মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৫৯৩৭ টি

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা

৫৮৪৩-[৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ওয়াহী স্থগিত হওয়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছেন, একদিন আমি পথে চলছিলাম, এমন সময় আমি আকাশের দিক হতে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমি উপরে তাকিয়ে দেখি, হেরা গুহায় যিনি আমার কাছে এসেছিলেন, সেই মালাক (ফেরেশতা) আকাশ ও জমিনের মধ্যস্থলে একটি কুরসীতে বসে আছেন। তাঁকে দেখে আমি ভয়ে ঘাবড়ে গেলাম। এমনকি আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম, অতঃপর (উঠে) পরিবারের কাছে বাড়িতে ফিরে বললাম, আমাকে চাদর জড়াও! আমাকে চাদর জড়াও! এ সময় আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করলেন, (অর্থাৎ) “হে চাদর আবৃত ব্যক্তি। উঠ, আর সতর্ক কর। আর তোমার প্রভুর মাহাত্ম ঘোষণা কর। তোমার কাপড় পবিত্র কর। এবং অপবিত্রতা ত্যাগ কর।’ এরপর হতে ওয়াহী পুরোদমে একের পর এক অবতীর্ণ হতে লাগল। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )

وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَدِّثُ عَنْ فَتْرَةِ الْوَحْيِ قَالَ: فَبَيْنَا أَنَا أَمْشِي سَمِعْتُ صَوْتًا مِنَ السَّمَاءِ فَرَفَعْتُ بَصَرِي فَإِذَا الْمَلَكُ الَّذِي جَاءَنِي بِحِرَاءٍ قَاعِدٌ عَلَى كُرْسِيٍّ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ فَجُئِثْتُ مِنْهُ رُعْبًا حَتَّى هَوَيْتُ إِلَى الأرضِ فجئتُ أَهلِي فقلتُ: زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي فَأنْزل اللَّهُ تَعَالَى: [يَا أيُّها الْمُدَّثِّرُ. قُمْ فَأَنْذِرْ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ. وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ. وَالرجز فاهجر] ثمَّ حمي الْوَحْي وتتابع . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4) و مسلم (255 / 161)، (406) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: (یٰۤاَیُّهَا الۡمُدَّثِّرُ) অর্থাৎ হে নুবুওয়্যাতের চাদরে আবৃত ও আর রিসালাতের ভারী দায়িত্ব বহনকারী! (قُمۡ) অর্থাৎ আমাদের আদেশ পালন করুন অথবা আনুগত্যের সাথে দায়িত্বপালনের ওপর অটল থাকুন। অথবা রাতে দাঁড়িয়ে সালাত (তাহাজ্জুদের সালাত) আদায় করুন।
মহান আল্লাহ বলেন, (یٰۤاَیُّهَا الۡمُزَّمِّلُ ۙ﴿۱﴾   قُمِ الَّیۡلَ...) এ কারণে বলা হয়েছে, তিনি নির্দেশিত হয়েছিলেন নুবুওয়্যাত প্রতিষ্ঠিত করতে আর এটা এমন একটা নির্দেশ যা রিসালাতের প্রতিষ্ঠার নির্দেশ। এমনকি মহান আল্লাহ বলেন, (فَأَنْذِرْ) অর্থাৎ অতএব আপনি মানুষদেরকে সতর্ককরুন ‘আযাব হালকা করার ব্যাপারে আর মু'মিনদেরকে সুসংবাদ দিন বিভিন্ন প্রকারের সাওয়াবের। এখানে শুধু সতর্কতার কথা বলার কারণ হলো বেশির ভাগ লোক কাফির হওয়ার কারণে।
(وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ) অর্থাৎ আপনি আপনার রবের বড়ত্ব ও মহত্বের গুণ বর্ণনা করুন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা

৫৮৪৪-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে কিভাবে ওয়াহী আসে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ওয়াহী কোন সময় আমার কাছে ঘণ্টার আওয়াজের মতো আসে। আর তাই আমার পক্ষে এটা সর্বাপেক্ষা কঠিন প্রকৃতির ওয়াহী। তবে এ অবস্থায় মালাক (ফেরেশতা) যা বলে তা শেষ হতেই আমি তার কাছ হতে তা আয়ত্ত করে ফেলি। আবার কোন সময় মালাক (ফেরেশতা) আমার কাছে মানুষের আকৃতিতে এসে আমার সাথে কথা বলেন, তিনি যা বলেন আমি তা সাথে সাথেই আয়ত্ত করে ফেলি। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, মূলত আমি প্রচণ্ড শীতের দিনেও তার ওপর ওয়াহী অবতীর্ণ হতে দেখেছি যখন তার অবসান হত তখন তাঁর কপাল হতে ঘাম ঝরে পড়ত। (বুখারী ও মুসলিম)।

الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )

وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ الْحَارِثَ بْنَ هِشَامٍ سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ يَأْتِيكَ الْوَحْيُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَحْيَانًا يَأْتِينِي مِثْلَ صَلْصَلَةِ الْجَرَسِ وَهُوَ أَشَدُّهُ عَلَيَّ فَيَفْصِمُ عَنِّي وَقَدْ وَعَيْتُ عَنْهُ مَا قَالَ وَأَحْيَانًا يَتَمَثَّلُ لِي الْمَلَكُ رَجُلًا فَيُكَلِّمُنِي فَأَعِي مَا يَقُولُ» . قَالَتْ عَائِشَةُ: وَلَقَدْ رَأَيْتُهُ يَنْزِلُ عَلَيْهِ الْوَحْيُ فِي الْيَوْمِ الشَّدِيدِ الْبَرْدِ فَيَفْصِمُ عَنْهُ وَإِنَّ جَبِينَهُ لَيَتَفَصَّدُ عَرَقًا. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (2) و مسلم (87 ، 86 / 2333)، (6058 و 6059) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: ঐতিহাসিক সুহায়লী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) -এর ওপর ওয়াহী বিভিন্নভাবে নাযিল হত- ১. স্বপ্নযোগে ২. অন্তরের মধ্যে ফুঁকের দ্বারা ৩. ঘণ্টার আওয়াজের মতো। আর এটাই ছিল নবী (সা.) - এর জন্য খুবই কষ্টদায়ক। ৪. মালাক (ফেরেশতা) মানুষের আকৃতিতে এসে ওয়াহী দিয়ে যেতেন। ৫. জিবরীল আলায়হিস সালাম তাঁর ছয়শত পালকবিশিষ্ট আসল আকৃতিতে আগমন করতেন। ৬. আল্লাহ তা'আলা পর্দার আড়ালে থেকে কথাবার্তার মাধ্যমে ওয়াহী প্রদান করতেন ইত্যাদি। (সম্পাদকীয়)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা

৫৮৪৫-[৯] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী (সা.) -এর ওপর ওয়াহী অবতীর্ণ হত, তখন তিনি কষ্ট অনুভব করতেন বলে মনে হত এবং তার চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে যেত।
অপর এক বর্ণনায় আছে, ওয়াহী নাযিল হওয়ার সময় তিনি মাথা ঝুকিয়ে ফেলতেন এবং তার সাথে উপস্থিত সাহাবীগণও (আদবের খাতিরে) আপন আপন মাথা নত করে নিতেন। ওয়াহী আসা শেষ হলে তিনি (সা.) স্বীয় মাথা উঠাতেন। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )

وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذا نزل عَلَيْهِ الْوَحْيُ كُرِبَ لِذَلِكَ وَتَرَبَّدَ وَجْهُهُ. وَفِي رِوَايَة: نكَّسَ رأسَه ونكَّسَ أصحابُه رؤوسَهم فَلَمَّا أُتْلِيَ عَنْهُ رَفَعَ رَأْسَهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

رواہ مسلم (88 / 2334 ، 89 / 2335)، (6060 و 6061) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামাহ্ তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) ওয়াহীর বিষয়ের প্রতি খুবই গুরুত্বারোপ করতেন। আর লোকেদের নিকট তার যথাযথ হক আদায় করতেন তা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে। তিনি (সা.) এ নি'আমাতের যথাযথ শুকরিয়া আদায় করতেন। আর এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা, অপমান ও শাস্তির ভয় করতেন। অতএব তিনি (সা.) মনে মনে চিন্তা করতেন যা দেখে বুঝা যেত তার ওপর ওয়াহী নাযিল হয়েছে। এখান থেকে এটাও বুঝা যায় যে, এখানে উদ্দেশ্য হলো ওয়াহীর কষ্ট ও কঠিনতা। কারণ চিন্তার মূলই হলো কষ্ট। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা

৫৮৪৬-[১০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন (ভীতি প্রদর্শন সম্পর্কীয় আয়াত) “তুমি তোমার নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও”- (সূরাহ আশ শুআরা ২৬: ২১৪); অবতীর্ণ হলো, তখন নবী (সা.) সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে- হে বানী ফিহর! হে বানী ’আদী! বলে কুরায়শদের গোত্রসমূহকে আহ্বান করেন। পরিশেষে সেখানে সকলে একত্রিত হলো। এমনকি যারা স্বয়ং উপস্থিত হতে পারেনি, তারা প্রতিনিধি পাঠিয়ে জানতে চাইল যে, ব্যাপার কি? বিশেষত আবূ লাহাব এবং কুরায়শের সর্বসাধারণ লোকেরাও আসলো।
তখন তিনি (সা.) বললেন, বল তো! আমি যদি তোমাদেরকে বলি যে, (শত্রুপক্ষের) একদল অশ্বারোহী এ পাহাড়ের অপর প্রান্ত হতে। অপর এক বর্ণনা মতে, একদল অশ্বারোহী উপত্যকার এক প্রান্ত হতে বের হয়ে হঠাৎ তোমাদের ওপর আক্রমণ করতে চায়, তোমরা কি আমার এ কথাটি বিশ্বাস করবে? তারা সকলে বলে উঠল; হ্যাঁ, নিশ্চয়। কেননা তোমাকে আমরা বিগত দিনে সত্যবাদীই পেয়েছি। তখন তিনি (সা.) বললেন, আমি তোমাদের সম্মুখে আগত এক কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছি। এতদশ্রবণে আবূ লাহাব বলে উঠল, তোমার ধ্বংস হোক! এজন্যই কি তুমি আমাদেরকে একত্রিত করেছ? বর্ণনাকারী বলেন, তখনই আয়াত অবতীর্ণ হলো “আবূ লাহাব-এর উভয় হাত ধ্বংস হয়েছে"- (সূরাহ্ আল লাহাব ১১১ : ১)। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ [وَأَنْذِرْ عشيرتك الْأَقْرَبين] خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى صَعِدَ الصَّفَا فَجَعَلَ يُنَادِي: «يَا بَنِي فِهْرٍ يَا بني عدي» لبطون قُرَيْش حَتَّى اجْتَمعُوا فَجَعَلَ الرَّجُلُ إِذَا لَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يَخْرُجَ أَرْسَلَ رَسُولًا لِيَنْظُرَ مَا هُوَ فَجَاءَ أَبُو لَهَبٍ وَقُرَيْشٌ فَقَالَ: أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ خيَلاً تخرجُ منْ سَفْحِ هَذَا الْجَبَلِ - وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّ خَيْلًا تَخْرُجُ بِالْوَادِي تُرِيدُ أَنْ تُغِيرَ عَلَيْكُمْ - أَكُنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ؟ قَالُوا: نَعَمْ مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلَّا صِدْقًا. قَالَ: «فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٌ شديدٍ» . قَالَ أَبُو لهبٍ: تبّاً لكَ أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟ فَنَزَلَتْ: [تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ] مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4971) و الروایۃ الاولی (4770) و مسلم (355 / 208)، (508) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: নবী (সা.) পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে কুরায়শ জাতিকে লক্ষ্য করে তাদের আহ্বান করলে তারা তার ডাকে সাড়া দেয়। যারা সাড়া দিতে পারেনি তারা প্রতিনিধি পাঠিয়ে দেয়। তারা সমবেত হলে নবী (সা.) তাদেরকে আল্লাহর তাওহীদ ও আখিরাতের দাওয়াত দেন। যাতে তারা সরল-সঠিক পথে চলতে পারে এবং তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ হয়। আবূ লাহাব এ দাওয়াতের সম্মুখ বিরোধিতা করলে ও নবী (সা.) - কে অপমান করলে আল্লাহ নবী (সা.) -এর পক্ষ থেকে জবাব দিয়ে সূরাহ্ লাহাব নাযিল করেন। (সম্পাদকীয়)।


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা

৫৮৪৭-[১১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) কা’বার কাছে সালাত আদায় করছিলেন। এ সময় কুরায়শদের একদল লোক সেখানে বসা ছিল। তখন তাদের মধ্য হতে একজন বলল, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে অমুক গোত্রের উটের নাড়িভুড়ি এনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে, অতঃপর এ লোক [রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে বলল] যখন সিজদায় যাবে তখন তা তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দেবে। অতঃপর তাদের মধ্য হতে সর্বাপেক্ষা বড় পাপিষ্ঠটি উঠে গেল। যখন নবী (সা.) সিজদায় গেলেন তখন সে তা তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিল। এমতাবস্থায় নবী (সা.) সিজদারত রইলেন। সেই পাপিষ্ঠরা খুব হাসাহাসি করতে লাগল, এমনকি হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপর ঢলে পড়ল। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি [ইবনু মাসউদ (রাঃ)] ফাতিমাহ’র নিকট গিয়ে বললেন, তিনি দৌড়িয়ে আসলেন। অথচ নবী (সা.) তখনো পূর্ববৎ সিজদায় রয়েছিলেন। ফাতিমাহ (রাঃ) নাড়িভুঁড়িটি নবী (সা.) -এর ওপর হতে সরিয়ে ফেললেন এবং ঐ সকল পাপিষ্ঠ কাফিরদের লক্ষ্য করে গালমন্দ করলেন। বর্ণনাকারী ইবনু মাউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত শেষ করে তিনবার বললেন, “হে আল্লাহ! তুমি কুরায়শদেরকে ধরাশয়ী কর। আর রাসূল (সা.) -এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন বিষয়ে দু’আ বা বদদু’আ করতেন কিংবা আল্লাহর কাছে চাইতেন, তখন তিন তিনবার বাক্যগুলো উচ্চারণ করতেন। অতঃপর তিনি (সা.) (কাফিরদের নাম ধরে) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি ১. ’আমর ইবনু হিশাম (আবূ জাহল), ২. ’উতবাহ্ ইবনু রবী’আহ্, ৩, শায়বাহ্ ইবনু রবী’আহ, ৪. ওয়ালীদ ইবনু ’উতবাহ, ৫. উমাইয়্যাহ ইবনু খালফ, ৬. ’উকবাহ্ ইবনু আবূ মু’আয়ত্ব এবং ৭. ’উমারাহ্ ইবনুল ওয়ালীদেরকে পাকড়াও কর।
বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! তিনি (সা.) যে সকল লোকের নাম নিয়ে বদদু’আ করেছিলেন, আমি বদরের যুদ্ধে তাদের লাশ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি। অতঃপর তাদেরকে টেনে বদরের একটি অনাবাদ কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ঐ কূপে যাদেরকে নিক্ষেপ করা হলো, তাদের ওপর লা’নাতের পর লা’নাত রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: بَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عِنْدَ الْكَعْبَةِ وَجُمِعَ قُرَيْشٌ فِي مَجَالِسِهِمْ إِذْ قَالَ قَائِلٌ: أَيُّكُمْ يَقُومُ إِلَى جَزُورِ آلِ فُلَانٍ فَيَعْمِدُ إِلَى فَرْثِهَا وَدَمِهَا وَسَلَاهَا ثُمَّ يُمْهِلُهُ حَتَّى إِذَا سَجَدَ وَضَعَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ وَثَبَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا فَضَحِكُوا حَتَّى مَالَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنَ الضَّحِكِ فَانْطَلَقَ مُنْطَلِقٌ إِلَى فَاطِمَةَ فَأَقْبَلَتْ تَسْعَى وَثَبَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا حَتَّى أَلْقَتْهُ عَنْهُ وَأَقْبَلَتْ عَلَيْهِمْ تَسُبُّهُمْ فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ قَالَ: «اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ» ثَلَاثًا - وَكَانَ إِذَا دَعَا دَعَا ثَلَاثًا وَإِذَا سَأَلَ سَأَلَ ثَلَاثًا -: «اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِعَمْرِو بْنِ هِشَام وَشَيْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ وَالْوَلِيدِ بْنِ عُتْبَةَ وَأُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ وَعُقْبَةَ بْنِ أَبِي مُعَيْطٍ وَعُمَارَةَ بن الْوَلِيد» . قَالَ عبد الله: فو الله لَقَدْ رَأَيْتُهُمْ صَرْعَى يَوْمَ بَدْرٍ ثُمَّ سُحِبُوا إِلَى الْقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَأُتْبِعَ أَصْحَابُ القليب لعنة» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (520) و مسلم (107 / 1794)، (4649) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: হাদীসে ঐ ব্যক্তির নাম ছিল আবূ জাহল যে নবী (সা.) -এর ওপর উটের নাড়ি-ভুড়ি চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। আর তাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক বলতে বুঝানো হয়েছে আবূ জাহল অথবা ‘উবাহ্ ইবনু আবূ মু'আয়ত্ব-কে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সে হলো ‘উকবাহ্ ইবনু আবূ মু'আয়ত্ব যেটা অন্য বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়। তারপর যখন নবী (সা.) সালাতে সিজদায় রবের সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট ছিলেন তখন সে এসে নবী (সা.) - এর মাথায় উটের ভূড়িটি চাপিয়ে দিয়ে আনন্দোল্লাস করছিল। তারপর ফাতিমাহ্ (রাঃ) ছুটে চলে আসেন, কারণ তখন তার বয়স কম ছিল। যখন নবী (সা.) -এর বয়স ৪১ বছর তখন ফাত্বিমাহ্ (রাঃ) জন্মলাভ করেন। তারপর নবী (সা.) -এর ওপর থেকে সে ভুঁড়িটা সরিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে তাদেরকে বকতে ও অভিশাপ দিতে লাগলেন। আর তারা চুপ করে তা শুনতে লাগল, কারণ তখনও ফাত্বিমাহ্ (রাঃ) ছোট ছিলেন। আর তারা হয়তো তার প্রতিবাদ করেনি, কারণ তারা নিজেদের দু' গোত্রের মাঝে লড়াইয়ের ভয় করছিল। তারপর নবী (সা.) সালাত শেষ করে তাদেরকে বদ দু'আ দিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

