২৯

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৯-[২৮] মু’আয (রাঃ) ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটা ’আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে (সহজে) জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করলে, কিন্তু যার পক্ষে আল্লাহ এটা সহজ করে দেন, তার পক্ষে এটা খুবই সহজ। তা হচ্ছে, আল্লাহর ’ইবাদাত করবে, কাউকে তাঁর সাথে শরীক করবে না। নিয়মিত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম করবে, যাকাত দিবে, রমাযানের সিয়াম পালন করবে এবং বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ/হজ্জ) করবে। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে মু’আয! আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজাসমূহ বলে দিব না? (জেনে রেখ) সিয়াম (কুপ্রবৃত্তির মুকাবিলায়) ঢালস্বরূপ। দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) গুনাহকে নির্মূল করে দেয় যেমনিভাবে পানি আগুনকে ঠাণ্ডা করে দেয়। মানুষের মধ্য-রাত্রির (তাহাজ্জুদের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (আদায়ের মাধ্যমে গুনাহ শেষ হয়ে যায়)। অতঃপর (তার প্রমাণে কুরআনের এ আয়াত) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠ করলেনঃ ’’সৎ মু’মিনদের পাঁজর বিছানা থেকে আলাদা থাকে (অর্থাৎ- তারা শয্যা ত্যাগ করে ’ইবাদাতে রত থাকে) আর নিজেদের পরওয়ারদিগারকে আশা-নিরাশার স্বরে ডাকতে থাকে। যে সম্পদ আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে আল্লাহর পথে খরচ করে। কোন মানুষই জানে না, এ সৎ মু’মিনদের চোখ ঠাণ্ডা করার জন্য কি জিনিস লুক্বায়িত রাখা হয়েছে। এটা হলো তাদের কৃত সৎ ’আমলের পুরস্কার’’- (সূরাহ্ আস্ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ৩২: ১৬-১৭)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি কি তোমাকে বলে দিব না, (দীনের) কাজের খুঁটি স্তম্ভ কি এবং তার উচ্চশিখরই বা কি? আমি বললাম, হাঁ, বলে দিন, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, দীনের (সমস্ত কাজের) আসল হচ্ছে ইসলাম (অর্থাৎ- কালিমাহ্)। আর তার স্তম্ভ হলো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), আর উচ্চশিখর হচ্ছে জিহাদ। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এ সকলের মূল বলে দিব না? আমি উত্তর দিলাম, হে আল্লাহর নবী! অবশ্যই তা বলে দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জিহবা ধরে বললেন, এটাকে সংযত রাখ। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা মুখ দ্বারা যা বলি, এ সম্পর্কেও কি (পরকালে) আমাদের জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সর্বনাশ, কি বললে হে মু’আয! (জেনে রেখ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) মানুষকে মুখ অথবা নাকের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তার কারণ মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অসংযত কথা।[1]

الفصل الثانى

عَن معَاذ بن جبل قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سفر فَأَصْبَحت يَوْمًا قَرِيبا مِنْهُ وَنحن نسير فَقلت يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ وَيُبَاعِدنِي عَن النَّار قَالَ لقد سَأَلتنِي عَن عَظِيمٍ وَإِنَّهُ لِيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ تَعْبُدُ اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْت ثُمَّ قَالَ أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الْخَيْرِ الصَّوْمُ جُنَّةٌ وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةُ كَمَا يُطْفِئُ المَاء النَّار وَصَلَاة الرجل من جَوف اللَّيْل قَالَ ثمَّ تَلا (تَتَجَافَى جنُوبهم عَن الْمضَاجِع)
حَتَّى بَلَغَ (يَعْمَلُونَ)
ثُمَّ قَالَ أَلَا أَدُلُّكَ بِرَأْس الْأَمر كُله وَعَمُودِهِ وَذِرْوَةِ سَنَامِهِ قُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ رَأْسُ الْأَمْرِ الْإِسْلَامُ وَعَمُودُهُ الصَّلَاةُ وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ ثُمَّ قَالَ أَلَا أُخْبِرُكَ بِمِلَاكِ ذَلِكَ كُلِّهِ قُلْتُ بَلَى يَا نَبِيَّ اللَّهِ فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ فَقَالَ كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا فَقُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نتكلم بِهِ فَقَالَ ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَه

عن معاذ بن جبل قال كنت مع النبي صلى الله عليه وسلم في سفر فاصبحت يوما قريبا منه ونحن نسير فقلت يا رسول الله اخبرني بعمل يدخلني الجنة ويباعدني عن النار قال لقد سالتني عن عظيم وانه ليسير على من يسره الله عليه تعبد الله ولا تشرك به شيىا وتقيم الصلاة وتوتي الزكاة وتصوم رمضان وتحج البيت ثم قال الا ادلك على ابواب الخير الصوم جنة والصدقة تطفى الخطيىة كما يطفى الماء النار وصلاة الرجل من جوف الليل قال ثم تلا تتجافى جنوبهم عن المضاجعحتى بلغ يعملونثم قال الا ادلك براس الامر كله وعموده وذروة سنامه قلت بلى يا رسول الله قال راس الامر الاسلام وعموده الصلاة وذروة سنامه الجهاد ثم قال الا اخبرك بملاك ذلك كله قلت بلى يا نبي الله فاخذ بلسانه فقال كف عليك هذا فقلت يا نبي الله وانا لمواخذون بما نتكلم به فقال ثكلتك امك يا معاذ وهل يكب الناس في النار على وجوههم او على مناخرهم الا حصاىد السنتهم رواه احمد والترمذي وابن ماجه

Chapter - Section 2


Mu‘adh b. Jabal reported:

I said, “Inform me, messenger of God, of an act which will cause me to enter paradise and remove me far from hell.” He replied, “You have asked a serious question, but it is easy for the one whom God helps to answer it. Worship God, associate nothing with Him, observe the prayer, pay the zakat, fast during Ramadan, and make the Pilgrimage to the House.” He said, “Shall I not guide you to the gateways of what is good? Fasting is a protection, and almsgiving extinguishes sin as water extinguishes fire, and a man's prayer in the middle of the night [has the same effect].” Then he recited, “Withdrawing themselves from their couches ... they have been doing.” 1 Then he said, “Shall I not guide you to the head and support of the matter and the top of its hump?” I replied, “Yes, messenger of God.” He said, “The head of the matter is Islam, its support is prayer, and the top of its hump is jihad.” Then he said, “Shall I not inform you of the controlling of all that?” I replied, “Yes, Prophet of God.” So he took hold of his tongue and said, “Restrain this.” I asked, “Prophet of God, shall we really be punished for what we talk about?” He replied, “I am surprised at you, 2 Mu'adh! Will anything but the harvests of their tongues overthrow men in hell on their faces (or, on their nostrils)?”

Ahmad, Tirmidhi and Ibn Majah transmitted it.

1 Quran, xxxii, 16f.
2 Literally, may your mother be bereft of you.

ব্যাখ্যা: সওম, সদাক্বাহ্ (সাদাকা) এবং রাতের সালাতকে কল্যাণের দরজা বলা হয়েছে। এজন্য যে, সওম নাফসের জন্য কষ্টদায়ক। অনুরূপভাবে মাল থেকে সদাকাহ্ বের করা এবং রাতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা- এসব কাজ নাফসের জন্য কষ্টদায়ক। অতএব যে ব্যক্তি এ কষ্টদায়ক কাজের অভ্যাস গড়ে তুলবে তার জন্য সকল কল্যাণের কাজই সহজসাধ্য হয়ে যায়।

(رَأْسُ الْأَمْرِ الْإِسْلَامُ) এখানে ‘ইসলাম’ দ্বারা উদ্দেশ্য কালিমাহ্ শাহাদাত। যেমনটি ইমাম আহমাদ মু‘আয (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন ‘‘এ বিষয়ের মূল হলো এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁরই বান্দা ও রসূল।’’ ‘ইসলাম’ দ্বারা উদ্দেশ্য কালিমাহ্ শাহাদাত, আর الْأَمْرِ দ্বারা উদ্দেশ্য দীনী বিষয়। অর্থাৎ- কোন ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত কালিমাহ্ শাহাদাতকে স্বীকার না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দীনের কোন ভিত্তি পাওয়া যাবে না। যখন সে এর সাক্ষ্য দিবে তখন তার মধ্যে দীনের মূল ভিত্তি পাওয়া যাবে। তবে এর দ্বারা দীনের খুঁটি বা স্তম্ভ পাওয়া যাবে না। অতঃপর যখন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং তা অব্যাহত রাখবে তখন তার দীন মজবুত হবে। কিন্তু তার পূর্ণতা ও মর্যাদা অর্জিত হবে না। এরপর যখন জিহাদ করবে তখন তার দীনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।

‘‘তাদের জিহবা দ্বারা অর্জিত ফসল’’। মানুষ যে সকল কথাবার্তা বলে তাকে ফসলের সাথে তুলনা করা হয়েছে যা কাঁচি দ্বারা কাটা হয়। কাঁচি যেমন কোন পার্থক্য না করে কাঁচা-পাকা, ভালো-মন্দ সব কর্তন করে তেমনই কোন কোন মানুষের জিহবা ভালো-মন্দ পার্থক্য না করেই সকল ধরনের কথা বলে। অতএব হাদীসের অর্থ হলো মানুষকে তার জিহবা দ্বারা অর্জিত ফসলই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। হতে পারে তা কুফরী, শির্ক, আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কোন কথা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, যাদু করা, অপবাদ দেয়া, গালি দেয়া, মিথ্যা বলা, গীবত করা, চোগলখোরী করা ইত্যাদি এ সবই জিহ্বার ফসল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان)