পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের আলামত
৫৪৫৪-[১৮] আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মাহদী হবেন আমার বংশের উজ্জ্বল চেহারা, উঁচু নাকবিশিষ্ট। ন্যায় ও ইনসাফ দ্বারা তিনি জমিনকে এমনভাবে পরিপূর্ণ করে দেবেন যেমনিভাবে তার আগে তা যুলম ও অবিচারে পরিপূর্ণ ছিল। আর তিনি সাত বছর ক্ষমতার মালিক থাকবেন। (আবু দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب أَشْرَاط السَّاعَة)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَهْدِيُّ مِنِّي أجلى الْجَبْهَة وأقنى الْأَنْفِ يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ ظُلْمًا وَجَوْرًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4285) * قتادۃ مدلس ، عنعن و للحدیث شواھد ضعیفۃ
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের আলামত
৫৪৫৫-[১৯] উক্ত রাবী [আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)] নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। ইমাম মাহদীর ঘটনা প্রসঙ্গে (রসূল সা.) বলেছেন, জনৈক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলবে, হে মাহদী! আমাকে কিছু দান করুন! আমাকে কিছু দান করুন। তিনি (সা.) বলেছেন: তখন তিনি তাকে নিজের হাতের অঞ্জলি ভরে তার কাপড়ের মধ্যে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করবেন, যতটুকু সে বহন করে নিয়ে যেতে পারে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب أَشْرَاط السَّاعَة)
وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قِصَّةِ الْمَهْدِيِّ قَالَ: فَيَجِيءُ إِلَيْهِ الرَّجُلُ فَيَقُولُ: يَا مَهْدِيُّ أَعْطِنِي أَعْطِنِي. قَالَ: فَيَحْثِي لَهُ فِي ثَوْبِهِ مَا اسْتَطَاعَ أَنْ يَحْمِلَهُ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2232 وقال : حسن) [و ابن ماجہ (4083)] * فیہ زید العمی
ব্যাখ্যা: ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম ভিক্ষুকের বহনযোগ্যতা অনুযায়ী সম্পদ দান করবেন। ভিক্ষুক লোকটি যত মাল বহন করতে সক্ষম তত সম্পদ তাকে দান করবেন। কারণ সে সময় প্রচুর রাষ্ট্রীয় সম্পদ, গনীমত ও বিভিন্ন এলাকার বিজিত অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত সম্পদ থাকবে। এছাড়া তিনি নিজেই ব্যক্তিগতভাবে দানশীল। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১০৬ পৃ., হা. ২২৩২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের আলামত
৫৪৫৭-[২১] আবু সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) - একদিন বিপদ-আপদের কথা আলোচনা করলেন, যা এ উম্মাতের শেষ সময় এসে পৌছবে। এমনকি কোন ব্যক্তি তা হতে আশ্রয়স্থল খুঁজে পাবে না। এ সময় আল্লাহ তা’আলা আমার বংশ ও আমার পরিবার হতে এক ব্যক্তিকে দুনিয়াতে পাঠাবেন। তিনি ন্যায় ও ইনসাফ দ্বারা জমিনকে এমনিভাবে পরিপূর্ণ করে দেবেন। যেমনিভাবে তা ইতোপূর্বে যুলম-অবিচারে পরিপূর্ণ ছিল। তার কার্যকলাপে আসমান ও জমিনের অধিবাসী সকলেই সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। আকাশ তার এক ফোঁটা পানিও অবশিষ্ট রাখবে না; বরং সম্পূর্ণই বের করে দেবে। (প্রাচুর্য ও সচ্ছলতা দেখে) জীবিত লোকেরা মৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবে। লোকেরা এই অবস্থায় সাত অথবা নয় বছর জীবনযাপন করবে। (হাকিম তাঁর ’মুসতাদরাক’-এ বলেন, হাদীসটি সহীহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب أَشْرَاط السَّاعَة)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلَاءً يُصِيبُ هَذِهِ الْأُمَّةَ حَتَّى لَا يَجِدَ الرَّجُلُ مَلْجَأً يَلْجَأُ إِلَيْهِ مِنَ الظُّلْمِ فَيَبْعَثُ اللَّهُ رَجُلًا مِنْ عِتْرَتِي وَأَهْلِ بَيْتِي فَيَمْلَأُ بِهِ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ ظُلْمًا وَجَوْرًا يَرْضَى عَنْهُ سَاكِنُ السَّمَاءِ وَسَاكِنُ الْأَرْضِ لَا تَدَعُ السَّمَاءُ مِنْ قَطْرِهَا شَيْئًا إِلَّا صَبَّتْهُ مِدْرَارًا وَلَا تَدَعُ الْأَرْضُ مِنْ نَبَاتِهَا شَيْئًا إِلَّا أَخْرَجَتْهُ حَتَّى يَتَمَنَّى الْأَحْيَاءُ الْأَمْوَاتَ يَعِيشُ فِي ذَلِكَ سبعَ سِنِين أَو ثمانَ سِنِين أَو تسع سِنِين» . رَوَاهُ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الحاکم (4 / 465 و صححہ فقال الذھبی : سندہ مظلم) * عمر بن عبید اللہ العدوی : لم اجد من وثقہ غیر الحاکم و فی السند علۃ أخری
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের আলামত
৫৪৫৯-[২৩] আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ। সেই সময় পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না যে পর্যন্ত না পশু মানুষের সাথে কথা বলবে এবং যে পর্যন্ত না কারো চাবুক তার সাথে কথা বলবে এবং তার জুতার ফিতা তার সাথে কথা বলবে। আর তাকে তার উরু (রান) জানিয়ে দেবে যে, তার স্ত্রী তার অনুপস্থিতিতে কি (কুকর্ম) করেছে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب أَشْرَاط السَّاعَة)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُكَلِّمَ السِّبَاعُ الْإِنْسَ وَحَتَّى تُكَلِّمَ الرَّجُلَ عَذَبَةُ سَوْطِهِ وَشِرَاكُ نَعْلِهِ وَيُخْبِرَهُ فَخِذُهُ بِمَا أَحْدَثَ أَهْلُهُ بَعْدَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
صحیح ، رواہ الترمذی (2281 وقال : حسن صحیح غریب) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: জংলী হিংস্র প্রাণী যেমন: সিংহ অথবা হিংস্র পাখি যেমন বাজপাখি এদের কেউ মানবজাতির সঙ্গে মিশতে বাধা দিতে পারবে না। মানুষ ঈমানদার কিংবা কাফির যেই হোক না কেন এ প্রাণীগূলো সবার সাথেই কথা বলবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২১৮১)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা
৫৪৭৬-[১৩] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এমন সময় দাজ্জালের আগমন ঘটবে যখন একজন মর্দে মুসলিম তার সামনে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হবে। তখন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একদল লোক অর্থাৎ দাজ্জালের বাহিনীর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটবে। তারা প্রশ্ন করবে, তুমি কোথায় যেতে ইচ্ছা করছ? সে বলবে, ঐ ব্যক্তির নিকট যেতে চাই যে বের হয়েছে। তিনি (সা.) বলেন, তখন তারা লোকটিকে বলবে, তুমি কি আমাদের রবের (দাজ্জালের) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করনি? সে বলবে, আমাদের প্রকৃত রব তো অজানা নন। তখন তারা বলবে, এ লোকটিকে হত্যা করে ফেল। তখন তারা পরস্পর বলবে, তোমাদের রব (দাজ্জালের) কি এই বলে নিষেধ করেনি যে, তার সামনে উপস্থিত না করা ছাড়া যেন কাউকে তোমরা হত্যা না কর? তখন তারা লোকটিকে দাজ্জালের কাছে নিয়ে আসবে। যখন সে মর্দে মুমিন দাজ্জালকে দেখবে, তখনই সে লোকেদেরকে উদ্দেশ্য করে বলবে, হে লোকসকল! এই তো সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বলেছিলেন। তিনি (সা.) বলেন, এ কথা শুনে দাজ্জাল ঐ লোকটিকে মারাত্মক সাজা দেয়ার নির্দেশ করে বলবে, এটাকে শক্ত করে ধর এবং তার মাথায় জোরে আঘাত কর। তখন লোকটিকে এমনভাবে প্রহার করা হবে যে, তার পিঠ ও পেট চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। তিনি (সা.) বলেন, তখন দাজ্জাল বলবে, তুমি কি এখনো আমার প্রতি ঈমান আনবে না? উত্তরে লোকটি বলবে, ’তুমিই তো মিথ্যুক মাসীহ! এবার দাজ্জাল লোটিকে করাত দ্বারা কর্তনের নির্দেশ দিবে। তখন সে মর্দে মু’মিনের মাথা হতে কর্তিত হবে, এমনকি তার পদদ্বয় পর্যন্ত দ্বিখণ্ডিত করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল সে খণ্ডিত দুই টুকরার মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাবে তারপর সে উক্ত খণ্ডকে লক্ষ্য করে বলবে, “তুমি দাঁড়িয়ে যাও’। এবার লোকটি জীবিত হয়ে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে বলবে, এখন কি তুমি আমার প্রতি ঈমান আনবে? উত্তরে সেই মর্দে মুমিন বলবে, এখন তো আমার বিশ্বাসের দৃঢ়তাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর সে মর্দে মু’মিন লোকেদেরকে আহ্বান করে বলবে, হে লোক সকল! তোমরা জেনে রাখ! এ দাজ্জাল এ যাবৎ আমার সাথে যা কিছু করেছে, আমার পরে আর কোন মানুষের সাথে তা করতে সক্ষম হবে না। তিনি (সা.) বলেন, এবার দাজ্জাল তাকে আবার যবাহ করতে উদ্যত হবে। কিন্তু লোকটির গর্দান ও বুকের মধ্যবর্তী স্থান তামায় পরিণত করে দেয়া হবে, ফলে সে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। তিনি (সা.) বলেন, এবার দাজ্জাল তার হাত পা বেঁধে ফেলবে এবং তাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবে। উপস্থিত লোকেরা ধারণা করবে, দাজ্জাল তাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে তাকে জান্নাতের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ মর্দে মু’মিনই হবে রাব্বুল আলামীনের কাছে সবচেয়ে বড় শহীদ ব্যক্তি। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فَيَتَوَّجُهُ قِبَلَهُ رَجُلٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فَيَلْقَاهُ الْمَسَالِحُ مَسَالِحُ الدَّجَّالِ. فَيَقُولُونَ لَهُ: أَيْنَ تَعْمِدُ؟ فَيَقُولُ: أَعْمِدُ إِلَى هَذَا الَّذِي خَرَجَ. قَالَ: فَيَقُولُونَ لَهُ: أَو مَا تبَارك وَتَعَالَى ؤمن بِرَبِّنَا؟ فَيَقُولُ: مَا بِرَبِّنَا خَفَاءٌ. فَيَقُولُونَ: اقْتُلُوهُ. فَيَقُولُ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: أَلَيْسَ قَدْ نَهَاكُمْ رَبُّكُمْ أَنْ تَقْتُلُوا أَحَدًا دُونَهُ . قَالَ: فَيَنْطَلِقُونَ بِهِ إِلَى الدَّجَّالِ فَإِذَا رَآهُ الْمُؤْمِنُ قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ هَذَا الدَّجَّالُ الَّذِي ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ . قَالَ: فَيَأْمُرُ الدَّجَّال بِهِ فَيُشَبَّحُ. فَيَقُولُ: خُذُوهُ وَشُجُّوهُ فَيُوسَعُ ظَهْرُهُ وَبَطْنُهُ ضَرْبًا . قَالَ: فَيَقُول: أَوَ مَا تُؤْمِنُ بِي؟ قَالَ: فَيَقُولُ: أَنْتَ الْمَسِيحُ الْكَذَّابُ . قَالَ: «فيؤْمر بِهِ فَيْؤشَرُ بالمنشارِ مِنْ مَفْرِقِهِ حَتَى يُفَرَّقَ بَيْنَ رِجْلَيْهِ» . قَالَ: ثُمَّ يَمْشِي الدَّجَّالُ بَيْنَ الْقِطْعَتَيْنِ ثُمَّ يَقُولُ لَهُ: أتؤمنُ بِي؟ فَيَقُول: مَا ازْدَدْتُ إِلَّا بَصِيرَةً . قَالَ: ثُمَّ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ لَا يَفْعَلُ بَعْدِي بِأَحَدٍ مِنَ النَّاسِ . قَالَ: «فَيَأْخُذُهُ الدَّجَّالُ لِيَذْبَحَهُ فَيُجْعَلُ مَا بَيْنَ رَقَبَتِهِ إِلَى تَرْقُوَتِهِ نُحَاسًا فَلَا يَسْتَطِيع إِليه سَبِيلا» قَالَ: «فَيَأْخذهُ بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَيَقْذِفُ بِهِ فَيَحْسِبُ النَّاسُ أَنَّمَا قَذَفَهُ إِلَى النَّارِ وَإِنَّمَا أُلْقِيَ فِي الْجَنَّةُ» فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا أَعْظَمُ النَّاسِ شَهَادَةً عِنْدَ رَبِّ الْعَالَمِينَ» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (113 / 2938)، (7377) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (فَيَلْقَاهُ الْمَسَالِحُ) অতঃপর তার সাথে সাক্ষাৎ করবে একদল অস্ত্রধারী যুবক যারা সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত। তারা হবে দাজ্জালের সৈনিক।
(مَا بِرَبِّنَا خَفَاءٌ) অর্থাৎ সে তোমাদের ও আমাদের কারো সত্যিকার রব নয়। অথবা হে মু'মিন। সম্প্রদায়! সে তোমাদের রব্ নয়। এখানে অব্যয়টি না-বোধক অর্থাৎ তিনি ব্যতীত আমাদের নিকট আমাদের রবের কোন এমন গুণাবলি গোপন নেই, যেন আমরা তাকে বাদ দিয়ে তার নিকট যাব ও তার ওপর নির্ভর করব। সে রব না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সে মাখলুক। আর কোন মাখলুকের মধ্যে রুবুবিয়্যাহ্ অথবা উলুহিয়্যার গুণ থাকতে পারে না। তাছাড়া সে হচ্ছে ত্রুটিযুক্ত এক চোখ অন্ধ আর আমাদের রবের কোন ত্রুটি নেই।
(فَيَأْخذهُ بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَيَقْذِفُ بِهِ فَيَحْسِبُ النَّاسُ) অতঃপর দাজ্জাল তার উভয় হাত এবং পা ধরে ছুঁড়ে ফেলে দিবে তখন মানুষেরা ধারণা করবে তাকে জাহান্নামে ফেলে দিয়েছে। মূলত তাকে জান্নাতে ফেলা হবে। ভাষ্যকার বলেন, হয়তো তাকে দুনিয়ার কোন উদ্যানে ফেলা হবে। অথবা তাকে দাজ্জালের নিকট সংরক্ষিত জাহান্নামেই ফেলা হবে কিন্তু আল্লাহ সেটাকে জান্নাতে রূপান্তর করে দিবেন। যেমনভাবে অতীতে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর জন্য আগুনকে শীতল ও নিরাপদ শান্তিদায়ক করে দিয়েছিলেন। যেটাই ধরা হোক না কেন, উল্লেখিত প্রথমবার ছাড়া তার হাতে আর মৃত্যু সংঘটিত হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ হা. ৫৪৭৬, শারহুন নাবাবী ১৮/২৯৩৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা
৫৪৭৯-[১৬] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ’দাজ্জাল অবশ্যই আগমন করবে। কিন্তু তার প্রতি মদীনায় গিরিপথে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। অবশ্য সে মদীনার পার্শ্ববর্তী একটি লবণাক্ত বালুকাময় এলাকায় অবতরণ করবে। তখন তার কাছে একজন পুণ্যবান ব্যক্তি। অথবা (বলেছেন) পুণ্যবান লোকেদের মধ্য থেকে সর্বোত্তম ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বলবেন, ’আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই সেই দাজ্জাল যার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন। তখন দাজ্জাল (উপস্থিত লোকেদেরকে) বলবে, দেখ! যদি আমি এ লোকটিকে হত্যা করে আবার তাকে জীবিত করি, তবে কি তোমরা আমার ব্যাপারে (আল্লাহ হওয়া সম্পর্কে) সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবে, না। তখন সে তাকে হত্যা করবে, অতঃপর তাকে আবার জীবিত করবে। তখন সেই লোকটি বলবে, আল্লাহর শপথ! আমি তোমার সম্পর্কে এখন পূর্বের চেয়েও বেশি সন্দেহমুক্ত। আবার দাজ্জাল তাকে হত্যা করতে চাইবে, কিন্তু তাকে লোকটির উপর সেই ক্ষমতা দেয়া হবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَأْتِي الدَّجَّالُ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْهِ أَنْ يَدْخُلَ نِقَابَ الْمَدِينَةِ فَيَنْزِلُ بَعْضَ السِّبَاخِ الَّتِي تَلِي الْمَدِينَةَ فَيَخْرُجُ إِلَيْهِ رَجُلٌ وَهُوَ خَيْرُ النَّاسِ أَوْ مِنْ خِيَارِ النَّاسِ فَيَقُولُ: أَشْهَدُ أَنَّكَ الدَّجَّالُ الَّذِي حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَهُ فَيَقُولُ الدَّجَّالُ: أَرَأَيْتُمْ إِنْ قَتَلْتُ هَذَا ثُمَّ أَحْيَيْتُهُ هَلْ تَشُكُّونَ فِي الْأَمْرِ؟ فَيَقُولُونَ: لَا فَيَقْتُلُهُ ثُمَّ يُحْيِيهِ فَيَقُولُ: وَاللَّهِ مَا كُنْتُ فِيكَ أَشَدَّ بَصِيرَةً مِنِّي الْيَوْمَ فَيُرِيدُ الدَّجَّالُ أَنْ يَقْتُلَهُ فَلَا يُسَلَّطُ عَلَيْهِ . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (1882) و مسلم (112 / 2938)، (7375) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (يَأْتِي الدَّجَّالُ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْهِ) দাজ্জাল মদীনার দিকে আগমন করবে। কিন্তু তার জন্য মদীনায় প্রবেশ করা হারাম করা হয়েছে। ফলে সে মদীনার নিকটবর্তী সিরিয়া পথে মরুভূমিতে অবতরণ করবে যেখানে লবণাক্ততার কারণে কোন ধরনের ঘাস জন্মাবে না। অতঃপর তার দিকে একজন মহান ব্যক্তি এগিয়ে যাবে। সম্ভবত তিনি খিযির (আঃ)। তাকে দেখামাত্রই বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় তুমি দাজ্জাল। যে ব্যাপারে নবী (সা.) আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তখন দাজ্জাল তার পাশের লোকজনকে লক্ষ্য করে বলবে, যদি আমি মেরে পুনরায় জীবিত করি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ প্রকাশ করবে তথা আমি যে ইলাহ সে ব্যাপারে? তারা বলবে, না, আমরা সন্দেহ করব না।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দাজ্জালের কথা যদি আমি তাকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করি তাহলে তোমরা কি আমার ব্যাপারে সন্দেহ করবে? তারা উত্তর দিবে, না। এখানেই সমস্যা রয়েছে। কেননা দাজ্জাল যা প্রকাশ করবে তাতে তার প্রভুত্বের প্রমাণ করবে না। যেহেতু তার সৃষ্টিগত ত্রুটি রয়েছে। সে হবে এক চোখ বিশিষ্ট কানা। আর আমাদের প্রভু ত্রুটিমুক্ত। এটাই প্রমাণ করে যে, সে একজন মিথ্যাবাদী। সে মিথ্যুক হওয়ার আরেকটি প্রমাণ হলো তার কপালে ‘কাফির' লিখা থাকবে। তাহলে এর উত্তর কয়েকভাবে দেয়া যেতে পারে:
