পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১১. তাকানোর অনুমতি গ্রহণ করা।
৬২৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একবার জনৈক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক কক্ষে উঁকি দিল। তখন তিনি একটা তীর ফলক কিংবা তীর ফলকসমূহ নিয়ে তার দিকে দৌড়ালেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ তা যেন আমি এখনও দেখছি। তিনি ঐ লোকটির চোখ ফুঁড়ে দেয়ার জন্য তাকে খুঁজছিলেন। [৬৮৮৯, ৬৯০০; মুসলিম ৩৮/৯, হাঃ ২১৫৭, আহমাদ ১৩৫০৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৫)
بَاب الاسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَر
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَجُلاً، اطَّلَعَ مِنْ بَعْضِ حُجَرِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَامَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِمِشْقَصٍ ـ أَوْ بِمَشَاقِصَ ـ فَكَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِ يَخْتِلُ الرَّجُلَ لِيَطْعُنَهُ.
Narrated Anas bin Malik:
A man peeped into a room of the Prophet. The Prophet (ﷺ) stood up, holding an arrow head. It is as if I am just looking at him, trying to stab the man.
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১৩. তিনবার সালাম দেয়া ও অনুমতি চাওয়া।
৬২৪৪. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম করতেন, তখন তিনবার সালাম দিতেন এবং যখন কথা বলতেন তখন তিনবার তার পুনরাবৃত্তি করতেন। [৯৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৭)
بَاب التَّسْلِيمِ وَالاِسْتِئْذَانِ ثَلاَثًا.
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا ثُمَامَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا سَلَّمَ سَلَّمَ ثَلاَثًا، وَإِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا ثَلاَثًا.
Narrated Anas:
Whenever Allah's Messenger (ﷺ) greeted somebody, he used to greet him three times, and if he spoke a sentence, he used to repeat it thrice.
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১৫. শিশুদের সালাম দেয়া।
৬২৪৭. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একবার তিনি একদল শিশুর পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করা কালে তিনি তাদের সালাম করে বললেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তা করতেন। [মুসলিম ৩৯/৫, হাঃ ২১৬৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০০)
بَاب التَّسْلِيمِ عَلٰى الصِّبْيَانِ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْجَعْدِ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سَيَّارٍ، عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه أَنَّهُ مَرَّ عَلَى صِبْيَانٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ وَقَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَفْعَلُهُ.
Narrated Anas bin Malik:
that he passed by a group of boys and greeted them and said, "The Prophet (ﷺ) used to do so."
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/২২. অমুসলিমদের সালামের জবাব কীভাবে দিতে হবে।
৬২৫৮. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন আহলে কিতাব তোমাদের সালাম দেয়, তখন তোমরা বলবে ওয়া আলাইকুম (তোমাদের উপরও)। [২৯৬২; মুসলিম ৩৯/৪, হাঃ ২১৬৩, আহমাদ ১১৯৪৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১১)
بَاب كَيْفَ يُرَدُّ عَلٰى أَهْلِ الذِّمَّةِ السَّلاَمُ
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَنَسٍ، حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم" إِذَا سَلَّمَ عَلَيْكُمْ أَهْلُ الْكِتَابِ فَقُولُوا وَعَلَيْكُمْ ".
Narrated Anas bin Malik:
the Prophet (ﷺ) said, "If the people of the Scripture greet you, then you should say (in reply), 'Wa'alaikum (And on you).' "
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৩৩. সাথীদের অনুমতি না নিয়ে মজলিস কিংবা ঘর থেকে উঠে যাওয়া, কিংবা নিজে উঠে যাবার প্রস্তুতি গ্রহণ করা যাতে অন্যরা উঠে যায়।
৬২৭১. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাইনাব বিন্ত জাহশ (রাঃ)-কে বিয়ে করলেন, তখন তিনি কয়েকজন লোককে দা’ওয়াত করলেন। তাঁরা খাদ্য গ্রহণের পর বসে বসে অনেক সময় পর্যন্ত আলাপ-আলোচনায় মশগুল থাকলেন। তখন তিনি নিজে চলে যাবার ভাব প্রকাশ করলেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা উঠলেন না। তিনি এ অবস্থা দেখে নিজেই উঠে দাঁড়ালেন। যখন তিনি চলে গেলেন, তখন লোকেদের মধ্যে যারা দাঁড়াবার ইচ্ছে করলেন, তারা তাঁর সঙ্গেই উঠে চলে গেলেন। কিন্তু তাদের তিনজন থেকে গেলেন। এরপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে ঘরে প্রবেশ করতে চাইলেন, তখন দেখলেন যে ঐ তিনজন তখনো বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর তারাও উঠে চলে গেলে, আমি গিয়ে তাঁকে তাদের চলে যাবার সংবাদ দিলাম। এরপর তিনি এসে ঘরে ঢুকলেন। তখন আমিও প্রবেশ করতে চাইলে তিনি আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা টেনে দিলেন। এ সময় আল্লাহ তা’আলা ওয়াহী অবতীর্ণ করলেনঃ ’’তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোন! নবীগৃহে প্রবেশ কর না যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়..... আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা মহা অপরাধ।’’- (সূরাহ আল-আহযাব ৩৩/৫৩)। [৪৭৯১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৪)
بَاب مَنْ قَامَ مِنْ مَجْلِسِه أَوْ بَيْتِه وَلَمْ يَسْتَأْذِنْ أَصْحَابَه أَوْ تَهَيَّأَ لِلْقِيَامِ لِيَقُوْمَ النَّاسُ
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا مُعْتَمِرٌ، سَمِعْتُ أَبِي يَذْكُرُ، عَنْ أَبِي مِجْلَزٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ لَمَّا تَزَوَّجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَيْنَبَ ابْنَةَ جَحْشٍ دَعَا النَّاسَ طَعِمُوا ثُمَّ جَلَسُوا يَتَحَدَّثُونَ ـ قَالَ ـ فَأَخَذَ كَأَنَّهُ يَتَهَيَّأُ لِلْقِيَامِ فَلَمْ يَقُومُوا، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ قَامَ، فَلَمَّا قَامَ قَامَ مَنْ قَامَ مَعَهُ مِنَ النَّاسِ، وَبَقِيَ ثَلاَثَةٌ، وَإِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم جَاءَ لِيَدْخُلَ فَإِذَا الْقَوْمُ جُلُوسٌ، ثُمَّ إِنَّهُمْ قَامُوا فَانْطَلَقُوا ـ قَالَ ـ فَجِئْتُ فَأَخْبَرْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُمْ قَدِ انْطَلَقُوا، فَجَاءَ حَتَّى دَخَلَ فَذَهَبْتُ أَدْخُلُ، فَأَرْخَى الْحِجَابَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ، وَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ أَنْ يُؤْذَنَ لَكُمْ) إِلَى قَوْلِهِ (إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا).