এখানে একটি প্রশ্ন আছে, তা হলো- নবী (সা.) এ অপবিত্র জিনিস নিয়ে কেন সালাত আদায় করলেন? এর জবাবে কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা অপবিত্র ছিল না। কারণ গোবর ও পেটের তাজা জিনিস এ দুটিই পবিত্র, অপবিত্র হলো রক্ত। এটা হলো মালিকী ও তাদের মতো যারা মত পোষণ করেন তাদের মাযহাব যে, যে সকল প্রাণীর গোশত খাওয়া যায় তাদের গোবর পবিত্র। তবে এটা হানাফী মাযহাবে অপবিত্র। হানাফীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, নবী (সা.) ও তার পিঠে কি আছে তা তিনি জানতে পেরেছিলেন। কারণ অপবিত্র অবস্থায় সালাত হয় না। আর এটা যদি অপবিত্র হত তবে নবী (সা.) -কে জানিয়ে দিতেন। আর এর সঠিক জবাব হলো।
শারহুস্ সুন্নাহ্ কিতাবে এসেছে- বলা হয়ে থাকে যে, এ ঘটনাটি ছিল গোবর, রক্ত ও মুশরিকদের যাবাহ করা কোন জিনিস হারাম হওয়ার পূর্বে। আর তখন হারাম হত না এসব জিনিসে। আর সালাতও বাতিল হত না যেমন- মদ। তারা মদ পান করে তা কাপড়ে লাগলে তারা সে অবস্থায় সালাত আদায় করত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা

৫৮৪৮-[১২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! উহুদের দিন অপেক্ষা অধিক কষ্টের কোন দিন আপনার জীবনে এসেছিল কি? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, তোমার সম্প্রদায় হতে যে আচরণ পেয়েছি তা এটা হতেও অধিক কষ্টদায়ক ছিল। তাদের কাছ হতে সর্বাধিক বেদনাদায়ক যা আমি পেয়েছি তা হলো ’আকাবার দিনের আঘাত’ যেদিন আমি (তায়িফের বানী সাকীফ নেতা) ইবনু আবদ ইয়ালীল ইবনু কুলাল-এর কাছে (ইসলামের দাওয়াত নিয়ে) স্বয়ং উপস্থিত হয়েছিলাম। আমি যা নিয়ে তার সামনে উপস্থিত হয়েছিলাম সে তাতে কোন সাড়া দেয়নি। তখন আমি অতি ভারাক্রান্ত অবস্থায় (নিরুদ্দেশ) সম্মুখপানে চলতে লাগলাম, “কারনুস সা’আলিব” নামক স্থানে পৌঁছার পর আমি কিছুটা স্বস্তি হলাম। তখন আমি উপরের দিকে মাথা তুলে দেখতে পেলাম, একখণ্ড মেঘ আমাকে ছায়া করে রেখেছে। পুনরায় লক্ষ্য করলে তাতে জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে দেখলাম। তখন তিনি আমাকে আহ্বান করে বললেন, আপনি আপনার গোত্রের কাছে যে কথা বলেছেন এবং তার উত্তরে তারা আপনাকে যা বলেছে, এসব কথা আল্লাহ তা’আলা শুনেছে। এখন তিনি পাহাড় পর্বত তদারককারী মালাক (ফেরেশতা)-কে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। অতএব ঐ সমস্ত লোকেদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছা তাকে নির্দেশ দিতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, অতঃপর ’মালাকুল জিবাল’ আমার নাম নিয়ে আমাকে সালাম করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা’আলা আপনার কওমের উক্তিসমূহ শুনেছেন। আমি (পাহাড়-পর্বত নিয়ন্ত্রণকারী ফেরেশতা) আপনার প্রভু আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। অতএব আপনার যা ইচ্ছা আমাকে নির্দেশ করতে পারেন, আপনি ইচ্ছা করলে এ পাহাড় দুটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেব। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, বরং আশা করি আল্লাহ তা’আলা তাদের ঔরসে এমন বংশধরের জন্ম দেবেন যারা এক আল্লাহর ’ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )

وَعَن عَائِشَة أَنَّهَا قَالَت: هَلْ أَتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أَشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ؟ فَقَالَ: لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكِ فَكَانَ أَشَدَّ مَا لَقِيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقَبَةِ إِذْ عرضتُ نَفسِي على ابْن عبد يَا لِيل بْنِ كُلَالٍ فَلَمْ يُجِبْنِي إِلَى مَا أَرَدْتُ فَانْطَلَقْتُ - وَأَنا مهموم - على وَجْهي فَلم أفق إِلَّا فِي قرن الثَّعَالِبِ فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإِذَا أَنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أَظَلَّتْنِي فَنَظَرْتُ فَإِذَا فِيهَا جِبْرِيلُ فَنَادَانِي فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ وَمَا رَدُّوا عَلَيْكَ وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ مَلَكَ الْجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيهِمْ . قَالَ: فَنَادَانِي مَلَكُ الْجِبَالِ فَسَلَّمَ عَلَيَّ ثُمَّ قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ وَأَنَا مَلَكُ الْجِبَالِ وَقَدْ بَعَثَنِي رَبُّكَ إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِي بِأَمْرك إِن شِئْت أطبق عَلَيْهِم الأخشبين فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللَّهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللَّهَ وَحْدَهُ وَلَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئا» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3231) و مسلم (111 / 1795)، (4653) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: হাদীসে ‘আকাবার দিন বলতে বুঝানো হয়েছে- মিনায় অবস্থিত ‘আকাবাহ্ নামক জায়গাকে। নবী (সা.) উৎসবের সময় ‘আকাবায় অবস্থান করে আরবদের বিভিন্ন গোত্রদেরকে আল্লাহ ও ইসলামের দিকে আহ্বান করতে থাকেন।
(তিনি ইবনু আবদুল ইয়ালীল-কে দাওয়াত দিয়েছিলেন) ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তার নামই তার উপনাম। আর আল মাগাযী গ্রন্থে এসেছে, নবী (সা.) স্বয়ং ‘আবদ ইয়ালীল-কেই দাওয়াত দিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে, ‘আবদ ইয়ালীল ইবনু আমর ইবনু ‘আমর। বলা হয়ে থাকে, ইবনু 'আবদ ইয়ালীল এর নাম মাসউদ। ইবনু আবদ ইয়ালীল ছিলেন তায়িফের সাকীফ গোত্রের একজন বড় নেতা। আরো বলা হয়ে থাকে যে, তিনি নুবুওয়্যাতের দশম বছরে ত্বায়িফের প্রতিনিধি দলের সাথে ইসলাম কবুল করেন। ইবনু আবদুল বার (রহিমাহুল্লাহ) তাকে সাহাবীদের মধ্যে গণ্য করেছেন। তবে ওয়াক্বীদি যা উল্লেখ করেছেন তা থেকে বুঝা যায়, তিনি ইসলাম কবুল করেননি। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
আমি যখন তাদেরকে দাওয়াত দিলাম তখন তারা আমার দাওয়াতে সাড়া না দিলে আমি খুব মনে কষ্ট পেলাম। আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ আমি পেরেশান হয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করলাম। আর এ চিন্তা ছিল খুব কঠিন চিন্তা। আর আমার পেরেশানী দূর হলো “কারনুস সা'আলিব” নামক পাহাড় যা মক্কাহ্ ও ত্বায়িফের মাঝে অবস্থিত এখানে এসে। আমি আকাশের দিকে তাকালাম দু'আ করার উদ্দেশ্যে। তখন দেখলাম পাহাড়ের মালাক আমার কাছে আসছেন। তিনি এসে আমাকে সালাম করলেন। এ সালাম ছিল নবী (সা.) -এর সম্মানার্থে। নবী (সা.) ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পাহাড়ের মালাককে তাদের ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা

৫৮৪৯-[১৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। উহুদের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ-এর সামনের পাশের একটি দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং তার মাথায় জখম হয়েছিল। এ সময় তিনি (সা.) স্বীয় রক্ত মুছতে মুছতে বললেন, সে জাতি কিভাবে সফলকাম হবে, যারা তাদের নবীর মাথায় জখম করল এবং তাঁর একটি দাঁত ভেঙ্গে ফেলল। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُسِرَتْ رَبَاعِيَتُهُ يَوْمَ أُحُدٍ وَشُجَّ رَأْسِهِ فَجَعَلَ يَسْلُتُ الدَّمَ عَنْهُ وَيَقُولُ: «كَيْفَ يُفْلِحُ قَوْمٌ شَجُّوا رَأْسَ نَبِيِّهِمْ وَكَسَرُوا رَبَاعِيَتَهُ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (104 / 1791)، (4645) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (رَبَاعِيَتَهُ) আরবীতে উপরের পাটির দুটি এবং নীচের পাটির দুটি- এমন চার দাঁতকে বুঝানো হয় যা সানাইয়া ও আইয়াব দাঁতের মাঝে অবস্থিত। অতএব নবী (সা.) -এর নীচের পাটির উক্ত দুই দাঁতের মধ্য হতে ডান দিকের একটি দাঁত ভেঙ্গে ছিল।
(كَيْفَ يُفْلِحُ قَوْمٌ شَجُّوا رَأْسَ نَبِيِّهِمْ وَكَسَرُوا رَبَاعِيَتَهُ) অর্থাৎ যুহরী থেকে বর্ণিত আছে যে, উহুদের যুদ্ধের দিন নবী (সা.)-এর চেহারায় তরবারি দিয়ে সত্তরটি আঘাত করা হয়েছিল। আল্লাহ তাকে প্রত্যেক ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছিলেন। বুখারীর ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন, সম্ভবত তার চেহারা সত্তর জন শহীদের সাথে শরীক। তবে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন, কারণ মহান আল্লাহর বাণী- (وَ اللّٰهُ یَعۡصِمُکَ مِنَ النَّاسِ) “আর আল্লাহ আপনাকে মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন”- (সূরাহ আল মায়িদাহ ৫ : ৬৭)। আর তার যে দাঁত ভাঙল ও মাথা আহত হলো এটাতে সাওয়াব অর্জিত হলো। আর এখান থেকে বুঝা গেল মানুষ যে দুর্বল, অক্ষম ও আল্লাহর বান্দা। সে কারণে মহান ক্ষমতাধর আল্লাহর ইবাদত করা চায়।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা

৫৮৫০-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর ভাঙ্গা দাঁতের উদ্দেশে ইশারা করে বললেন, আল্লাহ তা’আলা সে সম্প্রদায়ের ওপর ভীষণ রাগান্বিত হন, যারা আল্লাহর নবীর সাথে এ দুর্ব্যবহার করেছে। তিনি (সা.) আরো বলেছেন, সে লোকও আল্লাহর ভীষণ রোষাণলে নিপতিত হয়েছে, যাকে আল্লাহর রাসূল আল্লাহর পথে (জিহাদের ময়দানে) হত্যা করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ فَعَلُوا بِنَبِيِّهِ» يُشِيرُ إِلَى رَبَاعِيَتِهِ «اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى رَجُلٍ يَقْتُلُهُ رَسُولُ اللَّهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ: الْفَصْلِ الثَّانِي

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4073) و مسلم (106 / 1793)، (4648) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি হতে গেল বুঝা গেল যে, যে ব্যক্তি নবী (সা.)-কে আঘাত করেছিল সে ছিল সবচেয়ে বড় হতভাগা। কারণ সে সারা পৃথিবীর জন্য রহমতের নবীকে আঘাত করেছে। আর নবী (সা.) যাকে যুদ্ধের ময়দানে আঘাত করে নিহত করেছে, সে ব্যক্তিও বড় হতভাগ্য। নবী (সা.) আঘাত করেছিলেন উবাই ইবনু খালফ-কে।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, শারী'আতের বিধান মতে শাস্তি বা কিসাস হিসেবে যাদেরকে নবী (সা.)-এর হাতে হত্যা করা হয় তারা এখানে উদ্দেশ্য নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা

৫৮৫১-[১৫] ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি আবূ সালামাহ ইবনু আবদুর রহমান (রাঃ)-কে কুরআনের সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হওয়া আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, (یٰۤاَیُّهَا الۡمُدَّثِّرُ) “হে,বস্ত্র আবৃত (ব্যক্তি)!”- (সূরাহ আল মুদ্দাসসির ৭৪: ১)। আমি বললাম, লোকেরা তো বলে- (اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ..) “পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে..."- (সূরাহ আল ’আলাক ৯৬: ১)। আবূ সালামাহ্ বললেন, এ বিষয়ে আমি জাবির (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলাম এবং তুমি আমাকে যা বললে, আমিও তাকে হুবহু তাই বলেছিলাম। উত্তরে জাবির (রাঃ) আমাকে বললেন, তিনি (সা.) আমাদের কাছে যা বলেছেন, আমিও তোমাকে হুবহু তাই বলব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি হেরা গুহায় (দিবা-রাত্র) একাধারে একমাস অতিবাহিত করেছি। সেখানে অবস্থানকাল শেষ করে আমি সমতল ভূমিতে অবতরণ করলাম। এ সময় আমাকে কেউ ডাক দিল। আমি ডানে তাকালাম, কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না, আবার বামদিকে দৃষ্টি দিলাম তখনো কিছু দেখলাম না, আবার পিছনে তাকালাম তখনো কিছু দেখলাম না, আবার পিছনে দৃষ্টি দিলাম এবারও কিছুই দেখলাম না। এরপর আমি মাথা তুলে উপরের দিকে দৃষ্টি দিলাম। এবার বিশাল কিছু (জিবরীল আলায়হিস সালাম -কে তাঁর আসল আকৃতিতে) দেখতে পেলাম। অতঃপর আমি খাদীজার কাছে এসে বললাম, আমাকে কম্বল দ্বারা আবৃত কর’ তারা আমাকে কম্বল দ্বারা আবৃত করল এবং আমার দেহে ঠাণ্ডা পানি ঢালল, তখন অবতীর্ণ হলো (অর্থাৎ) হে কম্বল আচ্ছাদিত লোক! উঠ! সকলকে সতর্ক সাবধান কর। তোমার প্রভুর মাহাত্ম ঘোষণা কর। তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ এবং অপবিত্রতা (মূর্তিপূজা) হতে পৃথক থাক।’ এটা সালাত ফরয হওয়ার আগের ঘটনা। (বুখারী ও মুসলিম)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي)

عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ قَالَ: سَأَلْتُ أَبَا سَلَمَةَ بْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ أَوَّلِ مَا نزل من الْقُرْآن؟ قَالَ: [يَا أَيهَا المدثر] قلت: يَقُولُونَ: [اقْرَأ باسم ربِّك] قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: سَأَلْتُ جَابِرًا عَنْ ذَلِكَ. وَقُلْتُ لَهُ مِثْلَ الَّذِي قُلْتَ لِي. فَقَالَ لِي جَابِرٌ: لَا أُحَدِّثُكَ إِلَّا بِمَا حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: جَاوَرْتُ بِحِرَاءٍ شَهْرًا فَلَمَّا قَضَيْتُ جِوَارِي هَبَطْتُ فَنُودِيتُ فَنَظَرْتُ عَنْ يَمِينِي فَلَمْ أَرَ شَيْئًا وَنَظَرْتُ عَنْ شِمَالِي فَلَمْ أَرَ شَيْئًا وَنَظَرْتُ عَنْ خَلْفِي فَلَمْ أَرَ شَيْئًا فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَرَأَيْتُ شَيْئًا فَأَتَيْتُ خَدِيجَةَ فَقُلْتُ: دَثِّرُونِي فَدَثَّرُونِي وصبُّوا عليَّ مَاء بَارِدًا فَنزلت: [يَا أَيهَا الْمُدَّثِّرُ. قُمْ فَأَنْذِرْ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ. وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ. وَالرجز فاهجر] وَذَلِكَ قَبْلَ أَنْ تُفْرَضَ الصَّلَاةُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4922) و مسلم (255 / 161)، (406) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: (یٰۤاَیُّهَا الۡمُدَّثِّرُ) এ সূরাটি নাযিল হয়েছে ওয়াহী বিরতির পরে। অর্থাৎ এটা নাযিলের মাধ্যমে ওয়াহীর বিরতিকাল শেষ হয়। এটা সতর্ক করার জন্য নির্দিষ্ট হিসেবে প্রথম আয়াত। আর এটা রিসালাতের প্রথম ওয়াহী। অর্থাৎ এ আয়াতটি নাযিল করে নবী (সা.) -কে রিসালাতের ঘোষণা দেয়া হয়। আর এর আগে যে আয়াত নাযিল করা হয়েছিল তা ছিল নবী হওয়ার ঘোষণা। আল্লাহ ভালো জানেন।
(جَاوَرْتُ بِحِرَاءٍ شَهْرًا) অর্থাৎ এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এ একমাস ছিল ওয়াহী বন্ধ চলাকালীন সময়ে।
(هَبَطْتُ) অর্থাৎ আমি অবতরণ করলাম। আর এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে, এ অবস্থা ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ে। কারণ প্রথম পর্যায়ে হিরা গুহায় নাযিল হয়েছিল ইকরা বা তুমি পড়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে গত হয়েছে।
এরপর নবী (সা.) বাড়ী ফিরে এসে খাদীজাহ্ (রাঃ)-কে বললেন, আমাকে চাদর জড়িয়ে দাও। পরে আল্লাহ নাযিল করেন।
یٰۤاَیُّهَا الۡمُدَّثِّرُ﴿۱﴾   قُمۡ فَاَنۡذِرۡ﴿۲﴾  وَ رَبَّکَ فَکَبِّرۡ﴿ۙ۳﴾   وَ ثِیَابَکَ فَطَهِّرۡ﴿ۙ۴﴾  وَ الرُّجۡزَ فَاهۡجُرۡ﴿ۙ۵﴾ “ওহে বস্ত্ৰ আবৃত (ব্যক্তি)! ওঠ, সতর্ক কর। আর তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। তোমার পোশাক পরিচ্ছদ পবিত্র রাখ। (যাবতীয়) অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক।” (সূরা আল মুদ্দাসসির ৭৪: ১-৫) উল্লেখিত এই পাঁচটি আয়াত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৫২-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। (বাল্যকালে দুধ-মা হালীমার কাছে থাকাকালীন) একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) সমবয়সী বালকদের সাথে খেলাধুলা করছিলেন। এমন সময় জিবরীল আলায়হিস সালাম তাঁর কাছে আসলেন এবং তাঁকে ধরে মাটিতে শুইয়ে ফেললেন। অতঃপর তার বক্ষ বিদীর্ণ করে কলিজা হতে একখণ্ড বের করে বললেন, তোমার দেহের ভিতরে এটা শয়তানের অংশ। তারপর তাকে একটি স্বর্ণ-পাত্রে রেখে জমজমের পানি দ্বারা ধৌত করলেন। অতঃপর উক্ত পিণ্ডটিকে যথাস্থানে রেখে জোড়া লাগিয়ে দিলেন। এ ঘটনা দেখে খেলার সঙ্গী বালকেরা দৌড়ে এসে তার দুধ-মায়ের কাছে এসে বললেন, মুহাম্মাদ-কে হত্যা করা হয়েছে। এ সংবাদ শুনে তারা ঘটনাস্থলে এসে তাকে সুস্থ পেল, তবে তার চেহারার বর্ণ খুবই বিষন্ন। বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, আমি প্রায়শ রাসূল (সা.) -এর বুকের সেলাইটি দেখতে পেতাম। (মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَاهُ جِبْرِيلُ وَهُوَ يَلْعَبُ مَعَ الْغِلْمَانِ فَأَخَذَهُ فَصَرَعَهُ فَشَقَّ عَنْ قَلْبِهِ فَاسْتَخْرَجَ مِنْهُ عَلَقَةً. فَقَالَ: هَذَا حَظُّ الشَّيْطَانِ مِنْكَ ثُمَّ غَسَلَهُ فِي طَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ لَأَمَهُ وَأَعَادَهُ فِي مَكَانِهِ وَجَاءَ الْغِلْمَانُ يَسْعَوْنَ إِلَى أُمِّهِ يَعْنِي ظِئْرَهُ. فَقَالُوا: إِنْ مُحَمَّدًا قَدْ قُتِلَ فَاسْتَقْبَلُوهُ وَهُوَ مُنْتَقَعُ اللَّوْنِ قَالَ أَنَسٌ: فَكُنْتُ أَرَى أَثَرَ الْمِخْيَطِ فِي صَدْرِهِ. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (261 / 162)، (413) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (مِنْهُ عَلَقَةً) অর্থাৎ মোটা রক্তকে। আর তা হলো অন্তরে পাপাচার ও নষ্টের মূল।
(مِنْ ذَهَبٍ) ইসলামী শারী'আতে স্বর্ণ ব্যবহার করাকে হারাম করা হয়েছে দুনিয়ায় পুরুষের জন্য। নবী (সা.) -এর বক্ষ বিদীর্ণ করা হয়েছিল কয়েকবার।
১. শিশুকালে হালিমার কাছে থাকাকালীন সময়ে। তখন তাঁর বয়স ছিল দশ বছর।
২. হিরা গুহায় তার জন্য জিবরীলের মুনাজাতের সময়।
৩. তারপর মি'রাজের রাতে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৫৩-[২] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি মক্কার ঐ পাথরকে এখনো চিনি, যে আমার নুবুওয়্যাত লাভের পূর্বে আমাকে সালাম করত। (মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَعْرِفُ حَجَرًا بِمَكَّةَ كَانَ يُسَلِّمُ عَلَيَّ قَبْلَ أَنْ أُبعث إِني لأعرفه الْآن» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (2 / 2277)، (5939) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: বলা হয়ে থাকে হাজারে আসওয়াদ পাথরটি নবী (সা.) -এর সাথে কথা বলত। এটারও সম্ভাবনা আছে যে, তার সাথে কথা বলত হাজারে যুকাক যার অবস্থান ছিল মাসজিদ ও খাদীজাহ্ (রাঃ) -এর বাড়ির মাঝে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৫৪-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মক্কার লোকেরা একটি নিদর্শন (মু’জিযাহ্) দেখতে পান, যখন তিনি (সা.) চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখালেন। এমনকি তারা উভয় খণ্ডের মাঝখানে হেরা পর্বত দেখতে পেল। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

وَعَن أنسٍ قَالَ: إِنَّ أَهْلَ مَكَّةَ سَأَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُرِيَهُمْ آيَةً فَأَرَاهُمُ الْقَمَرَ شِقَّتَيْنِ حَتَّى رَأَوْا حِرَاءً بَيْنَهُمَا. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3868) و مسلم (46 / 2802)، (7076) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: মক্কার কাফির কুরায়শগণ নবী (সা.) -কে তাঁর নুবুওয়্যাত ও রিসালাতের নিদর্শনস্বরূপ চাদকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখাতে বললে নবী (সা.) তা তাদেরকে তা দ্বিখণ্ডিত করে দেখান।
(حَتَّى رَأَوْا حِرَاءً بَيْنَهُمَا) অর্থাৎ একখণ্ড মেঘ পাহাড়ের উপরে এবং অন্য খণ্ড মেঘ পাহাড়ের নিচে ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৫৫-[৪] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যামানায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়। তার একখণ্ড পাহাড়ের উপরের দিকে এবং অপর খণ্ড পাহাড়ের নিম্নদিকে ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: انْشَقَّ الْقَمَرُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِرْقَتَيْنِ: فِرْقَةً فَوْقَ الْجَبَلِ وَفِرْقَةً دُونَهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اشْهَدُوا» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4864) و مسلم (45 ۔ 43 / 2800)، (7071 و 7073) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: (اشْهَدُوا) অর্থাৎ তোমরা আমার নুবুওয়্যাতের অথবা মু'জিযার সাক্ষ্য থাকবে। যুজাজ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, একদল লোক এ ঘটনাকে তাওয়ীল বা ভুল ব্যাখ্যা করেন। আর তা হলো চাঁদ কিয়ামতের দিন খণ্ডিত হবে। আর এ কথাটি স্পষ্ট মহান আল্লাহ বলেন,
(وَ اِنۡ یَّرَوۡا اٰیَۃً یُّعۡرِضُوۡا وَ یَقُوۡلُوۡا سِحۡرٌ مُّسۡتَمِرٌّ) “আর তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, চলমান যাদু।” (সূরা আল কমার ৫৪ : ০২)।
তাহলে এটা কিয়ামতের দিন কিভাবে হবে? আয়াতে চলমান যাদু বলতে বুঝা যাচ্ছে তারা ইতোপূর্বে আরো অনেক নিদর্শন ও মু'জিযাহ্ দেখেছিল। ইমাম ফাখরুদ্দীন রাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বিরোধিতাকারা অনেকেই বলে, চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়া কাজটি একটি প্রকাশ্য কাজ। এটি ঘটলে তো অনেক মানুষ দেখত। আর এটি মুতাওয়াতির পর্যায়ের হত।
এর জবাবে বলা হয়: এ ঘটনা তো মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌছে গেছে। আর যারা বিরোধী তারা হয়তো মূর্খতা প্রকাশ করে অথবা চন্দ্রগ্রহণের মতো ধারণা করে। আর প্রথম যুগের মানুষেরা এর সাক্ষ্য ছিলেন। আর এতে কোন সন্দেহ নেই তার কারণ হলো নবী (সা.) এটা সংবাদ দিয়েছেন। আর শারহে মুসলিমের মধ্যে ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ চাদের খণ্ডন হয়েছিল রাতের বেলায় আর বেশিরভাগ মানুষ তখন ঘুমন্ত ছিল। আর দরজা ছিল বন্ধ। আর তারা কাপড় মুড়ি দিয়েছিল। আর অল্প সংখ্যক যারা আসমানের দিকে তাকিয়ে ছিল তারা এটা লক্ষ্য করেছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৫৬-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আবূ জাহল (মক্কার কাফির কুরায়শদেরকে) বলল, তোমাদের সামনে মুহাম্মাদ কি তার চেহারা মাটিতে লাগায়? (অর্থাৎ সে সালাত আদায় করে?) বলা হলো, হ্যাঁ।
তখন আবূ জাহল বলল, লাত ও ’উযযার শপথ! আমি যদি তাকে এরূপ করতে দেখি, তাহলে আমি (পা দিয়ে) তার ঘাড় মাড়িয়ে দেব। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে আসলো, তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। তখন আবূ জাহল নবী (সা.)- এর দিকে অগ্রগামী হচ্ছিল, তৎক্ষণাৎ দেখা গেল, সে তড়িৎবেগে পিছনের দিকে হটছে এবং উভয় হাত দ্বারা নিজেকে আত্মরক্ষা করে চলছে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি দেখছি আমার ও মুহাম্মাদ-এর মধ্যস্থলে আগুনের পরিখা ও ভয়ঙ্কর দৃশ্য এবং ডানাবিশিষ্ট দল। উক্ত ঘটনা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যদি সে (আবূ জাহল) আমার কাছাকাছি হত, তাহলে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার এক এক অঙ্গ ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলত। (মুসলিম)।

الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ أَبُو جَهْلٍ: هَلْ يُعَفِّرُ مُحَمَّدٌ وَجْهَهُ بَيْنَ أَظْهُرِكُمْ؟ فَقِيلَ: نَعَمْ. فَقَالَ: وَاللَّاتِ وَالْعُزَّى لَئِنْ رَأَيْتُهُ يَفْعَلُ ذَلِكَ لَأَطَأَنَّ عَلَى رَقَبَتِهِ فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُصَلِّي - زَعَمَ لِيَطَأَ عَلَى رَقَبَتِهِ - فَمَا فَجِئَهُمْ مِنْهُ إِلَّا وَهُوَ يَنْكُصُ عَلَى عَقِبَيْهِ وَيَتَّقِي بِيَدَيْهِ فَقِيلَ لَهُ مَالك؟ فَقَالَ: إِنَّ بَيْنِي وَبَيْنَهُ لَخَنْدَقًا مِنْ نَارٍ وَهَوْلًا وَأَجْنِحَةً. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ دَنَا مِنِّي لَاخْتَطَفَتْهُ الْمَلَائِكَةُ عُضْواً عُضْواً» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (38 / 2797)، (7065) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (فىالتراب) অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.) কি মাটিতে সালাত আদায় করে ও সিজদাহ্ দেয়? ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথা দ্বারা সে মাটিতে সিজদাহ্ করার কথা বুঝিয়েছে। আর আমি যদি তাকে মাটিতে সিজদাহ্ করা অবস্থায় পাই তবে তার মাথা মাটিতে পিষে দিব। এ কথা দিয়ে সে বুঝাতে চেয়েছিল, যাতে নবী (সা.) অপমানিত, লজ্জিত ও হেয় প্রতিপন্ন হয়। আর সে তার ক্ষমতা অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করতে চেয়েছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৫৭-[৬] ’আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি নবী (সা.) -এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তার কাছে এক লোক এসে দরিদ্রতার অভিযোগ করল। এরপর আরেক লোক এসে পথে ডাকাতির অভিযোগ করল। তখন তিনি (সা) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ’আদী! তুমি কি হীরাহ্ দেখেছ? কূফার একটি প্রসিদ্ধ শহর (বর্তমানে ’ইরাকের একটি প্রদেশ) যদি তুমি দীর্ঘদিন বেঁচে থাক তাহলে অবশ্যই দেখতে পাবে যে, একটি মহিলা হীরাহ থেকে ভ্রমণ করে মক্কায় গমন করবে এবং নিরাপদে কা’বা ঘর ত্বওয়াফ করবে, অথচ এক আল্লাহ তা’আলা ছাড়া তার অন্তরে আর কারো ভয় থাকবে না।
আর যদি তুমি দীর্ঘদিন বেঁচে থাক তাহলে দেখতে পাবে, অচিরেই পারস্যের ধনভাণ্ডার বিজিত হবে (অর্থাৎ তা গনীমত হিসেবে মুসলিমদের হাতে আসবে)। আর যদি তুমি দীর্ঘজীবী হও, তাহলে এমনও দেখবে যে, এক ব্যক্তি দান-খয়রাত করার উদ্দেশে মুষ্টি ভরে সোনা অথবা রূপা নিয়ে বের হয়েছে এবং তা গ্রহণ করার জন্য লোক সন্ধান করছ। কিন্তু তার নিকট হতে তা গ্রহণ করার মতো কোন একজন লোকও সে খুঁজে পাবে না। আর নিশ্চয় তোমাদের কেউ একদিন আল্লাহর মাঝে এমন কোন একজন লোকও সে খুঁজে পাবে না। আর নিশ্চয় তোমাদের কেউ একদিন আল্লাহর সম্মুখে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে এমন কোন লোক থাকবে না, যে তার অবস্থা আল্লাহর সামনে পেশ করবে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আমি কি তোমার কাছে কোন রাসূল (সা.)ই পাঠাইনি, যিনি দীন শারী’আতের কথা তোমার কাছে পৌছাবে?
সে বলবে, হ্যাঁ, নিশ্চয় পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা আবার প্রশ্ন করবেন, আমি কি তোমাকে ধন-সম্পদ দান করিনি এবং আমি তোমার ওপর দয়া করিনি। সে বলবে, হ্যাঁ, করেছেন। অতঃপর সে স্বীয় ডানদিকে তাকাবে, কিন্তু জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। আবার স্বীয় বামদিকে তাকাবে, কিন্তু সেখানেও জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। তোমরা খেজুরের এক টুকরা দান করে হলেও নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাও। যদি কেউ এতটুকুও না পায়, তবে অন্তত মিষ্টি কথা দ্বারা আত্মরক্ষা কর। বর্ণনাকারী [আদী (রাঃ)] বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণী মোতাবেক একজন মহিলাকে হীরাহ্ হতে একাকিনী ভ্রমণ করে কা’বা ঘর তাওয়াফ করতে আমি নিজে দেখেছি। অথচ সে আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কাউকে ভয় করেনি। আর কিসরা ইবনু হরমুযের (অর্থাৎ পারস্যের) ধনভাণ্ডার যারা উন্মুক্ত করেছেন, আমিও তাদের সাথে ছিলাম। অতঃপর বর্ণনাকারী ’আদী (রাঃ) তার পরবর্তী লোকেদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, যদি তোমরা দীর্ঘায়ু হও তাহলে নবী আবূল কাসিম -এর এ ভবিষ্যদ্বাণী কোন লোক মুষ্টি ভরে.... ও দেখতে পাবে। (বুখারী)

الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

وَعَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ قَالَ: بَيْنَا أَنَا عِنْد النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَتَاهُ رَجُلٌ فَشَكَا إِلَيْهِ الْفَاقَةَ ثُمَّ أَتَاهُ الْآخَرُ فَشَكَا إِلَيْهِ قَطْعَ السَّبِيلِ. فَقَالَ: يَا عدي هَل رَأَيْتَ الْحِيرَةَ؟ فَإِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ فَلَتَرَيَنَّ الظَّعِينَةَ تَرْتَحِلُ مِنَ الْحِيرَةِ حَتَّى تَطُوفَ بِالْكَعْبَةِ لَا تَخَافُ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ وَلَئِنْ طَالَتْ بك حَيَاةٌ لَتُفْتَحَنَّ كُنُوزُ كِسْرَى وَلَئِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ لَتَرَيَنَّ الرَّجُلَ يَخْرُجُ مِلْءَ كَفِّهِ مِنْ ذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ يَطْلُبُ مَنْ يَقْبَلُهُ فَلَا يجد أحدا يقبله مِنْهُ وَلَيَلْقَيَنَّ اللَّهَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ يَلْقَاهُ وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ يُتَرْجِمُ لَهُ فَلَيَقُولَنَّ: أَلَمْ أَبْعَثْ إِليك رَسُولا فليبلغك؟ فَيَقُولُ: بَلَى. فَيَقُولُ: أَلَمْ أُعْطِكَ مَالًا وَأُفْضِلْ عَلَيْكَ؟ فَيَقُولُ: بَلَى فَيَنْظُرُ عَنْ يَمِينِهِ فَلَا يَرَى إِلَّا جَهَنَّمَ وَيَنْظُرُ عَنْ يَسَارِهِ فَلَا يَرَى إِلَّا جَهَنَّمَ اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ قَالَ عَدِيٌّ: فَرَأَيْتُ الظَّعِينَةَ تَرْتَحِلُ مِنَ الْحِيرَةِ حَتَّى تَطُوفَ بِالْكَعْبَةِ لَا تَخَافُ إِلَّا اللَّهَ وَكُنْتُ فِيمَنِ افْتَتَحَ كُنُوزَ كِسْرَى بْنِ هُرْمُزَ وَلَئِنْ طَالَتْ بِكُمْ حَيَاةٌ لَتَرَوُنَّ مَا قَالَ النَّبِيُّ أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَخْرُجُ ملْء كفيه» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (3595) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: হাদীসে যে লোক দারিদ্রতার ও ভয়ের অভিযোগ করেছিল তা ছিল কঠিন সময়ের। আর এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, (اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ یُسۡرًا) “নিশ্চয় কঠিনের পর সহজ রয়েছে”- (সূরাহ আশ শারহ ৯৪: ৬)। আর কোন দেশ বিজয়ের আগে সাহাবীদের এরূপ অবস্থা ছিল।
এখানে প্রশ্নকারীর উত্তর দেয়া হয়েছে আর ‘আদী (রাঃ)-ও অন্যান্য সাহাবীদেরকে সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে যে, তারা অচিরেই সহজতা ও নিরাপত্তা লাভ করবে।
এরপর উল্লেখ করলেন দুনিয়াবী এ সকল আরাম-আয়েশ পরকালে কঠিন ও অপমানের কারণ হবে। তবে যাকে আল্লাহ তা থেকে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন আর সে তা কল্যাণের কাজে ব্যায় করে তার ব্যাপারটি ভিন্ন। যেমনটি হাদীসে এসেছে- সেদিন তোমাদের কেমন হবে যখন তোমরা সকালে পরিধান করবে এক সেট নতুন কাপড় আর সন্ধ্যায় পরিধান করবে আর এক সেট নতুন কাপড়। আর তার সামনে রাখা প্লেট। তিনি বললেন, তোমরা সেদিনের চেয়ে আজকে ভালো আছ। সেদিন মানুষের মাঝে পরিবর্তন দেখা দিবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৫৮-[৭] খব্বাব ইবনুল আরত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে অভিযোগ করলাম। তখন তিনি (সা.) একখানা চাদর মাথার নিচে রেখে কা’বা ঘরের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। যেহেতু মুশরিকদের পক্ষ হতে আমাদের ওপর কঠোর নির্যাতন চলছিল, তাই আমরা বললাম, আপনি আল্লাহর কাছে কেন দু’আ করেন না? এ কথা শুনে তিনি (সা.) সোজা হয়ে বসলেন। এ সময় তাঁর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের আগের যুগে যারা ঈমানদার ছিল, এক আল্লাহর ইবাদত করত, তাদের কারো জন্য মাটিতে গর্ত খোড়া হয়েছে। অতঃপর তাকে সে গর্তে রেখে তার মাথার উপর করাত চালিয়ে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে। তবুও ঐ নির্যাতন তাকে তার দীন ও ঈমান হতে ফিরাতে পারেনি। আবার কারো শরীরের হাড় হতে যাবতীয় মাংস ও শিরা লোহার চিরুনি দ্বারা আঁচড়িয়ে ফেলা হয়, তবুও সেই নির্যাতন তাকে তার দীন হতে ফিরাতে পারেনি। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় এ দীন ইসালামকে আল্লাহ তা’আলা পরিপূর্ণ করবেন। এমনকি তখন একজন উষ্ট্রারোহী সান’আ হতে হাযরামাওত পর্যন্ত (এতটা নির্ভয়ে অতিক্রম করবে যে, সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় করবে না। অথবা নবী (সা.) বলেছেন: সে স্বীয় মেষপাল সম্পর্কে নেকড়ে বাঘ ছাড়া অপর কিছুরই ভয় করবে না। কিন্তু আমি দেখছি, তোমরা অনেক বেশি তাড়াহুড়া করছ। (বুখারী)।

الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

وَعَن خبَّاب بن الأرتِّ قَالَ: شَكَوْنَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً فِي ظِلِّ الْكَعْبَةِ وَقد لَقينَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ شِدَّةً فَقُلْنَا: أَلَا تَدْعُو اللَّهَ فَقَعَدَ وَهُوَ مُحْمَرٌّ وَجْهُهُ وَقَالَ: «كَانَ الرَّجُلُ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُ لَهُ فِي الْأَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيهِ فَيُجَاءُ بِمِنْشَارٍ فَيُوضَعُ فَوْقَ رَأْسِهِ فَيُشَقُّ بِاثْنَيْنِ فَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ وَاللَّهِ لَيَتِمَّنَّ هَذَا الْأَمْرُ حَتَّى يَسِيرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ لَا يَخَافُ إِلَّا الله أَو الذِّئْب على غنمه ولكنَّكم تَسْتَعْجِلُون» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (6943) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: খাব্বাব ইবনুল আরত তাঁর উপনাম আবূ আবদুল্লাহ আত্ তামীমী। তিনি জাহিলী যুগে যুদ্ধবন্দি হন। ফলে খুযাআহ্ গোত্রের এক মহিলা তাকে কিনে নেন এবং তাকে আযাদ বা স্বাধীন করে দেন। নবী (সা.) দারুল আরকামে প্রবেশের আগে তিনি ইসালাম গ্রহণ করেন। তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে ইসালাম গ্রহণের কারণে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। আর তিনি তার ওপর ধৈর্যধারণ করেছিলেন। তিনি কূফা নগরীতে চলে যান এবং সেখানে মারা যান। তার থেকে এক জামা'আত লোক হাদীস বর্ণনা করেন। একদিন নবী (সা.) কা'বার চত্বরে কোন জিনিস মাথার নিচে দিয়ে বালিশ বানিয়ে চাদর গায়ে দিয়ে শুয়েছিলেন। তখন সাহাবীগণ তার কাছে এসে তাদের ওপর চলা মক্কার মুশরিকদের সীমালঙ্ঘন ও নির্যাতনের অভিযোগ জানাল। তখন নবী (সা.) তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য পূর্ববর্তী লোকেদের ওপর আসা নানা নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন। এমন তারা তাদের নবীদের সাথেও যে খারাপ আচরণ করত তাও তিনি উল্লেখ করেছেন। তারা শাস্তি দিয়ে বহু মানুষকে ও নবীদেরকে হত্যা করেছিল সে ঘটনা তিনি মানুষকে শোনান। শেষে তিনি তাদেরকে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য ধৈর্যধারণের উপদেশ দেন। আর কাফিরদের ভয়ঙ্কর পরিণতির কথাও তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দেন। (সম্পাদকীয়)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৫৯-[৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায়শ উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ)-এর বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন। [তিনি রাসূল (সা.)-এর দুধ-খালা হিসেবে মাহরাম ছিলেন] উম্মু হারাম (রাঃ) প্রসিদ্ধ সাহাবী ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন। একদিন নবী (সা.) তার বাড়িতে গেলে উম্মু হারাম (রাঃ) তাঁকে খানা খাওয়ালেন। অতঃপর উম্মু হারাম (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথার উকুন দেখতে বসলেন। এরই মাঝে রাসূলুল্লাহ (সা.) - ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে?
তিনি (সা.) বললেন, এইমাত্র স্বপ্নে আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক লোককে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত অবস্থায় আমার সামনে উপস্থিত করা হয়। তারা বাদশাহী জাকজমকে অথবা বলেছেন বাদশাহের মতো জাঁকজমকে সমুদ্রের বুকে সফর করছে। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, আল্লাহ তা’আলা আমাকেও যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন তিনি (সা.) তার জন্য দু’আ করলেন। এরপর তিনি (সা.) মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণ পরে পুনরায় হাসিমুখে জেগে উঠলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আপনি কি কারণে হাসছেন?
উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, এইমাত্র স্বপ্নে আমার উম্মতের কতিপয় লোককে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়... ঠিক তেমনই বলেছেন যেমনটি তিনি প্রথমবার বলেছিলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, তুমি তাদের প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর উম্মু হারাম মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর শাসনকালে জিহাদের উদ্দেশে সমুদ্রে ভ্রমণে যাত্রা করেন এবং সমুদ্র হতে অবতরণের পর বাহনের পৃষ্ঠ হতে পড়ে ইন্তিকাল করেন। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ عَلَى أُمِّ حَرَامٍ بِنْتِ مِلْحَانَ وَكَانَتْ تَحْتَ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ فَدَخَلَ عَلَيْهَا يَوْمًا فَأَطْعَمَتْهُ ثُمَّ جَلَسَتْ تَفْلِي رَأسه فَنَامَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ اسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ قَالَتْ: فَقُلْتُ: مَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَيَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَرْكَبُونَ ثَبَجَ هَذَا الْبَحْرِ مُلُوكًا عَلَى الْأَسِرَّةِ أَوْ مِثْلَ الْمُلُوكِ عَلَى الْأَسِرَّةِ» . فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ فَدَعَا لَهَا ثُمَّ وَضَعَ رَأْسَهُ فَنَامَ ثُمَّ اسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا يُضْحِكُكَ؟ قَالَ: «نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَيَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ» . كَمَا قَالَ فِي الأولى. فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. قَالَ: «أَنْتِ مِنَ الْأَوَّلِينَ» . فَرَكِبَتْ أُمُّ حَرَامٍ الْبَحْرَ فِي زَمَنِ مُعَاوِيَةَ فَصُرِعَتْ عَنْ دَابَّتِهَا حِينَ خَرَجَتْ مِنَ الْبَحْرِ فَهَلَكَتْ. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6282) و مسلم (160 / 1912)، (4934) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ) হলেন আনাস (রাঃ)-এর সম্পর্কের খালা। তিনি এবং তার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) ছিলেন নবী (সা.) -এর দুধ খালা বা সম্পর্কের খালা। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনি নবী (সা.) -এর মাহরাম ছিলেন- এ ব্যাপারে সকল ‘আলিম একমত। তবে তারা কিভাবে মাহরাম এটা নিয়ে মতভেদ করেছেন। ইবনু ‘আবদুল বার এবং অন্যরা বলেন, তিনি নবী (সা.) -এর দুধ সম্পর্কের একজন খালা হতেন। অন্যরা বলেন, বরং তিনি তার পিতার দিক থেকে খালা ছিলেন অথবা তার দাদা আবদুল মুত্ত্বালিব-এর দিক থেকে। আর তার মা ছিলেন বানূ নাযযার গোত্রের মানুষ।
উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ)-এর স্বামীর নাম ছিল 'উবাদাহ্ ইবনুস সামিত। তিনি তার স্বামীর সাথে ইসালাম কবুল করেন, বায়আত করেন এবং গাজী হিসেবে রোমে মৃত্যুবরণ করেন। তার কবর কুবরুসে। তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন তার বোনের ছেলে বা ভাগিনা ও তার স্বামী ‘উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ)। ইবনু ‘আবদুল বার বলেন, আমি তার উপনাম ছাড়া তার কোন আসল নাম পায়নি। আর তিনি উসমান (রাঃ) -এর খিলাফাতকালীন সময়ে মারা যান। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৬০-[৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আযদ শানুয়াহ্’ গোত্রের ’যিমাদ’ নামে এক লোক একদিন মক্কায় আগমন করল। যিমাদ মন্ত্র দ্বারা জিন-ভূতের ঝাড়-ফুঁক করত। সে মক্কার অজ্ঞ নির্বোধ লোকেদের কাছে শুনতে পেল যে, মুহাম্মাদ পাগল হয়ে গেছে। এটা শুনে সে বলল, যদি আমি ঐ লোককে [অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.) -কে] দেখতাম তাহলে চিকিৎসা করতাম। হয়তো আমার চিকিৎসায় আল্লাহ তা’আলা তাকে আমার হাতে সুস্থ করে দিতে পারেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ’যিমাদ’ রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি জিন-ভূতের চিকিৎসা করব। তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) পাঠ করলেন, (অর্থাৎ) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমি তারই প্রশংসা করি এবং তাঁর সাহায্য কামনা করি। তিনি যাকে পথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউই পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউই সোজা পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা ছাড়া ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য কেউ নেই এবং তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল (সা.)।
অতঃপর যিমাদ বলল, আপনি উক্ত বাক্যগুলো আমাকে আবার শুনান। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বাক্যগুলো তিনবার পাঠ করলেন। এতদশ্রবণে যিমাদ বলল, আমি গণকের কথাও শুনেছি, জাদুকরের কথাও শুনেছি এবং কবিদের কথাও শুনেছি। কিন্তু আপনার এ বাক্যগুলোর মতো এমন বাক্য আমি আর কখনো শুনিনি। মূলত আপনার প্রতিটি বাক্য অথৈ সাগরের তলদেশ পর্যন্ত পৌছে গেছে। অতএব আপনি আপনার হাতখানা প্রশস্ত করুন। আমি আপনার হাতে ইসালামের বায়আত করব। বর্ণনাকারী বলেন, তখনই সে রাসূল (সা.) -এর হাতে বায়’আত করল। (মুসলিম)

(গ্রন্থকার বলেন) মাসাবীহের কোন কোন নুসখায় (بَلَغْنَ قَامُوسَ الْبَحْرِ) “তারা পৌছল গভীর সমুদ্রে” এর স্থলে (بَلَغْنَا نَاعُوسَ الْبَحْر) রয়েছে।
আলোচ্য বিষয়ে আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) -এর বর্ণিত হাদীস (يهْلك كسْرَى) “কিসরা ধ্বংস হবে এবং জাবির (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীস (ليفتحنَّ عِصَابَةٌ) “অবশ্যই একদল বিজয় লাভ করবে” “মালাহিম অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।

الفصل الاول ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

وَعَن ابْن عبَّاس قَالَ: إِنَّ ضِمَادًا قَدِمَ مَكَّةَ وَكَانَ مِنْ أَزْدِ شَنُوءَةَ وَكَانَ يَرْقِي مِنْ هَذَا الرِّيحِ فَسَمِعَ سُفَهَاءَ أَهْلِ مَكَّةَ يَقُولُونَ: إِنَّ مُحَمَّدًا مَجْنُونٌ. فَقَالَ: لَوْ أَنِّي رَأَيْتُ هَذَا الرَّجُلَ لَعَلَّ اللَّهَ يَشْفِيهِ عَلَى يَدَيَّ. قَالَ: فَلَقِيَهُ. فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي أَرْقِي مِنْ هَذَا الرِّيحِ فَهَلْ لَكَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ أَمَّا بَعْدُ» فَقَالَ: أَعِدْ عَلَيَّ كَلِمَاتِكَ هَؤُلَاءِ فَأَعَادَهُنَّ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثٌ مَرَّاتٍ فَقَالَ: لَقَدْ سَمِعْتُ قَوْلَ الْكَهَنَةِ وَقَوْلَ السَّحَرَةِ وَقَوْلَ الشُّعَرَاءِ فَمَا سَمِعْتُ مِثْلَ كَلِمَاتِكَ هَؤُلَاءِ. وَلَقَدْ بَلَغْنَ قَامُوسَ الْبَحْرِ هَاتِ يَدَكَ أُبَايِعْكَ عَلَى الْإِسْلَامِ قَالَ: فَبَايَعَهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي بَعْضِ نُسَخِ «الْمَصَابِيحِ» : بَلَغْنَا نَاعُوسَ الْبَحْر وَذَكَرَ حَدِيثَا أَبِي هُرَيْرَةَ وَجَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ «يهْلك كسْرَى» وَالْآخر «ليفتحنَّ عِصَابَةٌ» فِي بَابِ «الْمَلَاحِمِ» وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَن: الْفَصْل الثَّانِي