১) সম্ভবত তারা তার ভয়েই স্বীকারোক্ত করবে তার প্রতি বিশ্বাসী হয়ে নয়।
২) এটাও সম্ভাবনা রাখে যে, তারা মূলত সত্যই বলেছিল, আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদিতায় কোন সন্দেহ করি না, কেননা যদি কেউ তার মিথ্যাবাদী ও কাফির হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করবে সেও কাফির হয়ে যাবে। অতএব তারা তার ভয়ে বিষয়টি একটি পেঁচিয়ে বলেছিল, আমরা তোমার ব্যাপারে কোনই সন্দেহ করি না।
৩) এটাও সম্ভাবনা রাখে যে, যারা বলেছিল, আমরা তোমরা ব্যাপারে সন্দেহ করি না তারা ছিল ইয়াহূদী ও অন্যান্য হতভাগা কাফির।
(فَيَقُولُ: وَاللَّهِ مَا كُنْتُ فِيكَ أَشَدَّ بَصِيرَةً مِنِّي الْيَوْمَ) অতঃপর ঐ মুসলিম ব্যক্তি বলবে, আল্লাহর কসম, আজ তুমি মিথ্যাবাদী হওয়ার ধারণা আমার মধ্যে আরো বেড়ে গেল। এরপর তিনি লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলবে, হে লোক সকল! এ লোকই হচ্ছে মাসীহ দাজ্জাল তোমরা তাকে বিশ্বাস করবে না। যে তার আনুগত্য করবে সে জাহান্নামী হবে আর যে তাকে অমান্য করবে সে জান্নাতে যাবে।
ইবনুত তীন দাউদী থেকে বর্ণনা করে বলেন, এ কথা বলার সাথে সাথে দাজ্জাল মাটিতে মিশে যাবে যেমন লবণ পানিতে মিশে যায়।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা'বূদ ৭ম খণ্ড, হা, ৭১৩২; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২২৪২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা
৫৪৯০-[২৭] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার উম্মতের সত্তর হাজার লোক দাজ্জালের আনুগত্য স্বীকার করবে, তাদের মাথায় থাকবে সবুজ বর্ণের নিকাব। (শারহুস্ সুন্নাহ্)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ السِّيجَانُ» . رَوَاهُ فِي شرح السّنة
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (15 / 62 ح 4265) * فیہ ابو ھارون العبدی متروک متھم و حدیث مسلم (2944)، (7392) یخالفہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ أُمَّتِي) আমার উম্মতের একটি দল (তারা হবে ইস্ফাহানের ইয়াহূদী মতাবলম্বী) তাদের সংখ্যা হবে ৭০ হাজার যাদের মাথায় সবুজ রং অংকিত মুকুট থাকবে। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ৭০ হাজার লোক সকলেই যদি সম্পদশালী হন তাহলে দরিদ্রের অবস্থা কি হতে পারে? মিরক্বাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, দরিদ্ররা আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকবে তাদের অনুসরণ করবে না। তবে যারা সম্পদের লোভী হবে তারা অনুসরণ করবে। যেমনটি ধনীরা আরো সম্পদশালী হওয়ার জন্য তার অনুসরণ করবে। যদিও অনুসৃত ব্যক্তি, বাতিলপন্থী হয়ে থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৪৯৫-[২] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ) -এর সাথে মদীনার কোন এক রাস্তায় ইবনু সাইয়্যাদ-এর সাক্ষাৎ হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বললেন, তুমি কি এটা সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল? সে বলল, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি আল্লাহ প্রতি, তাঁর ফেরেশতগণের প্রতি, তাঁর নাযিলকৃত কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর পাঠানো সমস্ত রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছি। অতঃপর রাসূল (সা.) তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি দেখতে পাও? সে বলল, আমি পানির উপরে একখানা সিংহাসন দেখতে পাই। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি সাগরের উপর ইবলীসের সিংহাসন দেখ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি আর কি দেখতে পাও? সে বলল, দু’জন সত্যবাদী এবং একজন মিথ্যাবাদী অথবা বলল, দু’জন মিথ্যাবাদী এবং একজন সত্যবাদীকে দেখতে পাই। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ও বললেন, বিষয়টি তার উপর হজবরল হয়ে পড়েছে। অতএব তোমরা তাকে পরিত্যাগ কর। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: لَقِيَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ - يَعْنِي ابْنَ صَيَّادٍ - فِي بَعْضِ طُرُقِ الْمَدِينَةِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟» فَقَالَ هُوَ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولَ اللَّهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «آمَنْتُ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ مَاذَا تَرَى؟» قَالَ: أَرَى عَرْشًا عَلَى الْمَاءُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَرَى عَرْشَ إِبْلِيسَ عَلَى الْبَحْرِ وَمَا تَرَى؟» قَالَ: أَرَى صَادِقَيْنِ وَكَاذِبًا أَوْ كَاذِبَيْنِ وَصَادِقًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لُبِسَ عَلَيْهِ فَدَعُوهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (87 / 2925)، (7346) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (فَقَالَ هُوَ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولَ اللَّهِ؟) ইবনু সাইয়্যাদ রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে লক্ষ্য করে উল্টা প্রশ্ন করল: আপনি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? তখন নবী (সা.) বললেন, আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি আল্লাহর রাসূলগণের প্রতি। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে এভাবে উত্তর দেয়ার কারণ কি তা আমরা পূর্ববর্তী হাদীসে আলোচনা করে এসেছি।
(مَاذَا تَرَى؟) নবী (সা.) এ তাকে পরীক্ষা করার জন্য জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ? সে বলল, পানির উপর একটি ‘আরশ। নবী (সা.) তার জবাবে বললেন, তুমি সাগরের উপর ইবলীসের ‘আরশ দেখতে পাও। এছাড়া আর কি দেখতে পাও? সে বলল, আমি দু’জন সত্যবাদী ও একজন মিথ্যাবাদী অথবা দু'জন মিথ্যাবাদী ও একজন সত্যবাদী দেখতে পাই। অর্থাৎ আমার কাছে দু'জন ব্যক্তি এসে সত্য সংবাদ দেয় আর একজন মিথ্যা সংবাদ দেয়। ইবনু সাইয়্যাদ-এর এ কথার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সে মূলত মিথ্যুক। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে যাকে সাহায্য করা হয় সে সন্দেহমূলকভাবে কথা বলবে না।
(لُبِسَ عَلَيْهِ فَدَعُوهُ) অর্থাৎ তার নিকট বিষয়টি জ্যোতিষীর কারণে উলোটপালট হয়ে গেছে, অতএব তাকে পরিহার কর, তার কোন কথায় বিশ্বাস করা যাবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৮দশ খণ্ড, হা. ২৯২৫)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৪৯৬-[৩] উক্ত রাবী [আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। ইবনু সাইয়্যাদ নবী (সা.) কে জান্নাতের মাটি সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তিনি (সা.) বললেন, তা ময়দার মতো সাদা এবং নির্ভেজাল কস্তরির মতো (সুগন্ধি) হবে। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
وَعَنْهُ أَنَّ ابْنَ صَيَّادٍ سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ تُرْبَةِ الْجَنَّةِ. فَقَالَ: «در مَكَّة يبضاء ومسك خَالص» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (93 / 2928)، (7352) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (در مَكَّة يبضاء ومسك خَالص) জান্নাতের মাটি হবে পরিষ্কার সাদা আটার মতো, আর তাতে মিস্ক জাতীয় সুগন্ধি পাওয়া যাবে।
কামূস গ্রন্থে বলা হয়েছে, (دَرْمَكَّتٌ) হচ্ছে (دَقِيقُ الْحُوَّارَى، وَالتُّرَابُ النَّاعِمُ) তথা সাদা আটা এবং মসৃণ মাটি।
নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, (الدَّرْمَكَةُ) হচ্ছে সাদা আটা। জান্নাতের মাটিকে তার সাথে তুলনা করার উদ্দেশ্য হলো তা হবে সাদা ও মসৃণ এবং মিসকের সাথে তুলনা করার কারণ হলো তা হবে সুগন্ধিযুক্ত। আর প্রত্যেক সাদা খাবারকে (حُوَّارَى) বলা হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৮দশ খণ্ড, হা. ২৯২৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৪৯৮-[৫] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি ইবনু সাইয়্যাদ-এর সাথে মক্কার পথে যাত্রী হলাম। সে আমাকে বলল, আমি লোকের পক্ষে থেকে আশ্চর্যজনক ধারণার সম্মুখীন হয়েছি। লোকেরা বলে, আমিই দাজ্জাল। আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জালের কোন সন্তানাদি হবে না? অথচ আমার সন্তানাদি আছে। এ কথাটি তিনি কি বলেননি যে, সে কাফির? অথচ আমি একজন মুসলিম। তিনি কি এ কথাটি বলেননি যে, সে মক্কাহ্ ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না? অথচ আমি মদীনাহ থেকে এসেছি এবং মক্কায় যাচ্ছি। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) বলেন, অতঃপর সে আমাকে শেষ কথাটি বলল যে, আল্লাহর শপথ! জেনে রাখুন, আমি তার (দাজ্জালের) জন্ম সময়, জন্মস্থান এবং বর্তমানে সে কোথায় থাকে নিশ্চিতভাবে জানি এবং আমি তার বাপ মাকেও চিনি। রাবী [আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)] বলেন, তার এই শেষ কথাটি আমাকে সন্দেহে ফেলে দিল। তখন আমি বললাম, তোর সারাদিন অকল্যাণ হোক, তখন (সফর সঙ্গীদের) কেউ বলল, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে যে, তুমিই সেই (ব্যক্তি)? সে বলল, যদি দাজ্জালের পদবি (গুণাবলি) আমাকে প্রদান করা হয়, তাহলে তাকে অপছন্দ করব না। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: صَحِبْتُ ابْنَ صياد إِلَى مَكَّة فَقَالَ: مَا لَقِيتُ مِنَ النَّاسِ؟ يَزْعُمُونَ أَنِّي الدَّجَّالُ أَلَسْتَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّهُ لَا يُولَدُ لَهُ» . وَقَدْ وُلِدَ لِي أَلَيْسَ قَدْ قَالَ: «هُوَ كَافِرٌ» . وَأَنا مُسلم أَو لَيْسَ قَدْ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْمَدِينَةَ وَلَا مَكَّةَ» ؟ وَقَدْ أَقْبَلْتُ مِنَ الْمَدِينَةِ وَأَنَا أُرِيدُ مَكَّةَ. ثُمَّ قَالَ لِي فِي آخِرِ قَوْلِهِ: أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَعْلَمُ مَوْلِدَهُ وَمَكَانَهُ وَأَيْنَ هُوَ وَأَعْرِفُ أَبَاهُ وَأُمَّهُ قَالَ: فَلَبَسَنِي قَالَ: قُلْتُ لَهُ: تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمِ. قَالَ: وَقِيلَ لَهُ: أَيَسُرُّكَ أَنَّكَ ذَاكَ الرَّجُلُ؟ قَالَ: فَقَالَ: لَوْ عُرِضَ عَلَيَّ مَا كَرِهْتُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (91 ۔ 89 / 2927)، (7349) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (مَا لَقِيتُ مِنَ النَّاسِ؟ يَزْعُمُونَ أَنِّي الدَّجَّالُ) ইবনু সাইয়্যাদ আশ্চর্য হয়ে বলে, আমি মানুষের কথা থেকে সবচেয়ে বেশি অবাক হই যখন তারা আমার ব্যাপারে বলে যে, আমি দাজ্জাল অথচ নবী (সা.) দাজ্জালের ব্যাপারে বলেছেন, তার কোন সন্তান হবে না, আমার তো সন্তান আছে, সে হবে কাফির আর আমি মুসলিম, সে মক্কাহ্ ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না কিন্তু আমি তো মদীনাহ্ থেকে আসলাম আবার মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা করেছি।
(أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَعْلَمُ مَوْلِدَهُ وَمَكَانَهُ وَأَيْنَ هُوَ) সাবধান! আল্লাহর কসম! আমি দাজ্জালের জন্মগ্রহণের সময়কাল, জন্মস্থান এবং বর্তমানে সে কোথায় আছে সব জানি এবং তার মা-বাবা কে তাও জানি।
(فَلَبَسَنِي) হাদীসের বর্ণনাকারী আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) বলেন, এতে সন্দেহ সৃষ্টি হলো।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথা শুনে তার ব্যাপারে আমার মধ্যে সন্দেহ তৈরি হল। যেহেতু সে প্রথমে দাবী করল আমি একজন মুসলিম আবার পরক্ষণই গায়িব সম্পর্কে দাবী করল যে, আমি অধিক জানি। আর যে গায়িবের দাবীদার সে কাফির। অতএব তার মুসলিম ও কাফির হওয়া না হওয়া নিয়ে আমি সন্দিহান হলাম।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সে দাজ্জালের জন্ম ও অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছে দাবী করল কিন্তু স্পষ্ট করে না বলেই রেখে দিল যা আমাকে সন্দিহান করে তুলল। অথবা তার এ সমস্ত কথা, আমার সন্তান আছে, মক্কাহ্ ও মদীনায় প্রবেশ এবং মানুষ আমাকে দাজ্জাল মনে করে, আমাকে সন্দেহে ফেলে দিল।
(أَيَسُرُّكَ أَنَّكَ ذَاكَ الرَّجُلُ؟) আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, যদি তোমাকেই সেই ব্যক্তি তথা দাজ্জাল বলা হয় তাহলে কি খুশি হবে? তখন ইবনু সাইয়্যাদ বলল, যদি দাজ্জালের ঐ সমস্ত গুণাবলি যার দ্বারা সে মানুষকে ধোঁকা দিবে, পথভ্রষ্ট করবে, আমাকে তা দেয়া হয় তাহলে আমিও অপছন্দ করব না। মোট কথা হচ্ছে, দাজ্জালের গুণাবলিতে খুশি হওয়া দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, সে মূলত কাফির। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়া এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল তখন হতেই তার কিয়ামত সংঘটিত হয়ে গেল।
৫৫১১-[৩] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আজ যারা ভূপৃষ্ঠে বেঁচে আছে, একশত বছর অতিবাহিত হতেই তাদের কেউ জীবিত থাকবে না। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابُ قُرْبِ السَّاعَةِ وَأَنَّ مَنْ مَاتَ فَقَدْ قَامَت قِيَامَته)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَأْتِي مِائَةُ سَنَةٍ وَعَلَى الْأَرْضِ نَفْسٌ مَنْفُوسَةٌ الْيَوْمَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (219 / 2539)، (6485) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (نَفْسٌ مَنْفُوسَةٌ الْيَوْمَ) অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সময়কাল থেকে পরবর্তী একশত বছর পর, পৃথিবীতে কোন সাহাবী অবশিষ্ট থাকবে না। এর অর্থ এটা নয় যে, কোন মানুষই বেঁচে থাকবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ৬৫৫০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার
৫৫২৭-[৭] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি কিভাবে আরাম-আয়েশে থাকতে পারি? অথচ শিঙ্গাওয়ালা (ইসরাফীল আলাইহিস সালাম) শিঙ্গা মুখে দাবিয়ে রেখেছেন, কান ঝুঁকিয়ে রেখেছেন, মাথা নুয়ে রেখেছেন। তিনি কেবল এ প্রতীক্ষায় রয়েছেন যে, তাতে ফুঁক দেয়ার জন্য কখন নির্দেশ দেয়া হয়। এ কথা শুনে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! যখন অবস্থা এমনই, তাহলে আমাদেরকে কি করতে আদেশ দেন? তিনি (সা.) বললেন, তোমরা (حَسْبُنَا اللَّهُ ونِعمَ الْوَكِيل) (আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কার্য নির্বাহক) পড়তে থাক। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب النفخ فِي الصُّور)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيْفَ أَنْعَمُ وَصَاحِبُ الصُّورِ قَدِ الْتَقَمَهُ وَأَصْغَى سَمْعَهُ وَحَنَى جَبْهَتَهُ يَنْتَظِرُ مَتَى يُؤْمَرُ بِالنَّفْخِ» . فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا تَأْمُرُنَا؟ قَالَ: قُولُوا: حَسْبُنَا اللَّهُ ونِعمَ الْوَكِيل . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2431 وقال : حسن ، 3243) * عطیۃ العوفی ضعیف
ব্যাখ্যা: (أَنْعَمُ) অর্থাৎ আমি খুশিতে থাকব কিভাবে? বা সুখী জীবন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করব কিভাবে? নিহায়াতে রয়েছে, এটা (نَعْمَة) (নূনে যবর যোগে) থেকে গৃহীত, এর অর্থ সুখ, আনন্দ, বিলাসিতা। (التقام) (মুখে বাঁশির মাথা রাখা) এবং (إِصْغَاءِ) (মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা)।
ক্বাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এর অর্থ কিভাবে আমার জীবনযাপন সুখের হবে অথচ শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সময় অতি আসন্ন। এর দ্বারা এ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বাঁশিওয়ালা তার মুখে বাঁশির মাথাকে রেখে প্রতিক্ষা করছে যাতে সে নির্দেশ দেয়া মাত্র ফুঁ দিতে পারে।