Narrated Anas bin Malik:
When Allah's Messenger (ﷺ) married Zainab bint Jahsh, he invited the people who took their meals and then remained sitting and talking. The Prophet (ﷺ) pretended to be ready to get up, but the people did not get up. When he noticed that, he got up, and when he had got up, some of those people got up along with him and there remained three (who kept on sitting). Then the Prophet (ﷺ) came back and found those people still sitting. Later on those people got up and went away. So I went to the Prophet (ﷺ) and informed him that they had left. The Prophet (ﷺ) came, and entered (his house). I wanted to enter(along with him) but he dropped a curtain between me and him. Allah then revealed: 'O you who believe! Do not enter the Prophet's Houses until leave is given... (to His statement)... Verily! That shall be an enormity, in Allah's sight.' (33.53)
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৪১. যিনি কোন কাওমের নিকট যান এবং তাদের নিকট ‘কা-ইলাহ’ করেন।
৬২৮১. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু সুলায়ম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিতেন এবং তিনি সেখানেই ঐ চামড়ার বিছানার উপর কায়লুলা করতেন। অতঃপর তিনি যখন ঘুম থেকে উঠতেন, যখন তিনি ঘুমাতেন তখন তিনি তাঁর শরীরের কিছুটা ঘাম ও চুল সংগ্রহ করতেন এবং তা একটা বোতলের মধ্যে জমা করতেন এবং পরে ’সুক্ক’ নামক সুগন্ধিতে মিশাতেন। রাবী বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর মৃত্যু সন্নিকট হলে, তিনি আমাকে অসিয়ত করলেনঃ যেন ঐ সুক্ক থেকে কিছুটা তাঁর সুগন্ধির সাথে মিলানো হয়। তাই তা তাঁর সুগন্ধিতে মেশানো হয়েছিল। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৩)
লাল মার্ক করা অংশের অনুবাদে সঠিক না হবার কারনে তা সংশোধন করা হল। - হাদিসবিডি এডমিন
بَاب مَنْ زَارَ قَوْمًا فَقَالَ عِنْدَهُمْ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ ثُمَامَةَ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ أُمَّ سُلَيْمٍ، كَانَتْ تَبْسُطُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نِطَعًا فَيَقِيلُ عِنْدَهَا عَلَى ذَلِكَ النِّطَعِ ـ قَالَ ـ فَإِذَا نَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَخَذَتْ مِنْ عَرَقِهِ وَشَعَرِهِ، فَجَمَعَتْهُ فِي قَارُورَةٍ، ثُمَّ جَمَعَتْهُ فِي سُكٍّ ـ قَالَ ـ فَلَمَّا حَضَرَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ الْوَفَاةُ أَوْصَى أَنْ يُجْعَلَ فِي حَنُوطِهِ مِنْ ذَلِكَ السُّكِّ ـ قَالَ ـ فَجُعِلَ فِي حَنُوطِهِ.
Narrated Thumama:
Anas said, "Um Sulaim used to spread a leather sheet for the Prophet (ﷺ) and he used to take a midday nap on that leather sheet at her home." Anas added, "When the Prophet (ﷺ) had slept, she would take some of his sweat and hair and collect it (the sweat) in a bottle and then mix it with Suk (a kind of perfume) while he was still sleeping. "When the death of Anas bin Malik approached, he advised that some of that Suk be mixed with his Hanut (perfume for embalming the dead body), and it was mixed with his Hanut.
