মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) সর্বমোট হাদিসঃ ৫৯৫৪ টি

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৬৩-[২৫] ’আমর ইবনু কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমরা সকলের শেষে এসেছি, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা সকলের আগে থাকব। আমি আজ তোমাদেরকে বিশেষ একটি কথা বলব, তবে এতে আমার কোন গর্ব করার নেই। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম আল্লাহর বন্ধু, মূসা আলায়হিস সালাম আল্লাহর নির্বাচিত এবং আমি হলাম আল্লাহর হাবীব। কিয়ামতের দিন হাম্‌দের পতাকা আমার সাথেই থাকবে। আল্লাহ আমার উম্মাতের ব্যাপারে আমার সাথে অঙ্গীকার করেছেন এবং তিনি তাদেরকে তিনটি বিষয় হতে নিরাপত্তা দিয়েছেন। ১. ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দ্বারা তাদেরকে ধ্বংস করবেন না। ২. শত্রুরা তাদেরকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে না এবং ৩. বিশ্বের সকল মুসলিমদেরকে পথভ্রষ্টতার উপরে একত্রিত করবেন না। (দারিমী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَن عَمْرو بن قَيْسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: نَحْنُ الْآخِرُونَ وَنَحْنُ السَّابِقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَإِنِّي قَائِلٌ قَوْلًا غَيْرَ فَخْرٍ: إِبْرَاهِيمُ خَلِيلُ الله ومُوسَى صفي الله وَأَنا حبييب اللَّهِ وَمَعِي لِوَاءُ الْحَمْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَإِنَّ اللَّهَ وَعَدَنِي فِي أُمَّتِي وَأَجَارَهُمْ مِنْ ثَلَاثٍ: لَا يَعُمُّهُمْ بِسَنَةٍ وَلَا يَسْتَأْصِلُهُمْ عَدُوٌّ وَلَا يجمعهُمْ على ضَلَالَة . رَوَاهُ الدَّارمِيّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 29 ح 55) * السند منقطع ، و عمرو بن قیس : لم اعرفہ و لعلہ ابو ثور الشامی ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয় পূর্বে বিভিন্ন হাদীসে এসেছে।
(وَإِنِّي قَائِلٌ قَوْلًا غَيْرَ فَخْرٍ) এই বাক্যে স্পষ্ট করে দিলেন যে, রাসূল (সা.) তাঁর অগ্রগামিতা অন্যান্য বিশেষ মর্যাদার যে কথাগুলো বলছেন সেগুলো গর্ব হিসেবে নয়। বরং আল্লাহ তা'আলার নি'আমাতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও উম্মতকে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে অবগত করার জন্য বলেছেন। (সম্পাদকীয়)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৬৪-[২৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: (কিয়ামতের মাঠে অথবা জান্নাতে) আমি হব সকল নবীদের পরিচালক বা অগ্রগামী। এটা আমি অহংকারী হিসেবে বলছি না। আমি হলাম নবীদের আগমনের ধারাকে সমাপ্তকারী, এতে আমার কোন গর্ব নেই। আর আমিই হব সর্বপ্রথম সুপারিশময়ী এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশ কবুল করা হবে। এতে আমার কোন অহংকার নেই। (দারিমী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَنَا قَائِدُ الْمُرْسَلِينَ وَلَا فَخْرَ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَلَا فَخْرَ وَأَنَا أَوَّلُ شافعٍ وَمُشَفَّع وَلَا فَخر» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ

سندہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 27 ح 50) * فیہ صالح بن عطاء بن خباب مجھول الحال وثقہ ابن حبان وحدہ و للحدیث شواھد صحیحۃ دون قولہ :’’ انا قائد المرسلین ‘‘ و اللہ اعلم ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: (قَائِدُ الْمُرْسَلِينَ) “রাসূলদের কায়িদ” “কায়িদ' শব্দের অর্থ দলের পরিচালক বা নেতা। যিনি সর্বাগ্রে থেকে দলকে পরিচালনা করেন তাকে ‘কায়িদ' বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) কিয়ামত দিবসে সকল নবীর আগে থাকবেন এবং সবাই তাঁকে অনুসরণ করে চলবেন।
(أَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ) “আমি শেষ নবী।” তিনি যেমন শেষ নবী তেমন শেষ রাসূল। তার পরে না কোন নবী আসবেন, না রাসূল। কিন্তু শেষ রাসূল না বলে শেষ নবী বলার কারণ হলো, রসূলের চেয়ে নবী ব্যাপক। তাই শেষ নবী বলার মধ্যে নুবুওয়্যাত ও রিসালাতের সমাপ্তি পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৬৫-[২৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন যখন মানুষদেরকে কবর হতে উঠানো হবে, তখন আমিই সর্বপ্রথম কবর হতে বের হয়ে আসব। আর যখন লোকেরা দলবদ্ধ হয়ে আল্লাহ তা’আলার কাছে উপস্থিত হওয়ার জন্য রওয়ানা হবে, তখন আমিই হব তাদের অগ্রগামী ও প্রতিনিধি, আর আমিই হব তাদের মুখপাত্র, যখন তারা নীরব থাকবে। আর যখন তারা আটক হবে, তখন আমিই হব তাদের সুপারিশকারী। আর যখন তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে, তখন আমিই তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান করব। মর্যাদা এবং কল্যাণের চাবিসমূহ সেদিন আমার হাতে থাকবে। আল্লাহর প্রশংসার পতাকা সেদিন আমার হাতে থাকবে। আমার পতাকার কাছে আদমের সন্তানদের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান ও সম্মানী লোক হব। সেদিন হাজারখানেক সেবক আমার চতুষ্পর্শ্বে ঘোরাফেরা করবে, যেন তারা সুরক্ষিত ডিম কিংবা বিক্ষিপ্ত মুক্তা। [তিরমিযী ও দারিমী, ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, হাদীসটি গরীব]

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ خُرُوجًا إِذَا بُعِثُوا وَأَنَا قَائِدُهُمْ إِذَا وَفَدُوا وَأَنَا خَطِيبُهُمْ إِذَا أَنْصَتُوا وَأَنَا مُسْتَشْفِعُهُمْ إِذَا حُبِسُوا وَأَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا الْكَرَامَةُ وَالْمَفَاتِيحُ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَلِوَاءُ الْحَمْدِ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَأَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي يَطُوفُ عَلَيَّ أَلْفُ خادمٍ كأنَّهنَّ بَيْضٌ مُكْنُونٌ أَوْ لُؤْلُؤٌ مَنْثُورٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3610) و الدارمی (1 / 26 ۔ 27 ح 49) * فیہ لیث بن ابی سلیم : ضعیف ۔
(ضَعِيفٌ)

ব্যাখ্যা: হাদীসে উল্লেখিত মর্মগুলো পূর্বে বিক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ হয়েছে। এ হাদীসে অতিরিক্ত দু' একটি সহ পুনঃবার তা আলোচনা করা হয়েছে। এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর যে বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে:
এক: (أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ خُرُوجًا إِذَا بُعِثُوا) অর্থাৎ কবর থেকে যখন পুনরুত্থানের জন্য উঠানো হবে সর্বপ্রথম বের হয়ে আমি হাশরের ময়দানের দিকে যাবো।

দুই: (وَأَنَا قَائِدُهُمْ إِذَا وَفَدُوا) অর্থাৎ যখন সবাই আল্লাহ তা'আলার কাছে আগমন করবে তখন আমি তাদের নেতা ও পরিচালক হব।

তিন: (وَأَنَا خَطِيبُهُمْ إِذَا أَنْصَتُوا) সবাই যখন চুপ থাকবে, কেউ ওযর প্রকাশ করার সাহস পাবে না, সবাই পেরেশান থাকবে, তখন আমি সবার পক্ষ থেকে কথা বলব। সেদিন আমাকে ছাড়া কাউকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে না।

চার: (وَأَنَا مُسْتَشْفِعُهُمْ إِذَا حُبِسُوا) সবাইকে যখন আটকে দেয়া হবে তখন আমি সবার সুপারিশকারী হব। রাসূল (সা.)-এর বিশেষিত এই সুপারিশ বিচারকার্য শুরু করার সুপারিশ। কিয়ামতের ভয়াবহ ময়দানে সবার আকাঙ্ক্ষা থাকবে বিচারকার্য দ্রুত শুরু হয়ে যাওয়া। কিন্তু কেউ এর জন্য সুপারিশের সাহস করবে না। হাদীসের সকল গ্রন্থে বিষয়টি বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।

পাঁচ: (وَأَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا) যেদিন সবাই নিরাশ হয়ে যাবে সেদিন আমি সবার সুসংবাদদাতা। নিরাশার সময় সুসংবাদ দিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করা আমার বৈশিষ্ট্য। বাহ্যত এই তিন বৈশিষ্ট্যের মর্ম এক। সবগুলোর সার হলো, কিয়ামত দিবসে কেউ যখন বিচারকার্য শুরু করার আবেদনের সাহস করবে না, তখন আমি কথা বলে সুপারিশ করে সবার জন্য সুসংবাদ এনে দিব।

ছয়: (وَالْمَفَاتِيحُ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي) অর্থাৎ সেদিন আমার হাতে চাবি থাকবে। চাবি দ্বারা জান্নাতে প্রথম প্রবেশ উদ্দেশ্য হবে। জান্নাতে সবার আগে প্রবেশের বৈশিষ্ট্য রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর, যা পূর্বে অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

সাত: (وَلِوَاءُ الْحَمْدِ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي) প্রশংসার ঝাণ্ডা সেদিন আমার হাতে থাকবে। প্রশংসার ঝাণ্ডা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে থাকবে এবং এর দ্বারা তার মর্যাদা বুঝানো হয়েছে। আর তা রাসূল (সা.)-এর হাতে থাকার আলোচনা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।

আট: (وَأَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي) আমি আমার প্রতিপালকের কাছে আদম সন্তানদের মাঝে সবচেয়ে সম্মানী। রাসূল আদম সন্তানদের সরদার ও সবচেয়ে সম্মানী মর্মে পূর্বে আমরা কয়েকটি হাদীস দেখেছি।
(أَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا) যখন মু'মিন বান্দাগণ আল্লাহর রহমত, দয়া, অনুগ্রহ হতে নিরাশ হবে। তারা ভয় করবে হয়তো তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে তখন আমি তাদের সুসংবাদ দিব।
হাশরের ময়দান বিভিন্ন ধরনের অবস্থা হবে। কোন স্থান হবে যেখানে মানুষেরা ওযর পেশ করবে। আবার কোন স্থান হবে যেখানে কথা বলা ও ওযর পেশ করা নিষিদ্ধ থাকবে। এক আয়াতে কাফিরদের কথা বলা ও ওযর পেশ করার কথা রয়েছে। কিয়ামতের দিন যখন মানুষদেরকে কবর থেকে উত্থিত করা হবে। তখন আমি সর্বপ্রথম কবর থেকে বের হয়ে আসব। যখন সকলে তাদের রবের নিকট যাবে ওযর পেশ করার জন্য ঐ সময় সকল মানুষের সামনে আমি আল্লাহ তা'আলার সাথে কথা বলব। মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করবেন। তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে কথা বলার জন্য সুযোগ দেয়া হবে না।
এ মর্মে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, “এটা এমন একদিন যেদিন না তারা কথা বলবে, আর তাদেরকে অজুহাত পেশ করার অনুমতিও দেয়া হবে না”- (সূরাহ আল মুরসালাত ৭৭: ৩৫-৩৬)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৬৬-[২৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আমাকে জান্নাতের তৈরি পোশাকের একটি পোশাক পরিধান করানো হবে। অতঃপর আমি আরশের ডান পার্শ্বে গিয়ে দাঁড়াব। অথচ আমি ছাড়া আল্লাহর সৃষ্টজীবের মধ্যে অন্য কেউই উক্ত স্থানে দাঁড়াতে পারবে না। (তিরমিযী)

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে ’জামিউল উসূল’ গ্রন্থে অপর একটি বর্ণনায় আছে, আমিই সর্বপ্রথম লোক, যার কবর খুলে যাবে এবং আমাকেই সর্বপ্রথম কাপড় পরিধান করানো হবে।

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فَأُكْسَى حُلَّةً مِنْ حُلَلِ الْجَنَّةِ ثُمَّ أَقُومُ عَنْ يَمِينِ الْعَرْشِ لَيْسَ أَحَدٌ مِنَ الْخَلَائِقِ يقومُ ذلكَ المقامَ غَيْرِي» . رَوَاهُ الترمذيُّ. وَفِي رِوَايَة «جَامع الْأُصُول» عَنهُ: «أَنَا أَوَّلُ مَنْ تَنْشَقُّ عَنْهُ الْأَرْضُ فَأُكْسَى»

سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3611 وقال : حسن غریب صحیح) * ابو خالد الدالانی مدلس و عنعن و احادیث مسلم (196 ، 2278)، (5940) وغیرہ تغنی عنہ ۔
(ضَعِيفٌ)

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে, হাশরের ময়দানে সকল মানুষ, জিন, মালায়িকার (ফেরেশতাদের) মাঝে মুহাম্মাদ (সা.) -কে তার কবর হতে প্রথমে উঠানো হবে এবং তাকে জান্নাতে তৈরি এক জোড়া পোশাক পরিধান করানো হবে। এটার মাধ্যমে সকল সৃষ্টিজীবের ওপর মুহাম্মাদ (সা.) -এর মর্যাদা বুঝানো হয়েছে। এই মর্যাদা শুধু মুহাম্মাদ (সা.) -এর ওপরে বর্ণিত “জামিউল উসূল” গ্রন্থের বর্ণিত হাদীসের সাথে সম্পৃক্ত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৬৭-[২৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: তোমরা আল্লাহর কাছে ওয়াসীলাহ্ কামনা কর। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ওয়াসীলাহ্ কী? তিনি (সা.) বললেন, তা জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদার একটি বিশেষ স্থান। যা কেবলমাত্র এক লোকই লাভ করবে। অতএব আশা করি আমিই হব সে লোক। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سلوا الله الْوَسِيلَةَ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الْوَسِيلَةُ؟ قَالَ: «أَعْلَى دَرَجَةٍ فِي الْجَنَّةِ لَا يَنَالُهَا إِلَّا رجلٌ واحدٌ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ

حسن ، رواہ الترمذی (3612 وقال : غریب ، اسنادہ لیس بالقوی) و للحدیث شواھد قویۃ وھوبھا حسن ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (سلوا الله الْوَسِيلَةَ) সালাতের প্রত্যেক আযানের দু'আতেই (ات محمد وسيلة والفضيله) দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য আমরা সেই উচ্চ মাকামের দু'আ করে থাকি।
আল বিদায়াহ্ ওয়াল নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেছেন, (الْوَسِيلَةَ) শব্দটি হলো একবচন, এর বহুবচন হলো (وسائل) ওয়াসীলাহ্ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এমন জিনিস বুঝানো হয়েছে যা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা হয়। বলা হয়: কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে শাফা'আত করা। বলা হয়: জান্নাতের স্থানসমূহের মাঝে একটি স্থান। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, এটা দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) - উম্মতের জন্য আল্লাহর নিকট দু'আ করবে নিজের জন্য অথবা উম্মাতের সকলের কল্যাণের জন্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৬৮-[৩০] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন আমিই হব নবীদের নেতা ও মুখপাত্র এবং তাদের জন্য শাফা’আতের অধিকারী। তাতে আমার কোন অহংকার নেই। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ كُنْتُ إِمَامَ النَّبِيِّينَ وَخَطِيبَهُمْ وَصَاحِبَ شَفَاعَتِهِمْ غيرَ فَخر» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3613 وقال : حسن صحیح غریب) و ابن ماجہ (4314) * عبداللہ بن محمد بن عقیل ضعیف و احادیث البخاری (3340 ، 3361 ، 4712) و مسلم (194)، (480) وغیرھما تغنی عنہ

