পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৬১-[৪৩] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের মধ্যে ইবনুল হানযালিয়্যাহ্ (রাঃ) নামক জনৈক ব্যক্তি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খুরয়ম আল আসাদী লোকটি ভালো, তবে যদি তার মাথার চুল খুব লম্বা না হত এবং পরনের লুঙ্গি না ঝুলাত (টাখনু গিরার নিচ পর্যন্ত)। পরে খুরয়ম-এর কাছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথাগুলো পৌঁছলে তিনি ছুরি নিয়ে চুলকে দু’ কানের লতি পর্যন্ত কেটে ফেললেন এবং লুঙ্গিকে অর্ধ গোড়ালি পর্যন্ত উঠিয়ে নিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘কায়স ইবনু বিশ্র আত্ তাগলূবী’’ নামক বর্ণনাকারী তার পিতার থেকে বর্ণনা করেছেন। অথচ তার পিতাকে চেনা যায় না। দেখুন- তাহক্বীক রিয়াযুস্ সলিহীন ৮০২, ১/৩৩২।
وَعَن ابنِ الحنظليَّةِ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نِعْمَ الرَّجُلُ خُرَيْمٌ الْأَسْدِيُّ لَوْلَا طُولُ جُمَّتِه وإسبال إزراه» فَبَلَغَ ذَلِكَ خُرَيْمًا فَأَخَذَ شَفْرَةً فَقَطَعَ بِهَا جمته إِلَى أُذُنَيْهِ وَرفع إزراه إِلَى أَنْصَاف سَاقيه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (نِعْمَ الرَّجُلُ خُرَيْمٌ) খুরয়ম কতই না ভালো লোক। কারো অধিক প্রশংসায় এমন বাক্য ব্যবহার হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুরয়ম (রাঃ)-এর প্রশংসামূলক ক্রিয়া দ্বারা প্রশংসার পর তার মাঝের দু’টি আপত্তিকর দিক তুলে ধরলেন। অর্থাৎ তার জুম্মাহ্ লম্বা ও লুঙ্গি লটকিয়ে পরার অভ্যাস না থাকলে সে অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিল। হাদীসের এ অংশ থেকে চুলকে লম্বা করে জুম্মায় পরিণত করা এবং লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরা অপছন্দ কর্ম বলে প্রমাণিত হয়। লুঙ্গি বা পাজামা ইত্যাদি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরা হারাম। বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে তা প্রমাণিত। অতএব রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ কাজটি অপছন্দ করা স্বাভাবিক। কিন্তু চুল লম্বা হওয়া বিশেষ তা জুম্মাহ্ পরিমাণ হলে তা মন্দ নয়। নির্ধারিত পরিমাণের পর তা কেটে ফেলতে হবে বলেও কোন দলীল নেই। বরং আমরা ইতোপূর্বে দেখলাম যে, এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চুলের সুন্নাত। এ প্রশ্নের জবাবে ‘উলামায়ে কিরাম বলেনঃ হতে পারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার লম্বা চুলের গর্ব টের পেয়েছেন। দীর্ঘ জুম্মাহ্ চুল দ্বারা হয়ত তিনি বড়াই করতেন বলে রসূল তার এ চুল অপছন্দ করেন। চুলের সাথে লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরার কথা বলা এদিকে ইঙ্গিত বহন করে। অহংকারবশত লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরা আরবদের রীতি ছিল।
হাদীস থেকে এ কথাও প্রমাণিত হয় যে, বদনামের উদ্দেশ্য ছাড়া যদি কারো অদৃশ্যে তার কোন দোষ এভাবে বলা হয় যে, সে শুনলে তা অপছন্দ করবে না বরং দোষণীয় কাজটি ছেড়ে দিবে, এমন হলে উক্ত দোষের বিবরণ দেয়া গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে না। খুরয়ম -এর কাছেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণী যাওয়ার সাথে সাথে তিনি তার পূর্বোক্ত ‘আমল থেকে ফিরে আসেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৬২-[৪৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মাথার সম্মুখভাগে এক গুচ্ছ লম্বা চুল ছিল। আমার আম্মা আমাকে বললেনঃ আমি যেন তা না কাটি। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অনেক সময় স্নেহপরবশ হয়ে) তাকে ধরে সোজা করতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘মায়মূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ’’ নামক বর্ণনাকারীকে চেনা যায় না (مجهول الحال)। (তাকরীবুত্ তাহযীব)
وَعَن أنسٍ قَالَ: كَانَتْ لِي ذُؤَابَةٌ فَقَالَتْ لِي أُمِّي: لَا أَجُزُّهَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمُدُّهَا وَيَأْخُذُهَا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যাঃ (ذُؤَابَةٌ) অর্থাৎ চুলের গুচ্ছ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ গুচ্ছ নিয়ে তার সাথে রসিকতা করতেন। এগুলো নিয়ে খেলা করতেন। রসূলের হাত লাগা তার মায়ের কাছে অত্যন্ত ভালো লাগত বলেই তার মা তাকে তা কাটতে দিতেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি তাদের ভালোবাসা, নবীজির ছোয়া পাওয়াকে তাদের ভালো লাগার প্রমাণ এই হাদীসটি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৬৩-[৪৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জা’ফারের সন্তানদেরকে (জা’ফার -এর শাহাদাতের জন্য) শোক প্রকাশের তিনদিন সময় দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের কাছে এলেন এবং বললেনঃ আজকের পর হতে তোমরা আর আমার ভাইয়ের জন্য কান্নাকাটি করবে না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমার ভাইয়ের সন্তানদেরকে আমার কাছে ডেকে আনো। সে মতে আমাদেরকে আনা হলো। যেন আমরা কতকগুলো পাখির ছানা। অতঃপর বললেনঃ নাপিত ডেকে আনো। তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন, সে আমাদের মাথা মুড়িয়ে দিলো। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَن عبدِ الله بن جَعْفَرٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمْهَلَ آلَ جَعْفَرٍ ثَلَاثًا ثُمَّ أَتَاهُمْ فَقَالَ: «لَا تَبْكُوا عَلَى أَخِي بَعْدِ الْيَوْمِ» . ثُمَّ قَالَ: «ادْعُوا لِي بَنِي أَخِي» . فَجِيءَ بِنَا كَأَنَّا أَفْرُخٌ فَقَالَ: «ادْعُوا لِي الْحَلَّاقَ» فَأَمَرَهُ فَحَلَقَ رؤوسنا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ (أَمْهَلَ آلَ جَعْفَرٍ ثَلَاثًا) জা‘ফার (রাঃ) হলেন রসূলুল্লাহ এর চাচাতো ভাই আবূ ত্বালিব-এর পুত্র। মুতা‘ যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তার শাহাদাতের পর তার পরিবারে শোক নেমে আসে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সবাইকে তিনদিন শোক পালনের অবকাশ দিলেন। স্বামীর জন্য স্ত্রী ব্যতীত অন্যদের জন্য তিনদিন শোক পালন করার অনুমোদন রয়েছে। তিনদিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জা‘ফার-এর পরিবারকে তিনদিন পর্যন্ত শোক পালনের অবকাশ দেন।
لَا تَبْكُوا عَلَى أَخِي بَعْدَ الْيَوْمِ আজকের পর আর আমার ভাইয়ের ওপর কেঁদো না। অর্থাৎ আজ তৃতীয় দিনের পর আর কাঁদা যাবে না। মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কারো মৃত্যুতে তিনদিনের বেশি ক্রন্দন করা, চিন্তা করা, শোক প্রকাশ করা যাবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
উল্লেখ্য যে, তিনদিনের বেশি ক্রন্দন বা চিন্তা করা যাবে না বলতে শোক পালনের উদ্দেশে এগুলো করা যাবে না বা ইচ্ছাকৃত শোক পালনকে কার্যকর রাখার জন্য এগুলো করা যাবে না। তবে মানুষের ইচ্ছার বাহিরে মন থেকে আপনিতেই যে দুঃখ বা কান্না বা চোখের পানি এসে যায় তা নিষেধের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা এটা মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। যেমন মৃত্যুর পর কান্নাকাটি করতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। আবার অনেকের মৃত্যুতে তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেছে। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত-
أَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعٰى جَعْفَرًا وَزَيْدًا قَبْلَ أَنْ يَجِيءَ خَبَرُهُمْ وَعَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ
‘‘জা‘ফার ও যায়দ-এর খবর আসার আগেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মৃত্যুর খবর দেন, এমতাবস্থায় তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াচ্ছিল।’’ (বুখারী হাঃ ৩৬৩০)
(كَأَنَّا أَفْرُخٌ) আমরা যেন পাখির বাচ্চা। "فَرْخٌ" হলো পাখির ছোট বাচ্চা। বহুবচন "أَفْرُخ"। পাখির বাচ্চার সাথে তাদেরকে তুলনা করার কারণ হলো তাদের চুলগুলো হয়ত পাখির প্রথম উদ্গত নরম চুলের ন্যায় ছিল। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৮৮)
(فَحَلَقَ رُؤُوْسَنَا) অর্থাৎ সে তাদের মাথা কামিয়ে দিলেন। মাথা কামাই করে ফেলার দুই কারণ হতে পারে। এক : শোক পালন অবস্থায় চুল এলোমেলো থাকে, তিনদিনের মাথায় মাথা কামিয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের শোকের নিদর্শন মিটিয়ে দিতে চাইলেন। কেননা তিনদিনের পর শোক পালন বৈধ নয়, যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিষেধ দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, চুল পুরো কামাই করার চেয়ে ছেড়ে দেয়া ভালো হওয়া সত্ত্বেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের চুল কামানোর কারণ হলো, তাদের মাতা আসমা স্বামীর শোকে বিভোর থাকায় তিনি বাচ্চার চুলের যত্ন নিতে পারছিলেন না। এতে তাদের চুলে ময়লা বা উঁকুন যেন না হয়ে যায় সে কারণেই রসূল তাদের ওপর দয়াশীল হয়ে তাদের চুল কামিয়ে দেন। ইবনুল মালিক বলেনঃ এ হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, অভিভাবকের জন্য বাচ্চার চুল কামানো ও খৎনার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ ঠিক আছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৬৪-[৪৬] উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। জনৈকা নারী মদীনায় (মেয়েদের) খৎনা করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ খৎনা স্থানের মাংস খুব বেশি কেটো না। কেননা তা নারীর জন্য অত্যধিক তৃপ্তিদায়ক এবং স্বামীর কাছে খুবই প্রিয়। (আবূ দাঊদ; আর তিনি বলেছেনঃ হাদীসটি য’ঈফ। তার বর্ণনাকারী অপরিচিত।)[1]
وَعَن أُمِّ عطيَّةَ الأنصاريَّةِ: أنَّ امْرَأَة كَانَت تختن بِالْمَدِينَةِ. فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُنْهِكِي فَإِنَّ ذَلِكَ أَحْظَى لِلْمَرْأَةِ وَأَحَبُّ إِلَى الْبَعْلِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَقَالَ: هَذَا الْحَدِيثُ ضَعِيفٌ وَرَاوِيه مَجْهُول
ব্যাখ্যাঃ পুরুষের যেমন খৎনা রয়েছে ঠিক তেমনি মেয়েদেরও খৎনা রয়েছে। তবে পুরুষের জন্য খৎনা করা জরুরী। কিন্তু মেয়েদের জন্য তা জরুরী নয়। অধ্যায়ের শুরুতে ফিতরাত বা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ হাদীসে মেয়েদের খৎনার বিষয়ে একটি দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হাদীসে যে দিক নির্দেশনাটি দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, মেয়েদের খৎনার ক্ষেত্রে খৎনার স্থানকে অধিক বা গভীর করে না কাটা। "إنهاك" শব্দের অর্থ হলো খৎনার জায়গা কাটতে আধিক্য অবলম্বন করা বা একেবারে মূল থেকে পুরোটা কেটে ফেলা। এভাবে কাটতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারণ করেন। বরং মেয়েদের খৎনার ক্ষেত্রে অল্প কেটে খৎনা করতে হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে- أَشِمِّي ولا تَنْهكي অর্থাৎ ‘ইশমাম’ অর্থ সুগন্ধি গ্রহণ। এখানে অল্প কাটাকে সুগন্ধি গ্রহণের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ কোন রকম একটু কেটে নিবে, যাতে কাটার আংশটি পাওয়া যায়। গভীর বা গাঢ় করে কাটবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২৬২)
মেয়েদের খৎনার ক্ষেত্রে গভীর বা গাঢ় করে না কাটার একটি হিকমাত বা রহস্যও হাদীসে উল্লেখ করা হয়। আর সেই রহস্য হলো, অল্প কাটা স্ত্রীর জন্য উপকারী এবং স্বামীর জন্য স্বাদ ও ভালো লাগার কারণ। খৎনা করতে অধিক গাঢ় করে কাটলে স্বামী স্ত্রী উভয়ের জন্য মিলনের স্বাদ উপভোগে কিছুটা ঘাটতি হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৬৫-[৪৭] কারীমাহ্ বিনতু হুমাম (রহঃ) হতে বর্ণিত। একদিন জনৈকা মহিলা মেহেদী দ্বারা (খিযাব) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল। উত্তরে তিনি বললেনঃ তা ব্যবহারে কোন দোষ নেই, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে তা ব্যবহারকে পছন্দ করি না। কেননা আমার প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গন্ধ পছন্দ করতেন না। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘কারীমাহ্ বিনতু হুমাম’’, তার এ হাদীসটি য‘ঈফ। দেখুন- শার্হু সুনান আবূ দাঊদ, আবুল মুহসিন ‘আববাদ ১/২ পৃঃ।
وَعَنْ كَرِيمَةَ بِنْتِ هَمَّامٍ: أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَتْ عائشةَ عَنْ خِضَابِ الْحِنَّاءِ فَقَالَتْ: لَا بَأْسَ وَلَكِنِّي أَكْرَهُهُ كَانَ حَبِيبِي يَكْرَهُ رِيحَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ (لَا بَأْسَ) অসুবিধা নেই। কেননা মেহেদী বৈধ। এতে কোন দ্বিমত নেই।
(وَلَكِنِّي أَكْرَهُهٗ) তবে আমি তা অপছন্দ করি। এটা ছিল ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ব্যক্তিগত অপছন্দ। শার‘ঈ কোন কারণে নয়। অপছন্দের কারণটি তিনি পরবর্তীতে উল্লেখ করে দিয়েছেন।
(كَانَ حَبِيبِي يَكْرَهٗ رِيحَهٗ) আমার বন্ধু তার গন্ধ অপছন্দ করতেন। তথা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেহেদীর গন্ধ অপছন্দ করতেন বলে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তা অপছন্দ করতেন।
পরবর্তী হাদীসে আমরা দেখব যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়েদের হাতে মেহেদী লাগানোকে অপছন্দ করতেন না। বরং না লাগানোকেই অপছন্দ করতেন। তাই এখানে অপছন্দ করতেন বলতে মেয়েদের জন্য মাথায় মেহেদী লাগিয়ে রাখাকে অপছন্দ করতেন। তাই ইমাম আবূ দাউদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এ কথার দ্বারা মাথার চুলের খিযাব করা উদ্দেশ্য নিয়েছেন’। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৬০)
উল্লেখ্য যে, মেহেদীকে সুগন্ধি বস্তু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) এ হাদীসের আলোকে বলেনঃ মেহেদী সুগন্ধি বস্তু নয়। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুগন্ধি পছন্দ করতেন। এখানে এই সম্ভাবনা রয়েছে যে, এটি বিশেষ কোন প্রকারের মেহেদী ছিল। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়ত এই প্রকারটিকেই অপছন্দ করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৬৬-[৪৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন (আবূ সুফ্ইয়ান-এর স্ত্রী) হিন্দা বিনতু ’উতবাহ্ বললেনঃ হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে বায়’আত করিয়ে নিন। তখন তিনি বললেনঃ আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে বায়’আত করব না, যতক্ষণ না তুমি তোমার দু’ হাতের তালু পরিবর্তন করে নেবে। কেননা তোমার হাতের তালুদ্বয়কে যেন হিংস্র জন্তুর থাবার ন্যায় দেখাচ্ছে। (আবূ দাঊদ)
وَعَن عائشةَ أَنَّ هِنْدًا بِنْتَ عُتْبَةَ قَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ بَايِعْنِي فَقَالَ: «لَا أُبَايِعُكِ حَتَّى تُغَيِّرِي كَفَّيْكِ فَكَأَنَّهُمَا كَفَّا سَبُعٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যাঃ (لَا أُبَايِعُكِ حَتّٰى تُغَيِّرِي كَفَّيْكِ) অর্থ- মেহেদী দ্বারা হাত রঞ্জন করে পরিবর্তন না করা পর্যন্ত আমি বায়‘আত করব না। হাদীসের এই অংশ থেকে বুঝা যায় মেয়েরা তাদের হাতে মেহেদী না লাগিয়ে হাতকে ছেলেদের মত সাদা রেখে দেয়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অপছন্দ ছিল।
(فَكَأَنَّهُمَا كَفَّا سَبُعٍ) অর্থাৎ এ দ্বয় হিংস্র প্রাণীর হাত। মেহেদী থেকে খালি হাতকে প্রাণীর হাতের সাথে উপমা দিয়ে অপছন্দের দিকটি তুলে ধরেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অর্থাৎ অপছন্দনীয় বা মাকরূহ হওয়ার ক্ষেত্রে তা প্রাণীর হাতের সদৃশ। কেননা মেহেদী না লাগালে তা ছেলেদের হাতের মতো দেখাবে যা অপছন্দনীয়, যেমন প্রাণীর হাত অপছন্দনীয়। হাদীসের এ অংশ থেকে ছেলেদের জন্য হাতে মেহেদী ব্যবহার অপছন্দ বা মাকরূহ- এ কথাটিও প্রমাণ হয়ে যায়। কেননা ছেলেদের হাত মেয়েদের হাতের বিপরীত হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, ৪১৬১; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৬৭-[৪৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈকা মহিলা হাতে চিঠি নিয়ে পর্দার আড়াল হতে হাত বের করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে ইশারা করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাতটি গুটিয়ে ফেলে বললেনঃ আমি বুঝতে পারলাম না, এটা কি কোন পুরুষের হাত না কোন নারীর? তখন মহিলাটি বলল : এটা মহিলার হাত। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি তুমি নারী হতে তাহলে অবশ্যই মেহেদীর দ্বারা তোমার হাতের নখগুলো পরিবর্তন করে নিতে। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْهَا قَالَتْ: أَوَمَتِ امْرَأَةٌ مِنْ وَرَاءِ سِتْرٍ بِيَدِهَا كِتَابٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَبَضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ فَقَالَ: «مَا أَدْرِي أَيَدُ رَجُلٍ أَمْ يَدُ امْرَأَةٍ؟» قَالَتْ: بَلْ يَدُ امْرَأَةٍ قَالَ: «لَوْ كُنْتِ امْرَأَةً لَغَيَّرْتِ أَظْفَارَكِ» يَعْنِي الْحِنَّاء. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ (فَقَبَضَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهٗ) অতএব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজের হাত গুটিয়ে নিলেন। অর্থাৎ তিনি মেয়েটির হাত থেকে চিঠিটি নেয়ার জন্য হাত বাড়ালেন না এবং চিঠিটি ধরলেন না।
مَا أَدْرِي أَيَدُ رَجُلٍ أَمْ يَدُ امْرَأَةٍ؟ অর্থ- আমি জানি না এটা পুরুষের হাত নাকি নারীর হাত। হাতে মেহেদী না থাকার কারণে পর্দার আড়াল থেকে কেবল হাত দেখে নারী না পুরুষের হাত বুঝা কষ্টকর হচ্ছিল। অথবা নবীজি বুঝেও মেহেদীর প্রতি উৎসাহিত করতে এমনটি বলতে পারেন।
لَوْ كُنْتِ امْرَأَةً لَغَيَّرْتِ أَظْفَارَكِ অর্থ- তুমি মেয়ে হলে অবশ্যই তোমার নখ পরিবর্তন করতে। অর্থাৎ মেহেদী দিয়ে তা রঙিন করতে। পরবর্তী বাক্যে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) পরিবর্তন করার ব্যাখ্যা দিয়ে দেন (يَعْنِي الْحِنَّاء) বলে। অর্থাৎ মেহেদী দ্বারা পরিবর্তন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৬৮-[৫০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সে নারীর ওপর লা’নাত, যে অন্যের মাথায় কৃত্রিম চুল মিশ্রিত করে এবং যে নিজের মাথায় কৃত্রিম চুল লাগায় এবং যে অন্য নারীর চুল উপড়ায় অথবা নিজের ভ্রু উপড়ায়। আর যে নারী কোন ব্যাধি ব্যতীত অপরের সঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে অথবা নিজের অঙ্গেও করায়। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن ابنِ عبَّاسٍ قَالَ: لُعِنَتِ الْوَاصِلَةُ وَالْمُسْتَوْصِلَةُ وَالنَّامِصَةُ وَالْمُتَنَمِّصَةُ وَالْوَاشِمَةُ والمشتوشمة من غير دَاء. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (لُعِنَتِ الْوَاصِلَةُ) অর্থ- যে তার চুলকে অন্যের চুলে সাথে মিলায় তাকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে। অভিশাপ দিয়েছেন আল্লাহ তা‘আলা অথবা রসূলের যবান দ্বারা তাদের ওপর অভিশাপ দেয়া হয়েছে। অভিশাপের কারণ হলো, এতে মিথ্যা ও প্রতারণার রূপ রয়েছে। পূর্বে এই মর্মের আরো হাদীস অতিবাহিত হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৬৯-[৫১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন পুরুষের ওপর লা’নাত করেছেন যে নারীর পোশাক পরিধান করে এবং এমন নারীর ওপর যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ) অর্থ- মহিলার পরিধেয় বস্তু। (لِبْسَةَ الرَّجُلِ) পুরুষের পরিধেয় বস্তু।
পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে যে বিধান বা নীতিমালা রয়েছে তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি মৌলিক নীতিমালা হলো, মহিলা পুরুষের পোশাক না পরা এবং পুরুষ মহিলার পোশাক না পরা। পুরুষের জন্য মহিলার পোশাকের সদৃশ্য পোশাক নিষিদ্ধ এবং মহিলার জন্য পুরুষের পোশাকের সাদৃশ্য পোশাক নিষিদ্ধ। বিভিন্ন হাদীসে এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বর্ণিত হাদীসটি এর একটি স্পষ্ট দলীল। যে সব কর্মের উপর অভিশাপ দেয়া হয় তার নিষেধাজ্ঞাটি কঠিন হয়ে থাকে। তাই পুরুষের জন্য মহিলার পরিধেয় পোশাক পরে বা যে কোনভাবে তাদের অবয়ব অবলম্বন করা হারাম। ঠিক তদ্রম্নপ মহিলাদের জন্য পুরুষদের পোশাক পরা বা পুরুষদের অবয়ব অবলম্বন করা হারাম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭০-[৫২] আবূ মুলায়কাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বলা হলো, জনৈকা মহিলা (পুরুষদের ন্যায়) জুতা পরিধান করেছিল। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) তাকে বললেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সব মহিলাদের ওপর লা’নাত করেছেন : যারা পুরুষদের বেশ ধারণ করে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ قَالَ: قِيلَ لِعَائِشَةَ: إِنَّ امْرَأَةً تَلْبَسُ النَّعْلَ قَالَتْ: لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَةَ مِنَ النِّسَاء. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (النَّعْلَ) শব্দের অর্থ পাদুকা, জুতা, স্যান্ডেল ইত্যাদি। পুরুষ মহিলা উভয়েই জুতা ব্যবহার করতে পারে। তবে পুরুষের জন্য তৈরি জুতা মেয়েদের জন্য পরিধান করা জায়িয নেই। আবার মেয়েদের জন্য নির্ধারিত জুতা পুরুষের জন্য পরিধান করা জায়িয নেই। জুতার কারণে বর্ণিত মহিলাকে লা‘নাত বা অভিশাপ দেয়ার কারণ হলো সেটি নিশ্চয় পুরুষ সদৃশ্য জুতা। হাদীসের পরবর্তী অংশ তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে।
(الرَّجُلَةَ مِنَ النِّسَاء) অর্থ হলো, নারীদের মধ্যে যারা পুরুষের অবয়ব, আকৃতি বা পুরুষ ভাব অবলম্বন করে এবং নিজেকে পুরুষের অবয়বে প্রকাশ করতে চায়। হাদীসের এই অংশ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হাদীসে নারীদের জন্য যে পাদুকার ব্যাপারে অভিশাপের কথা বলা হয়েছে যা পুরুষ সাদৃশ্য বা যে জুতা পুরুষের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত। অতএব সাধারণ জুতা যা পুরুষ সাদৃশ্য নয় তা মেয়েদের জন্য নিষেধ নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭১-[৫৩] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাধারণ নিয়ম ছিল যে, যখন তিনি কোন সফরে বের হতেন, তখন ঘরের সকলের নিকট হতে বিদায় নিয়ে সর্বশেষ বিদায় নিতেন ফাতিমা (রাঃ) হতে। আর যখন তিনি ফিরে আসতেন, তখন সর্বপ্রথম সাক্ষাৎ করতেন ফাতিমা (রাঃ)-এর সাথে। এভাবে একবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক অভিযান থেকে ফিরে এসে ফাতিমা (রাঃ)-এর ঘরের দিকে অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একখানা চট অথবা পর্দা তার ঘরের দরজায় ঝুলানো রয়েছে। আর হাসান ও হুসায়ন তাদের উভয়ের হাতে পরিহিতি রয়েছে দু’খানা রূপার বালা। এটা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের দরজা পর্যন্ত এলেন, কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করলেন না। ফলে ফাতিমা (রাঃ) বুঝতে পারলেন যে, এগুলো দেখার কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে প্রবেশ করেননি।
অতঃপর ফাতিমা (রাঃ) পর্দাখানা ছিঁড়ে ফেললেন এবং ছেলেদের হাত হতে বালা দু’খানা খুলে নিলেন এবং ভেঙ্গে ফেললেন। বালকদ্বয় ভাঙ্গা বালা দু’টি নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট চলে গেল। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা দু’খানা তাদের নিকট হতে নিয়ে নিলেন এবং বললেনঃ হে সাওবান! এ অলঙ্কার দু’টি নিয়ে যাও এবং অমুক পরিবারস্থ লোকেদেরকে দিয়ে আসো। আর তারা হলো (হাসান ও হুসায়ন-এর দিকে ইঙ্গিত করে) আমার পরিবার-পরিজন। তারা পার্থিব জীবনে সুখন্ডসম্ভার ভোগ করবে, আমি তা পছন্দ করি না। (অতঃপর বললেনঃ) হে সাওবান! যাও ফাতিমার জন্য ’আসবের (বিশেষ পুঁতির) একটি হার এবং হাতির দাঁতের তৈরি দু’টি বালা কিনে নিয়ে আসো। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘হুমায়দ আশ্ শামী’’ ও ‘‘সুলায়মান আল মামবাহী’’ নামের দু’জন অপরিচিত রাবী। ইয়াহ্ইয়া ইবনু মা‘ঈন বলেনঃ আমি তাদেরকে চিনি না। বিস্তারিত দেখুন- ‘আওনুল মা‘বূদ ১১/১৮২, হাঃ ৪৪৭১।
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَافَرَ كَانَ آخِرُ عَهْدِهِ بِإِنْسَانٍ مِنْ أَهْلِهِ فَاطِمَةَ وَأَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ عَلَيْهَا فَاطِمَةَ فَقَدِمَ مِنْ غَزَاةٍ وَقَدْ عَلَّقَتْ مَسْحًا أَوْ سِتْرًا عَلَى بَابِهَا وَحَلَّتِ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ قُلْبَيْنِ مِنْ فِضَّةٍ فَقَدِمَ فَلَمْ يَدْخُلْ فَظَنَّتْ أَنَّ مَا مَنَعَهُ أَنْ يَدْخُلَ مَا رَأَى فَهَتَكَتِ السِّتْرَ وَفَكَّتِ الْقُلْبَيْنِ عَنِ الصَّبِيَّيْنِ وَقَطَعَتْهُ مِنْهُمَا فَانْطَلَقَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْكِيَانِ فَأَخَذَهُ مِنْهُمَا فَقَالَ: «يَا ثَوْبَانُ اذْهَبْ بِهَذَا إِلَى فُلَانٍ إِنَّ هَؤُلَاءِ أَهْلِي أَكْرَهُ أَنْ يَأْكُلُوا طَيِّبَاتِهِمْ فِي حَيَاتِهِمُ الدُّنْيَا. يَا ثَوْبَانُ اشْتَرِ لِفَاطِمَةَ قِلَادَةً مِنْ عَصْبٍ وَسُوَارَيْنِ مِنْ عَاجٍ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (آخِرُ عَهْدِه بِإِنْسَانٍ مِنْ أَهْلِه فَاطِمَةَ) অর্থ- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল, সফরে যাওয়ার সময় পরিবারের অর্থাৎ তার স্ত্রী ও মেয়েদের মাঝে সর্বশেষ যার সাথে কথা বলতেন, ওয়াসিয়্যাত করতেন, নির্দেশ দিতেন এবং বিদায় নিতেন তিনি হলেন ফাতিমা (রাঃ)। আবার সফর থেকে ফিরে এসে সর্বপ্রথম যার কাছে যেতেন তিনি ফাতিমা (রাঃ)। মোটকথা, যাওয়ার সময় সর্বশেষে ফাতিমা (রাঃ) এবং আসার পর সর্বপ্রথম ফাতিমা (রাঃ)-এর সাথে দেখা করতেন।
(وَقَدْ عَلَّقَتْ مَسْحًا أَوْ سِتْرًا عَلٰى بَابِهَا) অর্থ- একদিন এক যুদ্ধ থেকে এসে পেলেন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পশমের মসৃন মোলায়েম কাপড় বা পর্দা ঝুলিয়েছেন। "مسح" মীম হরফে যের দিয়ে পঠিত। অর্থাৎ পশমী কাপড়। অর্থাৎ সাধারণ পর্দা বা পশমী দামী পর্দা দরজায় ঝুলিয়েছেন। দরজায় পর্দা ঝুলানো কোন অবৈধ বা অপছন্দনীয় জিনিস নয়। বরং পর্দার জন্য তা ঝুলানো প্রশংসনীয় বিষয়। তারপরও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দা দেখে রাগ করে ঘরে না আসার কারণ হলো, সেই পর্দাটি নিশ্চয় কেবল পর্দার জন্য ছিল না। বরং সৌন্দর্য বা কিছুটা জাগতিক চাকচিক্য অবলম্বনের জন্য ছিল। এটি ছিল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাগের একটি কারণ। আরেকটি কারণ যা তারপর উল্লেখ করা হচ্ছে তা হলো, হাসান ও হুসায়ন-কে রূপার চুড়ি পরানো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগের কারণ না বললেও ফাতিমা (রাঃ) তা বুঝে নিলেন। কেননা পিতার মন মেজাজ বা মানসিক অবস্থা নিশ্চয় তার জানা ছিল। প্রতিবারের মতো এবার তার কাছে না আসার কারণ তিনি সহজেই টের পেয়ে গেলেন। টের পেয়েই পর্দা তুলে ফেললেন এবং ছেলেদের হাত থেকে চুড়ি খুলে ফেললেন।
(فَانْطَلَقَا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْكِيَانِ) অর্থ- তারা দু’জন রসূলের কাছে কেঁদে কেঁদে গেল। পছন্দের কোন জিনিস বাচ্চাদের কাছে দিয়ে আবার তা নিয়ে নিলে স্বাভাবিকত বাচ্চাদের এই অবস্থাই হয়। তাই তারা কাঁদছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হাত থেকে তা নিয়ে নিলেন। তা নিয়ে নেয়ার পর আবার তাদের মন ও ফাতিমা (রাঃ) মনোরঞ্জনের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওবানকে নির্দেশ দিলেন-
(يَا ثَوْبَانُ اذْهَبْ بِهٰذَا إِلٰى فُلَانٍ) হে সাওবান! তুমি তাদেরকে অমুকের কাছে নিয়ে যাও। অমুকের কাছে কেন নিয়ে যাবে তা বলার আগেই রসূল তাদের কাছ থেকে এগুলো নিয়ে নেয়া বা পর্দা ঝুলানোর কারণে তা করার কারণটিও বলে দিলেন। রসূলের কথায় ফাতিমা-এর ধারণা একেবারেই সঠিক বলে প্রমাণিত হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (إِنَّ هَؤُلَاءِ أَهْلِي أَكْرَهٗ أَنْ يَأْكُلُوا طَيِّبَاتِهِمْ فِي حَيَاتِهِمُ الدُّنْيَا) অর্থ- এরা আমার পরিবার। তারা দুনিয়ার জীবনে তাদের আরাম ভোগ করে নেয়া আমি অপছন্দ করি। অর্থাৎ দুনিয়ার জীবন ভোগের নয়। আমি তাদের সব ভোগ ও আরাম-আয়েশ আখিরাতের জন্য রেখে দিয়ে দুনিয়ার দারিদ্র্যতার জীবন পছন্দ করি। দুনিয়ার জীবনে কষ্ট করে যেন তারা আখিরাতে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারে। জান্নাতের উচ্চ স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। তারা যেন তাদের সদৃশ্য না হয় যাদের বেলায় আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ
أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِي حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُم
‘‘তোমরা তোমাদের পার্থিব জীবনেই তোমাদের অংশের নি‘আমাতগুলো নিঃশেষ করেছ আর তা ভোগ করেছ।’’ (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০ : ৪৬)
এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (اشْتَرِ لِفَاطِمَةَ قِلَادَةً مِنْ عَصْبٍ وَسُوَارَيْنِ مِنْ عَاجٍ) অর্থ- ফাতিমার জন্য একটি কাপড়ের মালা ও হাতির দাঁতের দুটি চুড়ি কিনে দাও। খত্ত্বাবী বলেনঃ এখানে "عصب" অর্থ ইয়ামেনী চাদর না হয়ে আর কি হতে পারে তা আমার জানা নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
চুড়ি মেয়েদের পরিধেয় বস্তু। ফাতিমা হয়ত ছেলেদের জন্য তা পরিধানে বাধা নেই মনে করে পরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগ করায় তিনি তা কেটে ফেলেছিলেন। পিতার রাগের কারণে এটি করলে মানুষ হিসেবে তার মনে কিছুটা কষ্ট আসতে পারা অসম্ভব নয়। কষ্ট আসুক বা না আসুক তবু এটি একটি কষ্ট পাওয়ার কারণ। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মনোরঞ্জনের জন্য সাথে সাথে একটি মালা ও দুটি চুড়ি কিনে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। তবে এটি ছিল সাধারণ। আগের মতো জাঁকজমক বা দুনিয়া বিলাসীদের মতো নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭২-[৫৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ইসমিদ সুরমা লাগাও। কেননা তা দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে এবং পলকের চুল অধিক জন্মায়। বর্ণনাকারী ইবনু ’আব্বাস(রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি সুরমাদানি ছিল, তিনি প্রত্যেক রাত্রে তা হতে এ চোখে তিনবার, ঐ চোখে তিনবার সুরমার শলাকা লাগাতেন। (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اكْتَحِلُوا بِالْإِثْمِدِ فَإِنَّهُ يَجْلُو الْبَصَرَ وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ» . وَزَعَمَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَتْ لَهُ مُكْحُلَةٌ يَكْتَحِلُ بِهَا كُلَّ لَيْلَةٍ ثَلَاثَةً فِي هَذِهِ وَثَلَاثَةً فِي هَذِه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (اكْتَحِلُوا بِالْإِثْمِدِ) তোমরা ইসমিদের সুরমা লাগাও। "إثمد" শব্দটির ‘হামযা’ ও ‘মীম’ হরফে যের দিয়ে ইসমিদ। আবার ‘মীম’ হরফে পেশ দিয়ে ইসমুদও পড়া যায়। ইসমিদ বা ইসমুদ এক জাতের পাথর যা থেকে সুরমা তৈরি হয়। কেউ কেউ বলেন, সুরমা বলে আমরা যেটাকে জানি সেটাই ইসমুদ। তবে বাহ্যত বুঝা যায়, এটি সুরমার বিশেষ একটি প্রকার। যেমন আবূ দাঊদে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- وَإِنَّ خَيْرَ أَكْحَالِكُمُ الإِثْمِدُ ‘‘আর তোমাদের সুরমাসমূহের মাঝে সর্বধিক উত্তম হলো ইসমিদ।’’
তিরমিযীর বর্ণনার শব্দ- وخير ما اكتحلتم به الإثمد ‘‘আর তোমরা যা দিয়ে সুরমা ব্যবহার করো তন্মধ্যে উত্তম হচ্ছে ইসমিদ।’’ (তিরমিযী হাঃ ২০৪৮)
তিরমিযীর বর্ণনাটি আমরা সামনেই দেখব। এসব বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, ইসমিদ হচ্ছে সুরমার একটি প্রকার এবং তা সবচেয়ে ভালো মানের সুরমা।
(فَإِنَّهٗ يَجْلُو الْبَصَرَ) কেননা তা দৃষ্টি প্রকাশ করে। এটি সুরমা ব্যবহারের একটি উপকার। দৃষ্টি প্রকাশ করে অর্থাৎ দৃষ্টিকে সুন্দর এবং চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং চোখের মধ্যে মাথা থেকে নেমে আসা ময়লা পরিষ্কার করে। এর মাধ্যমে মূলত দৃষ্টিকে স্বচছ রাখে।
(وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ) আর চুল গজায়। এটি সুরমা ব্যবহারের দ্বিতীয় উপকার। এখানে চুল বলতে চোখের চুল তথা চোখের পাপড়ি উদ্দেশ্য।
(وَزَعَمَ) "زعم" এর শাব্দিক অর্থ ধারণা করা। তবে অনেক সময় শব্দটি নিশ্চিত কথার ওপর প্রয়োগ হয়। এখানে এই অর্থই উদ্দেশ্য। এখানে রসূলের সুরমা ব্যবহারের রীতির ধারণাকারী বা কথাটির প্রবক্তা হলেন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)। বিভিন্ন বর্ণনা থেকেও তা প্রমাণিত হয়। তবে কেউ কেউ বলেন, এ কথার প্রবক্তা হলেন হাদীসটির বর্ণনাকারী ইমাম তিরমিযীর শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু হুমায়দ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(ثَلَاثَةً فِي هٰذِه وَثَلَاثَةً فِي هٰذِه) তিনবার এ চোখে তিনবার ওই চোখে। অর্থাৎ ডান চোখে তিনবার এবং বাম চোখে তিনবার। প্রতি রাতে এ চোখে তিনবার আর ও চোখে তিনবারের অর্থ এই নয় যে, রাতে তিন সময়ে সুরমা লাগাতেন। বরং উদ্দেশ্য হলো, সুরমা ব্যবহারের সময় সুরমার ব্যবহারে কাঠি বা শলা তিন বার চোখে লাগাতেন এবং প্রতিবার শলায় সুরমা নিতেন। যেমন কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে- مَنِ اكْتَحَلَ فَلْيُوتِرْ অর্থাৎ যে সুরমা ব্যবহার করবে সে যেন বিজোড় করে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৫৭)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭৩-[৫৫] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে শোয়ার পূর্বে প্রত্যেক চোখে তিন তিন শলাকা ইসমিদ সুরমা লাগাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেনঃ যে সব জিনিস দ্বারা তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম-লাদূদ, সাঊত, শিঙ্গা লাগানো এবং জোলাপ নেয়া। যে সব সুরমা তোমরা ব্যবহার করো তার মধ্যে ইসমিদ সর্বোত্তম। তাতে চোখের দৃষ্টিশক্তি সতেজ হয় এবং চোখের পলকের চুল অধিক জন্মায়। আর শিঙ্গা লাগানোর জন্য উত্তম দিন হলো চাঁদের সতের, ঊনিশ ও একুশ তারিখ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখন মি’রাজ হয়েছিল, তখন তিনি মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) যে দলের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছিলেন যে, আপনি অবশ্যই শিঙ্গা লাগাবেন। (তিরমিযী; এবং তিনি বলেছেনঃ এ হাদীসটি হাসান ও গরীব।)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْتَحِلُ قَبْلَ أَنْ يَنَامَ بِالْإِثْمِدِ ثَلَاثًا فِي كُلِّ عَيْنٍ قَالَ: وَقَالَ: «إِنَّ خَيْرَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ اللَّدُودُ وَالسَّعُوطُ وَالْحِجَامَةُ وَالْمَشِيُّ وَخَيْرَ مَا اكْتَحَلْتُمْ بِهِ الْإِثْمِدُ فَإِنَّهُ يَجْلُو الْبَصَرَ وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ وَإِنَّ خَيْرَ مَا تَحْتَجِمُونَ فِيهِ يَوْمُ سَبْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ تِسْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ» وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيْثُ عُرِجَ بِهِ مَا مَرَّ عَلَى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا: عَلَيْكَ بِالْحِجَامَةِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যাঃ (اللَّدُودُ) মুখের পার্শ্ব দিয়ে যে ঔষধ সেবন করানো হয় তাকে ‘লাদূদ’ বলা হয়। সম্ভবত এটি সে সময়কার বিশেষ এক প্রকার উত্তম ঔষধ, যা ঐভাবে (ফোঁটা ফোঁটা করে মুখের ঔষধ) সেবন করানো হত।