(حَسْبُنَا اللَّهُ) এটা মুবতাদা ও খবর অর্থাৎ (كَفِينَا اللَّهُ) “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট”। এখানে (مَخْصُوصُ بِالْمَدْح) উহ্য রয়েছে। যা মূলত ছিল (نِعْمَ الْمَوْكُولُ إِلَيْهِ اللَّهُ) মহাশক্তিশালী হিসেবে আল্লাহ উত্তম। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৪৩১)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার
৫৫৩০-[১০] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) শিঙ্গা ফুৎকারকারীর (অর্থাৎ ইসরাফীল-এর) বর্ণনায় বলেছেন, তার ডান পার্শ্বে জিবরীল আলায়হিস সালাম এবং বাম পার্শ্বে মীকাঈল আলায়হিস সালাম থাকবেন।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب النفخ فِي الصُّور)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاحِبُ الصُّورِ وَقَالَ: «عَن يَمِينه جِبْرِيل عَن يسَاره مِيكَائِيل»
ضعیف ، رواہ رزین (لم اجدہ) [و ابوداؤد (3999)] * عطیۃ العوفی ضعیف ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: তাফসীরে বায়যাবীতে (جِبْريْل) (জিবরীল) সম্বন্ধে আট রকম শব্দ রয়েছে। যার মধ্যে ৪টি প্রসিদ্ধ- [جِبْرءِيْل(١) جِبْرِيْلُ (٢) جِبَْرَءِيْلُ (٣) جَبْرِيْلُ (٤)] ('আওনুল মাবুদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ৩৯১১ ও ৯২)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর
৫৫৩৩-[২] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন দুনিয়ার এই জমিনটি হবে একটি রুটির মতো, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাকে হাতের মাঝে নিয়ে এমনভাবে উলট-পালট করবেন যেমন তোমাদের কেউ সফর অবস্থায় তাড়াতাড়ি করে এই হাতে সেই হাতে নিয়ে রুটি তৈরি করে এবং এই রুটি দিয়ে জান্নাতবাসীদের আপ্যায়ন করা হবে। নবী (সা.) -এর আলোচনা এ পর্যন্ত পৌছলে তখন জনৈক ইয়াহুদী এসে বলল, হে আবূল কাসিম ! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে কল্যাণ দান করুন। আমি কি আপনাকে অবগত করব না যে, (তাওরাতে উল্লেখ আছে,) কিয়ামতের দিন জান্নাতবাসীদেরকে কি বস্তু দিয়ে সর্বপ্রথম আপ্যায়ন করা হবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, বল! সে বলল, এ জমিন হবে একটি রুটি, যেরূপ নবী (সা.) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ইয়াহূদীর কথা শুনে নবী (সা.) আমাদের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে হাসলেন যে, তাঁর চোয়ালের দাঁত পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়ল। অতঃপর ইয়াহুদী বলল, আমি কি আপনাকে জানাব না যে, সে খাদ্যের তরকারি কি হবে? তা হবে বালাম ও নূন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, এটা আবার কী? সে বলল, ষাঁড় ও মাছ। সে দু’টির কলিজার উপরের অতিরিক্ত যে মাংস তা সত্তর হাজার লোকে খাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَكُونُ الْأَرْضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُبْزَةً وَاحِدَةً يَتَكَفَّؤُهَا الْجَبَّارُ بِيَدِهِ كَمَا يَتَكَفَّأُ أَحَدُكُمْ خُبْزَتَهُ فِي السّفر نُزُلاً لِأَهْلِ الْجَنَّةِ» . فَأَتَى رَجُلٌ مِنَ الْيَهُودِ. فَقَالَ: بَارَكَ الرَّحْمَنُ عَلَيْكَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ أَلَا أُخبرُك بِنُزُلِ أهل الجنةِ يومَ القيامةِ؟ قَالَ: «بَلَى» . قَالَ: تَكُونُ الْأَرْضُ خُبْزَةً وَاحِدَةً كَمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَنَظَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْنَا ثُمَّ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ ثُمَّ قَالَ: أَلَا أُخْبِرُكَ بِأَدَامِهِمْ؟ بَالَامٌ وَالنُّونُ. قَالُوا: وَمَا هَذَا؟ قَالَ: ثَوْرٌ وَنُونٌ يَأْكُلُ مِنْ زَائِدَةِ كَبِدِهِمَا سَبْعُونَ ألفا. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6520) و مسلم (30 / 2792)، (7057) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (خُبْزَةً) অর্থ রুটি আর তা এমন আটা যা চুলায় আগুনে জ্বালানোর পর তার গর্তে রাখা হয়। সে গর্তকে মানুষ গরম ছাই বা খাক বা মাটি বলে।
(يَتَكَفَّؤُهَا)-এর অর্থ নোয়ানো, ঝুকানো। এ থেকে ব্যবহৃর হয় (كَفَأْتُ الْإِنَاءَ) (যখন তুমি তাকে উল্টাবে)।
(خُبْزَتَهُ فِي السّفر) খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এমন রুটি যা মুসাফিরের জন্য তৈরি করা হয়। কারণ এটাকে বিছানো হয় না যেমন পাতলা রুটিকে বিছানো হয়। মূলত হাতের উপরে উলটপালট করা হয় যাতে সেটা সমান হয়।
(نُزُلاً لِأَهْلِ الْجَنَّةِ) তা হলো এমন জিনিস যা আহলে জান্নাতদের মেহমানদারী হিসেবে তৈরি করা হবে। বলা হয়, (أصلح القوم نزلهم) অর্থাৎ খাবারের পূর্বে মেহমানের জন্য তাড়াতাড়ি যা পেশ করা হয়। হাদীসের জমিনের রুটির সাদৃশ্য তার দুটি অর্থ হতে পারে (এক) সেদিন জমিনের আকৃতি বর্ণনা করা। অন্যটি হলো রুটির বর্ণনা সম্পর্কে যা জান্নাতীদের জন্য আতিথেয়তা হবে। অথবা নতুনভাবে এবং বিরাট পরিমাণের বর্ণনা সম্পর্কে।
হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: দুনিয়ার জমিন আগুনে পরিবর্তিত হওয়া হাক্বীকৃী বা আসল অর্থে ধরতে হবে এবং অবস্থান স্থলের ব্যক্তিদের খাদ্যের জন্য রুটিতে পরিবর্তিত হওয়াকে রূপক অর্থে গণ্য করতে হবে।
(بَالَامٌ) শব্দটির ব্যাপারে মতভেদ আছে। শব্দটি হাদীসের বর্ণনায় হিব্রু ভাষায় রয়ে গেছে। যে কারণে সাহাবীগণ শব্দটির ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। আল্লামাহ্ নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে বলেন, এটা হিব্রু ভাষা যার অর্থ বলদ।
(يَأْكُلُ مِنْ زَائِدَةِ كَبِدِهِمَا سَبْعُونَ ألفا) কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অতিরিক্ত অংশ বলতে কলিজার সাথে যুক্ত আলাদা অংশ বুঝানো হয়েছে যা উৎকৃষ্ট। সে কারণে তা খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে সত্তর হাজার জনকে। আর তারাই বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদেরকে উৎকৃষ্টমানের খাদ্য সামগ্রী দ্বারা আপ্যায়ন করা হবে। আর সত্তর হাজার সংখ্যা দ্বারা অধিক সংখ্যককে বুঝানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। (ফাতহুল বারী ১১ খণ্ড, হা, ৬৫২০-২১)।
জমিন খাদ্যে রূপান্তরিত হওয়া বিবেকবিরোধী নয়। এখন জমিনের মাটি থেকে নতুন নতুন চমৎকার সাদযুক্ত ফলমূল উৎপাদন হচ্ছে। আবার আল্লাহ তা'আলা যদি জমিনকে দুধে ময়দায় রূপান্তর করেন, এটা আল্লাহর নিকটে দূরের ব্যাপার নয়। যে দলটি জমিনী রুটিকে খাবে তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী দল। তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ - মুম্বাই ছাপা, ৪র্থ খণ্ড, ৩৮১ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর
৫৫৪১-[১০] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। একদিন তিনি (সা.) বললেন: (কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা আদম আলায়হিস সালাম-কে লক্ষ্য করে বলবেন, হে আদম! আদম আলায়হিস সালাম উত্তরে বলবেন, হে আমার প্রভু! আমি উপস্থিত! আপনার আনুগত্যই আমার জন্য সৌভাগ্য। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার আওলাদের মধ্য হতে জাহান্নামের দলকে বের কর। আদম আলায়হিস সালাম বলবেন, জাহান্নামের দলে কতজন? আল্লাহ তা’আলা বলবেন, প্রত্যেক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে, প্রত্যেক সন্তানধারী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে। আর তোমরা লোকেদেরকে দেখবে নেশাগ্রস্ত, মূলত তারা নেশাগ্রস্ত নয়, বরং আল্লাহর আযাবই কঠিন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, আমাদের মধ্য থেকে কে হবে সেই একজন? তিনি বললেন, বরং তোমরা এ সুসংবাদ জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্য থেকে একজন এবং ইয়াজুজ-মাজুজদের থেকে এক হাজার। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, সে মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ! আমি আশা করি যে, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের এক-চতুর্থাংশ। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে আমরা সকলে ’আল্লা-হু আকবার বলে উঠলাম। অতঃপর বললেন, আমি আশা করি, তোমরা হবে জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ। তখন আমরা পুনরায় বললাম ’আল্লা-হু আকবার’। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, আমি আশা করি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। এ কথা শুনে আমরা আবার বললাম, ’আল্লা-হু আকবার। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, মানুষের মধ্যে তোমাদের সংখ্যার তুলনা হবে যেমন একটি সাদা গরুর চামড়ার মধ্যে একটি কালো লোম অথবা একটি কালো গরুর চামড়ার মধ্যে একটি সাদা লোম ।(বুখারী ও মুসলিম)।
الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: يَا آدَمُ فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ. قَالَ: أَخْرِجْ بَعْثَ النَّارِ. قَالَ: وَمَا بَعْثُ النَّارِ؟ قَالَ: مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَمِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ فَعِنْدَهُ يَشِيبُ الصَّغِيرُ (وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شديدٌ) قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَيُّنَا ذَلِكَ الْوَاحِدُ؟ قَالَ: «أَبْشِرُوا فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلًا وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفٌ» ثُمَّ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا رُبُعَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا. فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا قَالَ: «مَا أَنْتُمْ فِي النَّاسِ إِلَّا كَالشَّعْرَةِ السَّوْدَاءِ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَبْيَضَ أَوْ كشعرة بَيْضَاءَ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَسْوَدَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3348) و مسلم (379 / 222)، (532) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (بَعْثَ النَّارِ) অর্থাৎ জাহান্নামে প্রেরিত হওয়ার জন্য উপযুক্ত দল। (مَا بَعْثُ النَّارِ؟) এর অর্থ (مَا مِقْدَارُمَبْعُوثِالنَّارِ؟) জাহান্নামে প্রেরিত লোকেদের সংখ্যা কত? কেউ বলেন, (مَا) এখানে সংখ্যাবাচক (كَمِ) এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
(مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَمِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ) প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এর বিপরীতে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর হাদীসে রয়েছে, (مِنْ كُلِّ مِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ) প্রতি একশতে নিরানব্বই জন এর উত্তরে কিরমানী বলেন, এখানে সংখ্যার কোন বিবেচনা নেই বরং এর দ্বারা মু'মিনদের সংখ্যা কম ও কাফিরদের সংখ্যা বেশি বুঝানো হয়েছে, আবার আবূ সা'ঈদ (রাঃ)-এর হাদীসকে মোট বানী আদম-এর ওপর প্রয়োগ করতে হবে। তখন প্রতি হাজারে দশজন হবে। এই অর্থই বেশি কাছাকাছি হবে। কারণ ইয়াজুজ-মাজুজের আলোচনা আবূ সা'ঈদ-এর হাদীসে এসেছে। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসে নয়। অথবা প্রথম হাদীসকে সমগ্র সৃষ্টির সাথে যুক্ত করতে হবে এবং দ্বিতীয় হাদীসকে এ উম্মতে মুহাম্মাদীর সাথে যুক্ত করতে হবে। অতএব প্রতি এক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন হবে কাফির এবং প্রতি একশতে নিরানব্বই জন হবে পাপী। এটাই অধিক স্পষ্ট।
(يَشِيبُ الصَّغِيرُ) ছোটরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে অধিক চিন্তা ও বড় উদ্বেগের কারণে। বাগাবীর বর্ণনায় রয়েছে, এতে শিশুরা বুড়ো হয়ে যাবে। আর ভয়ে গর্ভবতী মহিলা গর্ভপাত করে ফেলবে।
হাসান বলেন, স্তন্যদানকারিণী মা দুধ ছাড়ার আগেই সন্তানকে ভুলে যাবে। গর্ভবতী পেটে থাকা বাচ্চাকে অপূর্ণ প্রসব করবে। এ অর্থ সে ব্যক্তির মতকে অধিক মজবুত করে যে বলে, এ কম্পন সংঘটিত হবে দুনিয়াতে। কারণ কিয়ামতের পর গর্ভবর্তী হয় না। আর যারা বলে, এসব ঘটনা কিয়ামতে সংঘটিত হবে। তারা বলেন, এর দ্বারা বিষয়টি ভয়াবহতা বুঝানো হয়েছে। ব্যাপারটি বাস্তব নয়। যেমন মানুষের কথা (أَصَابِنَا أَمْرٌ يَشِيبُ فِيهِ الْوَلِيدُ) আমাদের এমন ব্যাপার হয়েছে যাতে শিশুরা বুড়ো হয়ে যাবে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিপদ। যখন তারা বিষয়টিকে খুব বড় মনে করল এবং তাতে ভয়ের উদ্রেক হলো তখন তিনি (সা.) তাদের মনে আশায় সঞ্চার করার জন্য বললেন, (أَبْشِرُوا) “তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর।'
(فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلًا وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفٌ) এর অর্থ হলো, অবশ্যই তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির বিপরীতে ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে একহাজার জন হবে। এতে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, জাহান্নামীদের সংখ্যা জান্নাতীদের সংখ্যা থেকে বেশি হবে। হয়তো নৈকট্যশীল মালাক (ফেরেশতা) ও হুরদের থাকার মাধ্যমে জান্নাতীদের সংখ্যা বাড়বে।
(أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الْجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا) ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: হাদীসে এ নির্দেশনা আছে যে, ইয়াজুজ-মাজুজেরা এ হুমকির মধ্যে শামিল। আর ইয়াজুজ-মাজুজ ছাড়া অন্য পূর্ববর্তী উম্মতরাও এর মধ্যে শামিল। অতএব যখন মোট জান্নাতীদের অর্ধেক পূর্ববর্তী উম্মাতের উপরে সমবেত হবে তখন তাদের এক হাজারের জন্য একজন করেই হবে। সম্ভবত এ হাদীসটির উম্মতে মুহাম্মাদীর দুই-তৃতীয়াংশ জান্নাতে যাওয়ার বর্ণিত হাদীসের পূর্বের হাদীস। কারণ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জান্নাতীদের একশত বিশটি কাতার হবে। তন্মধ্যে আশিটি হবে উম্মতে মুহাম্মাদীর ও চল্লিশটি হবে বাকী উম্মাতের। আর এটাও হতে পারে যে, তাদের অর্ধেক প্রথমে প্রবেশ করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাশর
৫৫৪২-[১১] উক্ত রাবী [আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, (কিয়ামতের দিন) যখন আমাদের প্রভু পায়ের নলা বা গোছা উন্মোচিত করবেন, তখন ঈমানদার নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই তাঁকে সিজদাহ্ করবে। আর বিরত থাকবে ঐ সকল লোক যারা দুনিয়াতে রিয়া (লোক দেখানো) ও শুনানোর জন্য সিজদাহ্ করত, তারা সিজদাহ করতে চাইবে কিন্তু তাদের পৃষ্ঠদেশ ও কোমর একটি কাষ্ঠফলকের মতো শক্ত হয়ে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب الْحَشْر)
وَعَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «يَكْشِفُ رَبُّنَا عَنْ سَاقِهِ فَيَسْجُدُ لَهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ وَمُؤْمِنَةٍ وَيَبْقَى مَنْ كَانَ يَسْجُدُ فِي الدُّنْيَا رِيَاءً وَسُمْعَةً فَيَذْهَبُ لِيَسْجُدَ فَيَعُودُ ظَهْرُهُ طَبَقًا وَاحِدًا» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4919) و مسلم (لم اجدہ ، و انظر ح 5579 من ھذا الکتاب) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা'আলা যে সব বস্তু নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন সে সবগুলো সত্য এবং প্রকাশ্য অর্থেই গণ্য। যেমন আল্লাহ তা'আলার আকার আকৃতি ও হাকীকাত, কোন মানুষের নিকট জানা নেই। এসবের উপর ঈমান আনা উচিত। আর এসবের আকৃতি প্রকৃতির ব্যাপার আল্লাহর নিকট সোপর্দ করা উচিত। উপমা ও তুলনা থেকে বেঁচে থাকা দরকার। এ কল্পনা না হয় যে, (আল্লাহ মাফ করুক) আল্লাহ তাআলার হাত, চেহারা, চোখ অথবা নলা কোন সৃষ্টির হাত, চেহারা ও চোখের মতো। বরং যেমন তার জাত বা সত্তার তুলনাহীন তেমনিভাবে তাঁর গুণাবলির ক্ষেত্রেও। এটা সালাফদের ‘আক্বীদাহ্ বা বিশ্বাস। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৫৩-[৫] আবূ সাঈদ [আল খুদরী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন নূহ আলাহিস সালাম-কে উপস্থিত করে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি আমার হুকুম-আহকাম মানুষদের কাছে পৌছিয়েছিলে? তিনি বলবেন, হ্যাঁ, পৌছিয়ে ছিলাম হে আমার রব! তখন তার উম্মতগণকে প্রশ্ন করা হবে, তিনি কি তোমাদেরকে (আমার হুকুম-আহকাম) পৌছিয়ে দিয়ে ছিলেন? তারা বলবে, আমাদের কাছে (এ দিন সম্পর্কে) কোন ভয় প্রদর্শনকারী আসেনি। তখন নূহ আলায়হিস সালাম-কে বলা হবে, তোমার সাক্ষী কে আছে? উত্তরে নূহ আলায়হিস সালাম বলবেন, মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর উম্মতগণ! রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদেরকে তখন উপস্থিত করা হবে এবং তোমরা এ সাক্ষ্য দিবে যে, অবশ্যই নূহ আলায়হিস সালাম তাঁর উম্মাতের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি পাঠ করলেন- অর্থাৎ আর আমি তোমাদেরকে এভাবেই একটি মধ্যপন্থী উম্মতরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তোমরা মানব জাতির সাক্ষী হতে পার। আর রাসূল (মুহাম্মাদ) তোমাদের জন্য সাক্ষী হন। (বুখারী)