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৪১. যিনি কোন কাওমের নিকট যান এবং তাদের নিকট ‘কা-ইলাহ’ করেন।
৬২৮২-৬২৮৩. আনাস ইবনু মালিক বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’কুবা’ এর দিকে যখন যেতেন তখন প্রায়ই উম্মু হারাম বিন্তে মিলহান -এর ঘরে প্রবেশ করতেন এবং তিনি তাঁকে খানা খাওয়াতেন। তিনি ’উবাদাহ ইবনু সামিত -এর স্ত্রী ছিলেন। একদিন তিনি তার ঘরে গেলে তাঁকে খাবার খাওয়ালেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানেই ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি সজাগ হয়ে হাসতে লাগলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে আমার উম্মাতের আল্লাহর পথে জিহাদকারী কিছু সংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এই বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মাঝে বাদশাহ্দের মত সিংহাসনে আসীন। তখন তিনি বললেনঃ আপনি দু’আ করুন যেন আল্লাহ তা’আলা আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। তিনি সে দু’আ করলেন এবং বিছানায় মাথা রেখে আবার শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেনঃ স্বপ্নে) আমাকে আমার উম্মাতের আল্লাহর পথে জিহাদকারী কিছু সংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এই বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মাঝে বাদশাহ্দের মত সিংহাসনে আসীন। তখন আবার আমি বললামঃ আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের মধ্যে শামিল করে নেন। তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম বাহিনীরই মধ্যে শামিল থাকবে। সুতরাং তিনি মু’আবিয়াহ -এর আমলে সামুদ্রিক অভিযানে যান এবং অভিযান থেকে ফিরে এসে নিজের সওয়ারী থেকে পড়ে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেন। [২৭৮৮, ২৭৮৯; মুসলিম ৩৩/৪৯, হাঃ ১৯১২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৪)
بَاب مَنْ زَارَ قَوْمًا فَقَالَ عِنْدَهُمْ
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ إِسْحَاقَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا ذَهَبَ إِلَى قُبَاءٍ يَدْخُلُ عَلَى أُمِّ حَرَامٍ بِنْتِ مِلْحَانَ فَتُطْعِمُهُ، وَكَانَتْ تَحْتَ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، فَدَخَلَ يَوْمًا فَأَطْعَمَتْهُ، فَنَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ اسْتَيْقَظَ يَضْحَكُ. قَالَتْ فَقُلْتُ مَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ " نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَىَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ، يَرْكَبُونَ ثَبَجَ هَذَا الْبَحْرِ، مُلُوكًا عَلَى الأَسِرَّةِ ". ـ أَوْ قَالَ " مِثْلُ الْمُلُوكِ عَلَى الأَسِرَّةِ ". شَكَّ إِسْحَاقُ ـ قُلْتُ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. فَدَعَا ثُمَّ وَضَعَ رَأْسَهُ فَنَامَ، ثُمَّ اسْتَيْقَظَ يَضْحَكُ فَقُلْتُ مَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَىَّ، غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ، يَرْكَبُونَ ثَبَجَ هَذَا الْبَحْرِ، مُلُوكًا عَلَى الأَسِرَّةِ ". أَوْ " مِثْلَ الْمُلُوكِ عَلَى الأَسِرَّةِ ". فَقُلْتُ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. قَالَ " أَنْتِ مِنَ الأَوَّلِينَ ". فَرَكِبَتِ الْبَحْرَ زَمَانَ مُعَاوِيَةَ، فَصُرِعَتْ عَنْ دَابَّتِهَا حِينَ خَرَجَتْ مِنَ الْبَحْرِ، فَهَلَكَتْ.
Narrated Anas bin Malik:
Whenever Allah's Messenger (ﷺ) went to Quba, he used to visit Um Haram bint Milhan who would offer him meals; and she was the wife of 'Ubada bin As-samit. One day he went to her house and she offered him a meal, and after that he slept, and then woke up smiling. She (Um Haram) said, "I asked him, 'What makes you laugh, O Allah's Messenger (ﷺ)?' He said, 'Some people of my followers were displayed before me as warriors fighting for Allah's Cause and sailing over this sea, kings on thrones,' or said, 'like kings on thrones.' (The narrator, 'Is-haq is in doubt about it.) I (Um Haram) said, 'O Allah's Apostle! Invoke Allah that He may make me one of them.' He invoked (Allah) for her and then lay his head and slept again and then woke up smiling. I asked, 'What makes you laugh, O Allah's Messenger (ﷺ)?' He said, 'Some people of my followers were displayed before me as warriors fighting for Allah's Cause and sailing over this sea, kings on the thrones,' or said, 'like kings on the thrones.' I (Um Haram) said, 'O Allah's Messenger (ﷺ)! Invoke Allah that He may make me one of them.' He said, You will be amongst the first ones." It is said that Um Haram sailed over the sea at the time of Muawiya, and on coming out of the sea, she fell down from her riding animal and died.
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৪১. যিনি কোন কাওমের নিকট যান এবং তাদের নিকট ‘কা-ইলাহ’ করেন।
৬২৮২-৬২৮৩. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’কুবা’ এর দিকে যখন যেতেন তখন প্রায়ই উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রাঃ) এর ঘরে প্রবেশ করতেন এবং তিনি তাঁকে খানা খাওয়াতেন। তিনি ’উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) এর স্ত্রী ছিলেন। একদিন তিনি তার ঘরে গেলে তাঁকে খাবার খাওয়ালেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানেই ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি সজাগ হয়ে হাসতে লাগলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে আমার উম্মাতের আল্লাহর পথে জিহাদকারী কিছু সংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এই বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মাঝে বাদশাহ্দের মত সিংহাসনে আসীন। তখন তিনি বললেনঃ আপনি দু’আ করুন যেন আল্লাহ তা’আলা আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। তিনি সে দু’আ করলেন এবং বিছানায় মাথা রেখে আবার শুয়ে পড়লেন।
কিছুক্ষণ পর তিনি আবার হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেনঃ (স্বপ্নে) আমাকে আমার উম্মাতের আল্লাহর পথে জিহাদকারী কিছু সংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এই বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মাঝে বাদশাহ্দের মত সিংহাসনে আসীন। তখন আবার আমি বললামঃ আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের মধ্যে শামিল করে নেন। তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম বাহিনীরই মধ্যে শামিল থাকবে। সুতরাং তিনি মু’আবিয়াহ (রাঃ) এর আমলে সামুদ্রিক অভিযানে যান এবং অভিযান থেকে ফিরে এসে নিজের সওয়ারী থেকে পড়ে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেন। [২৭৮৮, ২৭৮৯; মুসলিম ৩৩/৪৯, হাঃ ১৯১২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৪)
بَاب مَنْ زَارَ قَوْمًا فَقَالَ عِنْدَهُمْ
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ إِسْحَاقَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا ذَهَبَ إِلَى قُبَاءٍ يَدْخُلُ عَلَى أُمِّ حَرَامٍ بِنْتِ مِلْحَانَ فَتُطْعِمُهُ، وَكَانَتْ تَحْتَ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، فَدَخَلَ يَوْمًا فَأَطْعَمَتْهُ، فَنَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ اسْتَيْقَظَ يَضْحَكُ. قَالَتْ فَقُلْتُ مَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ " نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَىَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ، يَرْكَبُونَ ثَبَجَ هَذَا الْبَحْرِ، مُلُوكًا عَلَى الأَسِرَّةِ ". ـ أَوْ قَالَ " مِثْلُ الْمُلُوكِ عَلَى الأَسِرَّةِ ". شَكَّ إِسْحَاقُ ـ قُلْتُ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. فَدَعَا ثُمَّ وَضَعَ رَأْسَهُ فَنَامَ، ثُمَّ اسْتَيْقَظَ يَضْحَكُ فَقُلْتُ مَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَىَّ، غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ، يَرْكَبُونَ ثَبَجَ هَذَا الْبَحْرِ، مُلُوكًا عَلَى الأَسِرَّةِ ". أَوْ " مِثْلَ الْمُلُوكِ عَلَى الأَسِرَّةِ ". فَقُلْتُ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. قَالَ " أَنْتِ مِنَ الأَوَّلِينَ ". فَرَكِبَتِ الْبَحْرَ زَمَانَ مُعَاوِيَةَ، فَصُرِعَتْ عَنْ دَابَّتِهَا حِينَ خَرَجَتْ مِنَ الْبَحْرِ، فَهَلَكَتْ.