رواہ مسلم (46 / 868)، (2008) 0 حدیث ابی ھریرۃ تقدم (5418) و حدیث جابر بن سمرۃ تقدم 5417) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (مِنْ هَذَا الرِّيحِ) ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এটা এক ধরনের সমস্যা ছিল। তিনি এটাকে এক ধরনের পাগলামী বলে উল্লেখ করেছেন। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা যে রোগটাকে ‘রীহ' বলে নামকরণ করত তা হলো, তারা মনে করত জিন-ভূত মানুষকে আক্রমণ করত। আর তারা জিন ভূতের এ আসর-কে ‘রীহ’ বলে নামকরণ করত। আবূ মূসা বলেন, এখানে ‘রীহ’ অর্থ জিন। তারা তাকে রীহ বলত, কারণ বাতাস যেমন দেখা যায় না তেমনি জিনও দেখা যায় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নুবুওয়্যাতের নিদর্শনসমূহ

৫৮৬১-[১০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সুফইয়ান ইবনু হারব অন্য কোন লোকের মাধ্যম ছাড়াই হাদীসটি সরাসরি আমাকে বলেছেন। তিনি বলেন, আমার ও রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মধ্যে সন্ধিকালে আমি সিরিয়া ভ্রমণ করি। সে সময় তথায় রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের নামে নবী (সা.) -এর একখানা চিঠি আসলো। আবূ সুফইয়ান বলেন, উক্ত চিঠিখানা দিহইয়াহ্ আল কালবীই এনেছিলেন। দিহইয়াহ্ আল কালবী পত্ৰখানা বাসরার শাসনকর্তার কাছে প্রদান করলেন এবং বাসরার শাসনকর্তা তখন পত্রখানা হিরাক্লিয়াসের কাছে পেশ করলেন। তখন হিরাক্লিয়াস-এর উপস্থিত লোকজনকে বলল, এই যে ’আরব কুরায়শের এক লোক নুবুওয়াতের দাবি করেন, বর্তমানে এখানে (অর্থাৎ সিরিয়ায়) তার সম্প্রদায়ের কোন লোক আছে কি? লোকেরা বলল, হ্যাঁ আছে। আবূ সুফইয়ান বলেন, কুরায়শদের একটি দলের সাথে আমাকেও (হিরাক্লিয়াসের দরবারে) ডাকা হলো। আমরা হিরাক্লিয়াসের কাছে গেলে আমাদেরকে তার সামনেই বসানো হলো। অতঃপর সে আমাদেরকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন করল, যে ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে দাবি করে তোমাদের মধ্যে বংশের দিক হতে কে তার নিকটতম? আবূ সুফইয়ান বললেন, আমি। তখন লোকেরা আমাকে তার একেবারে সম্মুখে এনে বসিয়ে দিল। আর আমার সঙ্গীদেরকে আমার পশ্চাতে বসাল। অতঃপর সম্রাট তার দোভাষীকে ডেকে বলল, তুমি এ লোকেদেরকে যিনি নবী বলে দাবি করেন ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু কথা জিজ্ঞেস কর।
যদি ইনি মিথ্যা বলেন, তবে তারা যেন তাকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করে। আবূ সুফইয়ান বলেন, আল্লাহর শপথ! লোকেরা আমার নামে মিথ্যা রটাবে বলে যদি আমার ভয় না হত, তাহলে আমি নিশ্চয় তাঁর [রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর] সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম। অতঃপর সম্রাট হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বলল, তাকে (আবূ সুইয়ানকে) জিজ্ঞেস কর, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির (নুবুওয়্যাতের দাবিদারের) বংশ-মর্যাদা কেমন? আমি বললাম, তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ বংশজাত। সে প্রশ্ন করল, তাঁর বাপ-দাদাদের মধ্যে কেউ কি বাদশাহ ছিলেন? আমি বললাম, না। সে প্রশ্ন করল, তোমরা কি তাঁকে তাঁর এ কথা বলার পূর্বে কোন বিষয়ে মিথ্যার অপবাদ দিতে? আমি বললাম, না। সে প্রশ্ন করল, সভ্রান্ত লোকেরা তাঁর অনুসরণ করে না। দুর্বল নিম্নশ্রেণির লোকেরা? আমি বললাম, বরং দুর্বল লোকেরা। সে জিজ্ঞেস করল, তাঁর অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না কমছে? আমি বললাম, বরং বাড়ছে। সে জিজ্ঞেস করল, তাদের মধ্যে কেউ কি উক্ত দীনে প্রবেশ করার পর তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তা বর্জন করে? আমি বললাম, না।
সে প্রশ্ন করল, তার সাথে তোমরা কখনো যুদ্ধ করেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, করেছি। সে প্রশ্ন করল, তার সাথে যুদ্ধে তোমাদের ফলাফল কেমন হয়েছে? আমি বললাম, তার ও আমাদের মধ্যে যুদ্ধের অবস্থা হয়েছে পালাক্রমে পানির বালতির মতো। কখনো তিনি পান আর কখনো আমরা পাই। কখনো কখনো তিনি আমাদের দিক হতে আক্রান্ত হন, আবার কখনো কখনো তাঁর পক্ষ হতে আক্রান্ত হন, আবার কখনো কখনো তার পক্ষ থেকে আমরা আক্রান্ত হই। সে প্রশ্ন করল, তিনি কী অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন? আমি বললাম না। তবে আমরা তাঁর সঙ্গে একটি সন্ধি চুক্তিকে আবদ্ধ আছি। জানি না তিনি এ সময়ের মধ্যে কি করবেন। আবূ সুফইয়ান বলেন, এ শেষোক্ত কথাটি ব্যতীত তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কিছু বলার সুযোগ আমি পাইনি।
সে প্রশ্ন করল, তোমাদের মধ্য হতে কেউ কি তার পূর্বে কখনো এ ধরনের কথা বলেছিল? আমি বললাম, না। এরপর হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বলল, এবার তুমি তাকে (আবূ সুফইয়ানকে) বল, আমি তোমাকে তাঁর বংশ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তুমি উত্তরে বলেছ, তিনি তোমাদের মধ্যে উচ্চ বংশজাত। বস্তুত এরূপই নবী-রাসূল (সা.)দেরকে তাদের জাতির বংশেই পাঠানো হয়। আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম তার বাপ-দাদাদের মধ্যে কেউ বাদশাহ ছিল কি না? তুমি বলেছ, না। এতে আমি বলব, যদি তাঁর বাপদাদাদের মধ্যে কেউ বাদশাহ থাকত, তবে আমি বলতাম, তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি তাঁর পিতৃরাজ্য পুনরুদ্ধার করতে চান। আমি তোমাকে তাঁর অনুসারীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম, তারা কি কওমের মধ্যে দুর্বল নাকি ভদ্র সম্ভ্রান্ত? তুমি বলেছ, বরং দুর্বল লোকেরাই তাঁর অনুসারী।
আসলে (প্রথমাবস্থায়) এরূপ লোকেরাই রাসূল (সা.)গণের অনুসারী হয়ে থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তার এ কথা বলার পূর্বে তোমরা কখনো তাকে মিথ্যায় অভিযুক্ত করেছ কি? তুমি বলেছ, না। অতএব আমি বুঝতে পারলাম, তিনি (সা.) মানুষের সাথে মিথ্যা পরিহার করে চলেন; আর আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলতে যাবেন, এটা কখনো হতে পারে না। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেউ কি তাঁর দীনে প্রবেশ করার পর তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তা বর্জন করে? তুমি বলেছ, না। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের দীপ্তি ও সজীবতা অন্তরের সাথে মিশে গেলে তখন এরূপই হয়, অবশেষে তা পূর্ণতা লাভ করে। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাঁর সাথে তোমরা কোন যুদ্ধ করেছ কি? জবাবে তুমি বলেছ, হ্যাঁ, যুদ্ধ হয়েছে এবং তাঁর ফলাফল পালাক্রমে পানির বালতির মতো। কখনো তিনি (সা.) লাভবান হন, আর কখনো তোমরা লাভবান হও। আসলে এভাবে রাসূল (সা.)দেরকে পরীক্ষা করা হয়। পরিণামে বিজয় তাঁদেরই জন্য। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি (সা.) কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন কি? তুমি বলেছ, না, ভঙ্গ করেন না। রাসূল (সা.)দের চরিত্র
এরূপই হয় যে, তারা কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের মধ্য হতে কেউ কি তার পূর্বে কখনো এমন কথা (নবী হওয়ার কথা) বলেছিল? তুমি বলেছ, না। এতে আমি বুঝতে পারলাম, তার পূর্বে কেউ যদি এ কথা (নবী হওয়ার কথা) বলে থাকত তবে আমি বলতাম, এ ব্যক্তি পূর্বের কথার অনুবৃত্তি করেছে। আবূ সুফইয়ান বলেন, এরপর সে প্রশ্ন করল, তিনি (সা.) তোমাদেরকে কি বিষয় আদেশ দেন? আমরা বললাম, তিনি (সা.) আমাদেরকে সালাত আদায় করার, যাকাত দেয়ার, আত্মীয়স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করার এবং যাবতীয় পাপাচার হতে বেঁচে থাকার জন্য নির্দেশ করেন।
এতদশ্রবণে হিরাক্লিয়াস বলল, তুমি এ যাবৎ যা কিছু বলেছ, তা যদি সত্য হয়, তাহলে তিনি নিশ্চয় নবী। অবশ্য আমি জানতাম তিনি (সা.) আবির্ভূত হবেন। কিন্তু তিনি তোমাদের (আরবদের) মধ্য হতে বের হবেন আমার এ ধারণা ছিল না। আর আমি যদি তাঁর নিকট পর্যন্ত পৌছতে পারব বলে বিশ্বাস করতাম, তাহলে আমি অবশ্যই তাঁর সাক্ষাতের প্রত্যাশী হতাম। আর যদি আমি তার কাছে থাকতাম, তবে নিশ্চয় তাঁর পদদ্বয় ধুয়ে দিতাম। জেনে রাখ! অচিরেই তাঁর রাজত্ব আমার এ দু’ পায়ের নিচ পর্যন্ত পৌছে যাবে। অর্থাৎ তিনি (সা.) অল্প দিনের মধ্যেই গোটা রোম সাম্রাজ্যের মালিক হবেন। আবূ সুফইয়ান বলেন, এরপর সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সেই চিঠি আনিয়ে পাঠ করল। (বুখারী ও মুসলিম)

পূর্ণ হাদীসটি (بَاب الْكتاب إِلى الكفَّار) কাফিরদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পত্র প্রেরণ” অধ্যায়ে পূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب عَلَامَات النُّبُوَّة)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو سُفْيَانَ بْنُ حَرْبٍ مِنْ فِيهِ إِلَى فِيَّ قَالَ: انْطَلَقْتُ فِي الْمُدَّةِ الَّتِي كَانَتْ بَيْنِي وَبَيَّنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فَبينا أَنا بِالشَّام إِذْ جِيءَ بِكِتَاب النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى هِرَقْلَ. قَالَ: وَكَانَ دِحْيَةُ الْكَلْبِيُّ جَاءَ بِهِ فَدَفَعَهُ إِلَى عَظِيمِ بُصْرَى فَدَفَعَهُ عَظِيمُ بُصْرَى إِلَى هِرَقْلَ فَقَالَ هِرَقْلُ: هَلْ هُنَا أَحَدٌ مِنْ قَوْمِ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ؟ قَالُوا: نَعَمْ فَدُعِيتُ فِي نَفَرٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَدَخَلْنَا عَلَى هِرَقْلَ فَأَجْلَسَنَا بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ: أَيُّكُمْ أَقْرَبُ نَسَبًا مِنْ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ؟ قَالَ أَبُو سُفْيَانَ: فَقُلْتُ: أَنَا فَأَجْلَسُونِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَجْلَسُوا أَصْحَابِي خَلْفِي ثُمَّ دَعَا بِتَرْجُمَانِهِ فَقَالَ: قُلْ لَهُمْ: إِنِّي سَائِلٌ هَذَا عَنْ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ فَإِنْ كَذَبَنِي فَكَذِّبُوهُ. قَالَ أَبُو سُفْيَانُ: وَايْمُ اللَّهِ لَوْلَا مَخَافَةُ أَنْ يُؤْثَرَ عَلَيَّ الْكَذِبُ لَكَذَبْتُهُ ثُمَّ قَالَ لِتَرْجُمَانِهِ: سَلْهُ كَيْفَ حَسَبُهُ فِيكُمْ؟ قَالَ: قُلْتُ: هُوَ فِينَا ذُو حَسَبٍ. قَالَ: فَهَلْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مِنْ مَلِكٍ؟ قُلْتُ: لَا. قَالَ: فَهَلْ كُنْتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالْكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ؟ قُلْتُ: لَا. قَالَ: وَمَنْ يَتْبَعُهُ؟ أَشْرَافُ النَّاسِ أَمْ ضُعَفَاؤُهُمْ؟ قَالَ: قُلْتُ: بَلْ ضُعَفَاؤُهُمْ. قَالَ: أَيَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ؟ قُلْتُ: لَا بَلْ يَزِيدُونَ. قَالَ: هَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَنْ دِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ سَخْطَةً لَهُ؟ قَالَ: قلت: لَا. قلت: فَهَلْ قَاتَلْتُمُوهُ؟ قُلْتُ: نَعَمْ. قَالَ: فَكَيْفَ كَانَ قِتَالُكُمْ إِيَّاهُ؟ قَالَ: قُلْتُ: يَكُونُ الْحَرْبُ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُ سِجَالًا يُصِيبُ مِنَّا وَنُصِيبُ مِنْهُ. قَالَ: فَهَلْ يَغْدِرُ؟ قُلْتُ: لَا وَنَحْنُ مِنْهُ فِي هَذِهِ الْمُدَّةِ لَا نَدْرِي مَا هُوَ صَانِعٌ فِيهَا؟ قَالَ: وَاللَّهِ مَا أَمْكَنَنِي مِنْ كَلِمَةٍ أُدْخِلُ فِيهَا شَيْئًا غَيْرَ هَذِهِ. قَالَ: فَهَلْ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ؟ قُلْتُ: لَا. ثُمَّ قَالَ لِتَرْجُمَانِهِ: قُلْ لَهُ: إِنِّي سَأَلْتُكَ عَنْ حَسَبِهِ فِيكُمْ فَزَعَمْتَ أَنَّهُ فِيكُمْ ذُو حَسَبٍ وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْعَثُ فِي أَحْسَابِ قَوْمِهَا. وَسَأَلْتُكَ هَلْ كَانَ فِي آبَائِهِ مَلِكٌ؟ فَزَعَمْتَ أَنْ لَا فَقُلْتُ: لَوْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مَلِكٌ. قُلْتُ: رَجُلٌ يَطْلُبُ مُلْكَ آبَائِهِ. وَسَأَلْتُكَ عَنْ أَتْبَاعه أضعافاؤهم أَمْ أَشْرَافُهُمْ؟ فَقُلْتَ: بَلْ ضُعَفَاؤُهُمْ وَهُمْ أَتْبَاعُ الرُّسُلِ. وَسَأَلْتُكَ: هَلْ كُنْتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالْكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ؟ فَزَعَمْتَ أَنْ لَا فَعَرَفْتُ أَنَّهُ لَمْ يَكُنْ لِيَدَعَ الْكَذِبَ عَلَى النَّاسِ ثُمَّ يَذْهَبُ فَيَكْذِبُ عَلَى اللَّهِ. وَسَأَلْتُكَ: هَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَنْ دِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ سَخْطَةً لَهُ؟ فَزَعَمْتَ أَنْ لَا وَكَذَلِكَ الْإِيمَانُ إِذَا خَالَطَ بَشَاشَتُهُ الْقُلُوبَ. وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ؟ فَزَعَمْتَ أَنَّهُمْ يَزِيدُونَ وَكَذَلِكَ الْإِيمَانُ حَتَّى يَتِمَّ وَسَأَلْتُكَ هَلْ قَاتَلْتُمُوهُ؟ فَزَعَمْتَ أَنَّكُمْ قَاتَلْتُمُوهُ فَتَكُونُ الْحَرْبُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ سِجَالًا يَنَالُ مِنْكُمْ وَتَنَالُونَ مِنْهُ وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْتَلَى ثُمَّ تَكُونُ لَهَا الْعَاقِبَةُ. وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَغْدِرُ فَزَعَمْتَ أَنَّهُ لَا يَغْدِرُ وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ لَا تَغْدِرُ وَسَأَلْتُكَ هَلْ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ؟ فَزَعَمْتَ أَنْ لَا فَقُلْتُ: لَوْ كَانَ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ قُلْتُ: رَجُلٌ ائْتَمَّ بِقَوْلٍ قِيلَ قَبْلَهُ. قَالَ: ثُمَّ قَالَ: بِمَا يَأْمُرُكُمْ؟ قُلْنَا: يَأْمُرُنَا بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَالصِّلَةِ وَالْعَفَافِ. قَالَ: إِنْ يَكُ مَا تَقُولُ حَقًّا فَإِنَّهُ نَبِيٌّ وَقَدْ كُنْتُ أَعْلَمَ أَنَّهُ خَارِجٌ وَلَمْ أَكُنْ أَظُنُّهُ مِنْكُمْ وَلَوْ أَنِّي أَعْلَمُ أَنِّي أَخْلُصُ إِلَيْهِ لَأَحْبَبْتُ لِقَاءَهُ وَلَوْ كُنْتُ عِنْدَهُ لَغَسَلْتُ عَنْ قَدَمَيْهِ وَلَيَبْلُغَنَّ مُلْكُهُ مَا تَحْتَ قَدَمَيَّ. ثُمَّ دَعَا بِكِتَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَرَأَهُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَقَدْ سَبَقَ تَمَامُ الْحَدِيثِ فِي «بَاب الْكتاب إِلى الكفَّار»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (7) و مسلم (74 / 1773)، (4607) * و انظر ح 3926 ۔ 3927 لتمام الحدیث ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: আবূ সুফইয়ান-এর আসল নাম হলো সখর। তিনি হস্তির বছরের দশ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মক্কা বিজয়ের রাতে ইসালাম গ্রহণ করেন। তিনি ত্বায়িফ ও হুনায়নের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ইয়ারমূকের দিনে তার চোখ উপড়িয়ে ফেলা হয়। তিনি মদীনায় মারা যান। উসমান (রাঃ) তাঁর জানাযার সালাতে ইমামতি করেন।
(مِنْ فِيهِ إِلَى فِيَّ) অর্থাৎ এ হাদীসটি তার মুখ থেকে সরাসরি আমার মুখে স্থানান্তরিত হয়েছে। আর আমাদের মাঝে কেউ মধ্যস্থিত ব্যক্তি নেই। এভাবেই ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন। বাহ্যিকভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, তার অর্থ হলো আমার আর তার মাঝে অন্য কেউ উপস্থিত ছিল না। যেমনটি হাদ্দাসানী শব্দ দ্বারা বুঝা যায়। অনুরূপভাবে তার কথা ফিয়্যা। আর যদি সেখানে কেউ উপস্থিত থাকত তবে তার জন্যও সে হাদীসটি বর্ণনা করা জায়িয হত। তাহলে হাদীসটি শুধু তার মুখ থেকে তার মুখে সীমাবদ্ধ থাকত না।
(لَّتِي كَانَتْ بَيْنِي وَبَيَّنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) অর্থৎ হুদায়বিয়ার সন্ধি। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা ছিল ষষ্ঠ হিজরীর ঘটনা। আর এই সন্ধির মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল দশ হিজরী পর্যন্ত। কিন্তু তারা এই চুক্তি ভেঙ্গে ছিল খুযাআহ্ গোত্রের কতিপয় লোককে হত্যা করে, যাদের সাথে তাদের সন্ধি চুক্তি হয়েছিল। আর এটা ছিল অষ্টম হিজরীর ও মক্কাহ্ বিজয়ের সময়ের ঘটনা।
(فَدُعِيتُ فِي نَفَرٍ) অর্থাৎ কুরায়শদের কতিপয় লোককে। আর তারা ছিল ত্রিশজন লোক। কথিত আছে, মুগীরা ইবনু শুবাহ্ (রাঃ) তাদের সাথে ছিলেন। তবে তিনি আগেই ইসালাম গ্রহণ করেছিলেন। কেননা তিনি খন্দকের যুদ্ধের বছরে ইসালাম কবুল করেন। অতএব তিনি হাযির হওয়া থেকে দূরে ছিলেন। আর তিনি মুসলিম হওয়ার কারণে চুপ ছিলেন।
(أَيُّكُمْ أَقْرَبُ نَسَبًا مِنْ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ؟) অর্থাৎ ‘উলামাগণ বলেন, তিনি তার সবচেয়ে কাছের লোককে জিজ্ঞেস করার কারণ হলো তিনি তাঁর অবস্থা সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। আর তার হকের ব্যাপারে তিনি মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকবেন।
(وَأَجْلَسُوا أَصْحَابِي خَلْفِي) অর্থাৎ তার সাথিদেরকে তার পিছনে বসানোর কারণ হলো যেন তারা তার মিথ্যা কথা হতে তাকে ধরে তাদেরকে সহায়তা করতে পারে। আর তার থেকে তারা যেন লজ্জা না পায়। অথবা এটারও সম্ভাবনা আছে যে, তাদেরকে হাতের দ্বারা তার দিকে ইশারা করলেন আর তার বিরূদ্ধে দলীল হিসেবে থাকতে বললেন। এই ইশারা হতে পারে হাত দিয়ে বা মাথা নাড়িয়ে ইত্যাদি ভাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা

৫৮৬২-[১] কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে, তিনি মালিক ইবনু সস’আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। আল্লাহর নবী (সা.) -কে যে রাত্রে মি’রাজ করানো হয়েছিল, সে রাতের বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি তাদেরকে বলেছেন, একদিন আমি কা’বার হাত্বীম অংশে কাত হয়ে শুয়েছিলাম।
বর্ণনাকারী (কতাদাহ্) কখনো কখনো (হাত্বীম-এর স্থলে) “হিজর’ শব্দ বলেছেন। এমন সময় হঠাৎ - একজন আগন্তুক আমার কাছে আসলেন এবং তিনি এ স্থান হতে ওই স্থান পর্যন্ত চিরে ফেললেন। অর্থাৎ কণ্ঠনালীর নিম্নভাগ হতে নাভির উপরিভাগ পর্যন্ত বিদীর্ণ করলেন। তারপর ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের থালা আমার কাছে আনা হলো, এরপর আমার অন্তরকে ধৌত করা হয়, তারপর তাকে ঈমানে পরিপূর্ণ করে আবার পূর্বের জায়গায় রাখা হয়।
অপর এক বর্ণনায় আছে- অতঃপর যমযমের পানি দ্বারা পেট ধৌত করা হয়, পরে ঈমান ও হিকমতে তাকে পরিপূর্ণ করা হয়। তারপর আকারে খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধা অপেক্ষা বড় এক সাদা বর্ণের বাহন আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। তাকে বলা হয় ’বুরাক’। তার দৃষ্টি যত দূর যেত, সেখানে তার পা রাখত। নবী (সা.) বলেন, অতঃপর আমাকে তার উপরে আরোহণ করানো হলো।
এবার জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সাথে নিয়ে যাত্রা করলেন এবং নিকটতম আসমানে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? বললেন, (আমি) জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলে দেয়া হলো। যখন আমি ভিতর প্রবেশ করলাম, তখন সেখানে দেখতে পেলাম ইয়াহইয়া ও ’ঈসা আলায়হিস সালাম-কে। তারা দু’জন পরস্পর খালাতো ভাই। জিবরীল আলায়হিস সালাম (আমাকে) বললেন, ইনি হলেন ইয়াহইয়া আলায়হিস সালাম আর উনি হলেন ’ঈসা আলায়হিস সালাম আপনি তাদেরকে সালাম করুন। যখন আমি সালাম করলাম, তাঁরা উভয়ে সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সদর সম্ভাষণ।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে উঠলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁর আগমন খুবই কল্যাণকর। অতঃপর দরজা খুলে দেয়া হলো। ভিতরে প্রবেশ করে আমি সেখানে ইউসুফ আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন ইউসুফ আলায়হিস সালাম তাকে সালাম করুন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।

অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁর আগমন বড়ই শুভ! অতঃপর দরজা খুলে দেয়া হলো। আমি ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম, সেখানে ইদরীস আলায়হিস সালাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি ইদরীস আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলাম, অতঃপর তিনি জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।  এরপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বে আরোহণ করলেন এবং পঞ্চম আসমানে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে? বললেন, (আমি) জিবরীল । পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। আবার প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তার প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাঁর আগমন খুবই কল্যাণকর! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি যখন ভিতরে পৌছলাম, সেখানে হারূন আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হারূন আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি উত্তর দিলেন। অতঃপর বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে সাথে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বলোকে উঠলেন এবং ষষ্ঠ আকাশে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে? বললেন, জিবরীল। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)! পুনরায় প্রশ্ন করা হলো তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হা। বলা হলো, তার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তারা আগমন কতই না উত্তম! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করলাম, তখন সেখানে মূসা আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন, মূসা আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি তার জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন। অতঃপর আমি যখন তাঁকে অতিক্রম করে অগ্রসর হলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার পরে এমন একজন যুবককে (নবী বানিয়ে) পাঠানো হলো, যার উম্মত আমার উম্মত অপেক্ষা অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।
অতঃপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশে আরোহণ করলেন। অনন্তর জিবরীল আলায়হিস সালাম দরজা খুলতে বললে, প্রশ্ন করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর বলা হলো, তাঁর প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাঁর আগমন কতই না উত্তম! অতঃপর আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করলাম সেখানে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে দেখতে পেলাম। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, ইনি হলেন আপনার পিতা ইবরাহীম আলায়হিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। তখন আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর আমাকে ’সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো হলো। আমি দেখতে পেলাম, তার ফল হাজার নামক অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতা হাতির কানের মতো। জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, এটাই সিদরাতুল মুনতাহা। আমি (তথায়) আরো দেখতে পেলাম চারটি নহর। দু’টি নহর অপ্রকাশ্য, আর দুটি প্রকাশ্য। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এ নহরের তৎপর্য কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য দুটি হলো জান্নাতে প্রবাহিত দু’টি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হলো (মিসরের) নীল এবং (ইরাকের) ফুরাত নদী। অতঃপর আমাকে বায়তুল মা’মূর’ দেখানো হলো। তারপর আমার সামনে হাজির করা হলো এক পাত্র মদ, এক পাত্র দুধ ও এক পাত্র মধু। তার মধ্য হতে আমি দুধ গ্রহণ করলাম (এবং তা পান করলাম)। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম বললেন, এটা ফিত্বরাত’-এর (স্বভাব-ধর্মের) নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন।
অতঃপর আমার ওপর দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করা হলো। আমি (তা গ্রহণ করে) প্রত্যাবর্তন করলাম। মূসা আলায়হিস সালাম-এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি (আমাকে) বললেন, আপনাকে কি করতে আদেশ করা হয়েছে? আমি বললাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত সম্পাদনে সক্ষম হবে না। আল্লাহর শপথ! আপনার পূর্বে আমি (বানী ইসরাঈলের) লোকেদেরকে পরখ করে দেখেছি এবং বানী ইসরাঈলদের হিদায়াতের জন্য আমি যথাসাধ্য পরিশ্রম করেছি। অতএব আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের পক্ষে (সালাত) আরো হ্রাস করার জন্য আবেদন করুন। তখন আমি ফিরে গেলাম (এবং ঐভাবে প্রার্থনা জানালে) আল্লাহ তা’আলা আমার ওপর হতে দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। তারপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। তিনি এবারও অনুরূপ কথা বললেন। ফলে আমি আমি পুনরায় আল্লাহর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি আমার ওপর হতে আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। তাই আমি (আবার) ফিরে গেলাম। তখন আল্লাহ তা’আলা আরো দশ (ওয়াক্ত সালাত) মাফ করে দিলেন। অতঃপর আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসলে আবারো তিনি ঐ কথাই বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আমার জন্য দশ (ওয়াক্ত) সালাত কম করে দিলেন এবং আমাকে প্রত্যহ দশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হলো। আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর নিকট ফিরে আসালাম। এবারও তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। ফলে আমি পুনরায় ফিরে গেলে আমাকে প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হলো। আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে পুনরায় ফিরে আসলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকে (সর্বশেষ) কি করতে আদেশ করা হলো? আমি বললাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়েছে।
তিনি বললেন, আপনার উম্মত প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত সমাপনে সক্ষম হবে না। আপনার পূর্বে আমি (বানী ইসরাঈলের) লোকেদেরকে বিশেষভাবে পরখ করে দেখেছি এবং বানী ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা ও কষ্ট স্বীকার করেছি, তাই আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো কম করার প্রার্থনা করুন। তিনি (সা.) বললেন, আমি আমার প্রভুর কাছে (স্বীয় কর্তব্য পালনের জন্য) এত অধিকবার প্রার্থনা জানিয়েছি যে, পুনরায় প্রার্থনা জানাতে আমি লজ্জাবোধ করছি, বরং আমি (আল্লাহর এ নির্দেশের উপর) সন্তুষ্ট এবং আমি (আমার ও আমার উম্মতের ব্যাপার) আল্লাহর ওপর অর্পণ করছি। তিনি (সা.) বলেন, আমি যখন মূসা আলায়হিস সালাম-কে অতিক্রম করে সম্মুখে অগ্রসর হলাম, তখন (আল্লাহর পক্ষ হতে) ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি আমি চালু করে দিলাম এবং বান্দাদের জন্য সহজ করে দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَابٌ فِي الْمِعْرَاجِ)

عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ مَالك بن صعصعة أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدثهمْ لَيْلَةِ أُسْرِيَ بِهِ: «بَيْنَمَا أَنَا فِي الْحَطِيمِ - وَرُبَّمَا قَالَ فِي الْحِجْرِ - مُضْطَجِعًا إِذْ أَتَانِي آتٍ فَشَقَّ مَا بَيْنَ هَذِهِ إِلَى هَذِهِ» يَعْنِي مِنْ ثُغْرَةِ نَحْرِهِ إِلَى شِعْرَتِهِ «فَاسْتَخْرَجَ قَلْبِي ثُمَّ أُتِيتُ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مَمْلُوءٍ إِيمَانًا فَغُسِلَ قَلْبِي ثُمَّ حُشِيَ ثُمَّ أُعِيدَ» - وَفِي رِوَايَةٍ: ثُمَّ غُسِلَ الْبَطْنُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثمَّ ملئ إِيماناً وَحِكْمَة - ثُمَّ أُتِيتُ بِدَابَّةٍ دُونَ الْبَغْلِ وَفَوْقَ الْحِمَارِ أَبْيَضَ يُقَالُ لَهُ: الْبُرَاقُ يَضَعُ خَطْوَهُ عِنْدَ أَقْصَى طَرْفِهِ فَحُمِلْتُ عَلَيْهِ فَانْطَلَقَ بِي جِبْرِيلُ حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الدُّنْيَا فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ. قَالَ: نَعَمْ. قيل: مرْحَبًا بِهِ فَنعم الْمَجِيء جَاءَ ففُتح فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا فِيهَا آدَمُ فَقَالَ: هَذَا أَبُوكَ آدَمُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ السَّلَام ثمَّ قَالَ: مرْحَبًا بالابن الصَّالح وَالنَّبِيّ الصَّالح ثمَّ صعد بِي حَتَّى السَّماءَ الثانيةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَفُتِحَ. فَلَمَّا خَلَصْتُ إِذَا يَحْيَى وَعِيسَى وَهُمَا ابْنَا خَالَةٍ. قَالَ: هَذَا يَحْيَى وَهَذَا عِيسَى فَسَلِّمْ عَلَيْهِمَا فَسَلَّمْتُ فَرَدَّا ثُمَّ قَالَا: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ. ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ ففُتح فَلَمَّا خَلَصْتُ إِذَا يُوسُفُ قَالَ: هَذَا يُوسُفُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ. ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ صَعِدَ بِي حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الرَّابِعَةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَفُتِحَ فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا إِدْرِيسُ فَقَالَ: هَذَا إِدْرِيسُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ صَعِدَ بِي حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الْخَامِسَةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَفتح فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا هَارُونُ قَالَ: هَذَا هَارُونُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءَ السَّادِسَةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَهل أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا مُوسَى قَالَ: هَذَا مُوسَى فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالح فَلَمَّا جَاوَزت بَكَى قيل: مَا بيكيك؟ قَالَ: أَبْكِي لِأَنَّ غُلَامًا بُعِثَ بَعْدِي يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِهِ أَكْثَرَ مِمَّنْ يَدْخُلُهَا مِنْ أُمَّتِي ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا إِبْرَاهِيمُ قَالَ: هَذَا أَبُوكَ إِبْرَاهِيمُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرد السَّلَام ثمَّ قَالَ: مرْحَبًا بالابن الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ [ص:1637] رُفِعْتُ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى فَإِذَا نَبِقُهَا مِثْلُ قِلَالِ هَجَرَ وَإِذَا وَرَقُهَا مِثْلُ آذَانِ الْفِيَلَةِ قَالَ: هَذَا سِدْرَةُ الْمُنْتَهَى فَإِذَا أَرْبَعَةُ أَنْهَارٍ: نَهْرَانِ بَاطِنَانِ وَنَهْرَانِ ظَاهِرَانِ. قُلْتُ: مَا هَذَانِ يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: أَمَّا الْبَاطِنَانِ فَنَهْرَانِ فِي الْجَنَّةِ وَأَمَّا الظَّاهِرَانِ فَالنِّيلُ وَالْفُرَاتُ ثُمَّ رُفِعَ لِيَ الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ ثُمَّ أُتِيتُ بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ وَإِنَاءٍ مِنْ عَسَلٍ فَأَخَذْتُ اللَّبَنَ فَقَالَ: هِيَ الْفِطْرَةُ أَنْتَ عَلَيْهَا وَأُمَّتُكَ ثُمَّ فُرِضَتْ عَلَيَّ الصَّلَاةُ خَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ فَرَجَعْتُ فَمَرَرْتُ عَلَى مُوسَى فَقَالَ: بِمَا أُمِرْتَ؟ قُلْتُ: أُمِرْتُ بِخَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ. قَالَ: إِنَّ أمتك لَا تستطع خَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ وَإِنِّي وَاللَّهِ قَدْ جَرَّبْتُ النَّاسَ قَبْلَكَ وَعَالَجْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَشَدَّ الْمُعَالَجَةِ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ لِأُمَّتِكَ فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ عَنِّي عَشْرًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ مِثْلَهُ فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ عَنِّي عَشْرًا فَرَجَعْتُ إِلى مُوسَى فَقَالَ مثله فَرَجَعت فَوضع عني عَشْرًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ مِثْلَهُ فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ عَنَى عَشْرًا فَأُمِرْتُ بِعَشْرِ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ مِثْلَهُ فَرَجَعْتُ فَأُمِرْتُ بِخَمْسِ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ: بِمَا أُمِرْتَ؟ قُلْتُ: أُمِرْتُ بِخَمْسِ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ. قَالَ: إِنَّ أُمَّتَكَ لَا تَسْتَطِيعُ خَمْسَ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَإِنِّي قَدْ جَرَّبْتُ النَّاسَ قَبْلَكَ وَعَالَجْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَشَدَّ الْمُعَالَجَةِ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ لِأُمَّتِكَ قَالَ: سَأَلْتُ رَبِّي حَتَّى اسْتَحْيَيْتُ وَلَكِنِّي أَرْضَى وَأُسَلِّمُ. قَالَ: فَلَمَّا جَاوَزْتُ نَادَى مُنَادٍ: أَمْضَيْتُ فريضتي وخففت عَن عبَادي . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3207) و مسلم (265 / 164)، (416 و 417) ۔
(صَحِيحٍ)