الفصل الاول (باب الحساب و القصاص و المیزان )
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُجَاءُ بِنُوحٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ لَهُ: هَلْ بَلَّغْتَ؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ يَا رَبِّ فَتُسْأَلُ أُمَّتُهُ: هَلْ بَلَّغَكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: مَا جَاءَنَا مِنْ نَذِيرٍ. فَيُقَالُ: مَنْ شُهُودُكَ؟ فَيَقُولُ: مُحَمَّدٌ وَأُمَّتُهُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فيجاء بكم فتشهدون على أنَّه قد بلَّغَ» ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدا) رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3339) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: এটা আল্লাহ তা'আলার বাণী, (یَوۡمَ یَجۡمَعُ اللّٰهُ الرُّسُلَ فَیَقُوۡلُ مَا ذَاۤ اُجِبۡتُمۡ ؕ قَالُوۡا لَا عِلۡمَ لَنَا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ عَلَّامُ الۡغُیُوۡبِ) “আল্লাহ যেদিন রাসূলগণকে একত্রিত করবেন, অতঃপর বলবেন, তোমাদেরকে কী জবাব দেয়া হয়েছিল। তারা বলবে, আমরা কিছুই জানি না, তুমিই সকল গোপন তত্ত্ব জান”- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ ৫:১০৯); এর বিপরীত নয়। কারণ সাড়া দেয়া এক জিনিস এবং প্রচার করা অন্য জিনিস। তাছাড়া রাসূলগণ এ বিষয়টিকে আল্লাহর ‘ইলমের উপর ছেড়ে দিবেন।
(وَسَطًا) শব্দের অর্থ মধ্যম। কেউ কেউ ন্যায়পরায়ণ ও শ্রেষ্ঠ বলেন, কারণ তারা নাসারাদের মতো বাড়াবাড়ি করেন না। আর ইয়াহুদীদের মতো অবহেলা বা সম্মানকে খাটো চোখে দেখে না, নবীদের ব্যাপারে তাদের অস্বীকার করা হত্যা করা বা শূলে চড়ানোর মতো অতি বাড়াবাড়ি করে না। উপরন্তু (الوَسَطًا) এর ব্যাখ্যা (العدل) ন্যায়পরায়ণতা (هو من وسط قو مه) সে তাদের কওমের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
(عَلَيْكُمْ شَهِيدا) অর্থাৎ তিনি তোমাদের পর্যবেক্ষক এবং তোমাদের ব্যাপারে অবগত। তিনি তোমাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি লক্ষ্য রাখেন এবং কথার প্রশংসা করেন আর তোমাদের জন্য সাক্ষী।
(شَهِيد) শব্দটি (رَقِيبَ) অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ ন্যায়পরায়ণতার জন্য পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন। সে কারণে তাদের গোপন ও বাহ্যিক বিষয়সমূহ অবগত হওয়ার জন্য তিনি তাদের অবস্থাসমূহকে সংরক্ষণ করবেন। অতঃপর তাদের প্রশংসা করবেন। আর এজন্যও যে, তারা সমস্ত উম্মতের মধ্যে ন্যায়পরায়ণ। উম্মতে মুহাম্মাদী পূর্বের উম্মতদের সাক্ষ্য হবেন আর তিনি (সা.) তাঁর উম্মাতের সাক্ষ্য হবেন। সমস্ত নবী সবার সাক্ষ্য প্রদান করবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৬৩-[১৫] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে বললেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ যেদিন সম্পর্কে বলেছেন, সেদিন সকল মানুষ উভয় জাহানের প্রভুর সম্মুখে দণ্ডায়মান হবে। আমাকে বলুন! কোন লোকের সেই কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়ানোর সাধ্য হবে। তখন তিনি (সা.) বললেন, সেদিন (-এর ভয়াবহতা) ঈমানদারের জন্য খুবই হালকা করা হবে। এমনকি ঐ দিন তার জন্য একটি ফরয সালাত (আদায়ের সময়ের) ন্যায় হবে।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (باب الحساب و القصاص و المیزان)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّهُ أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَخْبِرْنِي مَنْ يَقْوَى عَلَى الْقِيَامِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِي قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: (يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لربِّ الْعَالمين) ؟ فَقَالَ: «يُخَفَّفُ عَلَى الْمُؤْمِنِ حَتَّى يَكُونَ عَلَيْهِ كَالصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَة»
حسن ، رواہ البیھقی فی البعث و النشور (لم اجدہ ، شعب الایمان 1 / 324قبل ح 362 تعلیقًا) و ابن حبان (الاحسان : 729 / 7334 و سندہ حسن) * شیخ دراج : (مبھم وھو) ابو الھیشم ولہ شاھد حسن فی شعب الایمان (362 ، نسخۃ محققۃ : 356) ولم یذکر الآیۃ ، فیہ نعیم بن حماد حسن الحدیث
ব্যাখ্যা: (من يَقْوَى) অর্থ (من يقدر) কে সক্ষম হবে। (عَلَى الْقِيَامِ) অর্থ আল্লাহর সামনে হিসাবের জন্য দাঁড়াতে।
(يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لربِّ الْعَالمين) ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: এটা (لِيَوْمٍ عَظِيمٍ) এর পরিবর্তে। অর্থাৎ যেদিন আল্লাহ তা'আলা তার মর্যাদা প্রকাশ করবেন ও প্রতাপশালীদের ওপর তার ক্ষমতার কর্তৃত্ব প্রকাশ করবেন। বর্ণিত হয়েছে যে, ইবনু উমার (রাঃ) এ সূরাটি পড়তেন। অতঃপর যখন তিনি (يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لربِّ الْعَالمين) পর্যন্ত পৌছতেন তখন তিনি কেঁদে ফেলতেন এবং এরপর তিনি পড়তে পারতেন না। (عَلَ الْمُؤْمِنِ) অর্থাৎ পূর্ণ মু’মিন অথবা সালাত আদায়কারীদের ওপর। (عَلَيْهِ كَالصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ) অর্থাৎ ফরয সালাত আদায়ের সমপরিমাণ অথবা ফরয সালাতের ওয়াক্তের সমপরিমাণ। স্পষ্ট কথা হলো মু'মিনদের বিভিন্ন অবস্থাভেদে সেটার সময় বিভিন্ন রকম হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৬৪-[১৬] উক্ত রাবী [আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে ঐ দিন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো যেদিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। সেই অস্বাভাবিক দীর্ঘদিনে মানুষের অবস্থা কেমন হবে? তিনি (সা.) বললেন, সেই পবিত্র সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! মু’মিনের জন্য সেদিন খুবই হালকা করা হবে, এমনকি দুনিয়াতে একটি ফরয সালাত আদায় করার সময়ের তুলনায় তার জন্য এটা হালকা সময় মনে হবে। (হাদীস দু’টি বায়হাক্বী’র “কিতাবুল বা’সি ওয়ানুশূর”-এ রিওয়ায়াত করেছেন)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (باب الحساب و القصاص و المیزان)
وَعَنْهُ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ (يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ ألف سنةٍ) مَا طُولُ هَذَا الْيَوْمِ؟ فَقَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّهُ لَيُخَفَّفُ عَلَى الْمُؤْمِنِ حَتَّى يَكُونَ أَهْوَنَ عَلَيْهِ مِنَ الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ يُصَلِّيهَا فِي الدُّنْيَا» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي كِتَابِ «الْبَعْثِ وَالنُّشُورِ»
حسن ، رواہ البیھقی فی البعث و النشور (لم اجدہ) [و احمد (3 / 75 ح 11740)] * انظر الحدیث السابق (5564) و للحدیث شاھد حسن ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (مَا طُولُ هَذَا الْيَوْمِ) অর্থাৎ এ দীর্ঘ দিনে মানুষের কী অবস্থা হবে? এত দীর্ঘ দিনে তারা দাঁড়াতে সক্ষম হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ দীর্ঘ দিন পূর্ণ মু'মিনদের ওপর হালকা হবে।
