১১৮

পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান

১১৮-[৪০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যখন আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাঁর পিঠের উপর হাত বুলালেন। এতে তাঁর পিঠ হতে তাঁর সমস্ত সন্তান জীবন্ত বেরিয়ে পড়ল যা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) অবধি তিনি সৃষ্টি করবেন। তন্মধ্যে প্রত্যেকের দুই চোখের মধ্যস্থলে নূরের চমক ছিল। অতঃপর সকলকে আদম (আঃ)-এর সামনে পেশ করলেন। (এদেরকে দেখে) আদম (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে রব! এরা কারা? (প্রত্যুত্তরে) রব বললেন, এরা সব তোমার সন্তান। এমন সময় আদম (আঃ) তাঁদের একজনকে দেখলেন, তাকে তার খুব ভালো লাগলো। তাঁরও দুই চোখের মধ্যস্থলে নূরের চমক ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে রব! এ ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, (তোমার সন্তান) দাঊদ (আঃ)। তিনি [আদম (আঃ)] বললেন, হে প্রভু! তাঁর বয়স কত নির্ধারণ করেছেন? তিনি বললেন, ষাট বছর। তিনি [আদম (আঃ)] বলেন, হে প্রভু! (অনুগ্রহ করে) আমার বয়স থেকে তাঁকে চল্লিশ বছর দান করুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম (আঃ)-এর বয়স ফুরিয়ে গেলে এবং ঐ চল্লিশ বছর বাকী থাকতে মালাকুল মাওত এসে তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন। আদম (আঃ) তাঁকে বললেন, এখনো তো আমার বয়স চল্লিশ বছর বাকী আছে। মালাকুল মাওত বললেন, আপনি কি আপনার বয়সের চল্লিশ বছর আপনার সন্তান দাঊদ (আঃ)-কে দান করেননি? আদম (আঃ) তা অস্বীকার করলেন। তাই তাঁর সন্তানরাও অস্বীকার করেন। অতঃপর আদম (আঃ) (তার ওয়া’দা) ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। তাই তাঁর সন্তানরাও ভুলে যায়। আদম (আঃ)-এর ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছিল, আর এ কারণেই এই ত্রুটি-বিচ্যুতি সন্তানদের দ্বারাও হয়ে থাকে। (তিরমিযী)[1]

باب الإيمان بالقدر - الفصل الثالث

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدم مسح ظَهره فَسقط من ظَهْرِهِ كُلُّ نَسَمَةٍ هُوَ خَالِقُهَا مِنْ ذُرِّيَّتِهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَجَعَلَ بَيْنَ عَيْنَيْ كُلِّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ وَبِيصًا مِنْ نُورٍ ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى آدَمَ فَقَالَ أَيْ رَبِّ مَنْ هَؤُلَاءِ قَالَ هَؤُلَاءِ ذُرِّيَّتُكَ فَرَأَى رَجُلًا مِنْهُمْ فَأَعْجَبَهُ وَبِيصُ مَا بَين عَيْنَيْهِ فَقَالَ أَي رب من هَذَا فَقَالَ هَذَا رجل من آخر الْأُمَم من ذريتك يُقَال لَهُ دَاوُدُ فَقَالَ رَبِّ كَمْ جَعَلْتَ عُمُرَهُ قَالَ سِتِّينَ سنة قَالَ أَي رب زده من عمري أَرْبَعِينَ سنة فَلَمَّا قضي عمر آدم جَاءَهُ ملك الْمَوْت فَقَالَ أَوَلَمْ يَبْقَ مِنْ عُمُرِي أَرْبَعُونَ سَنَةً قَالَ أولم تعطها ابْنك دَاوُد قَالَ فَجحد آدم فَجحدت ذُريَّته وَنسي آدم فنسيت ذُريَّته وخطئ آدم فخطئت ذُريَّته» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما خلق الله ادم مسح ظهره فسقط من ظهره كل نسمة هو خالقها من ذريته الى يوم القيامة وجعل بين عيني كل انسان منهم وبيصا من نور ثم عرضهم على ادم فقال اي رب من هولاء قال هولاء ذريتك فراى رجلا منهم فاعجبه وبيص ما بين عينيه فقال اي رب من هذا فقال هذا رجل من اخر الامم من ذريتك يقال له داود فقال رب كم جعلت عمره قال ستين سنة قال اي رب زده من عمري اربعين سنة فلما قضي عمر ادم جاءه ملك الموت فقال اولم يبق من عمري اربعون سنة قال اولم تعطها ابنك داود قال فجحد ادم فجحدت ذريته ونسي ادم فنسيت ذريته وخطى ادم فخطىت ذريته رواه الترمذي

Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 3


Abu Huraira reported God’s messenger as saying, “When God created Adam He wiped his back and every soul of his offspring He was to create up to the day of resurrection fell from his back. He put on the forehead of everyone of them a flash of light, then presented them to Adam who asked, ‘My Lord, who are these?’ He replied, ‘Your offspring.' On seeing one of them and being charmed by the flash on his forehead he asked, ‘My Lord, who is this?’ He replied, ‘David.’ He asked, ‘My Lord, how long a term of life hast Thou appointed him?” He replied, ‘Sixty years.’ He said, ‘My Lord, give him an extra forty years out of my term of life.’” God’s messenger said, “When Adam’s period of life all but forty years had come to an end the angel of death came to him. Adam said, ‘Are there not forty years of my life remaining?’ He replied, ‘Did you not give them to your son David?' Adam denied it and his offspring denied; Adam forgot and ate of the tree and his offspring forgot; and Adam sinned and his offspring sinned.”

Tirmidhi transmitted it.

ব্যাখ্যা: (وَجَعَلَ بَيْنَ عَيْنَيْ كُلِّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ وَبِيصًا مِنْ نُورٍ) ‘‘প্রত্যেকের দু’ চোখের মাঝে নূরের চমক ছিল।’’ এতে জানা যায় যে, বারযাখে প্রত্যেক আদম সন্তান মানব আকৃতিতেই ছিল যদিও তাদের আকৃতি ছিল ছোট পিপিলিকাতুল্য।

(زِدْهُ مِنْ عُمْرِي أَرْبَعِينَ سَنَةً) ‘‘আমার বয়স থেকে তাঁকে চল্লিশ বছর বাড়িয়ে দিন।’’ অর্থাৎ- আপনি আমাকে যে বয়স দান করেছেন সে বয়স থেকে আমার বয়স চল্লিশ বছর কমিয়ে ঐ বয়স তাকে দিয়ে দিন।

(فَجَحَدَ اۤدَمُ) ‘‘আদম (আঃ) অস্বীকার করলো।’’ অর্থাৎ- মালাকুল মাওত যখন তার প্রাণ সংহার করার জন্যে এলেন তখন তার বয়স আরো চল্লিশ বছর বাকী রয়েছে বলে দাবী করলো এবং তিনি যে তার বয়স থেকে চল্লিশ বছর তার সন্তান দাঊদ (আঃ)-কে দান করেছেন তা অস্বীকার করলো এজন্য যে, তিনি যে তার বয়স থেকে চল্লিশ বছর দান করে দিয়েছেন মালাকুল মাওত উপস্থিত হওয়ার সময় তা তার স্মরণ ছিল না। কেননা ঐ দান ছিল আলমে বারযাখে, আর প্রাণ সংহারের ঘটনা ছিল ইহজগতে।

(فَجَحَدَتْ ذُرِّيَّتُه) ‘‘পরে তার সন্তানেরাও অস্বীকার করেছে’’। কেননা সন্তান পিতারই অংশ। তাই পিতার মধ্যে যে গুণাবলী থাকে ঐ গুণাবলী সন্তানের মধ্যেও থাকে। তাই আদম যেমন ভুলে গিয়ে অস্বীকার করেছিল তেমনি তার সন্তানেরাও ভুলে গিয়ে অস্বীকার করে বসে।

অত্র হাদীসে ইঙ্গিত রয়েছে যে, আদম সন্তান সৃষ্টিগতভাবেই ভুলে যাওয়া, ভুল করা, অস্বীকার করার মাধ্যমেই সৃজিত হয়েছে। তবে আল্লাহ যাকে হিফাযাত করেছেন সে বাদে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان)