পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১২৩-[৪৫] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসেছিলাম এবং দুনিয়াতে যা কিছু সংঘটিত হচ্ছে- এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যখন শুনবে যে, কোন পাহাড় তার নিজের জায়গা থেকে সরে গেছে তাতে তোমরা বিশ্বাস করতে পারো। কিন্তু যখন শুনবে যে, কোন মানুষের (সৃষ্টিগত) স্বভাব-চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না। কেননা মানুষ সেদিকেই প্রত্যাবর্তন করবে যার উপর তার সৃষ্টি হয়েছে।[1] (আহমাদ)
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثالث
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَتَذَاكَرُ مَا يَكُونُ إِذْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
إِذَا سَمِعْتُمْ بِجَبَلٍ زَالَ عَن مَكَانَهُ فصدقوا وَإِذَا سَمِعْتُمْ بِرَجُلٍ تَغَيَّرَ عَنْ خُلُقِهِ فَلَا تصدقوا بِهِ وَإنَّهُ يَصِيرُ إِلَى مَا جُبِلَ عَلَيْهِ . رَوَاهُ أَحْمَدُ
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 3
Abud Darda’ said:
While we were with God’s messenger discussing what would come to pass God’s messenger said, “When you hear that a mountain has moved from its place believe it; but when you hear that a man's nature has changed do not believe it, for he will remain true to his inborn disposition.”
Ahmad transmitted it.
ব্যাখ্যা: হাদীসের মর্মার্থ হলো কাজগুলো তার ভাগ্যে যা লিখা আছে তাই হবে। বুদ্ধিমত্তা হতে পারে, অপারগতা হতে পারে। অতএব তোমরা যখন শুনতে পাবে যে, কোন বুদ্ধিমান বোকা অথবা কোন বোকা বুদ্ধিমান হয়েছে তা সত্যায়ন করবে না। পাহাড় একস্থান থেকে অপরস্থানে সরে যাওয়া সম্ভব, তবে মানুষের চরিত্র যেটা তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ তা পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়।
‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, হাদীস মতে প্রকৃত চরিত্র পরিবর্তন হওয়া অসম্ভব। তবে গুণগতভাবে পরিবর্তন আসা সম্ভব বরং এটা করতে বান্দা আদিষ্ট, এটাকে আত্মসংশোধনী বা পরিমার্জন বলা হয়। এমনটাই আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,
قَدْ اَفْلَحَ مَنْ تَزَكّى
‘‘যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করলো সে সফল হলো।’’ (সূরাহ্ আল আ‘লা- ৮৭ঃ ১৪)
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় ‘অনুচ্ছেদ - তাকদীরের প্রতি ঈমান
১২৪-[৪৬] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি যে বিষ মিশানো ছাগলের মাংস (গোসত/গোস্ত) খেয়েছিলেন, তার বিষক্রিয়ার কারণে প্রতি বছরই আপনি এত কষ্ট অনুভব করছেন। তিনি বললেন, প্রতি বছরই আমার যে যন্ত্রণা বা অসুখ হয়, এটা আমার (নির্ধারিত) তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ হয়েছিল, অথচ তখন আদম (আঃ) ভূগর্ভেই ছিলেন।[1] (ইবনু মাজাহ্)
باب الإيمان بالقدر - الفصل الثالث
وَعَن أم سَلمَة يَا رَسُول الله لَا يزَال يصيبك كُلِّ عَامٍ وَجَعٌ مِنَ الشَّاةِ الْمَسْمُومَةِ الَّتِي أَكَلْتَ قَالَ: «مَا أَصَابَنِي شَيْءٌ مِنْهَا إِلَّا وَهُوَ مَكْتُوبٌ عَلَيَّ وَآدَمُ فِي طِينَتِهِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
Chapter: Belief in the Divine Decree - Section 3
Umm Salama said, “Messenger of God, you continue to be afflicted annually with pain from the poisoned sheep you ate.” He replied, “I am afflicted by nothing due to it which was not decreed for me while Adam was still a lump of clay.”
Ibn Majah transmitted it.
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩৪-[১০] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কাফিরদের জন্য তাদের কবরে নিরানব্বইটি সাপ নির্ধারণ করা হয়। এ সাপগুলো তাকে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত কামড়াতে ও দংশন করতে থাকবে। যদি তার কোন একটি সাপ জমিনে নিঃশ্বাস ফেলে, তবে এ জমিনে আর কোন ঘাস-তৃণলতা জন্মাবে না। (দারিমী) তিরমিযীও এ ধরনের হাদীস বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তিনি নিরানব্বইটির স্থানে সত্তরের উল্লেখ করেছেন।[1]
تِنِّيْنٌ (তিন্নীন) অত্যধিক বিষধর বড় সাঁপ। ইমাম দারিমী হাদীসটি কিতাবুর রিক্বাকে বর্ণনা করেছেন। আর তার সানাদটি দুর্বল। কারণ তাতে দাররাজ আবুস্ সাম্হ নামক একজন মুনকার রাবী রয়েছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) দারিমী-এর সাথেই মুসনাদে আহমাদের ৩/৩৮ নং এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী (রহঃ) আবূ যায়দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত অন্য সূত্রে হাদীসটি আত্ তিরমিযীর ২/৭৫ নং এ বর্ণনা করেছেন। তবে সে সানাদেও দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে।
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثاني
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «يُسَلط عَلَى الْكَافِرِ فِي قَبْرِهِ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ تِنِّينًا تنهشه وتلدغه حَتَّى تقوم السَّاعَة وَلَو أَنَّ تِنِّينًا مِنْهَا نَفَخَ فِي الْأَرْضِ مَا أَنْبَتَتْ خَضِرًا» . رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ وَرَوَى التِّرْمِذِيُّ نَحْوَهُ وَقَالَ: «سَبْعُونَ بدل تِسْعَة وَتسْعُونَ»
Chapter: Confirmation of the Punishment in the Grave - Section 2
Abu Sa'id reported God’s messenger as saying, “Ninety-nine dragons will be given power over an infidel in his grave, and will bite and sting him till the last hour comes. If one of those dragons were to breathe over the earth, it would bring forth no green thing."
Darimi transmitted it, and Tirmidhi transmitted something similar, but he said seventy instead of ninety-nine.
ব্যাখ্যা: এখানে সংখ্যাটি নির্দিষ্ট আর তা হলো ৯৯। যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ওয়াহীর মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
تِنِّيْنًا অত্যধিক বিষধর সাপ। এদের বিষের তীব্রতা এত অধিক যে, যদি এগুলোর থেকে কোন একটি সাপের শ্বাস-প্রশ্বাস জমিনে পৌঁছে তাহলে জমিন তার উর্বরতা হারিয়ে ফেলবে। তাতে কোন সবুজ ফসলাদি ফলাবে না।
কোন বর্ণনায় ৯৯ আর কোন বর্ণনায় ৭০। এ দুই বর্ণনার সামাধান এভাবে দেয়া হয়েছে যে, ৯৯ হলো অনুসৃত কাফির আর ৭০ হলো অনুসরণকারী কাফিরগণের জন্য প্রযোজ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কবরের ‘আযাব
১৩৫-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) যখন ইন্তিকাল করেন, তখন আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর জানাযায় হাযির হলাম। জানাযার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে তাকে যখন কবরে রাখা হলো ও মাটি সমান করে দেয়া হলো, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে (দীর্ঘক্ষণ) আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করলেন। আমরাও তাঁর সাথে অনেক সময় তাসবীহ পড়লাম। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বললেন। আমরাও (তাঁর সাথে) তাকবীর বললাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কেন এভাবে তাসবীহ পড়লেন ও তাকবীর বললেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বললেন, এ নেক ব্যক্তির কবর খুব সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল (তাই আমি তাসবীহ ও তাকবীর পড়লাম)। এতে আল্লাহ তা’আলা তার কবরকে প্রশস্ত করে দিলেন। (আহমাদ)[1]
باب إثبات عذاب القبر - الفصل الثالث
عَن جَابر بن عبد الله قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ حِينَ توفّي قَالَ فَلَمَّا صَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَوُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَسُوِّيَ عَلَيْهِ سَبَّحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَبَّحْنَا طَوِيلًا ثُمَّ كَبَّرَ فَكَبَّرْنَا فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ سَبَّحَتْ ثُمَّ كَبَّرْتَ قَالَ: «لقد تضايق على هَذَا العَبْد الصَّالح قَبره حَتَّى فرجه الله عز وَجل عَنهُ» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: (إِلى سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ) তার জানাযার দিকে, তিনি হচ্ছেন সা‘দ বিন মু‘আয বিন নুমান আল্ আনসারী আল্ আশহালী, আবূ ‘আমর আওস গোত্রের নেতা মদীনায় ইসলাম গ্রহণ করেন। দুই আক্বাবার মধ্যবর্তী সময়ে। তার ইসলামের কারণে বানু ‘আবদ আশহাল-এর সকলেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সাইয়্যিদুল আনসার’ উপাধি দিয়েছেন। তিনি বাদ্র (বদর) এবং উহুদ যুদ্ধে অংশ নেন। খন্দাকের যুদ্ধে তীরবিদ্ধ হয়ে রক্ত ঝরতে ঝরতে এক মাসের মাথায় হিজরী ৫ সনে যিলক্বদ মাসে শাহাদাত বরণ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর, বাক্বী গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সহীহুল বুখারীতে তার বর্ণিত দু’টি হাদীস রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬১-[২২] রবী’আহ্ আল জুরাশী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্বপ্নে কতক মালাক দেখানো হলো এবং মালাক তাঁকে বললেন, আপনার চোখ ঘুমিয়ে থাকুক, কান শুনতে থাকুক এবং অন্তর বুঝতে থাকুক। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার চোখ দু’টি ঘুমালো, আমার কান দু’টি শুনলো এবং আমার অন্তর বুঝলো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তখন আমাকে (অর্থাৎ- দৃষ্টান্ত স্বরূপ) বলা হলো, যেন একজন মহৎ ব্যক্তি একটি ঘর তৈরি করলেন এবং এতে দা’ওয়াতের ব্যবস্থা করলেন। অতঃপর (লোকেদের আহবানের জন্য) একজন আহবানকারীকে পাঠালেন। অতঃপর যে ব্যক্তি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিল, সে ঘরে প্রবেশ করতে পারলো এবং খেতেও পারলো। আর গৃহস্বামীও তার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। অপরদিকে যে ব্যক্তি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিলো না, সে ঘরেও ঢুকলো না, খেতেও পারলো না এবং গৃহস্বামীও তার ওপর অসন্তুষ্ট হলেন। অতঃপর মালায়িকাহ্ (এর ব্যাখ্যারূপে) বললেন, এ দৃষ্টান্তের গৃহস্বামী হলেন আল্লাহ, আহবানকারী হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ঘর হলো ইসলাম এবং খাবারের স্থান হলো জান্নাত। (দারিমী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
عَن ربيعَة الجرشِي يَقُول أُتِي النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقِيلَ لَهُ لِتَنَمْ عَيْنُكَ وَلِتَسْمَعْ أُذُنُكَ وَلِيَعْقِلْ قَلْبُكَ قَالَ فَنَامَتْ عَيْنَايَ وَسَمِعَتْ أُذُنَايَ وَعَقَلَ قَلْبِي قَالَ فَقِيلَ لِي سيد بنى دَارا فَصنعَ مَأْدُبَةً وَأَرْسَلَ دَاعِيًا فَمَنْ أَجَابَ الدَّاعِيَ دَخَلَ الدَّارَ وَأَكَلَ مِنَ الْمَأْدُبَةِ وَرَضِيَ عَنْهُ السَّيِّدُ وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّاعِيَ لَمْ يَدْخُلِ الدَّارَ وَلم يطعم مِنَ الْمَأْدُبَةِ وَسَخِطَ عَلَيْهِ السَّيِّدُ قَالَ فَاللَّهُ السَّيِّدُ وَمُحَمَّدٌ الدَّاعِي وَالدَّارُ الْإِسْلَامُ وَالْمَأْدُبَةُ الْجَنَّةُ. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ইসলামকে ঘরের সঙ্গে তুলনা করা এবং জান্নাতকে যিয়াফত হিসেবে আখ্যা দেয়ার কারণ এই যে, জান্নাতে যাওয়ার উপকরণ হলো ইসলাম এবং জান্নাতের দিকে আহবান করা ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ হয় না যতক্ষণ না ইসলামের দিকে আহবান করা হয়। আর জান্নাতের নি‘আমাতরাজি যখন উদ্দেশ্য, তাই জান্নাতকে সরাসরি যিয়াফত বা খাদ্য বলা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৪-[২৫] ’ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ্ (খুতবা) দিতে উঠে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি নিজের গদিতে ঠেস দিয়ে বসে এ কথা মনে করে যে, আল্লাহ তা’আলা যা কিছু এ কুরআনে হারাম করেছেন তা ব্যতীত তিনি আর কিছুই হারাম করেননি? জেনে রেখ, আল্লাহর কসম! নিঃসন্দেহে আমি নির্দেশ করেছি, আমি উপদেশ দিয়েছি এবং অনেক বিষয় নিষেধও করেছি, আর এর পরিমাণ কুরআনের হুকুমের সমান, বরং এর চেয়ে অধিক হবে। তোমরা মনে রাখবে যে, অনুমতি ব্যতীত আহলি কিতাব যিম্মীদের বাসগৃহে প্রবেশ করা, তাদের নারীদের প্রহার করা এবং তাদের ফসল বা শস্য খাওয়াকেও আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য হালাল করেননি, যদি তারা তাদের ওপর ধার্যকৃত কর আদায় করে দেয় (এসব বিষয় কুরআনে নেই, আমার দ্বারাই আল্লাহ এসব হারাম করেছেন)। (আবূ দাঊদ; কিন্তু তার হাদীসের সানাদে একজন রাবী আশ্’আস্ ইবনু শু’বাহ্ আল মিস্সীসী রয়েছেন, যার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ সমালোচনা করেছেন)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَن الْعِرْبَاض بن سَارِيَة قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أيحسب أحدكُم متكأ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَظُنُّ أَنَّ اللَّهَ لَمْ يُحَرِّمْ شَيْئًا إِلَّا مَا فِي هَذَا الْقُرْآنِ أَلَا وَإِنِّي وَاللَّهِ قَدْ أَمَرْتُ وَوَعَظْتُ وَنَهَيْتُ عَنَ أَشْيَاءَ إِنَّهَا لَمِثْلُ الْقُرْآنِ أَوْ أَكْثَرُ وَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يُحِلَّ لَكُمْ أَنْ تَدْخُلُوا بُيُوتَ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا بِإِذْنٍ وَلَا ضَرْبَ نِسَائِهِمْ وَلَا أَكْلَ ثِمَارِهِمْ إِذَا أَعْطَوْكُمُ الَّذِي عَلَيْهِمْ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَفِي إِسْنَادِهِ: أَشْعَثُ بْنُ شُعْبَة المصِّيصِي قد تكلم فِيهِ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের সার কথা এই যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী আল্লাহ তা‘আলা সকল হারাম বস্তুকে কুরআনের ভিতর সীমাবদ্ধ করে দেননি। বরং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক কিছু হারাম করেছেন। তবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হারাম করার বিষয়টি কুরআন থেকেই সংগৃহীত। তাই ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে সকল ফায়সালা বরং তা কুরআন থেকে সংগৃহীত।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৭-[২৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ তার মনের প্রবৃত্তি আমার আনীত দীন ও শারী’আতের অধীন না হবে- (শারহুস্ সুন্নাহ্)। ইমাম নাবাবী তার ’’আরবা’ঈন’’ গ্রন্থে বলেছেন, এটা একটা সহীহ হাদীস। আমরা কিতাবুল হুজ্জাত-এ হাদীসটি সহীহ সানাদসহ বর্ণনা করেছি।[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ» رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةَ وَقَالَ النَّوَوِيُّ فِي أَرْبَعِينِهِ: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ رَوَيْنَاهُ فِي كتاب الْحجَّة بِإِسْنَاد صَحِيح
ব্যাখ্যা: হাদীসটির ব্যাখ্যা এরূপ হতে পারে যে, একজন ব্যক্তি আমার নিয়ে আসা দীন ও শারী‘আতের পূর্ণ অনুসারী যতক্ষণ না হবে ততক্ষণ সে ঈমানদার হতে পারবে না। অর্থাৎ- মুনাফিক্বদের মতো বাধ্য হয়ে বা তলোয়ারের ভয়ে ঈমান আনলে হবে না। অথবা কোন ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ মু‘মিন হবে না যতক্ষণ না আমার নিয়ে আসা বিষয়াদির অনুসারী হবে। অর্থাৎ- শারী‘আতের বিষয়কে প্রবৃত্তির উপর প্রাধান্য দিতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৮-[২৯] বিলাল ইবনু হারিস আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার কোন একটি সুন্নাতকে যিন্দা করেছে, যে সুন্নাত আমার পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল, তার এত সাওয়াব হবে যত সাওয়াব এ সুন্নাত ’আমলকারীদের হবে, কিন্তু সুন্নাতের উপর ’আমলকারীদের সাওয়াবে কোন অংশ হ্রাস করা হবে না। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর নতুন (বিদ্’আত) পথ সৃষ্টি করবে, যাতে আল্লাহ ও তাঁর রসূল রাযী-খুশী নন, তার জন্য সে সকল লোকের গুনাহ চাপিয়ে দেয়া হবে, যারা তার সাথে ’আমল করবে, অথচ তাদের গুনাহের কোন অংশ হ্রাস করবে না। (তিরমিযী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ بِلَالِ بْنِ الْحَارِثِ الْمُزَنِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من أَحْيَا سُنَّةً مِنْ سُنَّتِي قَدْ أُمِيتَتْ بَعْدِي فَإِنَّ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلَ أُجُورِ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنِ ابْتَدَعَ بِدْعَةً ضَلَالَةً لَا يَرْضَاهَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ عَمِلَ بِهَا لَا يَنْقُصُ من أوزارهم شَيْئا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে সুন্নাহ্ বলা হয়েছে ঐ সকল দীনী বিধানাবলীকে যেগুলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তন করেছেন। ঐগুলোর মধ্যে কিছু ফরয হিসেবে আছে যেমনঃ যাকাতুল ফিতর। আর কিছু আছে যা ফরয নয়। যেমনঃ দু‘ ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। এখানে সুন্নাহকে জীবিত করার অর্থ হচ্ছেঃ ঐগুলোর উপর ‘আমল করা এবং মানুষকে ‘আমলের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেগুলোর ‘আমল ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৯-[৩০] এ বর্ণনাটিকে ইবনু মাজাহ (রহঃ) কাসীর ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে, তিনি তার পিতা হতে এবং তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন।