এমনকি তাদের নিকটে একটি ফরয সালাত আদায়ের চাইতে বা তার জন্য কিয়াম করার সময়ের চাইতে সহজ হবে। যে সালাত তারা দুনিয়ায় আদায় করত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৭৮-[১৩] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন কতিপয় লোক প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, মেঘমুক্ত দ্বিপ্রহরের আকাশে তোমরা সূর্য দেখতে কি কষ্ট পাও? এবং মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন সমস্যা হয়? তারা বলল, না, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি (সা.) বললেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহকে দেখতে তোমাদের এর চেয়ে বেশি কোন সমস্যা হবে না যা এ দুটিকে দেখতে তোমাদের হয়ে থাকে। যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে, তখন একজন ঘোষক ঘোষণা দেবে, প্রত্যেক উম্মত, যে যার ইবাদত করত সে যেন তার অনুসরণ করে। তখন যারা আল্লাহকে ছাড়া মূর্তি-প্রতিমা ইত্যাদির ইবাদত করত, তাদের একজনও অবশিষ্ট থাকবে না, বরং সকলেই জাহান্নামের মধ্যে গিয়ে পড়বে। শেষ পর্যন্ত এক আল্লাহর ’ইবাদতকারী ভালো ও গুনাহগার ছাড়া সেখানে আর কেউই বাকি থাকবে না। এরপর রাবুল আলামীন তাদের নিকট এসে বললেন, তোমরা কার অপেক্ষায় আছ? প্রত্যেক উম্মত, যে যার ইবাদত করত, সে তো তারই অনুসরণ করেছে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রভু। আমরা তো সেই সকল লোকেদেরকে দুনিয়াতেই বর্জন করেছিলাম যখন আজকের তুলনায় তাদের কাছে আমাদের বেশি প্রয়োজন ছিল। আমরা কক্ষনো তাদের সঙ্গে চলিনি। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب الْحَوْض والشفاعة )
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ أُنَاسًا قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ هَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ صَحْوًا لَيْسَ فِيهَا سَحَابٌ؟» قَالُوا: لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: مَا تَضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَّا كَمَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ أَحَدِهِمَا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ أَذَّنَ مُؤَذِّنٌ لِيَتَّبِعْ كُلُّ أُمَّةٍ مَا كَانَتْ تَعْبُدُ فَلَا يَبْقَى أَحَدٌ كَانَ يعبد غيرالله مِنَ الْأَصْنَامِ وَالْأَنْصَابِ إِلَّا يَتَسَاقَطُونَ فِي النَّارِ حَتَّى إِذَا لَمْ يَبْقَ إِلَّا مَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ مِنْ بَرٍّ وَفَاجِرٍ أَتَاهُمْ رَبُّ الْعَالَمِينَ قَالَ: فَمَاذَا تَنْظُرُونَ؟ يَتْبَعُ كُلُّ أُمَّةٍ مَا كَانَت تعبد. قَالُوا: ياربنا فَارَقْنَا النَّاسَ فِي الدُّنْيَا أَفْقَرَ مَا كُنَّا إِلَيْهِم وَلم نصاحبهم
متفق علیہ ، رواہ البخاری (806) و مسلم (229 / 182)، (451) ۔
(متفّق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা'আলা একাধিক জায়াগায় তার সাথে সাক্ষাতের কথা বলেছেন, সেই প্রেক্ষিতে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ, তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে।
‘আল্লামাহ্ সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কিয়ামতের অবস্থানস্থলে প্রত্যেক নর-নারীর পক্ষেই আল্লাহকে দেখা সম্ভব হবে; এমনকি বলা হয় কাফির-মুশরিক এবং মুনাফিকদেরও সাক্ষাৎ হাসিল হবে। অতঃপর তাদের থেকে আড়াল হয়ে যাবে যাতে তাদের আফসোসের কারণ হয়। মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি বলি এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলার বাণী (নিম্নে) নিয়ে স্বতন্ত্র আলোচনা রয়েছে:
(کَلَّاۤ اِنَّهُمۡ عَنۡ رَّبِّهِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّمَحۡجُوۡبُوۡنَ) “কক্ষনো না, তারা সেদিন তাদের প্রতিপালক থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে।” (সূরাহ্ আল মুতাফফিফীন ৮৩: ১৫)
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাণীও সামনে আসছে, কেবল আল্লাহর ইবাদতকারীরাই অবশিষ্ট থাকবে অতঃপর তাদের সামনে আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীন আগমন করবেন। অর্থাৎ একনিষ্ঠ ইবাদতকারীরাই কেবল আল্লাহ তা'আলার দর্শন লাভে ধন্য হবেন।
আল্লাহর দর্শনের স্বাদ এমন হবে যে, মানুষ তার ক্লেশ ক্লান্তি সব ভুলে যাবে। (জান্নাতীগণ জান্নাতে আল্লাহকে দেখে জান্নাতের আরাম-আয়েশের কথাও ভুলে যাবে)
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের সর্ববাদী সম্মত মত হলো নবী-রাসূলগণ এবং সকল যুগের উম্মাতের সিদ্দীকগণ ও এ উম্মতের নেককার মু'মিনগণ আল্লাহর দর্শন লাভে ধন্য হবেন। এ উম্মাতের নারীদের ব্যাপারে তিনটি মত রয়েছে- ১) তারা দেখতে পাবে না, ২) তারাও দেখতে পাবে, ৩) ঈদ বা এ রকম কোন বিশেষ দিনে দেখতে পাবে।
মালায়িকার (ফেরেশতাদের ব্যাপারে দুটি মত- ১) তারা তাদের রবকে দেখতে পাবে না, ২) তারাও দেখতে পাবে।
জিনদের ব্যাপারেও অনুরূপ ইখতিলাফ রয়েছে। (মু'মিনাহ্ নারীদের দর্শনের ব্যাপারে পুরুষদের থেকে আলাদা ভাবার কোন কারণ নেই, অতএব তারাও পুরুষের মতই আল্লাহর দর্শন লাভে ধন্য হবে।) [সম্পাদক]
কিয়ামতের দিন মু'মিনগণ আল্লাহকে এমনভাবে দেখবে যেভাবে মেঘমুক্ত আকাশে দ্বিপ্রহরকালে সূর্যকে এবং পূর্ণিমার রাতে চাঁদকে বিনা ক্লেশে দর্শন করা যায়।
সূর্য এবং চন্দ্রের দৃষ্টান্ত একটা অবহিত মাত্র, অন্যথায় মুমিনদের আল্লাহর দর্শন হবে চূড়ান্ত আলোকরশ্মিতে আর এ আলো মু'মিনদের নেকির স্তর হিসেবে কম বেশি হবে।
কিয়ামতের দিবসে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা দিবেন, “তোমরা যে যার ইবাদত করতে সে আজ তার অনুসরণ কর এবং তার সাথে চলে যাও। ফলে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ‘ইবাদতকারী সবাই নিজ নিজ মা'বুদের সাথে চলে যাবে এবং জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীরা হাশরের ময়দানে অবশিষ্ট থাকবে, এর মধ্যে নেককার গুনাহগার সবাই থাকবে।”
(إصنام)-এর অর্থ মূর্তি (أنصاب) শব্দটি (نصب)-এর বহুবচন, অর্থ ঐ পাথর যা পূজার জন্য স্থাপন করা হয় এবং তার উপর দেবতাদের সন্তুষ্টির উদ্দেশে পশু যাবাহ করা হয়। অনুরূপ পাথর অথবা বৃক্ষ যাই হোক না কেন তাকে পূজার জন্য অথবা সম্মানের জন্য স্থাপন করা হলেই সেটা (نُصُبٌ)।
(أَتَاهُمْ رَبُّ الْعَالَمِينَ) তাদের নিকট রাব্বুল আলামীন উপস্থিত হবেন, এর অর্থ হলো তার নির্দেশ আসবে, যেমন পরবর্তী বাক্যে রয়েছে: আল্লাহ বলবেন, তোমরা কার প্রতিক্ষা করছ? ঈমানদারেরা যা উত্তর দিবে হাদীসে তা এসেছে। কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ স্বয়ং নিজেই আগমন করবেন তবে মালাক (ফেরেশতা)-এর রূপ ধারণ করে। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) আসবেন, আমার মতে এ ব্যাখ্যাটাই হাদীসের সাথে অধিক সাদৃশ্যশীল।
মালাকরূপ আগমনকারী যখন বলবে: আমি তোমাদের রব্ আর লোকেরা তাকে মাখলুক সদৃশ অবলোকন করবে তখন তারা তা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং তাকে রব বলে স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানাবে, তারা জানবে ইনি তাদের রব নন।
যা হোক আল্লাহ মুমিনদের বলবেন, প্রত্যেকেই তো যে যার উপাসনা করেছে তাদের সাথে চলে গেছে। তারা বলবে, আমরা দুনিয়াতেই তাদের বর্জন করেছি, তাদের সাথে আমরা কখনো চলিনি এবং তারা যেসব মূর্তি ও দেবতার ‘ইবাদত করেছে আমরা করিনি, অতএব এখানে তাদের অনুসরণ করার প্রশ্নই আসে না, বরং আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করেছি আপনার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করেছি। অথচ দুনিয়ায় নানা পার্থিব প্রয়োজনে তাদের সাথে সম্পর্কের বেশি প্রয়োজন ছিল। এমতাবস্থায় আখিরাতের এই দিনে আমরা কিভাবে তাদের সাথে চলতে পারি? (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী ৩য় খণ্ড হা. ২৯৯)