(السَّعُوطُ) ড্রপ দিয়ে (ফোঁটা ফোঁটা করে নাকের ঔষধ) নাকে ব্যবহারের ঔষধ। সে সময়কার উত্তম ঔষধের মাঝে এটিকে গণ্য করা হয়েছে।
(الْحِجَامَةُ) রক্তমোক্ষণ চিকিৎসা। শিঙ্গা ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত রক্ত উঠানোর মাধ্যমে এই চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আধুনিক কালে এর নতুন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।
(الْمَشِيُّ) শব্দটির ‘মীম’ হরফে যবর, ‘শিন’ অক্ষরে যের এবং পরবর্তীতে ‘ইয়া’ তাশদীদযুক্ত। পেট নামানোর কাজে ব্যবহৃত যে কোন ঔষধকেই ‘মাশিয়্যু’ বলা হয়। শব্দটি (الْمَشِيُّ) থেকে উদগত। যার অর্থ চলাফেরা। তুরিবিশতী বলেনঃ পেট নামানোর কাজে ব্যবহৃত ঔষধকে ‘মাশিয়্যু’ বলার কারণ হলো, এই ঔষধ সেবনকারী বাথরুমে যাওয়া আসা বেড়ে যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
এই চারটি চিকিৎসাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা বলে আখ্যায়িত করেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এগুলোই হয়ত সে সময়কার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা ছিল।
(وَإِنَّ خَيْرَ مَا تَحْتَجِمُونَ فِيهِ يَوْمُ سَبْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ تِسْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ إِحْدٰى وَعِشْرِينَ) শিঙ্গা লাগিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন কোন হাদীসে কিছু তারিখকে উত্তম বলা হয়েছে। যেমন বর্ণিত হাদীসে চান্দ্র মাসের ১৭, ১৯, ২১ তারিখে হিজামাহ্ উত্তম বলা হয়েছে। কোন হাদীসে সপ্তাহের কিছু দিনে শিঙ্গা লাগাতে উৎসাহিত করা হয়েছে আবার কিছু দিনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন সোমবার ও মঙ্গলবারে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং অন্যদিন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তবে নির্ধারিত তারিখ বা নির্ধারিত দিনে হিজামাহ্ সম্পর্কে যত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তার সবই দুর্বল বলে মত দিয়েছেন মুহাদ্দিসীনে কিরাম। মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেনঃ নির্ধারিত দিনে হিজামার প্রতি উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিতের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কিছু নেই।
(حَيْثُ عُرِجَ بِه) অর্থাৎ মি‘রাজ রজনীতে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আকাশে চড়ানো হচ্ছিল, তখন যখনই তিনি মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) দল অতিক্রম করেছেন, মালায়িকাহ্ তাকে বলেছে- (عَلَيْكَ بِالْحِجَامَةِ) তোমার জন্য হিজামা জরুরী বা তুমি হিজামাকে আঁকড়ে ধরো। হাদীসটি সহীহ হলে হিজামার গুরুত্ব আরো অনেক বেশি বেড়ে যেত। তবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজামাহ্ দ্বারা চিকিৎসা করেছেন তা বিভিন্ন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত এবং উপকার ও গুরুত্বও প্রমাণিত।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭৪-[৫৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের এবং মহিলাদেরকে গোসলের জন্য হাম্মামে (গোসলখানায়) প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। অবশ্য পরে কেবলমাত্র পুরুষদেরকে ইযারসহ প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছেন। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘আবূ ‘উযরাহ্’’ নামক একজন রাবী, যিনি অপরিচিত। দেখুন- তাহক্বীকে মুসনাদে আহমাদ- শু‘আয়ব আরনাউত্বব : ২৫০৫০।
وَعَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى الرِّجَالَ وَالنِّسَاءَ عَنْ دُخُولِ الْحَمَّامَاتِ ثُمَّ رَخَّصَ لِلرِّجَالِ أَنْ يَدْخُلُوا بِالْمَيَازِرِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (نَهٰى الرِّجَالَ وَالنِّسَاءَ عَنْ دُخُولِ الْحَمَّامَاتِ) অর্থাৎ পুরুষ ও মহিলাকে হাম্মামসমূহে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন।
হাম্মাম অর্থ গোসলখানা। মূলত গরম পানি দিয়ে গোসলের ব্যবস্থা করে রাখার স্থানকে হাম্মাম বলা হয়। বহুবচন হাম্মামাত। যে হাম্মামে গোসল করতে পুরুষ ও মহিলাকে সাধারণভাবে নিষেধ করা হয়েছিল তা মূলত ঐসব গোসলখানা, যেখানে সম্মিলিতভাবে সবাই মিলে গোসলের ব্যবস্থা করা হয়।
সতর বা শরীরের যে অংশ ঢাকা জরুরী তা ঢেকে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয। সতরের বিষয়টির দিকটিকেই লক্ষ্য করে গোসলের জন্য হাম্মাম তথা সমবেত গোসলস্থলে প্রবেশ করতে বারণ করেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
(ثُمَّ رَخَّصَ لِلرِّجَالِ أَنْ يَدْخُلُوا بِالْمَيَازِرِ) অর্থ- পরবর্তীতে পুরুষের জন্য লুঙ্গি নিয়ে প্রবেশের অনুমোদন দেন।
মেয়েদের তুলনায় পুরুষের সতরের অংশ কম। লুঙ্গি পরে সতরের বিধান রক্ষা করে পুরুষের জন্য সমবেত গোসলখানায় গোসল করা সম্ভব। কিন্তু মেয়েদের জন্য তা সম্ভব নয়; তাই মেয়েদের ক্ষেত্রে সম্মিলিত গোসলের স্থানে প্রবেশ করার নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মেয়েদেরকে হাম্মামে প্রবেশ করে গোসলের অনুমোদন দেয়া হয়নি; কেননা তাদের সমস্ত শরীর সতর এবং বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তা বের করা জায়িয নয়। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮০২; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭৫-[৫৭] আবুল মালীহ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার হিমস্ অধিবাসিনীর কয়েকজন মহিলা ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর খিদমাতে উপস্থিত হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোথা হতে এসেছ? তারা বলল, সিরিয়া হতে। তখন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেনঃ সম্ভবত তোমরা ঐ এলাকার অধিবাসিনী, যেখানকার মহিলারা গোসলখানায় প্রবেশ করে? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে নারী তার স্বামীর ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও তার স্বীয় কাপড় খোলে, সে যেন তার ও তার প্রভুর মধ্যে পর্দা ছিঁড়ে ফেলে। অপর এক বর্ণনায় আছে, নিজ ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও কাপড় খুললে সে যেন তার ও মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর মধ্যকার পর্দা নষ্ট করে দিলো। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي الْمَلِيحِ قَالَ: قَدِمَ عَلَى عَائِشَةَ نِسْوَةٌ مِنْ أَهْلِ حِمْصٍ فَقَالَتْ: مَنْ أَيْنَ أنتنَّ؟ قلنَ: من الشَّامِ فَلَعَلَّكُنَّ مِنَ الْكُورَةِ الَّتِي تَدْخُلُ نِسَاؤُهَا الْحَمَّامَاتِ؟ قُلْنَ: بَلَى قَالَتْ: فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تَخْلَعُ امْرَأَةٌ ثِيَابَهَا فِي غَيْرِ بَيْتِ زَوْجِهَا إِلَّا هَتَكَتِ السِّتْرَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ رَبِّهَا» . وَفِي رِوَايَةٍ: «فِي غيرِ بيتِها إِلا هتكت سترهَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (حِمْصٍ) শব্দটির ‘হা’ হরফে যের এবং ‘মীম’ হরফে সাকিন দিয়ে উচ্চারিত। শাম তথা সিরিয়ার একটি শহরের নাম।
(الْكُورَةِ) ‘কাফ’ হরফে পেশ দিয়ে উচ্চারণ অর্থাৎ কূরা। কূরা সেখানকার একটি অঞ্চল বা এক প্রান্তের নাম, যে অঞ্চল বা প্রান্তের মেয়েরা পুরুষ মহিলা সম্মিলিত গোসলখানায় প্রবেশ করত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০০৫)
(إِلَّا هَتَكَتِ السِّتْرَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ رَبِّهَا) তবে সে তার ও তার রবের মধ্যকার পর্দা ছিঁড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ যে মহিলা স্বামী ছাড়া অন্যের কাছে নিজের সতর খুলল সে লজ্জা ও শিষ্টাচারের পর্দাকে ভূলুন্ঠিত করেছে, যার রক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাকে তার রব্।
(بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللهِ) তার ও আল্লাহর মধ্যকার পর্দা। আল্লাহ ও তার মধ্যকার পর্দা ভূলুন্ঠিত হওয়ার কারণ হলো সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পর্দা রক্ষা করতে নির্দেশিত। তার সতরকে স্বামী ছাড়া সকলের দৃষ্টি থেকে হিফাযাত করতে নির্দেশিত। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর কারণ হলো, আল্লাহ তা‘আলা পোশাক অবতীর্ণ করেছেন, যা দিয়ে তারা তাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে। এটা হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতির পোশাক। অতএব যখন তারা আল্লাহকে ভয় করলো না এবং তাদের লজ্জাস্থান খুলে দিল, তখন তারা আল্লাহ ও তাদের মধ্যকার পর্দাকেই ভূলুন্ঠিত করলো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০০৫)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭৬-[৫৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শীঘ্রই অনারব দেশ তোমাদের দখলে আসবে এবং সেখানে তোমরা এমন কিছু ঘর পাবে যাকে হাম্মাম বলা হয়। সে সমস্ত হাম্মামে তোমাদের পুরুষেরা যেন লুঙ্গি পরিহিত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ না করে, আর মহিলাদের যেন তা হতে বিরত রাখে। তবে রুগ্ন এবং হায়য-নিফাস হতে পবিত্রতা অর্জনকারী মহিলাদের বাধা দেবে না। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘আবদুর রাহমান ইবনু যিয়াদ ইবনু আন্‘উম আল ইফরিক্বী’’, যিনি একজন য‘ঈফ রাবী। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১৪/৭২৮ পৃঃ, হাঃ ৬৮১৯।
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: سَتُفْتَحُ لَكُمْ أَرْضُ الْعَجَمِ وَسَتَجِدُونَ فِيهَا بُيُوتًا يُقَالُ لَهَا: الْحَمَّامَاتُ فَلَا يَدْخُلَنَّهَا الرِّجَالُ إِلَّا بِالْأُزُرِ وَامْنَعُوهَا النِّسَاءَ إِلَّا مَرِيضَةً أَوْ نُفَسَاءَ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ পূর্বেই বলা হয়েছে যে, হাদীসে নিষিদ্ধ হাম্মাম তথা গোসলখানা বলতে সবাই মিলে একত্রে গোসলের সমবেশস্থলকে বুঝানো হয়েছে। যেমন বর্তমানকালে বিভিন্ন সুইমিংপুল ইত্যাদিতে পুরুষ মহিলা সমবেত হয়ে আড্ডা দিয়ে গোসল দেয়, সাঁতার কাটে। এসব গোসলখানা বা সুইমিংপুলে পুরুষদের জন্য লুঙ্গি বা এমন কাপড় দ্বারা শরীর আবৃত করে গোসলে প্রবেশ জায়িয হবে যার মাধ্যমে শরীরের সতরের অংশ কাপড় ভিজলেও প্রকাশ পায় না। কিন্তু মহিলাদের এসব গোসলখানায় প্রবেশ জায়িয নেই। মহিলাদের এসব গোসলখানায় প্রবেশ থেকে বারণ করতে পুরুষদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়েদের দু’টি বিশেষ অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন, যে অবস্থায় তারা এসব হাম্মামে প্রবেশ করতে পারে। অর্থাৎ যখন তার জন্য গোসল জরুরী হয়ে পড়বে এবং এখানে প্রবেশ ছাড়া কোন উপায় নেই, সেই অপারগ অবস্থায় মহিলা এসব গোসলখানায় প্রবেশ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও সে একাকি প্রবেশ করবে অথবা সতর ঢাকা অবস্থায় প্রবেশ করবে। কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসে প্রমাণ হলো, মেয়েদের জন্য প্রয়োজন ছাড়া এসব গোসলখানায় প্রবেশ জায়িয নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭৭-[৫৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ইযার (লুঙ্গি) ব্যতীত গোসলখানায় প্রবেশ না করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার সহধর্মিণীকে গোসলখানায় প্রবেশ না করায় এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন এমন খাবার মাজলিসে না বসে, যেখানে মদ পরিবেশন করা হয়। (তিরমিযী ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَدخلِ الحمّامَ بِغَيْر إِزارٍ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يدْخل حَلِيلَتَهُ الْحَمَّامَ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَجْلِسُ عَلَى مَائِدَةٍ تُدَارُ عَلَيْهَا الْخمر» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ হাদীসে ঈমানদার ব্যক্তির তিনটি গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। এই তিনটি গুণাবলী উল্লেখের মাধ্যমে মূলত ঈমানদার ব্যক্তিকে তিনটি জিনিস পরিহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং আখিরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে এই তিন কাজ করবে না।
প্রথম : সে লুঙ্গি অর্থাৎ সতর ঢাকার আবরণ ছাড়া গোসলখানায় প্রবেশ করবে না। এ সংক্রান্ত আরো বিবরণ আমরা উপরে দেখে এসেছি।
দ্বিতীয় : সে তার হালীলাহ্ তথা তার স্ত্রীকে এসব গোসলখানায় প্রবেশ করতে দিবে না। মেয়েদের এসব গোসলখানায় প্রবেশ যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি তার স্বামীর দায়িত্ব হলো তার স্ত্রীকে এমন জায়গায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়া। স্বামী তার স্ত্রীকে বারণ না করলে স্বামীও গোনাহগার হবে।
তৃতীয় : যে কর্মটি হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে তা হলো, এমন খাবারের টেবিলে খেতে না বসা যেখানে মদ পরিবেশন করা হয়। মদপানকে কুরআন ও হাদীসে কঠিনভাবে হারাম করা হয়েছে। হারাম বা গোনাহের কাজে জড়িত হওয়া যেমন অপরাধ, তেমনি তার প্রতি সমর্থন বা তা ঘৃণা না করাও একটি অপরাধ।