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَرَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ عَنْ كَثِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৪-[৩৫] উক্ত রাবী [ইবনু ’উমার (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বৃহত্তম দলের অনুসরণ কর। কেননা, যে ব্যক্তি দল থেকে আলাদা হয়ে গেছে, সে বিচ্ছিন্ন হয়ে (পরিশেষে) জাহান্নামে যাবে। (ইবনু মাজাহ হাদীসটি আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اتَّبِعُوا السَّوَادَ الْأَعْظَمَ فَإِنَّهُ مَنْ شَذَّ شَذَّ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ من حَدِيث أنس
ব্যাখ্যা: হাদীসে বলা হয়েছে যে, তোমরা সাওয়াতে ‘আযম-এর অনুসরণ করবে। অর্থাৎ- ইমাম বা বাদশার অনুসারী এবং সার্বিক নীতিমালার অনুসারী হিসেবে যে দল বড় তাদের অনুসরণ করবে। অথবা, যারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের পথে আছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত, হাক্বের উপর বিদ্যমান এবং আল্লাহর নিকট সম্মানিত দল। তোমরা তাদের অনুসরণ করবে।
‘আযহার’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘উলামাদের মধ্যে যে দলটি বড় তাদের অনুসরণ করবে। আর যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্যশীল বড় দল থেকে বিচ্যুত হয়ে নেতার আনুগত্যহীন হয়ে গেছে অথবা মুক্তিপ্রাপ্ত সঠিক জামা‘আত থেকে বের হয়ে গেছে সে জাহান্নামী।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৫-[৩৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ হে বৎস! তুমি যদি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার অন্তরে কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ না রেখে কাটাতে পারো তাহলে তাই কর। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে বৎস! এটা আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে সে আমাকেই ভালোবাসে, আর যে আমাকে ভালোবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (তিরমিযী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَن أنس قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا بُنَيَّ إِنْ قَدَرْتَ أَنْ تصبح وتمسي لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشٌّ لِأَحَدٍ فَافْعَلْ» ثُمَّ قَالَ: «يَا بني وَذَلِكَ من سنتي وَمن أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الْجنَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: সকাল-সন্ধ্যার দ্বারা দিন রাতের সব সময়কেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ- তুমি সদা-সর্বদা মানুষের সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ এবং প্রতারণামূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকবে। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এটাই হচ্ছে আমার সুন্নাত আর যে কেউ আমার সুন্নাতের উপর ‘আমল করে তা জারি রাখবে সে যেন আমাকে ভালোবাসলো। আর যে আমাকে ভালোবাসলো সে আমার সঙ্গে জান্নাতী হবে। কেননা, যে যাকে ভালো বাসবে তার হাশর-নশর তারই সঙ্গে হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৬-[৩৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় আমার সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য একশত শাহীদের সাওয়াব রয়েছে। (বায়হাক্বী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَمَسَّكَ بِسُنَّتِي عِنْدَ فَسَادِ أُمَّتِي فَلَهُ أجر مائَة شَهِيد»
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত শব্দ ‘‘ফাসাদে উম্মাতী’’- অর্থ হলো বিদ্‘আত, ভ্রষ্টতা এবং পাপাচারীর কাজ যখন বৃদ্ধি পাবে, তখন আমার সুন্নাতকে যে আঁকড়ে ধরবে তার জন্য একশত উটের সাওয়াব রয়েছে। যেমন দীনকে জীবিত রাখার জন্য কাফিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, বিশেষ করে বিদ্‘আত ও ভ্রষ্টতার কাজ যখন ‘উলামার মাঝে প্রকাশ পাবে তখন তাদের প্রতিরোধ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য কাফিরদের বিরুদ্ধাচরণ করার চেয়ে এ ধরনের ‘আলিমদের প্রতিবাদ করলে সাওয়াব দ্বিগুণ হয়ে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৮-[৩৯] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হালাল (রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) খাবে, সুন্নাতের উপর ’আমল করবে এবং যার অনিষ্ট থেকে মানুষ নিরাপদ থাকবে, সে জান্নাতে যাবে। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! এ ধরনের লোক তো আজকাল অগণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (ইন-শা-আল্লাহ) আমার পরবর্তী যুগেও এ ধরনের লোক থাকবে। (তিরমিযী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَكَلَ طَيِّبًا وَعَمِلَ فِي سُنَّةٍ وَأَمِنَ النَّاسُ بَوَائِقَهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِن هَذَا الْيَوْم لكثيرفي النَّاسِ قَالَ: «وَسَيَكُونُ فِي قُرُونٍ بَعْدِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা : হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি হালাল ভক্ষণ করবে এবং বিশুদ্ধভাবে সকল ‘আমল করবে। আল্লাহ নির্দেশ করেছেনঃ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا অর্থাৎ- ‘‘তোমরা হালাল খাও এবং নেক আ‘মাল কর’’- (সূরাহ্ আল মু’মিনূন ২৩ঃ ৫১)। আর তার অন্যায়, অবিচার, প্রতারণা ও কষ্ট থেকে অন্যরা যদি নিরাপদে থাকে তাহলে ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। এখানে জান্নাতে প্রবেশের অর্থ হচ্ছে কোন প্রকার শাস্তি ভোগ ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ। অতঃপর যখন বলা হলো যে, ঐ ধরনের আ‘মাল বর্তমানে অনেকের মধ্যেই আছে। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার পরেও সেটা থাকবে। অর্থাৎ- আমার উম্মাত থেকে কোন সময়েই কল্যাণকর বিষয় বন্ধ হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৯-[৪০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা এমন যুগে আছ, যে যুগে তোমাদের কেউ তার উপর নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশও ছেড়ে দিলে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর এমন এক যুগ আসবে, যখন কেউ যদি তার প্রতি নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশের উপরও ’আমল করে সে পরিত্রাণ পাবে। (তিরমিযী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُم فِي زمَان تَرَكَ مِنْكُمْ عُشْرَ مَا أُمِرَ بِهِ هَلَكَ ثُمَّ يَأْتِي زَمَانٌ مَنْ عَمِلَ مِنْهُمْ بِعُشْرِ مَا أَمر بِهِ نجا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত সে যামানা হলো ইসলামের স্বর্ণযুগ, যে যুগে মুসলিমদের সার্বিক নিরাপত্তা ছিল। নির্দেশিত বিষয় বলতে সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ এখানে ফরয বা আবশ্যকীয় বিষয়াদি কম-বেশী করে করার কোন দিক নেই। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ তোমরা এই যুগে নির্দেশিত বিষয় থেকে এক-দশমাংশ তরক করলেও ধ্বংস হবে। কারণ, সে যুগটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিদ্যমানতায় ও ইসলামের সবচেয়ে সম্মানজনক। সুতরাং সে যুগে নির্দেশিত বিষয় তরক করা অপরাধমূলক, যা গ্রহণযোগ্য ছিল না।
আর শেষ যামানায় এক-দশমাংশ পালন করলেই নাজাত পাবে। কারণ হলোঃ সেই যামানায় যুলম-অত্যাচার ফিৎনা-ফাসাদ বেড়ে যাবে, অন্যদিকে হক ও হাক্বের সাহায্যকারী হ্রাস পাবে। উপরন্তু উপযুক্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে মুসলিম সমাজ সঠিক দিক-নির্দেশনা হতে বঞ্চিত থাকবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৮১-[৪২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ তোমরা নিজেদের নাফসের (আত্মার) উপর ইচ্ছা করে কঠোরতা করো না। কেননা পরবর্তীতে আল্লাহ না আবার তোমাদের ওপর কঠোরতা চাপিয়ে দেন। পূর্বেও একটি জাতি (বনী ইসরাঈল) নিজেদের ওপর কঠোরতা অবলম্বন করেছিল। তাই আল্লাহ তা’আলাও তাদের ওপর কঠোর বিধান চাপিয়ে দিলেন। গির্জায় ও ধর্মশালায় যে লোকগুলো আছে, এরা তাদেরই উত্তরাধিকারী। (কুরআনে উল্লেখ আছে) ’’তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য ’রহ্বানিয়্যাত’ বা বৈরাগ্যবাদ-কে আবিষ্কার করেছিল। আমি তাদের ওপর নির্ধারণ করিনি’’- (সূরাহ্ আল হাদীদ ৫৭: ২৭)। (আবূ দাঊদ)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَن أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: لَا تُشَدِّدُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ فَيُشَدِّدَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَإِنَّ قَوْمًا شَدَّدُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ فَشَدَّدَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ فَتِلْكَ بَقَايَاهُمْ فِي الصَّوَامِعِ والديار (رَهْبَانِيَّة ابتدعوها مَا كتبناها عَلَيْهِم)
رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন কঠিন ‘আমল দ্বারা তোমাদের নিজেদের ওপর কঠিনতা এনো না। যেমনঃ সারা বছর লাগাতার সওম পালন করা, পূর্ণ রাত জাগরণ করা বা বিবাহ-শাদী না করা। আর যদি তা কর তাহলে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সব কিছুকে তোমাদের ওপর ফরয করে দিবেন ফলে তোমরা কঠিনতায় পড়ে যাবে। অথবা কঠিন জিনিসকে নিজেদের ওপর চাপিয়ে নেয়ার কারণে দুর্বল হয়ে যাবে। অর্থাৎ- তোমরা সেগুলোকে আদায় করতে সক্ষম হবে না। হাদীসের অর্থ এটাও হতে পারে যে, তোমরা ‘ইবাদাতগুলোকে মানৎ অথবা কসমের মাধ্যমে নিজেদের ওপর কঠিন করে নিও না, তা করলে আল্লাহ তোমাদের ওপর সেগুলোকে আবশ্যকীয় করে দিবেন। ফলে তোমরা যথারীতি পালন করতে পারবে না, বরং বর্জন করবে আর আল্লাহর শাস্তিতে নিপতিত হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৮২-[৪৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনঃ কুরআন পাঁচটি বিষয়সহ নাযিল হয়েছেঃ (১) হালাল (২) হারাম (৩) মুহ্কাম (৪) মুতাশাবিহ ও (৫) আমসাল (উপদেশপূর্ণ ঘটনা)। সুতরাং তোমরা হালালকে হালাল জানবে, হারামকে হারাম মনে করবে। মুহকামের উপর ’আমল করবে, মুতাশাবিহের সাথে ঈমান পোষণ করবে। আর আমসাল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। এটা মাসাবীহের বাক্য বিন্যাস। কিন্তু বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমানে এরূপ বর্ণনা করেছেনঃ তোমরা হালালের উপর ’আমল কর, হারাম থেকে বেঁচে থাক এবং মুহকামের অনুসরণ কর।[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَزَلَ الْقُرْآنُ عَلَى خَمْسَةِ أَوْجُهٍ: حَلَالٍ وَحَرَامٍ وَمُحْكَمٍ وَمُتَشَابِهٍ وَأَمْثَالٍ. فَأَحِلُّوا الْحَلَالَ وَحَرِّمُوا الْحَرَامَ وَاعْمَلُوا بِالْمُحْكَمِ وَآمِنُوا بِالْمُتَشَابِهِ وَاعْتَبِرُوا بِالْأَمْثَالِ . هَذَا لَفْظَ الْمَصَابِيحِ. وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الايمان وَلَفْظُهُ: «فَاعْمَلُوا بِالْحَلَالِ وَاجْتَنِبُوا الْحَرَامَ وَاتَّبِعُوا الْمُحْكَمَ»
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী কুরআন পাঁচ রকমের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আয়াত নিয়ে নাযিল হয়েছে তার মধ্যে ‘‘মুতাশাবিহ’’ যেমন হুরূফে মুকাত্ত্বাআতঃ حم، - الم ইত্যাদি। আরেক প্রকার হলো ‘‘আমসাল’’ অর্থাৎ- পূর্ববর্তী ঘটনাবলী। যেমনঃ ক্বওমে নূহ এবং সালিহ (রাঃ)-এর ঘটনাবলী অথবা ‘‘আমসাল’’ দ্বারা আরো উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক উদাহরণ পেশ করা। যেমনঃ
مَثَلُ الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللّهِ أَوْلِيَآءَ كَمَثَلِ الْعَنْكَبُوْتِ
অর্থাৎ- ‘‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে যে অন্য কিছুকে ওয়ালী বানিয়ে নিয়েছে তার উদাহরণ হলো মাকড়সা।’’ (সূরাহ্ আল ‘আনকাবূত ২৯ঃ ৪১)
কুরআন সাতটি পন্থায় এবং সাত রকমে নাযিল হয়েছেঃ ধমক প্রদানকারী, নির্দেশ প্রদানকারী, হালাল, হারাম, মুহকাম, মুতাশাবিহ ও আমসাল (হিসেবে)। অতএব, হালালকে হালাল জানবে, হারামকে হারাম মনে করবে, যে ব্যাপারে নির্দেশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করবে এবং নিষেধ থেকে বিরত থাকবে। আমসাল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে, মুহাকামের উপর ‘আমল করবে এবং মুতাশাবিহ এর উপর ঈমান আনবে। আর বলবেঃ আমরা ওর প্রতি ঈমান আনলাম। সবই আমাদের রবের পক্ষ থেকে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৮৩-[৪৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শারী’আতের বিষয় তিন প্রকারঃ (১) এমন বিষয়, যার হিদায়াত সম্পূর্ণ পরিষ্কার। তাই এ নির্দেশ মেনে চল। (২) সে বিষয়, যার ভ্রষ্টতাও স্পষ্ট, সুতরাং তা পরিহার কর এবং (৩) এ বিষয়, যা মতভেদপূর্ণ তা মহান আল্লাহর হাতে ছেড়ে দাও। (আহমাদ)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْأَمْرُ ثَلَاثَةٌ: أَمْرٌ بَيِّنٌ رُشْدُهُ فَاتَّبِعْهُ وَأَمْرٌ بَيِّنٌ غَيُّهُ فَاجْتَنِبْهُ وَأَمْرٌ اخْتُلِفَ فِيهِ فَكِلْهُ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجل)
رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: তিন প্রকার নিম্নরূপঃ
১. এমন বিষয় যেগুলোর সঠিক হওয়াটা স্পষ্ট, তা হলো ‘ইবাদাতের মৌলিক বিষয়াদি, যেমনঃ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ও যাকাত ফরয হওয়া।
২. ভ্রষ্টতার বিষয়গুলো সুস্পষ্ট, যেমন- মানুষ হত্যা করা, যিনা করা।
৩. এমন বিষয় যেগুলোর বিধান সম্পর্কে আল্লাহ ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা না করায় মানুষ সেগুলোতে মতবিরোধ করেছে। এ ধরনের বিষয় আল্লাহর নিকট সোপর্দ করতে বলা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সঠিক জানলে সেগুলোর প্রতি ‘আমল করতে হবে ভ্রান্ত জানলে সেগুলো বর্জন করতে হবে। যেমন কুরআনের মুতাশাবিহ মূলক আয়াত এবং ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) বিষয়াদি।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৮৪-[৪৫] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মেষপালের ক্ষেত্রে নেকড়ে বাঘের ন্যায় শায়ত্বন (শয়তান) মানুষের জন্য নেকড়ে বাঘ। পালের যে মেষটি দল হতে আলাদা হয়ে যায় অথবা যেটি খাবারের সন্ধানে দূরে সরে পড়ে অথবা যেটি অলসতাবশত এক কিনারায় পড়ে থাকে, নেকড়ে সেটিকে শিকার করে নিয়ে যায়। সুতরাং সাবধান! তোমরা কক্ষনও (দল ছেড়ে) গিরিপথে চলে যাবে না, আর জামা’আতবদ্ধ হয়ে (মুসলিম) জনগণের সাথে থাকবে। (আহমাদ)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ ذِئْبُ الْإِنْسَانِ كَذِئْبِ الْغَنَمِ يَأْخُذُ الشَّاذَّةَ وَالْقَاصِيَةَ وَالنَّاحِيَةَ وَإِيَاكُمْ وَالشِّعَابَ وَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَالْعَامَّةِ» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: শায়ত্বন (শয়তান) মানুষের জন্য নেকড়ে স্বরূপ। জামা‘আত পরিত্যাগ করা, বড় দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং তাদের সঙ্গ ছেড়ে দেয়া, শায়ত্বনের (শয়তানের) আধিপত্য বিস্তার এবং পথভ্রষ্ট করার সহায়ক। একাকি অবস্থানকারী, দল বিচ্ছিন্ন এবং একপ্রান্তে পড়ে থাকা বকরীকে নেকড়ে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তাই হাদীসের শেষে জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপন করা এবং মুসলিমদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৮৭-[৪৮] গুযায়ফ ইবনু আল হারিস আস্ সুমালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখনই কোন জাতি একটি বিদ্’আত সৃষ্টি করেছে, তখনই সমপরিমাণ সুন্নাত বিদায় নিয়েছে। সুতরাং একটি সুন্নাতের উপর ’আমল করা (সুন্নাত যত ক্ষুদ্রই হোক), একটি বিদ্’আত সৃষ্টি করা অপেক্ষা উত্তম। (আহমাদ)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث
وَعَن غُضَيْف بن الْحَارِث الثمالِي قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مَا أَحْدَثَ قَوْمٌ بِدْعَةً إِلَّا رُفِعَ مِثْلُهَا مِنَ السُّنَّةِ فَتَمَسُّكٌ بِسُنَّةٍ خَيْرٌ مِنْ إِحْدَاث بِدعَة)
رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: হাদীসে একটা জিনিসের গুরুত্ব আরোপের জন্য আরেকটি বিপরীত জিনিস দ্বারা দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে। কারণ দু’টো জিনিসের মধ্যে এমন একটি সম্পর্ক বিদ্যামান যে, যখন একটার কথা উল্লেখ করা হয় অথবা একটাকে উঠিয়ে নেয়া হয় তখন অন্যটার কথা এমনিতেই চলে আসে। বিদ্‘আত সৃষ্টির দ্বারা সুন্নাহ উঠে যায় এবং বিদ্‘আত সুন্নাহর পরিপন্থী। অতএব সুন্নাহ প্রতিষ্ঠা করলেই বিদ্‘আত দূরীভূত হবে।
পাপ এবং বিদ্‘আত মানে সুন্নাত পরিপন্থী বিষয়। আর এটা বোধগম্য যে, পাপের কোন বিষয়ের চেয়ে নেকীর বিষয় অনেক উত্তম। সুন্নাতকে ধারণ করায় অনেক কল্যাণ রয়েছে। অন্যদিকে বিদ্‘আতে কল্যাণকর বলতে কিছুই নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৮৯-[৫০] ইব্রাহীম ইবনু মায়সারাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিদ্’আতীকে সম্মান দেখালো, সে নিশ্চয়ই ইসলামের ধ্বংস সাধনে সাহায্য করল। (বায়হাক্বী তাঁর শু’আবুল ঈমান-এ মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث
وَعَن إِبْرَاهِيم بن ميسرَة قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ وَقَّرَ صَاحِبَ بِدْعَةٍ فَقَدْ أَعَانَ عَلَى هَدْمِ الْإِسْلَامِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الايمان مُرْسلا
ব্যাখ্যা: কোন বিদ্‘আতীকে সম্মান করা ইসলাম ধ্বংস করার শামিল। কারণ একজন বিদ্‘আতী সুন্নাতের বিরোধ, আর কোন বিরোধীকে সাহায্য করা ঐ বস্তুকে ধ্বংস করার ব্যাপারে সহযোগিতা করারই নামান্তর। অতএব, যখন কোন ব্যক্তি বিদ্‘আতীকে সম্মান করবে সে তখন সুন্নাতকে অবমূল্যায়ন করবে। আর সুন্নাতকে অবমূল্যায়ন করলে তা হবে মূলত ইসলামের অবমূল্যায়ন তথা ইসলামের বুনিয়াদকে ধ্বংস করা। বিদ্‘আতীকে সম্মানকারীর অবস্থা যদি এই হয় তাহলে বিদ্‘আতীর অবস্থা কি হতো?