাকা আবশ্যক যা আল্লাহর বাণী কর্তৃকও প্রমাণিত। যেমন আল্লাহ বলেন- ‘‘তাদের এছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে’’- (সূরাহ্ আল বাইয়্যিনাহ্ ৯৮ঃ ৫)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২: ‘ইলম (বিদ্যা) (كتاب العلم)