অতএব যে টেবিলে মদ পরিবেশন হয় সেই টেবিলে বসে খাওয়া ঈমানদার ব্যক্তির আত্মমর্যাদার বিপরীত। সে হয়ত মদ পানে বাধা দিবে নতুবা এখান থেকে উঠে চলে যাবে। কোনটিই না করলে মদপানে তার সমর্থন বা অন্তত ঘৃণা নেই তা প্রমাণিত হয়। তাই হাদীসে তা নিষেধ করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭৮-[৬০] সাবিত (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিযাব লাগানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বললেনঃ যদি আমি তাঁর মাথার সাদা চুলগুলো গুণে দেখতে চাইতাম, তবে অনায়াসে গুণতে পারতাম (অর্থাৎ- এমন অধিক পরিমাণে সাদা হয়নি)। তিনি বললেনঃ অতএব তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খিযাব লাগাননি। অপর এক বর্ণনায় এ কথাটি বর্ধিত আছে যে, আবূ বকর(রাঃ) মেহেদী ও কাতাম ঘাস মিশ্রিত খিযাব লাগিয়েছেন। আর ’উমার(রাঃ) নিরেট মেহেদীর খিযাব লাগিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
عَن ثابتٍ قَالَ: سُئِلَ أَنَسٌ عَنْ خِضَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: لَوْ شِئْتَ أَنْ أَعُدَّ شَمَطَاتٍ كُنَّ فِي رَأْسِهِ فَعَلْتُ قَالَ: وَلَمْ يَخْتَضِبْ زَادَ فِي رِوَايَةٍ: وَقَدِ اخْتَضَبَ أَبُو بَكْرٍ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ وَاخْتَضَبَ عُمَرُ بِالْحِنَّاءِ بحتا
ব্যাখ্যাঃ (سُئِلَ أَنَسٌ عَنْ خِضَابِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিযাব সম্পর্কে তথা তিনি করতেন, কি করতেন না, সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ
(لَوْ شِئْتَ أَنْ أَعُدَّ شَمَطَاتٍ كُنَّ فِي رَأْسِهِ فَعَلْتُ) যদি আমি তাঁর মাথায় কালো চুলের সাথে মিশে থাকা পাকা চুল গণনা করতে চাইতাম তাহলে গণনা করতে পারতাম। তিনি এর দ্বারা সংখ্যায় খুব কম তা বুঝাতে চেয়েছেন।
(قَالَ: وَلَمْ يَخْتَضِبْ) তিনি স্পষ্ট উত্তর দেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনই মাথায় খিযাব লাগান নেই। [আনাস (রাঃ)] অপর এক বর্ণনায় বলেনঃ আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) মেহেদী এবং কাতাম দিয়ে খিযাব লাগাতেন- (বুখারী ও মুসলিম)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ : কিতাবুল লিবাস)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭৯-[৬১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নিজের দাড়িতে হলুদ রং দ্বারা হলদে করতেন, এমনকি তাতে তাঁর কাপড় হলদে হয়ে যেত। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি হলুদ রং ব্যবহার করেন কেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এটা ব্যবহার করতে দেখেছি। বস্তুতঃ তাঁর কাছে এ রঙের চেয়ে অন্য কোন রং অধিক প্রিয় ছিল না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সমস্ত কাপড় এমনকি পাগড়ীও এ রঙে রঞ্জিত করতেন। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يَصْفِّرُ لِحْيَتَهُ بِالصُّفْرَةِ حَتَّى تَمْتَلِئَ ثِيَابُهُ مِنَ الصُّفْرَةِ فَقِيلَ لَهُ: لِمَ تُصْبِغُ بِالصُّفْرَةِ؟ قَالَ: أَنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْبُغُ بِهَا وَلَمْ يَكُنْ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْهَا وَقد كَانَ يصْبغ ثِيَابَهُ كُلَّهَا حَتَّى عِمَامَتَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) صُفْرَةٌ ‘সুফরাহ্’ (তথা ‘আরশ এক ধরনের লতা জাতীয় গাছ যার রং যা‘ফরানের মতো) দ্বারা তার দাড়িকে রং করতেন ফলে তার কাপড় সুফরার রঙে ভরে যেত। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো : আপনি কেন সুফরাহ্ দিয়ে দাড়ি রং করেন? তিনি উত্তর দিলেন : আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এটা দ্বারা দাড়ি রং করতে দেখেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দাড়ি রং করার জন্য তা (সুফরাহ্) ছিল খুবই প্রিয়।
(وَقد كَانَ يصْبغ ثِيَابَهُ كُلَّهَا) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সুফরাহ্ ব্যবহারের ফলে কাপড় রং পাগড়ী রঙিন হয়ে যেত। তিনি সুফরাহ্ দিয়ে কাপড় রং পাগড়ী রঙিয়ে তা পরিধান করতেন তা উদ্দেশ্য নয়। কেননা অপর হাদীসে সুফরাহ্ বা যা‘ফরান দিয়ে রং করে কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৮০-[৬২] ’উসমান ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু মাওহাব (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (একবার) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি আমাদের সম্মুখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েক গাছি চুল বের করে আনলেন যা (মেহেদী দ্বারা) খিযাব করা ছিল। (বুখারী)[1]
وَعَن عُثْمَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَوْهَبٍ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ فَأَخْرَجَتْ إِلَيْنَا شَعْرًا مِنْ شَعْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مخضوبا. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ ‘উসমান ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর গৃহে প্রবশে করি, অতঃপর তিনি আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিযাব করা একটি চুল বের করে দেখান। ইবনু মাজাহ ও আহমাদ উক্ত হাদীসে বৃদ্ধি করে বলেন, মেহেদী এবং কাতাম দ্বারা চুলটি খিযাব করা ছিল। কিন্তু পূর্বে উল্লেখিত আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো খিযাব করতেন না। অতএব উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা যায় এভাবে :
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকাংশ অবস্থার দিকে বিবেচনা করে বলেছেন, তিনি খিযাব করতেন না। আর যে হাদীসে খিযাবের কথা বলেছেন যেটা স্বল্পতার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা এবং এটাও হতে পারে যে, একটি বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে আর অন্যটি রূপক অর্থে বলা হয়েছে।
বাস্তবতা হলো : মাথার চুলের রং পরিবর্তনের কারণ হলো মাথা ব্যথার কারণে মেহেদী ব্যবহার করা অথবা অতিরিক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করা। যার ফলে খিযাব মনে হতো। আর রূপক অর্থে বার্ধক্যের শুরুতে চুল লালচে হয়ে যায় যা খিযাবের মতো দেখায়। আমার নিকট গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে খিযাব না করাটা বার্ধক্যের কারণে মাথায় খিযাব লাগানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর করাটা দাড়িতে কোন কোন চুল পেকে গেলে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আল্লাহই এ ব্যাপারে ভালো জানেন।
এই মর্মে ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) ইসমা‘ঈলীর সুত্রে বর্ণনা করেন : উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাড়ির একটি চুল ছিল, যাতে মেহেদী এবং কাতামের চিহ্ন ছিল। অতএব এ হাদীসটি উপরোক্ত সম্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। যেমনটি শামায়িল অধ্যায়ে আবূ হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি খিযাব করতেন? তিনি উত্তর দেন, হ্যাঁ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)