ব্যখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) মিরাজে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে মক্কায় কোন জায়গায় ছিলেন তা এ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে (فِي الْحَطِيمِ) শব্দ দিয়ে। আবার অন্য হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে (فِي الْحِجْرِ) শব্দ দিয়ে। এ বিষয়ে মিরকাত প্রণেতা বলেন, বর্ণনার ক্ষেত্রে শব্দের পরিবর্তন ঘটেছে, সম্ভবত এই কারণে যে, রাসূল (সা.) মি'রাজের এ ঘটনাটি একাধিকবার বর্ণনা করেছেন। তিনি কখনো বর্ণনা করার সময় (حَطِيم) (হাত্বীম) শব্দ বলেছেন, আবার কখনো (حِجْرِ) (হিজর) শব্দ বলেছেন।
অথবা এটিও হতে পারে যে, উক্ত হাদীসে রাবী এ বিষয়ে সন্দিহান যে, তিনি রাসূল (সা.) -কে ‘হাত্বীম’ শব্দ বলতে শুনেছে নাকী হিজর শব্দ বলতে শুনেছে। তাই রাবী মি'রাজের এই ঘটনা বর্ণনা করতে কখনো ‘হাত্বীম' শব্দ ব্যবহার করেছেন আবার কখনো ‘হিজর' শব্দ ব্যবহার করেছেন।
প্রকৃত কথা হলো, ‘হাত্বীম' এবং ‘হিজর। একই জিনিসের দুটি ভিন্ন নাম। হাত্বীম বা হিজর বলা হয়, কা'বার পাশে ঐ ফাঁকা স্থানকে যা কা'বার ভিতরের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হয়। সেই স্থানের নামকরণের ব্যাপারে কাযী বলেন, উক্ত স্থানকে হিজর এবং হাত্বীম দুটোই বলা যায় ভিন্ন ভিন্ন কারণে।
১) উক্ত স্থানকে হাত্বীম বলা হয়, কেননা ঐ স্থানের দেয়ালকে ভেঙ্গে কা'বার দেয়ালের থেকে নিচু করা হয়েছে। আর (حَطِيم) (হাত্বীম) শব্দের অর্থ হলো ভাঙ্গা। যেহেতু তার মাঝে (حَطِيم) তথা ভাঙ্গার কাজটি ঘটেছে তাই তাকে (حَطِيم) বলা হয়।
২) উক্ত স্থানকে হিজর বলা হয়, কেননা দেয়াল দিয়ে ঐ স্থানকে বেঁধে দেয়া হয়েছে যেন তা কা'বার আশেপাশের অন্য স্থান থেকে আলাদা বিবেচিত হয়। আর (حِجْرِ) (হিজর) শব্দের অর্থ বাধা দেয়া, যেহেতু তার মাঝে (حِجْرِ) তথা বাধা দেয়ার কাজটি ঘটেছে তাই তাকে (حِجْرِ) বলা হয়।
তারপর তাঁর হাত্বীমে থাকার অবস্থা বর্ণনা করেছেন (مُضْطَجِعًا) শব্দ দিয়ে। যার অর্থ হলো শোয়া অবস্থায়। এ অবস্থাটা দু ধরনের হতে পারে। ১) শোয়া অবস্থায় তিনি জাগ্রত ছিলেন অথবা ২) শোয়া অবস্থায় তিনি ঘুমন্ত ছিলেন।
(إِذْ أَتَانِي آتٍ) এখানে (آتٍ) শব্দের অর্থ হলো ‘আগন্তুক। মিকাত প্রণেতা বলেন, এই আগন্তুক দ্বারা উদ্দেশ্য হলো একজন মালাক বা ফেরেশতা (জিবরীল আলায়হিস সালাম)।
(فَشَقَّ مَا بَيْنَ هَذِهِ إِلَى هَذِهِ)  তারপর এ স্থান থেকে এই স্থান পর্যন্ত চিরে দেখালেন। মালিক (রহিমাহুল্লাহ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এ কথাটি সম্পর্কে বলেন, রাসূল (সা.) -এর এ কথাটি বুঝা যায় পরবর্তী এই অংশের মাধ্যম (يَعْنِي مِنْ ثُغْرَةِ نَحْرِهِ إِلَى شِعْرَتِهِ) অর্থাৎ কণ্ঠনালীর নিম্নভাগ থেকে নাভির উপরিভাগ পর্যন্ত যেমনটি নিহায়াহ্ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।
(فَاسْتَخْرَجَ قَلْبِي) অর্থাৎ তারপর আমার হৃদয়কে বের করে ফেলল। এই সম্পর্কে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, রাসূল (সা.)-এর শৈশবকালে বক্ষ বিদীর্ণ করার যে ঘটনা ঘটেছিল সেটি এখানে উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো তাঁর পরিপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যে বক্ষ বিদীর্ণ করার ঘটনা ঘটেছিল সেটি। কারণ এই বক্ষ বিদীর্ণ করার মাধ্যম তাঁর অন্তর থেকে প্রবৃত্তির বিষয়গুলো বের করা হয়েছে যেন তাতে পরিপূর্ণ জ্ঞান প্রবেশ করতে পারে। তিনি আরো বলেন, এটি রাসূল (সা.)-এর বিশেষ মু'জিযাহ্। কারণ, কোন মানুষের পেট ফেঁড়ে হৃদয় বের করে ফেললে তার বেঁচে থাকার কথা নয়। অথচ রাসূল (সা.) -এর ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছে। তবে কতিপয় বিদ্বানগণ রাসূল (সা.) -এর বক্ষ বিদীর্ণ করার ঘটনাকে রূপক অর্থে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এই মতকে প্রত্যাখ্যান করে তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) উত্তর দিয়ে বলেছেন, হাদীসে উল্লেখিত বক্ষ বিদীর্ণ করার ঘটনাটি হলো বিশ্বাস করার বিষয়। অতএব এ ব্যাপারে অহেতুক যুক্তি দেখিয়ে ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করার কোন অবকাশ নেই।
এ ব্যাপারে মিরক্বাত প্রণেতাও বলেন, আল্লাহর প্রশংসায় আমরা এ বিষয়টিকে বাস্তবিকভাবেই বিশ্বাস করি কোন ধরনের রূপক অর্থের দিকে যাই না।
হাদীসে উল্লেখিত পেয়ালাটি স্বর্ণের ছিল। এখানে কথা হলো স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার করাতো হারাম তাহলে কেন স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার করা হলো?
মিরক্বাত প্রণেতা দুইভাবে এর উত্তর দিয়েছেন। ১) হয়তো এ ঘটনাটি ছিল স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার করা হারাম হওয়ার পূর্বে। অথবা ২) সেই সময়ে স্বর্ণের পাত্র ব্যবহার করাটা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জন্য বিশেষভাবে বৈধ ছিল।
(مَمْلُوءٍ إِيمَانًا) অর্থাৎ পেয়ালাটি ছিল ঈমানে পরিপূর্ণ। শারহুন নাবাবী গ্রন্থে এ কথাটির ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে যে, ঐ পেয়ালাতে রাখা হয়েছিল এমন সব বিষয় যেগুলোর মাধ্যমে ঈমান অর্জিত হয়। অতএব ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল এ কথাটি তখন হবে রূপক অর্থে।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এসব বিষয় কখনো কখনো বাস্তবিক রূপলাভ করতে পারে। যেমন তা বাস্তবায়িত হবে ‘আমালকে পরিমাপ করার ক্ষেত্রে এবং মৃত্যুকে দুম্বা হিসেবে যাবাহ করার ক্ষেত্রে। অতএব এ বিষয়টি রূপক না হয়ে প্রকৃত অর্থেও হতে পারে।
(حُشِيَ) শব্দের অর্থ হলো, পূর্ণ করে দেয়া আর এখানে (حُشِيَ) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তার প্রতিপালকের ভালোবাসায় তার হৃদয়কে পূর্ণ করে দেয়া।
(ثُمَّ غُسِلَ الْبَطْنُ) অর্থাৎ তারপর তার পেট ধৌত করে দিলেন। এ সম্পর্কে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, এখানে তার পেট ধৌত করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তার হৃদয়ের স্থান ধৌত করা।
(ثُمَّ أُتِيتُ بِدَابَّةٍ) অর্থাৎ তারপর আমার নিকট একটি চতুষ্পদ জন্তুটি নিয়ে আসা হলো। সেই জন্তুটি ছিল খচ্চরের থেকে ছোট এবং গাধার থেকে বড়। তার রং ছিল সাদা। আর নাম ছিল বুরাক।
এই জন্তুটিকে বুরাক নামকরণের ব্যাপারে মিকাত প্রণেতা দু'টি কারণ উল্লেখ করেছেন।
১) তার রং ছিল উজ্জ্বল। আর উজ্জ্বলের ‘আরবী প্রতিশব্দ হলো (بُرِيْقَ)। তাই এখান থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে (بُرَاقٌ) বুরাক’।
২) তার গতি ছিল বিজলির মতো দ্রুত। আর বিজলির ‘আরবী প্রতিশব্দ হলো (بُرْقٌ)। তাই এখান থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে (بُرَاقٌ) বুরাক’।
আবার এটিও হতে পারে যে, উল্লেখিত, দু'টি গুণই সেই জন্তুটির মাঝে বিদ্যমান ছিল। তাই তাকে বুরাক নামকরণ করা হয়েছে।
বুরাকের পরিচয় সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যাকারগণ ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় পেশ করেছেন। যেমন শারহুন নাবাবী গ্রন্থে বলা হয়েছে। বুরাক হলো এমন একটি বাহনের নাম যাতে রাসূল (সা.) - ইসরার রাতে আরোহণ করেছিলেন। যুবায়দী, মুখতাসারুল ‘আয়নী গ্রন্থে এবং ‘তাহরীব’-এর লেখক উভয়ে বলেন, বুরাক হলো এমন একটি প্রাণী যাতে নবীগণ আরোহণ করতেন।
(فَحُمِلْتُ عَلَيْهِ) অর্থাৎ তারপর আমাকে তার উপর আরোহণ করানো হলো। এখানে রাসূল (সা.)- বলেননি যে, আমি তাতে আরোহণ করলাম। এ সম্পর্কে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন,
(حُمِلْتُ عَلَيْهِ) এই বাক্য দ্বারা ইশারা করা হয়েছে যে, তাতে আরোহণ করাটা সহজ ছিল না। তাই রাসূল (সা.) মালাকের (ফেরেশতার) সহযোগিতায় আরোহণ করেছিলেন।
(فَانْطَلَقَ بِي جِبْرِيلُ حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الدُّنْيَا) অর্থাৎ তারপর জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে আসমানে নিয়ে গেলেন। বর্ণনার এই ধারা থেকে বুঝা যায় যে, তাকে বুরাকে আরোহণ করিয়েই মি'রাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অথবা তার মি'রাজ হয়েছিল অন্য কোন রাতে। সেই রাতে নয়, যেই রাতে তিনি বুরাকে আরোহণ করে মক্কাহ্ থেকে বায়তুল মাক্বদিসে ভ্রমণ করেছিলেন।
কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এরূপ নয়। বরং ঘটনা হলো, তিনি একই রাতে মক্কাহ্ থেকে বায়তুল মাক্বদিসে ভ্রমণ করেন। তারপর বায়তুল মাকদিস থেকে বিশেষ সিঁড়িতে আরোহণ করে মিরাজে গমন করেন। রাসূল (সা.)-কে মক্কাহ্ থেকে মি'রাজে না নিয়ে বায়তুল মাক্বদিস থেকে নিয়ে যাওয়ার পিছনে বেশ কিছু রহস্য আছে। যার কিছু মিরক্বাত প্রণেতা উল্লেখ করেছেন। যেমন, বায়তুল মাকদিসের বরাবর উপরে মালায়িকার (ফেরেশতাদের) আকাশের উঠার জায়গা রয়েছে। তাই রাসূল (সা.) -কে সেখান থেকে উপরে উঠানো হয়েছে। যেন সোজাসুজি তাঁকে আকাশে নিয়ে যাওয়া যায়।
রাসূল (সা.) -কে বায়তুল মাক্বদিস ভ্রমণ করিয়ে মিরাজে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে  বিরোধিতাকারীদের জন্য সত্যের প্রকাশ। কেননা বায়তুল মাক্বদিস ভ্রমণকালে কাফেলার সাথে যে ঘটনা ঘটেছিল তা পরবর্তী সময়ে রাসূল (সা.)-এর ইসরা ও মি'রাজের স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
তাছাড়াও বায়তুল মাকদিস হলো বহু নবী রাসূল (সা.)গণের হিজরতের স্থান। তাই সেখানে ভ্রমণ করার কারণে রাসূল (সা.) -এর অনেক বড় প্রাপ্তি অর্জিত হয়েছে।
আর বর্ণনার এ ধারা সম্পর্কে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, বর্ণনার এ ধারাটি এই হাদীসের রাবী কর্তৃক সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
কেননা প্রকৃত বিষয়টি হলো, রাসূল (সা.) বুরাকে আরোহণ করে মক্কাহ্ থেকে বায়তুল মাকদিসে পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। তারপর বিশেষ সিঁড়িতে আরোহণ করে সেখান থেকে মি'রাজে ভ্রমণ করেন। যা এ হাদীস ছাড়া অন্যান্য হাদীস থেকে পাওয়া যায়।
(فَاسْتَفْتَحَ) অর্থাৎ (দরজা) খুলে চাইলেন। এ সম্পর্কে কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ শব্দ থেকে বুঝা যায় যে, বাস্তবেই আসমানের কিছু দরজা আছে এবং সেগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য ফেরেশতা (মালাক) নিয়োজিত রয়েছে।
(وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ) অর্থাৎ তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে?
এ প্রসঙ্গে ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: হাদীসের অন্য বর্ণনায় আছে, (وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ) অর্থাৎ তাকে কি বায়তুল মাক্বদিস ভ্রমণ করানোর জন্য এবং আসমানে আরোহণ করানোর জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে? ইমাম বায়যাভী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (أُرْسِلَ إِلَيْهِ) এর অর্থ হলো তাঁকে কি ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ করানোর জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে?
তারপর জিবরীল আলায়হিস সালাম মালায়িকার (ফেরেশতাদের) উত্তর দিলে তারা আকাশের দরজা খুলে দিলেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) ও জিবরীল আলায়হিস সালাম-এর সাথে আকাশে আরোহণ করেন এবং তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করার মাধ্যমে তাঁর পূর্বপুরুষদেরকেও সম্মানের দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেলেন। মহাসম্মানজনক দর্শনের মাধ্যমে তার সম্মানিত ভাইদের থেকেও এগিয়ে গেলেন। কতই না তার সৌভাগ্য! কেমন ছিল তার জন্য তখনকার সেই সৌভাগ্যময় সময়! এটি কি কল্পনা করা যায়। যার ওপর আর কোন মর্যাদাই হতে পারে না।
কেউ কেউ বলেন, জিবরীল আলায়হিস সালাম এবং আসমানের দ্বাররক্ষী মালায়িকার মাঝে প্রশ্নোত্তর হয়েছিল। আশ্চর্য হওয়ার কারণে। কেননা এটা স্পষ্ট ব্যাপার যে, কোন মানুষ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া আসমানে আরোহণ করতে পারবে না এবং জিবরীল আলায়হিস সালাম-ও এমন কাউকে নিয়ে আসবেন না যাকে আল্লাহ নিয়ে আসার অনুমতি দেননি। তাহলে কতইনা সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যাকে নিয়ে আসার জন্য স্বয়ং আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন। কে সেই মহান ব্যক্তি?
(فَسَلَّمَ عَلَيْهِ) অর্থাৎ আপনি তাকে সালাম দিন। এখানে জিবরীল আলায়হিস সালাম আল্লাহর রাসূল (সা.) -কে বললেন, আপনি তাকে সালাম দিন। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) এ প্রসঙ্গে বলেন, নবীদেরকে সালাম দেয়ার ব্যাপারে রাসূল (সা.) -কে আদেশ করা হয়েছে। কেননা তিনি (সা.) ছিলেন তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রমকারী। এজন্য তিনি (সা.) দণ্ডায়মান ব্যক্তির হুকুমে ছিলেন। আর তারা ছিলেন উপবেশনকারী ব্যক্তিদের হুকুমে। এক্ষেত্রে শারী'আতের নিয়ম হলো দণ্ডায়মান ব্যক্তি উপবেশনকারীকে সালাম দিবে। তাই রাসূল (সা.) -কে আদেশ করা হয়েছিল তাদেরকে সালাম দিতে। যদিও মর্যাদায় রাসূল (সা.) তাদের থেকে অনেক শ্রেষ্ঠ।

(مرْحَبًا بالابن الصَّالح وَالنَّبِيّ الصَّالح) অর্থাৎ সুস্বাগতম সৎ পুত্র ও সৎ নবীকে। এ প্রসঙ্গে মিরক্বাত প্রণেতা উল্লেখ করেছেন, অনেক ব্যাখ্যাকারী বলেন, নবীগণ রাসূল (সা.) -এর জন্য শুধু (صَالِحِ) (সৎ) শব্দটি বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অন্য কোন শব্দযুক্ত করেননি। এর কারণ হলো ‘আরবীতে (صَالِحِ) এমন একটি গুণবাচক শব্দ যা সর্বপ্রকার ভালো বৈশিষ্ট্য ও সম্মানজনক গুণাগুণকে অন্তর্ভুক্ত করে, তাই এ শব্দটি যুক্ত করে আর অন্য কোন শব্দযোগ না করলেও যথাযথ মর্যাদা প্রকাশ পায়।
আবার কেউ কেউ বলেন, (صَالِحِ)  শব্দটি এমন ব্যক্তিকে বুঝায় যে ব্যক্তি আল্লাহর ও তাঁর বান্দাদের আবশ্যকীয় হকসমূহ যথাযথভাবে আদায় করে।
এজন্যই নবী-রাসূল (সা.)গণ এই দু'আ করলেন যে, (تَوَفَّنِىْ مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِىْ بِالصَّالِحِينَ) অর্থাৎ, আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দান করুন এবং সৎলোক তথা সালিহীনদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
মিরক্বাত প্রণেতা আরো উল্লেখ করেন যে, রাসূল (সা.) -এর বিশেষণরূপে (صَالِحِ) শব্দটি ব্যবহার করার আরো একটি কারণ থাকতে পারে। তা হলো (صَالِحِ) শব্দটির একটি প্রতিশব্দ হলো উপযুক্ত (বাংলায়)। অতএব আল্লাহর রাসূলই যেহেতু এই মহান মর্যাদার উপযুক্ত হয়েছেন, তাই নবীগণ তাঁকে (صَالِحِ) বিশেষণ যুক্ত করে সম্বোধন করেছেন।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) শারহুল মাশারিক গ্রন্থে বলেন, নবী (সা.) যখন বিভিন্ন আকাশে নবীগণের সাথে সাক্ষাৎ করেন তখন সেই নবীগণের রূহ তাদের স্বীয় আকৃতিতে ছিল। তবে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম ব্যতীত। কারণ তিনি স্বশরীরে ছিলেন। কেননা তাঁকে স্বশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ)-ও এ বিষয়টি পূর্বে আলোচনা করেছেন।
তারপর যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) চতুর্থ আকাশে আরোহণ করেন তখন ইদরীস আলায়হিস সালাম -এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তখন ইদরীস আলায়হিস সালাম তাকে, লক্ষ্য করে বলেন, (مرْحَبًا بالابن الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ) অর্থাৎ সুস্বাগতম হে, সৎ ভাই, হে সৎ নবী।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এই প্রসঙ্গে বলেন, ইদরীস আলায়হিস সালাম কর্তৃক রাসূল (সা.) -কে ‘ভাই' বলে সম্বোধন করাটা ঐতিহাসিকদের কথার বিপরীত হয়ে যায়। কেননা ঐতিহাসিকগণ ইদরীস আলায়হিস সালাম -কে রাসূল (সা.) -এর পূর্বপুরুষ হিসেবে গণ্য করেছেন তো এ বিষয়টির উত্তর দেয়া হয়ে থাকে এভাবে যে, তিনি রাসূল (সা.) -কে ‘ভাই' বলে সম্বোধন করেছেন আদব ও শিষ্টাচারের কারণে।
তাছাড়াও শারহুন নাবাবী গ্রন্থে বলা হয়েছে, নবীরা একে অপরের ভাই। এই হিসেবে তিনি রাসূল (সা.) - কে ভাই বলে সম্ভোধন করেছেন।

(فَلَمَّا جَاوَزت بَكَى) অর্থাৎ যখন আমি তাঁর (মূসা আলায়হিস সালাম-এর) পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম তখন তিনি কাঁদলেন। এখানে মূসা আলায়হিস সালাম -এর কান্না প্রসঙ্গে মিরক্বাত প্রণেতা বলেন, তখন তিনি আফসোস করে কেঁদেছেন। কারণ, তিনি তাঁর উম্মতকে দীর্ঘকাল দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু তারা তাঁর দা'ওয়াত যথার্থভাবে গ্রহণ করেনি এবং পরিপূর্ণভাবে তাঁর অনুসরণ করেনি যেমন, মুহাম্মাদ (সা.) -এর উম্মত তাঁর অনুসরণ করেছে মূসা আলায়হিস সালাম -এর তুলনায় অল্পকাল দাওয়াত দেয়া সত্ত্বেও। আর এ কথাটি বুঝা যায় হাদীসের পরবর্তী এই অংশ থেকে-
قيل: مَا بيكيك؟ قَالَ: أَبْكِي لِأَنَّ غُلَامًا بُعِثَ بَعْدِي يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِهِ أَكْثَرَ مِمَّنْ يَدْخُلُهَا مِنْ أُمَّتِي
অর্থাৎ মূসা আলায়হিস সালাম -কে বলা হলো, কিসে আপনাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি উত্তরে বললেন, আমি কাঁদছি, কেননা আমার পরে একজন বালককে নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছে। অথচ আমার উম্মতের তুলনায় তার উম্মত অধিক পরিমাণে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
মূসা আলায়হিস সালাম -এর কাঁদার আরো একটি কারণ হতে পারে এটি যে, মুহাম্মাদ (সা.) -এর তুলনায় তার প্রতিদান কম হবে। কেননা প্রত্যেক নবী তাঁর অনুসারীদের সমপরিমাণ প্রতিদান পাবে। আর যেহেতু মুহাম্মাদ (সা.) -এর অনুসারী বেশি তাই তাঁর প্রতিদানও বেশি। আর মূসা আলায়হিস সালাম এর অনুসারী তার তুলনায় কম তাই তাঁর প্রতিদানও কম।
(فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرد السَّلَام) অর্থাৎ তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম আমাকে বললেন, আপনি তাঁকে (ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে) সালাম দিন। তখন আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তারপর তিনি সালামের উত্তর দিলেন। মিরক্বাত প্রণেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, রাসূল (সা.) যেহেতু ইহজগত থেকে বেখবর হয়ে মহান স্রষ্টার সুমহান সান্নিধ্যে বিভোর ছিলেন এবং পরজাগতিক দৃশ্য অবলোকনে ব্যস্ত ছিলেন। তাই তিনি (সা.) নিজের খেয়াল হারিয়ে ফেলেছিলেন। এজন্য জিবরীল আলায়হিস সালাম তাকে বিভিন্ন নবীগণকে সালাম দেয়ার কথা স্মরণ করে দিতেন। যেমনটি পবিত্র কুরআনের এই আয়াত (مَا زَاغَ الۡبَصَرُ وَ مَا طَغٰی) অর্থাৎ “তাঁর দৃষ্টিশক্তি বক্র হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও করেনি”- (সূরা আন্ নাজম ৫৩:১৭)।
 বিভিন্ন নবীকে বিভিন্ন আসমানে রাখা হয়েছিল। তাদের মর্যাদা স্তর অনুযায়ী। যেমন এই সম্পর্কে ইবনু আবূ জামরাহ বলেন, আদম আলায়হিস সালাম -কে প্রথম আকাশে রাখা হয়েছিল। কারণ তিনি হলেন প্রথম নবী ও প্রথম পিতা। দ্বিতীয় আকাশে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল। কারণ তিনি হলেন আমাদের নবীর সবচেয়ে কাছের যুগের নবী। তৃতীয় আসমানে ইউসুফ আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল। কারণ মুহাম্মাদ (সা.) -এর উম্মতগণ তাঁর আকৃতিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। চতুর্থ আসমানে ইদরীস আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল, কারণ তিনি হলেন মর্যাদায় মধ্যম স্তরের। পঞ্চম আসমানে হারূন আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল। কারণ তিনি হলেন ইদরীস আলায়হিস সালাম এর নিকটবর্তী ভাই।
ষষ্ঠ আসমানে মূসা আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল। কারণ তিনি হারূন আলায়হিস সালাম থেকে মর্যাদায় উপরে।
সপ্তম আসমানে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে রাখা হয়েছিল। কারণ তিনি আমাদের নবী (সা.) -এর পরে সকল নবীগণ থেকে মর্যাদায় ঊর্ধ্বে।
(ثُمَّ رُفِعْتُ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى) অর্থাৎ তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় উঠানো হলো। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সিদরাতুল মুনতাহা অর্থ হলো শেষ গাছ। আর ঐ স্থানকে সিদরাতুল মুনতাহা নামকরণ করা হয়েছে। কারণ সেখানেই মালায়িকার (ফেরেশতাদের) জ্ঞান ও সীমানা শেষ হয়ে গেছে। আর  সেই স্থানটি আল্লাহর রাসূল (সা.) ব্যতীত আর কেউ অতিক্রম করতে পারেনি।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, ঐ স্থানকে সিদরাতুল মুনতাহা নামকরণ করা হলো, কারণ আল্লাহর আদেশে যা কিছু উপর থেকে নিচে নামে এবং নিচ থেকে উপরে উঠে সবকিছুরই শেষ স্থান হলো সিদরাতুল মুনতাহা।
সুয়ুত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ স্থানকে সিদরাতুল মুনতাহা নামকরণ করা হয়েছে। কারণ সেখানেই বান্দাদের আমাল এবং সৃষ্টিকুলের জ্ঞানের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এটি রয়েছে সপ্তম আকাশে। আর তার মূল কাণ্ড হলো ষষ্ঠ আকাশে।
(نَهْرَانِ بَاطِنَانِ وَنَهْرَانِ ظَاهِرَانِ) অর্থাৎ বাত্বিনি দুটি ঝরনা এবং জাহিরী দু’টি ঝরনা। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ঝরনা দুটি হলো- ১) কাওসার, ২) নাহরে রহমাত। এ দু'টিকে বাত্বিনি বলা হয়েছে, কারণ উভয়টি জ্ঞানের বাইরের বিষয় এবং চাক্ষুষ দর্শনের আড়ালে।
শারহুন নাবাবী গ্রন্থে মুকাতিল বলেন, বাত্বিনি ঝরনা দুটি হলো- ১) সালসাবিল, ২) কাওসার। আর জাহিরী দু’টি নহর বা নদী হলো ১) নীল, ২) ফুরাত।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) নীল এবং ফুরাত নদীকে জাহিরী নদী হিসেবে উল্লেখ করার সম্ভাব্য তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
ক) উভয়টির পানি সিদরাতুল মুনতাহা থেকে বের হয়ে এসেছে, কিন্তু তার পদ্ধতি অজানা।
খ) স্বাদ এবং হজম শক্তির ক্ষেত্রে জান্নাতের দু’টি নহরের সাথে এই দু'টি নদীর কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে।
গ) ফুরাত ও নীল নামে জান্নাতেও দু’টি নহর আছে।
(الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ) অর্থাৎ বায়তুল মা'মূর। এটি হলো সপ্তম আকাশে একটি ঘর যা কা'বার বরাবর উপরে আছে। আকাশে এটির মর্যাদা অনুরূপ যেরূপ জমিনবাসীদের কাছে কা'বার মর্যাদা।
(فَأَخَذْتُ اللَّبَنَ) তারপর আমি দুধ নিলাম। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটি জানা থাকতে হবে যে, দুধ হলো পবিত্র ও শুভ্র পানীয়। আর এর দ্বারাই সর্বপ্রথম সন্তান লালন পালন করা হয়। তাই এটিকে পবিত্র জগতে হিদায়াত এবং সঠিক স্বভাব হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে যার মাধ্যমে আত্মিক শক্তি পরিপূর্ণতা লাভ করবে। অন্যদিকে এটি হলো চিরস্থায়ী সৌভাগ্যের জন্য প্রস্তুতি। যার প্রথম ধাপ হলো শারী'আতের অনুসরণ করা আর শেষ ধাপ হলো আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাওয়া।
(فَرَجَعْتُ فَمَرَرْتُ عَلَى مُوسَى) অর্থাৎ তারপর আমি ফিরে গিয়ে মূসা আলায়হিস সালাম -এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। এর মানে হলো, তিনি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে অতিক্রম করে মূসা আলায়হিস সালাম -এর কাছে গেলেন।
ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -কে অতিক্রম করার বিষয়ে ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর সুনানে তিরমিযীতে উল্লেখ করেন। মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, মি'রাজের রাতে আমি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমার পক্ষ থেকে তুমি তোমার উম্মতের কাছে সালাম পৌছে দিও এবং তাদেরকে জানিয়ে দিও যে, জান্নাতের ভূমি হলো উর্বরতার পানি সুমিষ্ট এবং তা খোলা মাঠের মতো পড়ে আছে। অতএব তাতে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে আর বৃক্ষ রোপণ করাটা হলো (سُبْحَانَاللهِ وَالْحَمْدُلِلَّه وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَخْبَرُ) বলা।
(قَالَ: إِنَّ أمتك لَا تستطع) অর্থাৎ তোমার উম্মত মূসা আলায়হিস সালাম এখানে বলেছেন, তোমার উম্মত সক্ষম হবে না। তিনি নবীর কথা বলেননি। কেননা নবীগণের সক্ষমতা এবং নিষ্পপতা এটিই বুঝায় যে, আল্লাহর আনুগত্য অনেক কঠিন হলেও তারা তা করতে পারবেন। কিন্তু উম্মাতের দুর্বলতা ও অলসতার কারণে তারা তা পারবে না।
মূসা আলায়হিস সালাম -এর কাছ থেকে আল্লাহর কাছে বারবার যাওয়ার মাধ্যমে মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের জন্য সালাত পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত করে নিয়ে এসেছিলেন। এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহ।
পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত থেকে কমিয়ে দেয়ার ব্যপারে আল্লাহর কাছে মুহাম্মাদ (সা.) -এর দাবী করাটা বাহ্যিকভাবে মনে হয় যে, রাসূল (সা.) আল্লাহর ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট হননি। (فعوذبالله)
কিন্তু প্রকৃত বিষয় এমন নয়। কারণ আসল কথা হলো, আল্লাহর কাছে কোন কঠিন জিনিসকে সহজ করে চাওয়া, বিপদ দূর করার প্রার্থনা করা, রিযক চাওয়া, শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্যের জন্য দু'আ করা ইত্যাদি বিষয় আল্লাহর ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট হওয়ার পরিপন্থী নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


দেখানো হচ্ছেঃ ৫৮৪১ থেকে ৫৮৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৯৩৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 290 291 292 293 294 295 296 297 পরের পাতা »