Narrated Anas bin Malik:
Whenever Allah's Messenger (ﷺ) went to Quba, he used to visit Um Haram bint Milhan who would offer him meals; and she was the wife of 'Ubada bin As-samit. One day he went to her house and she offered him a meal, and after that he slept, and then woke up smiling. She (Um Haram) said, "I asked him, 'What makes you laugh, O Allah's Messenger (ﷺ)?' He said, 'Some people of my followers were displayed before me as warriors fighting for Allah's Cause and sailing over this sea, kings on thrones,' or said, 'like kings on thrones.' (The narrator, 'Is-haq is in doubt about it.) I (Um Haram) said, 'O Allah's Apostle! Invoke Allah that He may make me one of them.' He invoked (Allah) for her and then lay his head and slept again and then woke up smiling. I asked, 'What makes you laugh, O Allah's Messenger (ﷺ)?' He said, 'Some people of my followers were displayed before me as warriors fighting for Allah's Cause and sailing over this sea, kings on the thrones,' or said, 'like kings on the thrones.' I (Um Haram) said, 'O Allah's Messenger (ﷺ)! Invoke Allah that He may make me one of them.' He said, You will be amongst the first ones." It is said that Um Haram sailed over the sea at the time of Muawiya, and on coming out of the sea, she fell down from her riding animal and died.
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৪৬. গোপনীয়তা রক্ষা করা।
৬২৮৯. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে একটি বিষয় গোপনে বলেছিলেন। আমি তাঁর পরেও কাউকে তা জানাইনি। এটা সম্পর্কে উম্মু সুলায়ম আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁকেও বলিনি। [মুসলিম ৪৪/৩২, হাঃ ২৪৮২, আহমাদ ১৩২৯২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৯)
بَاب حِفْظِ السِّرِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ صَبَّاحٍ، حَدَّثَنَا مُعْتَمِرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ سَمِعْتُ أَبِي قَالَ، سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، أَسَرَّ إِلَىَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم سِرًّا فَمَا أَخْبَرْتُ بِهِ أَحَدًا بَعْدَهُ، وَلَقَدْ سَأَلَتْنِي أُمُّ سُلَيْمٍ فَمَا أَخْبَرْتُهَا بِهِ.
Narrated Anas bin Malik:
The Prophet (ﷺ) confided to me a secret which I did not disclose to anybody after him. And Um Sulaim asked me (about that secret) but I did not tell her.
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/৪৮. দীর্ঘক্ষণ কারো সাথে কানে-কানে কথা বলা।
(وَإِذْ هُمْ نَجْوَى) مَصْدَرٌ مِنْ نَاجَيْتُ، فَوَصَفَهُمْ بِهَا، وَالْمَعْنَى يَتَنَاجَوْنَ.
আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ’’তারা গোপনে পরস্পর আলোচনায় বসে।’’ (সূরাহ ইসরা ১৭/৪৭) نَاجَيْتُ শব্দটির মাসদার হচ্ছে نَجْوَى। এর দ্বারাই তাদের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে পরস্পর চুপিসারে কথা বলাবলি করা।
৬২৯২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন। একবার সালাতের ইক্বামাত (ইকামত/একামত) হয়ে গেলো, তখনও একজন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কানে-কানে কথা বলছিলেন এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে তিনি এভাবে আলাপ করতে থাকলেন। এমনকি তাঁর সঙ্গীগণ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। [৬৪২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪২)
بَاب طُولِ النَّجْوَى
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ، عَنْ أَنَس ٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ وَرَجُلٌ يُنَاجِي رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَمَا زَالَ يُنَاجِيهِ حَتَّى نَامَ أَصْحَابُهُ، ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى.
Narrated Anas:
The Iqama for the prayer was announced while a man was talking to Allah's Messenger (ﷺ) privately. He continued talking in that way till the Prophet's companions slept, and afterwards the Prophet (ﷺ) got up and offered the prayer with them.
পরিচ্ছেদঃ ৮০/১. প্রত্যেক নাবীর মাকবূল দু‘আ আছে।
৬৩০৫. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, প্রত্যেক নবীই যা চাওয়ার চেয়ে নিয়েছেন। অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক নবীকে যে দু’আর অধিকার দেয়া হয়েছিল তিনি সে দু’আ করে নিয়েছেন এবং তা কবূলও করা হয়েছে। কিন্তু আমি আমার দু’আকে কিয়ামতের দিনে আমার উম্মাতের শাফায়াতের জন্য রেখে দিয়েছি। [মুসলিম ১/৮৬, হাঃ ২০০, আহমাদ ১৩৭০৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫৩)
بَاب لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ
وَقَالَ لِي خَلِيفَةُ قَالَ مُعْتَمِرٌ سَمِعْتُ أَبِي عَنْ أَنَسٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلُّ نَبِيٍّ سَأَلَ سُؤْلاً أَوْ قَالَ لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ قَدْ دَعَا بِهَا فَاسْتُجِيبَ فَجَعَلْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لأ÷ُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
Narrated Anas:
that the Prophet (ﷺ) said, "For every prophet there is an invocation that surely will be responded by Allah," (or said), "For every prophet there was an invocation with which he appealed to Allah, and his invocation was accepted (in his lifetime), but I kept my (this special) invocation to intercede for my followers on the Day of Resurrection."
পরিচ্ছেদঃ ৮০/৪. তাওবাহ করা।
৬৩০৯. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বান্দার তওবার কারণে সেই লোকটির চেয়েও অধিক খুশী হন, যে লোকটি মরুভূমিতে তাঁর উট হারিয়ে পরে তা পেয়ে যায়। [মুসলিম ৪৯/১, হাঃ ২৭৪৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫৭)
بَاب التَّوْبَةِ
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ، أَخْبَرَنَا حَبَّانُ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم. وَحَدَّثَنَا هُدْبَةُ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " اللَّهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلَى بَعِيرِهِ، وَقَدْ أَضَلَّهُ فِي أَرْضِ فَلاَةٍ ".
Narrated Anas bin Malik:
Allah's Messenger (ﷺ) said, "Allah is more pleased with the repentance of His slave than anyone of you is pleased with finding his camel which he had lost in the desert. "
পরিচ্ছেদঃ ৮০/১৫. পায়খানায় প্রবেশের দু‘আ।
৬৩২২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন তিনি বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ” হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে যাবতীয় পুরুষ ও স্ত্রী শয়তানদের থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [১৪২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৭০)
হাদীসের শিক্ষা
১. বাথরুমে পায়খানা ব্যবহার করার জন্য গেলে উপরোক্ত দো'আ পাঠ করা সুন্নাত।
২. আলেমগণ বলেছেন, এর মাধ্যমে শয়তানের ওয়াসওয়াসা, কুমন্ত্রণা ও বিভিন্ন প্রকার ধোকা থেকে হিফাযত থাকা যায়। শয়তান ওযূতে সমস্যা করে, সালাত বিনষ্ট করতে চেষ্টা চালায় এসব থেকে বাঁচার জন্য এ দোআ করা উচিত।
৩. শয়তানের অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে মানুষকে ময়লা, পায়খানা ইত্যাদির মাধ্যমে অশুচি করে ফেলবে। তাই শয়তানদের থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া জরুরী।
৪. ময়লা ও অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকা ফরয: অনুরূপভাবে যা মানুষকে এসব থেকে বাঁচাতে পারবে তা অবলম্বন করাও জরুরী; কারণ হাদীসে পেশাব থেকে না বাঁচার কারণে কবরে শাস্তি হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে।
৫. 'ইস্তেআযাহ' হচ্ছে অদৃশ্য শত্রুর ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় চাওয়া। এটি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে চাওয়ার অর্থ হচ্ছে শির্ক করা। সুতরাং ইস্তেআযাহ কেবল আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে।
بَاب الدُّعَاءِ عِنْدَ الْخَلاَءِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَرْعَرَةَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ صُهَيْبٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ قَالَ " اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ ".
Narrated Anas bin Malik:
Whenever the Prophet (ﷺ) went to the lavatory, he used to say: "Allahumma Inni a`udhu bika minalkhubthi Wal khaba'ith."
পরিচ্ছেদঃ ৮০/১৯. আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ তুমি দু‘আ করবে..... সূরা আত্ তাওবাহ ৯/১০৩)।
৬৩৩৪. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেনঃ আনাস তো আপনারই খাদিম। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দিন এবং আপনি তাকে যা কিছু দান করেছেন, তাতে বারাকাত দিন। [১৯৮২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৮২)
باب قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى {وَصَلِّ عَلَيْهِمْ}
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ الرَّبِيعِ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا، قَالَ قَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَسٌ خَادِمُكَ. قَالَ " اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ، وَبَارِكْ لَهُ فِيمَا أَعْطَيْتَهُ ".
Narrated Anas:
Um Sulaim said to the Prophet (ﷺ) "Anas is your servant." The Prophet (ﷺ) said, "O Allah! increase his wealth and offspring, and bless (for him) what ever you give him."
পরিচ্ছেদঃ ৮০/২১. কবূল হবার দৃঢ় আশা নিয়ে দু‘আ করবে। কারণ কবূল করতে আল্লাহ্কে বাধা দানকারী কেউ নেই।
৬৩৩৮. আনাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দু’আ করলে দু’আর সময় দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দু’আ করবে এবং এ কথা বলবে না হে আল্লাহ! আপনার ইচ্ছে হলে আমাকে কিছু দিন। কারণ আল্লাহকে বাধ্য করার কেউ নেই। [৭৪৬৪; মুসলিম ৪৫/৩৭, হাঃ ২৬১৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৮৬)
بَاب لِيَعْزِمْ الْمَسْأَلَةَ فَإِنَّه لاَ مُكْرِهَ لَهُ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلْيَعْزِمِ الْمَسْأَلَةَ، وَلاَ يَقُولَنَّ اللَّهُمَّ إِنْ شِئْتَ فَأَعْطِنِي. فَإِنَّهُ لاَ مُسْتَكْرِهَ لَهُ ".
Narrated Anas:
Allah's Messenger (ﷺ) said, "When anyone of you appeal to Allah for something, he should ask with determination and should not say, 'O Allah, if You wish, give me.', for nobody can force Allah to do something against His Will.
পরিচ্ছেদঃ ৮০/২৩. অধ্যায়ঃ দু‘আর সময় দু’খানা হাত উঠানো।*
وَقَالَ أَبُو مُوسَى الأَشْعَرِيُّ دَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ، وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ.
وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ رَفَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدٌ
আবূ মূসা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’খানা হাত এতটুকু উঠিয়ে দু’আ করতেন যে, আমি তাঁর বগলের ফর্সা রং দেখতে পেয়েছি। ইবনু ’উমার(রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’খানা হাত উঠিয়ে দু’আ করেছেনঃ হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তা থেকে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছি।
৬৩৪১. অন্য এক সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ হাত এতটুকু তুলে দু’আ করেছেন যে, আমি তার বগলের শুভ্রতা দেখতে পেয়েছি। [১০৩১] (আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)
যে সকল স্থানে হাত তুলে দু‘আ করা যায়
১) বৃষ্টি প্রার্থনার জন্যঃ
আনাস ইবনু মালেক (রাযিঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী কারীম (ﷺ)-এর যামানায় এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সে সময় একদিন নাবী (ﷺ) খুৎবা প্রদানকালে জনৈক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, পরিবার পরিজন অনাহারে মরছে। আপনি আমাদের জন্য দু‘আ করুন। অতঃপর রসূল (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক দু‘আ করলেন। সে সময় আকাশে কোন মেঘ ছিল না। রাবী বলেন) আল্লাহর কসম করে বলছি, তিনি হাত না নামাতেই পাহাড়ের মত মেঘের খন্ড এসে একত্র হয়ে গেল এবং তাঁর মিম্বর থেকে নামার সাথে সাথেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল। এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত হ’তে থাকল। অতঃপর পরবর্তী জুম‘আর দিনে সে বেদুঈন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লহর রসূল (ﷺ) অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে, ফসল ডুবে যাচ্ছে। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দু‘আ করুন। তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টি দাও, আমাদের এখানে নয়। এ সময় তিনি স্বীয় অঙ্গুলি দ্বারা মেঘের দিকে ইশারা করেছিলেন। ফলে সেখান থেকে মেঘ কেটে যাচ্ছিল। বুখারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১২৭, হা/৯৩৩ জুম‘আর ছালাত’ অধ্যায়)
আনাস ইবনু মালেক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জুম‘আর দিন জনৈক বেদুঈন রসূল (ﷺ)এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! বৃষ্টির অভাবে গৃহপালিত পশুগুলো মারা যাচ্ছে। মানুষ খতম হয়ে যাচ্ছে। তখন রসূল (ﷺ) দু‘আর জন্য দু’ হাত উঠালেন। আর লোকেরাও রসূল (ﷺ)-এর সাথে হাত উঠাল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল। এমনকি পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত বৃষ্টি বর্ষিত হ’তে থাকল। তখন একটি লোক রসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লহর রসূল! রাস্তা-ঘাট অচল হয়ে গেল’। (বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪০, হা/১০২৯ ‘ইসতিস্কা’ অধ্যায়)
আনাস (রাযিঃ) বলেন, কোন এক জুম‘আয় কোন এক ব্যক্তি দারুল কোযার দিক হ’তে মসজিদে প্রবেশ করল এমতাবস্থায় যে, রসূল (ﷺ) তখন খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন, আল্লাহ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করবেন। আনাস (রাযিঃ) বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন করতঃ প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন! হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দান করুন! বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৭; মুসলিম ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৩-২৯৪)
আনাস রাযিঃ) বলেন, আমি রসূল (ﷺ)-কে হস্তদ্বয়ের পিঠ আকাশের দিকে করে পানি চাইতে দেখেছি। মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৯৮ ‘ইসতিস্কা’ অনুচ্ছেদ)
আনাস রাযিঃ) বলেন, নাবী কারীম (ﷺ) বৃষ্টির জন্য ছাড়া অর্থাৎ বৃষ্টির জন্য দু‘আ ছাড়া জামাতবদ্ধভাবে অন্য কোথাও হাত তুলতেন না। আর হাত এত পরিমাণ উঠাতেন যে, তার বগলের শুভ্র অংশ দেখা যেত। বুখারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪০, হা/১০৩১; মিশকাত হা/১৪৯৯)
২) বৃষ্টি বন্ধের জন্যঃ
আনাস রাযিঃ) বলেন, পরবর্তী জুম‘আয় ঐ দরজা দিয়েই এক ব্যক্তি প্রবেশ করল রসূল (ﷺ) এর দাঁড়িয়ে খুৎবা দান রত অবস্থায়। অতঃপর লোকটি রসূল (ﷺ)-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন, আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দিবেন। রাবী আনাস রাযিঃ) বলেন, তখন রসূল (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক বললেন, হে আল্লহ! আমাদের নিকট থেকে বৃষ্টি সরিয়ে দিন, আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন না। হে আল্লাহ! অনাবাদী জমিতে, উঁচু জমিতে উপত্যকায় এবং ঘন বৃক্ষের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন। বুখারী, ১ম খন্ড, ১৩৭ পৃঃ; মুসলিম, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৩-২৯৪)
৩) চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময়ঃ
আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ রাযিঃ) বলেন, আমি রসূল (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় এক সময় তীর নিক্ষেপ করছিলাম। হঠাৎ দেখি সূর্যগ্রহণ লেগেছে। আমি তীরগুলো নিক্ষেপ করলাম এবং বললাম, আজ সূর্যগ্রহণে রসূল (ﷺ)-এর অবস্থান লক্ষ্য করব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট পৌছলাম। তিনি তখন দু’হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করছিলেন এবং তিনি ‘আল্লাহু আকবার’, ‘আল হামদুলিল্লাহ’, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলছিলেন। শেষ পর্যন্ত সূর্য প্রকাশ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি দু’টি সূরা পড়লেন এবং দু’রাক‘আত সলা-ত আদায় করলেন’। (মুসলিম ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৯ হা/৯১৩, ‘চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের ছালাত’ অধ্যায়)
৪) উম্মাতের জন্য রসূল(ﷺ) এর দু‘আঃ
আবদুল্লা-হ ইবনু আমর ইবনু ‘আস (রাযিঃ) বলেন, একদা রসূল সূরা ইবরাহীমের ৩৫ নং আয়াত পাঠ করে দু’হাত উঠিয়ে বলেন, আমার উম্মাত, আমার উম্মাত এবং কাঁদতে থাকেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের নিকট যাও এবং জিজ্ঞেস কর, কেন তিনি কাঁদেন। অতঃপর জিবরীল তাঁর নিকটে আগমন করে কাঁদার কারণ জানতে চাইলেন। তখন রসূল (ﷺ) তাঁকে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তা অবগত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জিবরীলকে বললেন, যাও, মুহাম্মাদকে বল যে, আমি তার উপর এবং তার উম্মতের উপর সন্তুষ্ট আছি। আমি তার অকল্যাণ করব না’। (মুসলিম, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৩, হা/ ৩৪৬ ‘ ঈমান’ অধ্যায়)
৫) কবর যিয়ারতের সময়ঃ
আয়েশা রাযিঃ) বলেন, একদা রাতে রসূল আমার নিকটে ছিলেন। শোয়ার সময় চাদর রাখলেন এবং জুতা খুলে পায়ের নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন। তিনি অল্প সময় এ খেয়ালে থাকলেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। অতঃপর ধীরে চাদর ও জুতা নিলেন এবং ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেন এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন। তখন আমিও কাপড় পরে চাদর মাথায় দিয়ে তাঁর পিছনে চললাম। তিনি ‘‘বাক্বীউল গারক্বাদে’’ জান্নাতুল বাক্বী) পৌঁছলেন এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিন তিন বার হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করলেন। (মুসলিম ১ম খন্ড, পৃঃ ৩১৩, হা/৯৭৪ ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৫)
‘আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, কোন এক রাতে রসূল বের হ’লেন, আমি বারিরা (রাযিঃ) কে পাঠালাম, তাঁকে দেখার জন্য যে, তিনি কোথায় যান। তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে গেলেন এবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন। অতঃপর হাত তুলে দু‘আ করলেন। তারপর ফিরে আসলেন। বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল। আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন? তিনি বললেন, জান্নাতুল বাক্বীতে গিয়েছিলাম কবরবাসীর জন্য দু‘আ করতে। [ইমাম বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন, পৃঃ ১৭, হাদীস ছহীহ; মুসলিম হা/ ৯৭৪ মর্মার্থ)]।
৬) কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে হাত তুলে দু‘আঃ
আউতাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে তীর লাগলে আবূ আমের স্বীয় ভাতিজা আবূ মূসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে, আপনি আমার পক্ষ থেকে রসূল (ﷺ)-কে সালাম পৌঁছে দিবেন এবং ক্ষমা চাইতে বলবেন। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং ওযূ করলেন। অতঃপর হাত তুলে প্রার্থনা করলেন ‘হে আল্লাহ! উবাইদ ও আবূ আমেরকে ক্ষমা করে দাও। রাবী বলেন) এ সময়ে আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন তুমি তাকে তোমার সৃষ্টি মানুষের অনেকের ঊর্ধ্বে করে দিও’। (বুখারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৪৪, হা/৪৩২৩ ও ৬৩৮৩ ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়)
৭) হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময়ঃ
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিঃ) তিনটি জামারায় সাতটি পাথর খন্ড নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। প্রথম দু’ জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর ক্বিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দু‘আ করতেন। তবে তৃতীয় জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর দাঁড়াতেন না। শেষে বলতেন, আমি রসূল ﷺ-কে এগুলো এভাবেই পালন করতে দেখেছি’।
(বুখারী ১ম খন্ড পৃঃ ২৩৬, হা/১৭৫১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)
৮) যুদ্ধক্ষেত্রেঃ
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূল (ﷺ) বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন, তাদের সংখ্যা এক হাজার। আর তাঁর সাথীদের সংখ্যা মাত্র তিনশত ঊনিশ জন। তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু‘আ করতে লাগলেন। এ সময় তিনি বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করেছ। হে আল্লাহ! তুমি যদি এই জামা‘আতকে আজ ধ্বংস করে দাও, তাহ’লে এই যমীনে তোমাকে ডাকার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। এভাবে তিনি উভয় হাত তুলে ক্বিবলামুখী হয়ে প্রার্থনা করতে থাকলেন। এ সময় তাঁর কাঁধ হ’তে চাদরখানা পড়ে গেল। আবূ বকর তখন চাদরখানা কাঁধে তুলে দিয়ে রসূল (ﷺ)-কে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতিপালক প্রার্থনা কবুলে যথেষ্ট। নিশ্চয়ই তিনি আপনার সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করবেন। (মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৩, হা/১৭৬৩, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৮)।
৯) কোন গোত্রের জন্য দু‘আ করাঃ
আবূ হুরায়রা বলেন, একদা আবূ তুফাইল রসূল (ﷺ) এর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল ! দাঊস গোত্রও অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে, আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু‘আ করুন। তখন রসূল (ﷺ) ক্বিবলামুখী হ’লেন এবং দু’হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি দাঊস গোত্রকে হেদায়াত দান কর এবং তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আস’। (বুখারী, মুসলিম, ছহীহ আল আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ২০৯, হা/৬১১ সনদ ছহীহ)
১০) সাফা-মারওয়া সায়ী করার সময়ঃ