ব্যাখ্যা: কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে মুহাম্মাদ (সা.) হবেন সকল নবী ও রাসূলগণের ইমাম। মানুষেরা অন্যান্য নবী রসূলের কাছে গেলে তারা তাদেরকে ফিরে দিবেন এবং বলবেন তোমরা মুহাম্মাদ (সা.) -এর নিকট যাও। সর্বশেষে মুহাম্মাদ (সা.) শাফা'আত করবেন আল্লাহ তা'আলার নিকটে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এত বড় একটা কাজ করবেন সকল মানুষের মাঝে তাতে তিনি বিন্দু পরিমাণ অহংকার করবেন না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৬৯-[৩১] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক নবীরই নবীদের মাঝ হতে একজন বন্ধু আছেন। আর আমার বন্ধু হলেন আমার পিতা এবং আমার প্রভুর খলীল (ইবরাহীম খলীলুল্লাহ)। অতঃপর তিনি (সা) এ আয়াতটি পাঠ করলেন, অর্থাৎ “নিশ্চয় ইবরাহীম-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় সেই লোকেরাই অধিক হাকদার যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী, আর যারা ঈমান এনেছে, বস্তুত আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক”- (সূরাহ আ-লি ইমরান ৩ : ৬৮)। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: إِن لِكُلِّ نَبِيٍّ وُلَاةً مِنَ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ وَلِيِّيَ أَبِي وَخَلِيلُ رَبِّي ثُمَّ قَرَأَ: [إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِإِبْرَاهِيمَ لَلَّذِينَ اتَّبَعُوهُ وَهَذَا النَّبِيُّ وَالَّذِينَ آمنُوا وَالله ولي الْمُؤمنِينَ] . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2995) * سفیان الثوری مدلس مشھور و عنعن فی جمیع الطرق فیما اعلم

ব্যাখ্যা: ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে তারাই অগ্রগামী হবেন যারা তার আনীত দীনের উপর আছেন। আর মুহাম্মাদ (সা.) -এর উম্মতের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে। অর্থাৎ মুহাজির, আনসার ও অন্যান্য পরবর্তী উম্মত।
আল্লাহ তা'আলা সমস্ত লোকের অভিভাবক- এ মর্মে আল্লাহ তা'আলা বলেন, “নিশ্চয় আমার অভিভাবক আল্লাহ যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনি সৎকর্মপরায়ণদের অভিভাবকত্ব করে থাকেন।” (সূরাহ্ আল আরাফ ৭ : ১৯৬)

মুহাম্মাদ (সা.)-এর অভিভাবক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা। (সম্পাদকীয়)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৭০-[৩২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: যাবতীয় উত্তম চরিত্র ও উত্তম কার্যাবলি পরিপূর্ণ করার জন্যই আল্লাহ তা’আলা আমাকে পাঠিয়েছেন। (শারহুস্ সুন্নাহ্)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قا ل: «إِنَّ اللَّهَ بَعَثَنِي لِتَمَامِ مَكَارِمِ الْأَخْلَاقِ وَكَمَالِ محَاسِن الْأَفْعَال» . رَوَاهُ فِي شرح السّنة

اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 202 ح 3622) * یوسف بن محمد بن المنکدر : ضعیف ولہ شاھد عند احمد (2 / 381) :’’ انما بعثت لاتمم صالح الاخلاق ‘‘ و صححہ الحاکم (2 / 613) و وافقہ الذھبی و سندہ ضعیف (تقدم فی تخریج : 5096 ۔ 5097) ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: (لِتَمَامِ مَكَارِمِ الْأَخْلَاقِ) আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ (সা.) -কে রাসূল বানিয়ে এ উদ্দেশে প্রেরণ করেছেন, যেন তিনি আল্লাহর বান্দাদেরকে বাহ্যিক চরিত্র ও অভ্যন্তরীণ চরিত্রকে পরিবর্তন করে তাদেরকে সুন্দর জীবনযাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাদেরকে সঠিক পথের দিকে দিক-নির্দেশনা দিলে তারা তা সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে তা গ্রহণ করবে।
(كَمَالِ محَاسِن الْأَفْعَال) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে প্রেরণ করার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো তিনি মানুষদেরকে শিক্ষা দিবেন যে, কিভাবে তারা উত্তমরূপে ‘ইবাদত, লেন-দেন করবে।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে বান্দাদেরকে উত্তম চরিত্র সম্পর্কে অবগত করার জন্য এবং তাদের কার্যাবলী সুচারুরূপে পরিপূর্ণ করার জন্য।
রাসূলুল্লাহ (সা.) উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। এই মর্মে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, (وَ اِنَّکَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیۡمٍ) “এবং তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।” (সূরা আল কলাম ৬৮ : ৪)
উত্তম চরিত্রের কিছু উদাহরণ উপস্থাপনা করা হলো সততা, ভদ্রতা, নম্রতা, দয়া-দাক্ষিণ্য, বিশ্বস্ততা, দানশীলতা, ক্ষমা করা ইত্যাদি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৭১-[৩৩] কা’ব [আহবার (রাঃ)] তাওরাতের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন, আমরা তাতে লিখিত পেয়েছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহ রাসূল, তিনি আমার সর্বোৎকৃষ্ট বান্দা, তিনি দুশ্চরিত্র বা খারাপ এবং কঠোর ভাষী নন, বাজারে হৈ-হল্লাকারীও নন। মন্দের প্রতিশোধ মন্দের দ্বারা গ্রহণ করেন না, বরং ক্ষমা করে দেন। তাঁর জন্মস্থান মক্কায় এবং হিজরত করবেন মদীনাহ তাইয়িবায়। সিরিয়াও তাঁর আধিপত্যে আসবে। তার উম্মত হবে খুব বেশি প্রশংসাকারী তথা সুখে-দুঃখে ও আরামে-ব্যারামে সদা আল্লাহর গুণগান করবে এবং প্রত্যেক অবস্থান স্থলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। সুউচ্চ স্থানে আরোহণকালে তারা আল্লাহর তাকবীর উচ্চারণ করবে। সূর্যের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবে, যখনই সালাতের সময় হবে তখনই সালাত আদায় করবে। তারা শরীরের মধ্যস্থলে (কোমরে) ইজার বাঁধবে। শরীরের পার্শ্ব (হাত-পা ইত্যাদি) ধুয়ে উযূ করবে। তাদের ঘোষণাকারী উচ্চস্থানে দাঁড়িয়ে ঘোষণা (আযান) দেবে। জিহাদে তাদের সারি এবং সালাতেও তাদের সারি হবে একইরূপ। রাত্রির বেলায় তাদের গুনগুন শব্দ উদ্ভাসিত হবে মৌমাছির গুনগুনের মতো। (মাসাবীহ, দারিমীও এটা কিঞ্চিৎ শাব্দিক পরিবর্তনসহ বর্ণনা করেছেন)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ كَعْبٍ يَحْكِي عَنِ التَّوْرَاةِ قَالَ: نَجِدُ مَكْتُوبًا محمدٌ رسولُ الله عَبدِي الْمُخْتَار لَا فظٌّ وَلَا غَلِيظٍ وَلَا سَخَّابٍ فِي الْأَسْوَاقِ وَلَا يَجْزِي بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَغْفِرُ مَوْلِدُهُ بِمَكَّةَ وَهِجْرَتُهُ بِطِيبَةَ وَمُلْكُهُ بِالشَّامِ وَأُمَّتُهُ الْحَمَّادُونَ يَحْمَدُونَ اللَّهَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ يَحْمَدُونَ اللَّهَ فِي كُلِّ مَنْزِلَةٍ وَيُكَبِّرُونَهُ عَلَى كُلِّ شَرَفٍ رُعَاةٌ لِلشَّمْسِ يُصَلُّونَ الصَّلَاةَ إِذَا جَاءَ وَقْتُهَا يتأزَّرون على أَنْصَافهمْ ويتوضؤون عَلَى أَطْرَافِهِمْ مُنَادِيهِمْ يُنَادِي فِي جَوِّ السَّمَاءِ صَفُّهُمْ فِي الْقِتَالِ وَصَفُّهُمْ فِي الصَّلَاةِ سَوَاءٌ لَهُمْ بِاللَّيْلِ دَوِيٌّ كَدَوِيِّ النَّحْلِ «. هَذَا لَفْظُ» الْمَصَابِيحِ وَرَوَى الدَّارِمِيُّ مَعَ تَغْيِير يسير

اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 4 ۔ 5 ح 5) * الاعمش مدلس و عنعن

ব্যাখ্যা: তাওরাত ও ইঞ্জীল এগুলো ছিল মুহাম্মাদ (সা.) -এর জন্মের অনেক পূর্বের ধর্মীয় গ্রন্থ। তারপরও এগুলোতে লেখা ছিল মুহাম্মাদ নবী হয়ে প্রেরিত হবেন। তাওরাতে মুহাম্মাদ (সা.) -এর চারিত্রিক গুণাবলী সম্পর্কে লেখা ছিল।
(مُلْكُهُ بِالشَّامِ) রাসূলুল্লাহ (সা.) ও চার খলীফার খিলাফাতের শেষে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যাবে, শাম বা সিরিয়াতে মু'আবিয়াহ্ ও বানু উমাইয়্যাহ্-এর নিকট। তারা মুসলিমদের মাঝে নেতৃত্ব প্রদান করবেন।
মুজাহিদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, এখানে রাজত্ব দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নুবুওয়্যাত, দীন ইসলাম।
(رُعَاةٌ لِلشَّمْسِ يُصَلُّونَ الصَّلَاةَ إِذَا جَاءَ وَقْتُهَا) সূর্যের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবে যখনই সালাতের সময় হবে তখন সালাত আদায় করবে। অর্থাৎ সূর্য উদিত হওয়ার সময়, সূর্য যখন আকাশের মাঝামাঝি থাকবে ঐ সময় সূর্য ডুবে যাওয়ার সময়সহ সালাতের সকল ওয়াক্ত যথাসময়ে আদায় করা এবং ‘ইবাদতের অন্যান্য বিষয়গুলো আদায় করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৭২-[৩৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাওরাত কিতাবে মুহাম্মাদ (সা.) -এর গুণাবলি লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং তাতে এটাও রয়েছে যে, ঈসা ইবনু মারইয়াম আলায়হিস সালাম-কে তাঁর সাথে [’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হুজরায়] দাফন করা হবে। আবূ মাওদূদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর হুজরায় আজ পর্যন্ত (তাঁর দাফনের জন্য) একটি কবরের জায়গা বাকি রয়েছে। (তিরমিযী)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ قَالَ: مَكْتُوبٌ فِي التَّوْرَاةِ صِفَةُ مُحَمَّدٍ وَعِيسَى بن مَرْيَمَ يُدْفَنُ مَعَهُ قَالَ أَبُو مَوْدُودٍ: وَقَدْ بَقِي فِي الْبَيْت مَوضِع قَبره رَوَاهُ الترمذيُّ

حسن ، رواہ الترمذی (3617 وقال : حسن غریب) ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: তাওরাত আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত গ্রন্থ যা মূসা আলায়হিস সালাম-এর ওপর নাযিল হয়েছিল। তাওরাতের ভিতরে মুহাম্মদ (সা.) -এর গুণাবলী লিপিবদ্ধ রয়েছে। আর তাতে এটাও লেখা ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর ঘরে দাফন করা হয়েছে। তার কবরের পাশে শায়িত আছেন আবূ বাকর বাকর ও ‘উমার (রাঃ)। এখানে আরো একটি কবরের জায়গা খালি আছে। কিয়ামতের সময় নিকটবর্তী হলে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম আকাশ হতে অবতরণ করবেন দাজ্জালকে হত্যা করার জন্য। ঈসা আলায়হিস সালাম মৃত্যুবরণ করবেন মক্কাহ্ ও মদীনার মধ্যবর্তী জায়গায়। তাঁর কবর দেয়া হবে। আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর ঘরে যেখানে একটি কবরের জায়গা খালি আছে সেখানে।
অত্র হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আবূ মাওদূদ (রহিমাহুল্লাহ)। তাঁর পরিচয় হলো ‘আবদুল আযীয ইবনু সুলায়মান আল মাদানী। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।

এ সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণিত রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “ঈসা আলায়হিস সালাম পৃথিবীতে আগমন করবেন। তিনি বিবাহ করবেন, তার সন্তান হবে। তিনি পৃথিবীতে ৪৫ বছর অবস্থান করবেন। অতঃপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন তাকে দাফন করা হবে আমার সাথে একই কবরে। আমি এবং ‘ঈসা আলায়হিস সালাম একই কবর থেকে বের হব আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ) -এর পাশে থাকবেন। [ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) কিতাবুল ওয়াফা]


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৭৩-[৩৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা সকল নবীগণের ও সকল মালায়িকা’র (ফেরেশতাগণের) ওপরে মুহাম্মাদ (সা.) -কে মর্যাদা দান করেছেন। লোকেরা প্রশ্ন করলেন, হে আবূ আব্বাস। (ইবনু আব্বাস-এর উপনাম) আল্লাহ মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) উপরে কিরূপে তাকে ফযীলাত দিয়েছেন? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা’আলা আকাশবাসীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “তাদের মধ্যে যে বলবে যে, তিনি ব্যতীত আমিই ইলাহ’, তাহলে আমি তাকে তার প্রতিফল দেব জাহান্নাম, যালিমদেরকে আমি এভাবেই পুরস্কার দিয়ে থাকি”- (সূরাহ্ আল আম্বিয়া ২১ : ২৯)। আর আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ (সা.)-কে লক্ষ্য করে বলেছেন, “আমি তোমাকে দিয়েছি স্পষ্ট বিজয়। যাতে আল্লাহ তোমার আগের ও পিছের যাবতীয় ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করেন..."- (সূরাহ আল ফাতহ ৪৮: ১-২)। লোকেরা জিজ্ঞেস করলেন, নবীদের ওপর কিভাবে তাঁকে ফযীলত দেয়া হয়েছে? উত্তরে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “আমি কোন রাসূলকেই তার জাতির ভাষা ছাড়া পাঠাইনি যাতে তাদের কাছে স্পষ্টভাবে (আমার নির্দেশগুলো) বর্ণনা করতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পথহারা করেছেন..."- (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪: ৪)। আর আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ (সা.) সম্পর্কে বলেছেন, (হে নবী মুহাম্মাদ!) “আমি আপনাকে গোটা মানব সমাজের জন্য রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি..."- (সূরাহ্ সাবা- ৩৪: ২৮)। অতএব আল্লাহ তা’আলা তাঁকে জিন্ ও ইনসান উভয় সম্প্রদায়ের নিকটেই পাঠিয়েছেন।

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

عَن ابْن عبَّاس قَالَ: إنَّ الله تَعَالَى فضل مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ وَعَلَى أَهْلِ السَّمَاءِ فَقَالُوا يَا أَبَا عَبَّاسٍ بِمَ فَضَّله الله عَلَى أَهْلِ السَّمَاءِ؟ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ لِأَهْلِ السَّمَاءِ [وَمَنْ يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّي إِلَهٌ مِنْ دُونِهِ فَذَلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ كَذَلِكَ نجزي الظَّالِمين] وَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: [إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا لِيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تأخَّر] قَالُوا: وَمَا فَضْلُهُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ؟ قَالَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: [وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاء] الْآيَةَ وَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: [وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا كَافَّة للنَّاس] فَأرْسلهُ إِلَى الْجِنّ وَالْإِنْس

اسنادہ حسن ، رواہ الدارمی (1 / 25 ۔ 26 ح 47) و الحاکم (2 / 350) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ (সা.) -কে সকল মালাক (ফেরেশতা), নবী-রাসূল, জিন ও মানুষের ওপর মর্যাদা প্রদান করেছেন। মুহাম্মাদ (সা.) -এর মর্যাদা মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) ওপর দিয়েছেন। তার মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা আল কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন, “নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দিয়েছি যেন আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যতের ক্রটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন এবং তোমাকে সৎপথে পরিচালিত করেন।” (সূরাহ্ আল ফাতহ ৪৮:১-২)
অত্র আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ (সা.)-কে অনুগ্রহ করে তার পূর্বের ও পরের গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আর তার প্রতি রহমত অবতীর্ণ করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা আসমানবাসীদের সম্পর্কে বলেছেন, “তাদের মধ্যে যে বলবে, তিনি ব্যতীত আমিই ইলাহ তাকে আমরা জাহান্নামের শাস্তির প্রতিদান দিব, এভাবেই আমরা যালিমদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।” (সূরাহ্ আল আম্বিয়া-২১: ২৯)
(وَ مَنۡ یَّقُلۡ مِنۡهُمۡ...) আয়াত দ্বারা আল্লাহ তা'আলা মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) অন্যান্য সৃষ্টিজীবকে বুঝিয়েছেন। আয়াতের মাঝে আকাশবাসীদের অপরাধের কারণে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ (সা.)-কে কোমলতা সহজতরভাবে সম্বোধন করেছেন আর আসমানবাসীদেরকে কঠিনভাবে, কঠোরতার সাথে সম্বোধন করেছেন। - আল্লাহ তা'আলার বাণী: (وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا بِلِسَانِ...) (১৪:৪)  ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: এ আয়াত দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মর্যাদা প্রকাশ করা হয়েছে অন্যান্য সকল নবী-রাসূলদের ওপরে। কেননা এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রত্যেক নবী-রাসূলগণ প্রেরিত হয়েছে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রেরণ করা হয়েছে বিশ্বের সকল মানুষদের জন্য। সকল মানুষকে সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করার জন্য। তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য মূর্তিপূজার ‘ইবাদত বর্জন করে আল্লাহর ইবাদতের দিকে নিয়ে আসার জন্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৭৪-[৩৬] আবূ যার আল গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কিরূপে জানতে পারলেন যে, আপনি নবী, এমনকি আপনি এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করলেন? তিনি (সা.) বললেন, হে আবূ যার! একদিন আমি মক্কার বাত্বহা উপত্যকায় ছিলাম। এ সময় দু’জন মালাক (ফেরেশতা) আমার কাছে আসলেন। তাদের একজন মাটিতে নেমে আসলেন এবং অপরজন আকাশ ও জমিনের মাঝখানে রইলেন। অতঃপর তাদের একজন অপরজনকে বললেন, ইনি কি তিনিই? অপরজন উত্তর দিলেন, হ্যা। তখন প্রথমজন বললেন, আচ্ছা, তাঁকে এক লোকের সাথে ওযন করা যাক। অতএব, আমাকে এক লোকের সাথে ওযন করা হলো। তখন আমি ঐ লোক অপেক্ষা ভারী হয়ে গেলাম। অতঃপর বললেন, এবার তাঁকে দশ লোকের সাথে ওযন করা যাক। অতএব আমাকে দশ ব্যক্তির সাথে ওযন করা হলো। এবারও আমি তাদের ওপর ভারী হয়ে গেলাম। অতঃপর বললেন, আচ্ছা, এবার তাঁকে একশত জনের সাথে ওযন করা হোক। অতএব আমাকে তাদের সাথে ওযন করা হলো। এবারও আমি তাদের ওপর ভারী হয়ে গেলাম। অতঃপর বললেন, আচ্ছা, এবার তাঁকে এক হাজার জনের সাথে ওযন কর। অতএব আমাকে তাদের সাথে ওযন করা হলো। এবারও আমি তাদের ওপর ভারী হয়ে গেলাম। তিনি (সা.) বলেন, আমার মনে হচ্ছে এখনো আমি যেন তাদেরকে দেখছি। তাদের পাল্লা হালকা হয়ে এমনভাবে উপরে উঠে গেছে যে, আমার আশঙ্কা হলো, তারা যে আমার উপরে ছিটকে পড়বে। তিনি (সা.) বলেন, তখন তাদের একজন অপরজনকে বললেন, তুমি যদি তাঁকে তাঁর সমস্ত উম্মাতের সাথেও ওযন কর, তখনো তার পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। (হাদীস দু’টি দারিমী বর্ণনা করেছেন)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَن أبي ذرّ الْغِفَارِيّ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ عَلِمْتَ أَنَّكَ نَبِيٌّ حَتَّى اسْتَيْقَنْتَ؟ فَقَالَ: يَا أَبَا ذَر أَتَانِي ملكان وَأَنا ب بعض بطحاء مَكَّة فَوَقع أَحدهمَا على الْأَرْضِ وَكَانَ الْآخَرُ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: أَهْوَ هُوَ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَزِنْهُ بِرَجُلٍ فَوُزِنْتُ بِهِ فَوَزَنْتُهُ ثُمَّ قَالَ: زِنْهُ بِعَشَرَةٍ فَوُزِنْتُ بِهِمْ فَرَجَحْتُهُمْ ثُمَّ قَالَ: زنه بِمِائَة فَوُزِنْتُ بِهِمْ فَرَجَحْتُهُمْ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِمْ يَنْتَثِرُونَ عَلَيَّ مِنْ خِفَّةِ الْمِيزَانِ. قَالَ: فَقَالَ أَحَدُهُمَا لصَاحبه: لَو وزنته بأمته لرجحها . رَوَاهُمَا الدَّارمِيّ

اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 9 ح 14) * فیہ عروۃ بن الزبیر عن ابی ذر رضی اللہ عنہ وما اراہ یسمع منہ وقال ابن اسحاق امام المغازی رحمہ اللہ :’’ حدثنی ثور بن یزید عن خالد بن معدان عن اصحاب رسول اللہ صلی اللہ علیہ و آلہ وسلم انھم قالوا : یا رسول اللہ ! اخبرنا عن نفسک ؟ فقال : دعوۃ ابی ابراھیم و بشری عیسی و رأت امی حین حملت بی انہ خرج منھا نور أضاءت لہ قصور بصری من ارض الشام و استرضعت فی بنی سعد بن بکر ، فبینا انا مع اخ فی بھم لنا ، اتانی رجلان علیھما ثیاب بیاض ، معھما طست من ذھب مملوء ثلجًا فاضجعانی فشقابطنی ثم استخرجا قلبی فشقاہ فاخر جا منہ علقۃ سوداء فالقیاھا ثم غسلا قلبی و بطنی بذاک الثلج حتی اذا انقیاہ ، رداہ کما کان ثم قال احدھما لصاحبہ : زنہ بعشرۃ من امتہ فوزننی بعشرۃ فوزنتھم ثم قال : زنہ بالف من امتہ فوزننی بالف فوزنتھم فقال : دعہ عنک فلو وزنتہ بامتہ لوزنھم ‘‘ (السیرہ لابن اسحاق ص 103) و سندہ حسن لذاتہ وھو یغنی عنہ

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) নবী হবেন এটা তার নিকট অলৌকিক ব্যাপার মনে হয়েছিল। প্রত্যেক নবী রাসূলগণের নুবুওয়্যাত ও রিসালাত প্রমাণ করার জন্য এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: নিশ্চয় প্রত্যেক জাতির মানুষেরাই নবী-রাসূলগণের নবী হওয়ার সত্যতা সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছেন। যেমনিভাবে আমাদের নবীর সম্পর্কিত মানুষগণ মনোযোগ দিয়েছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নবীকুল শিরোমণি -এর মর্যাদাসমূহ

৫৭৭৫-[৩৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার ওপরে কুরবানী ফরয করা হয়েছে; আর তোমাদের ওপর ফরয করা হয়নি এবং আমাকে চাশতের সালাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে; আর তোমাদেরকে এর নির্দেশ দেয়া হয়নি। (দারাকুতনী)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابُ فَضَائِلِ سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ)

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُتِبَ عَلَيَّ النَّحْرُ وَلَمْ يُكْتَبْ عَلَيْكُمْ وَأُمِرْتُ بِصَلَاةِ الضُّحَى وَلَمْ تؤمَروا بهَا» . رَوَاهُ الدَّارَقُطْنِيّ

اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ الدارقطنی (4 / 282 ح 4706) [و احمد (1 / 317) و البیھقی (8 / 264)] * فیہ جابر بن یزید الجعفی ضعیف جدًا ، رافضی ۔
(ضَعِيف)

ব্যাখ্যা: ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওপর কুরবানী করা ফরয করে দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি কুরআনের আয়াত পাঠ করেন, (فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ) “তোমার রবের উদ্দেশ্যেই সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর।” (সূরা আল কাওসার ১০৮: ২)
বলা হয়: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব চাই তার সম্পদ থাকুক বা না থাকুক।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওপর তিনটি বিষয় আবশ্যক করে দেয়া হয়েছিল যা তোমাদের ওপর অবশ্যক করা হয়নি। তা হলো কুরবানী করা, চাশতের সালাত আদায় করা, বিতর আদায় করা।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, চাশতের সালাত সম্পর্কে এ হাদীস ছাড়া অন্য আর কোন হাদীস পাওয়া যায় না। ‘আল্লামাহ্ ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, চাশতের সালাতের নির্দেশ সম্পর্কে হাদীসটি য'ঈফ।
এ বিষয়ে আরো কিছু হাদীস বর্ণিত আছে। সবগুলোর সমন্বয়ে যা বুঝায় যে, চাশতের সালাতের বিধান হলো মুস্তাহাব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি

আবূ বকর ইবনু ’আরাবী আল মালিকী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ তা’আলার যেমন গুণবাচক এক হাজার নাম রয়েছে অনুরূপ রাসূলুল্লাহ (সা.) -এরও গুণবাচক নাম রয়েছে। এর ভিতর থেকে ষাটের কিছু বেশি নাম তিনি উল্লেখ করেছেন।
আবূ হুসায়ন ইবনু ফারিস (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন, আমাদের নবী (সা.) -এর ২২টি গুণবাচক নাম রয়েছে যা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
’আল্লামাহ্ সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ)-এর (الْبَهْجَةُ السَّوِيَّةُ فِي الْأَسْمَاءِ النَّبَوِيَّةِ) গ্রন্থে তিনি ৫০০-এর কিছু বেশি গুণবাচক নাম উল্লেখ করেছেন। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে সংক্ষেপে নিরানব্বইটি নাম উল্লেখ করেছেন।
হাদীসে যেগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো। যেমন: (الشَّافِيَةُ وَالْوَافِيَةُ وَالْكَافِيَةُ) অর্থাৎ- আরোগ্য দানকারী, পরিপূর্ণভাবে দানকারী ও যিনি সকল ক্ষেত্রে যথেষ্ট।



৫৭৭৬-[১] জুবায়র ইবনু মুত্বইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -কে বলতে শুনেছি, আমার অনেকগুলো নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, আমি মাহী। আল্লাহ তা’আলা আমার দ্বারা কুফকে নিশ্চিহ্ন করবেন। আমি ’আল হাশির’, (কিয়ামতের দিন) মানব জাতিকে আমার পেছনে একত্রিত করা হবে। আর আমি হলাম আল ’আকিব এবং ’আকিব ঐ লোক, যার পরে আর কোন নবী নেই। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)

عَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعَمٍ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إنَّ لي أَسْمَاءً: أَنَا مُحَمَّدٌ وَأَنَا أَحْمَدُ وَأَنَا الْمَاحِي الَّذِي يَمْحُو اللَّهُ بِي الْكُفْرَ وَأَنَا الْحَاشِرُ الَّذِي يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى قَدَمِي وَأَنَا الْعَاقِبُ . وَالْعَاقِب: الَّذِي لَيْسَ بعده شَيْء. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3532) و مسلم (124 / 2354)، (6105) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: (إنَّ لي أَسْمَاءً) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বিভিন্ন নামে-গুণে ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছে। তার অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। এগুলোর ভিতরে মুহাম্মাদ নামটি অনেক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। কেননা তাঁর চারিত্রিক গুণের সকলেই প্রশংসা করেছেন।
(وَأَنَا الْمَاحِي الَّذِي يَمْحُو اللَّهُ بِي الْكُفْرَ) আর আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন, কুফরী অন্ধকারাচ্ছন্নতা দূর করার জন্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) পৃথিবীতে সুস্পষ্ট আলো (কুরআন, সুন্নাহ) নিয়ে আগমন করেছেন, এমনিভাবে কুফরীশক্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: সম্ভাবনা রয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দলীলের মাধ্যমে বিজয় লাভ করা, প্রধান্য পাওয়া অন্যান্য ধর্মের উপর।
এ মর্মে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন: (لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ کُلِّهٖ) “তিনি সব দীনের উপর একে বিজয়ী করেন।” (সূরাহ আত্ তাওবাহ্ ৯: ৩৩)।

(أَنَا الْعَاقِبُ وَالْعَاقِبُ الَّذِىْ لَيْسَ بَعْدَهُ نَبِىٌّ) শারহে মুসলিমে ইবনুল আরাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যে তার পূর্ববর্তী লোকেদের প্রতিনিধি করবেন তাকে (الْعَاقِبُ) বলা হয়। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা, ২৩৫৪/১২৪; মিরকাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি

৫৭৭৭-[২] আবূ মূসা আল আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে তাঁর স্বীয় নামসমূহ বর্ণনা করতেন। তখন তিনি (সা.) বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ, আহমাদ, মুকফফী (সকলের পশ্চাতে আগমনকারী), হাশির (সমবেতকারী) এবং আমি নবীয়ে তাওবাহ্ ও নবীয়ে রহমত অর্থাৎ তাওবাহ ও রহমতের নবী। (মুসলিম)

الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)

وَعَن أبي مُوسَى الْأَشْعَرِيّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَمِّي لَنَا نَفْسَهُ أَسْمَاءً فَقَالَ: «أَنَا مُحَمَّدٌ وَأَحْمَدُ وَالْمُقَفِّي وَالْحَاشِرُ وَنَبِيُّ التَّوْبَةِ وَنَبِيُّ الرَّحْمَة» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (126 / 2355)، (6108) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নামসমূহের মাঝে একটি নাম বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি (সা.) সকল রাসূলদের পিছনে আগমনকারী। তারপরে আর কোন নবী পৃথিবীতে আগমন করবেন না।
বলা হয়: রাসূলুল্লাহ (সা.) তার পূর্ববর্তী নবী রাসূলদের পথের অনুসারী। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, “আপনি তাদের পথের অনুসরণ করুন।" (সূরা আল আ'আম ৬: ৯০)।
(وَالْحَاشِرُ وَنَبِيُّ التَّوْبَةِ) অর্থাৎ হাশরের ময়দানে সমস্ত মানুষদেরকে, সমবেতকারী ও অত্যধিক তাওবাকারী। রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ তা'আলার নিকট অধিক পরিমাণে তাওবাহ্ করতেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন যে, আমি দৈনিক সত্তর হতে একশত বার তাওবাহ্ করে থাকি। অতএব আমাদেরকে বেশি বেশি তাওবাহ্ করতে হবে।
(وَنَبِيُّ الرَّحْمَة) রাসূলুল্লাহ (সা.) মানব, জিন, জীবজন্তু, জড় পদার্থসমূহ সকলের জন্য রহমতস্বরূপ ছিলেন।
এ মর্মে মহান আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা দেন, “আমি তো তোমাকে বিশ্বগতের প্রতি রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আল আম্বিয়া- ২১ : ১০৭)। রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদীসে বলেছেন, (إِنَّمَا أَنَا رَحْمَةٌ مُهْدَاةٌ) আল্লাহ তা'আলা আমাকে রহমত ও হিদায়াতকারী হিসেবে পাঠিয়েছেন। (মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৫)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি

৫৭৭৮-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) - (সাহাবীদেরকে) বললেন, এতেও কি তোমরা আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ না যে, আল্লাহ তা’আলা কিভাবে কুরায়শদের গালমন্দ ও অভিসম্পাতকে আমার ওপর হতে সরিয়ে দিয়েছেন? তারা ’মুযাম্মাম’ (নিন্দিত) নামে গালাগালি করে এবং ’মুযাম্মাম’-কে অভিসম্পাত দেয়। অথচ আমি মুহাম্মাদ’ (প্রশংসিত) মুযাম্মাম নই। (বুখারী)

الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا تَعْجَبُونَ كَيْفَ يَصْرِفُ اللَّهُ عَنِّي شَتْمَ قُرَيْشٍ وَلَعْنَهُمْ؟ يَشْتُمُونَ مُذَمَّمًا وَيَلْعَنُونَ مُذَمَّمًا وَأَنَا مُحَمَّدٌ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

رواہ البخاری (3533) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: মক্কার কাফির মুশরিকগণ রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে (مُذَمَّمًا) “মুযাম্মাম” বলত এবং গালমন্দ করত। যার অর্থ হলো নিন্দিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চারিত্রিক গুণাবলির ভিতরে নিন্দনীয় কোন গুণাবলি ছিল না। কুরায়শদের গালমন্দ তার ওপর পতিত হয়নি। আবূ লাহাব-এর স্ত্রী উম্মু জামিলা আরো বিনতু হারব তাঁর গালমন্দ করে কবিতা আবৃত্তি করেন।
(مُذَمَّمًا قَلَيْنَا...وَدِينَهُ أَبَيْنَاوَأَمْرَهُ عَصَيْنَا) আমরা তার গালমন্দ করতাম, তার দীনকে অস্বীকার করতাম এবং তাঁর আদেশকে অমান্য করতাম।


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি

৫৭৭৯-[৪] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথার এবং দাড়ির আগায় সামান্য কিছু শুভ্রতা দেখা দিয়েছিল। যখন তিনি তাতে তেল লাগাতেন তখন তা প্রকাশ পেত। আর যখন কেশরাজি বিক্ষিপ্ত হত, তখন তা প্রকাশ পেত। তাঁর দাড়ি ছিল খুব বেশি। তখন এক লোক বলল, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মুখমণ্ডল ছিল তলোয়ারের মতো। তিনি বললেন, না; বরং তা ছিল সূর্য ও চন্দ্রের মতো এবং তাঁর চেহারা ছিল গোলগাল। আর আমি তাঁর কাঁধের কাছে কবুতরের ডিমের মতো মোহরে নুবুওয়্যাতও দেখতে পেয়েছি, তার রং ছিল তার গায়ের রংয়ের সাদৃশ্য।

الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)

وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ شَمِطَ مُقَدَّمُ رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ وَكَانَ إِذَا ادَّهَنَ لَمْ يَتَبَيَّنْ وَإِذَا شَعِثَ رَأْسُهُ تَبَيَّنَ وَكَانَ كَثِيرَ شَعْرِ اللِّحْيَةِ فَقَالَ رَجُلٌ: وَجْهُهُ مِثْلُ السَّيْفِ؟ قَالَ: لَا بَلْ كَانَ مِثْلَ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ وَكَانَ مُسْتَدِيرًا وَرَأَيْتُ الْخَاتَمَ عِنْدَ كَتِفِهِ مِثْلَ بَيْضَة الْحَمَامَة يشبه جسده . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (109 / 2344)، (6084) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথার অগ্রভাগের কিছু চুল সাদা ছিল। যখন সেগুলোকে চিরুনি করত, কালো চুলের সাথে মিশে যাওয়ার কারণে তা বুঝা যেত না।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন চুলে তেল লাগাতেন মাথার চুলগুলো সুন্দরভাবে চিরুনি করতেন সাদা চুল কম হওয়ার কারণে তা বুঝা যেত না। আর যখন চুলগুলো এলোমেলো হত তখন বুঝা যেত যে, কিছু সাদা চুল আছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কয়েকটি চুল সাদা ছিল। তাঁর বর্ণনা সম্পর্কে সুনান ইবনু মাজাহ’য় বর্ণিত আছে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) -এর দাড়ির সম্মুখভাগে মাত্র সতের বা বিশটি সাদা চুল দেখেছেন। (ইবনু মাজাহ হা, ৩৬২৯) । ইবনু উমার এক বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বার্ধক্য বলতে ছিল বিশটা সাদা চুল ছিল।
(ইবনু মাজাহ হা, ৩৬৩০) তলোয়ারের মতো উজ্জ্বল লম্বা হওয়ার ধারণা হতে পারে। তাই জাবির এই লোকটির কথা পাল্টিয়ে বললেন, তা উজ্জ্বল ছিল, তবে চন্দ্র ও সূর্যের ন্যায় গোলগাল ছিল। অবশ্য লম্বাও ছিল, খাটো ছিল না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি

৫৭৮০-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু সারজাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি নবী (সা.) -কে দেখেছি এবং আমি তার সাথে রুটি ও মাংস খেয়েছি অথবা বললেন, আমি ’সারীদ’ খেয়েছি। অতঃপর আমি তার পিছনে গিয়ে ঘোরাফেরা করতে লাগলাম। তখন তাঁর উভয় কাঁধের মাঝামাঝি বাম কাঁধের উপরিভাগে মুষ্টির মতো (গোলাকার) মোহরে নুবুওয়্যাত দেখলাম। তার উপরে মাস-এর মতো অনেকগুলো তিল ছিল। (মুসলিম)

الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)

وَعَن عبدِ الله بن سرجسٍ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَكَلْتُ مَعَهُ خُبْزًا وَلَحْمًا - أَوْ قَالَ: ثَرِيدًا - ثُمَّ دُرْتُ خَلْفَهُ فَنَظَرْتُ إِلَى خَاتَمِ النُّبُوَّةِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ عِنْدَ نَاغِضِ كَتِفِهِ الْيُسْرَى جُمْعًا عَلَيْهِ خيلال كأمثال الثآليل. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (112 / 2346)، (6088) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (أَكَلْتُ مَعَهُ خُبْزًا وَلَحْمًا) হাদীস বর্ণনাকারী রাবীর নিকট সন্দেহ হয়েছে যে, তিনি (ثرِيد) খাবার খেয়েছেন, না (حَيْسِ) খাবার খেয়েছেন।
(ثرِيد) বলা হয় ঝোলে ভিজানো টুকরা টুকরা রুটি, রুটি ও গোশতের মণ্ডবিশেষ।
(حَيْسِ) বলা হয় এক প্রকার মিলানো খাদ্য, যা খেজুর ঘি ছাতু দিয়ে তৈরি করা খাবার।
(শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা. ২৩৪৬/১১২, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি

৫৭৮১-[৬] উম্মু খালিদ বিনতু খালিদ ইবনু সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী (সা.) -এর নিকট কিছু কাপড় আনা হলো। এর মধ্যে কালো রঙের একখানা ছোট পশমি চাদরও ছিল। তখন তিনি (সা.) বললেন, উম্মু খালিদ-কে আমার কাছে নিয়ে আসো। অতএব তাকে বহন করে নিয়ে আসা হলো। নবী (সা.) চাদরখানা নিজের হাতে নিলেন এবং তাকে পরিয়ে দিয়ে বললেন, এটা পুরাতন ও নিকৃষ্ট হওয়া পর্যন্ত পরিধান কর, অতঃপর তা পুরাতন ও নিকৃষ্ট হওয়া অবধি পরিধান কর। আর তাতে সবুজ কিংবা হলুদ রংয়ের নকশি করা ছিল। অতঃপর তিনি বললেন, হে উম্মু খালিদ! এটা (কতই না) সুন্দর। হাবশী। ভাষায় ’সানাহ’ শব্দ সুন্দরের জন্য ব্যবহার হয়। উম্মু খালিদ এবং বলেন, এরপর আমি রাসূল (সা.) -এর মোহরে নুবুওয়্যাত স্পর্শ করে খেলতে লাগলাম। আমার পিতা তখন আমাকে ধমক দিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) (আমার পিতাকে) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। অর্থাৎ তাকে এমন করতে দাও। (বুখারী)

الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)

وَعَنْ أُمِّ خَالِدٍ بِنْتِ خَالِدِ بْنِ سَعِيدٍ قَالَتْ: أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثِيَابٍ فِيهَا خَمِيصَةٌ سَوْدَاءُ صَغِيرَةٌ فَقَالَ: «ائْتُونِي بِأُمِّ خَالِدٍ» فَأُتِيَ بِهَا تُحْمَلُ فَأَخَذَ الْخَمِيصَةَ بِيَدِهِ فَأَلْبَسَهَا. قَالَ: «أَبْلِي وَأَخْلِقِي ثُمَّ أَبْلِي وَأَخْلِقِي» وَكَانَ فِيهَا عَلَمٌ أَخْضَرُ أَوْ أَصْفَرُ. فَقَالَ: «يَا أُمَّ خَالِدٍ هَذَا سِنَاهْ» وَهِيَ بالحبشيَّةِ حسنَة. قَالَت: فذهبتُ أَلعبُ بخاتمِ النبوَّةِ فز برني أُبَيٍّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دعها» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (3071) ۔
(صَحِيح)

ব্যাখ্যা: উম্মু খালিদ (রাঃ) -এর পরিচয়: বলা হয় উম্মু খালিদ বিনতু খালিদ ইসলাম গ্রহণ করেছেন, আবূ বাকর (রাঃ) -এর পরে। ইসলাম গ্রহণ করার পর্যায়ে তিনি তৃতীয় বা চতুর্থতম ব্যক্তি, উম্মু খালিদ তাঁর উপাধি। এই নামে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন, তিনি হাবশায় জন্মগ্রহণ করেন। সেখান থেকে ছোট অবস্থায় মদীনায় আসেন। তাকে জুবায়র ইবনু 'আওয়াম (রাঃ) বিবাহ করেন। (أَلعبُ بخاتمِ النبوَّةِ) একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট কিছু চাদর নিয়ে আসা হলো। রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মু খালিদ-কে তার কাছে নিয়ে আসতে বললেন, তাকে একখানা চাদর প্রদান করে তার জন্য দু'আ করলেন।
বলা হয়: রাসূলুল্লাহ (সা.) তার দীর্ঘ আয়ুর জন্য দু'আ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে চাদর নিয়ে যাওয়ার সময় উম্মু খালিদ নবী (সা.) -এর কাঁধে মোহরে নুবুওয়্যাত স্পর্শ করে খেলতে ছিলেন। এ ঘটনা থেকে বুঝা যায় নবী (সা.) -এর কাঁধে নুবুওয়্যাতের মোহর ছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি

৫৭৮২-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) অতিরিক্ত লম্বাও ছিলেন না এবং খাটোও ছিলেন না, তিনি ধবধবে সাদাও ছিলেন না, আবার শ্যাম বর্ণেরও ছিলেন না। তাঁর মাথার চুল খুব বেশি কোঁকড়ানো ছিল না এবং সোজাও ছিল না। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে চল্লিশ বছর বয়সে নুবুওয়্যাত দান করেছেন। অতঃপর তিনি (সা.) মক্কায় দশ বছর এবং মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেন। আর আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ষাট বছর বয়সে মৃত্যু দান করেন। অথচ তখন তাঁর মাথার চুল ও দাড়িতে বিশটি চুলও সাদা হয়নি।
অপর এক বর্ণনায় আনাস (রাঃ) নবী (সা.) -এর আকৃতির বর্ণনায় বলেছেন, তিনি লোকেদের মাঝে মধ্যম ছিলেন। লম্বাও ছিলেন না এবং খাটোও ছিলেন না। তাঁর দেহের রং ছিল উজ্জ্বল। বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথার চুল উভয় কানের মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত পৌঁছত।
অপর এক বর্ণনায় আছে, কেশরাজি উভয় কানের এবং কাঁধের মাঝামাঝিতে ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)

বুখারীর অপর এক বর্ণনাতে আছে- আনাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথা ছিল বড় এবং উভয় পায়ের পাতা ছিল মাংসে পরিপূর্ণ। আমি তার পূর্বে এবং পরে অনুরূপ আকৃতির আর কাউকেও দেখিনি। আর তাঁর উভয় হাতের তালু ছিল বিস্তীর্ণ। অন্য এক বর্ণনাতে আনাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (সা.) - এর উভয় পা এবং উভয় হাত ছিল মাংসে পরিপূর্ণ।

الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ بِالطَّوِيلِ الْبَائِنِ وَلَا بِالْقَصِيرِ وَلَيْسَ بِالْأَبْيَضِ الْأَمْهَقِ وَلَا بِالْآدَمِ وَلَيْسَ بِالْجَعْدِ الْقَطَطِ وَلَا بِالسَّبْطِ بَعَثَهُ اللَّهُ عَلَى رَأْسِ أَرْبَعِينَ سَنَةً فَأَقَامَ بِمَكَّةَ عَشْرَ سِنِينَ وبالمدينة عشر سِنِين وتوفَّاه الله على رَأس سِتِّينَ سَنَةً وَلَيْسَ فِي رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ عِشْرُونَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ وَفِي رِوَايَةٍ يَصِفُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كَانَ رَبْعَةً مِنَ الْقَوْمِ لَيْسَ بِالطَّوِيلِ وَلَا بِالْقَصِيرِ أَزْهَرَ اللَّوْنِ. وَقَالَ: كَانَ شَعْرُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَنْصَافِ أُذُنَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ: بَيْنَ أُذُنَيْهِ وَعَاتِقِهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ قَالَ: كَانَ ضَخْمَ الرَّأْسِ وَالْقَدَمَيْنِ لَمْ أَرَ بَعْدَهُ وَلَا قَبْلَهُ مِثْلَهُ وَكَانَ سَبْطَ الكفَّينِ. وَفِي أُخْرَى لَهُ قَالَ: كَانَ شئن الْقَدَمَيْنِ وَالْكَفَّيْنِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3548 ۔ 5900) و مسلم (113 / 2347)، (6089) الروایۃ الثانیۃ 1 ، رواھا البخاری (3547) و الثانیۃ ب ، رواھا مسلم (96 / 2338)، (6067) و الثالثۃ ، رواھا البخاری (5905) و مسلم (94 / 2338)، (6069) و الرابعۃ ، رواھا البخاری (5910) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সকল মানুষের জন্যই অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। মানবীয় চরিত্রের সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতার সামঞ্জস্যের ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন।
বারা' ইবনু ‘আযিব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মধ্যমাকৃতির একজন মানুষ হালকা লম্বা, তার ছিল চওড়া কাঁধ, কানের লতি পর্যন্ত ঘন চুল, যখন তিনি লাল ডোরাকাটা জামা পরিধান করতেন, আমরা তখন তাঁর থেকে অন্যকিছুকে অধিক সুন্দর মনে করতাম না।

(بَعَثَهُ اللَّهُ عَلَى رَأْسِ أَرْبَعِينَ سَنَةً) প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে নুবুওয়্যাতের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে চল্লিশ বছর পূর্ণ হলে। তার আগে তাকে নুবুওয়্যাতের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
(جَامِعِ الْأُصُولِ) গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, “উলামাগণ বর্ণনা করেছেন নবী (সা.) ৪৩ বছর বয়সে নুবুওয়্যাতের দায়িত্ব পেয়েছেন।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে, নবী (সা.) মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেছেন। আর মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেছেন।
বিশুদ্ধ রিওয়ায়াত অনুযায়ী জানা যায় যে, নবী (সা.) নুবুওয়্যাত পাওয়ার পর হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত মক্কায় তেরো বছর অবস্থান করেছেন। আর অত্র হাদীসে দশ বছরের কথা রয়েছে। সম্ভবত হাদীস বর্ণনাকারী দশকের পরে ভাংতি বছরগুলো বাদ দিয়ে বলেছেন।
আর এটা সকলেরই জানা আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ইন্তিকালের সময় বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর। আর অত্র হাদীসে উল্লেখ আছে ষাট বছর।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, তার বয়স হয়েছিল পয়ষট্টি বছর। এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জন্ম ও ইন্তিকালের বছর দু'টি স্বতন্ত্রভাবে দুই বছর ধরে পঁয়ষট্টি বলা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।


দেখানো হচ্ছেঃ ৫৭৬১ থেকে ৫৭৮০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৯৫৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 286 287 288 289 290 · · · 295 296 297 298 পরের পাতা »