আবূ হুরায়রা বলেন, রসূল (ﷺ) মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং পাথরের নিকট এসে পাথর চুম্বন করলেন, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং ছাফা পাহাড়ে এসে তার উপর উঠলেন। অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহর দিকে লক্ষ্য করে দু’হাত উত্তোলনপূর্বক আল্লাহ্কে ইচ্ছামত স্মরণ করতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন। (ছহীহ আবূ দাঊদ, হা/১৮৭২ সনদ ছহীহ মিশকাত হা/২৫৭৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)
১১) কুনূতে নাযেলার সময়ঃ
আবূ ওসামা হতে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) কুনূতে নাযেলায় হাত তুলে দু‘আ করেছিলেন। (ইমাম বুখারী, রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন সনদ ছহীহ)
হাত তুলে দু‘আ করার অন্যান্য সহীহ হাদীসসমূহঃ
১২) খালিদ বিন ওয়ালিদ -এর অপছন্দ কর্মের কারণে হাত তুলে দু‘আঃ
সালেমের পিতা হ’তে বর্ণিত, নাবী কারীম (ﷺ) খালেদ ইবনু ওয়ালীদকে বনী জাযীমার বিরুদ্ধে এক অভিযানে পাঠালেন। খালেদ তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করে নিল। কিন্তু ‘ইসলাম গ্রহণ করেছি’ না বলে তারা বলতে লাগল, ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি’ ‘আমরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি। তখন খালেদ তাদেরকে কতল ও বন্দী করতে লাগলেন এবং বন্দীদেরকে আমাদের প্রত্যেকের হাতে সমর্পণ করতে থাকলেন। একদিন খালেদ আমাদের প্রত্যেককে স্ব স্ব বন্দী হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নিজের বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সাথীদের কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবে না। অবশেষে আমরা নাবী কারীম-এর খেদমতে হাযির হ’লাম তাঁর কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলাম। তখন নাবী কারীম (ﷺ) স্বীয় হস্ত উত্তোলন পূর্বক প্রার্থনা করলেন, ‘হে আল্লাহ! খালেদ যা করেছে তার দায় থেকে আমি মুক্ত। এ কথা তিনি দু’বার বললেন। (বুখারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৬২২, হা/৪৩৩৯ ‘মাগাযী’ অধ্যায়)
১৩) সদাক্বাহ আদায়কারীর ভুল মন্তব্য শুনে হাত তুলে দু‘আঃ
আবূ হুমায়েদ সায়েদী বলেন, একবার নাবী (ﷺ) ইবনু লুত্ববিইয়াহ নামক ‘আসাদ’ গোত্রের এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করলেন। তখন সে যাকাত নিয়ে মদীনায় ফিরে এসে বলল, এ অংশ আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এ অংশ আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে নাবী (ﷺ) ভাষণ দানের জন্য দাঁড়ালেন এবং প্রথমে আল্লাহর গুণগান বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, আমি তোমাদের কোন ব্যক্তিকে সে সকল কাজের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করি, যে সকল কাজের দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর সমর্পণ করেছেন। অতঃপর তোমাদের সে ব্যক্তি এসে বলে যে, এটা আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এটা আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতা-মাতার ঘরে বসে থাকল না? দেখা যেত কে তাকে হাদিয়া দিয়ে যায়। আল্লাহর কসম, যে ব্যক্তি এর কোন কিছু গ্রহণ করবে, যে নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তা আপন ঘাড়ে বহন করে হাযির হবে। যদি আত্মসাৎকৃত বস্তু উট হয়, উটের ন্যায় ‘চি চি’ করবে, যদি গরু হয় তবে ‘হাম্বা হাম্বা’ করবে। আর যদি ছাগল-ভেড়া হয়, তবে ‘ম্যা ম্যা’ করবে। অতঃপর রসূল (ﷺ) স্বীয় হস্তদ্বয় উঠালেন, তাতে আমরা তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তোমার নির্দেশ পৌঁছে দিলাম। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি পৌঁছে দিলাম’। (বুখারী পৃঃ ৯৮২,হা/৬৬৩৬ ‘কসম ও মানত’ অধ্যায়)
১৪) মুমিনকে কষ্ট বা গালি দেয়ার প্রতিকারে হাত তুলে দু‘আঃ
আয়েশা রসূল (ﷺ)-কে হাত তুলে দু‘আ করতে দেখেন। তিনি দু‘আয় বলছিলেন, নিশ্চয়ই আমি মানুষ। কোন মুমিনকে গালি বা কষ্ট দিয়ে থাকলে তুমি আমাকে শাস্তি প্রদান কর না’। ছহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৬১০, পৃঃ ২০৯; সিলসিলা ছহীহা, হা/৮২-৮৩ সনদ ছহীহ)
সম্মানিত পাঠকগণ! আলোচ্য অধ্যায়ে হাত তুলে দু‘আ করার প্রমাণে অনেকগুলো হাদীস পেশ করা হল, যদ্দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাত তুলে দু‘আ করার বিধান শরী‘আতে রয়েছে। উক্ত হাদীসগুলোতে এককভাবে হাত তুলে দু‘আ করার কথা এসেছে। শুধু প্রথম হাদীসটিতে সম্মিলিতভাবে হাত তুলার কথা এসেছে যা ইসতিসক্বা বা পানি চাওয়া সংক্রান্ত। ইসতিসক্বা বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত যাতে সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার কথা আছে। তাই এ দু‘আ করতে গিয়ে রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিয়ম-পদ্ধতির এক চুলও ব্যতিক্রম করা যাবে না যে ক্ষেত্রে যেভাবে দু‘আ করার কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে সেভাবেই দু‘আ করতে হবে। কেননা দু‘আও ইবাদতেরই অংশ বিশেষ। অতএব এর ব্যতিক্রম ঘটলে তা বিদ‘আতে পরিণত হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭ ‘ঈমান’ অধ্যায়)
হাত তুলে দু‘আর প্রমাণে পেশকৃত য‘ঈফ হাদীসসমূহঃ
১) আনাস ইবনু মালিক বলেন, নাবী (ﷺ) বলেছেনঃ যখন কোন বান্দা প্রত্যেক সালাতের পর দু’হাত প্রশস্ত করে, অতঃপর বলে, হে আমার মা‘বূদ এবং ইবরাহীম, ইসহাক্ব ‘আ.-এর মা‘বূদ এবং জিবরীল, মীকাইল ও ইসরাফীল ‘আ.-এর মা‘বূদ, তোমার কাছে আমি চাচ্ছি, তুমি আমার প্রার্থনা কবুল কর। আমি বিপথগামী, তুমি আমাকে আমার দ্বীনের উপর রক্ষা কর। তুমি আমার উপর রহমত বর্ষণ কর। আমি অপরাধী, তুমি আমার দরিদ্রতা দূর কর। আমি দৃঢ়ভাবে তোমাকে গ্রহণ করি। তখন আল্লাহর উপর হক্ব হয়ে যায় তার খালি হাত দু’খানা ফেরত না দেয়া। (ইবনুস সুন্নী, আমলুল ইয়াম ওয়াল লাইল ৪৯ পৃঃ)
হাদীসটি য‘ঈফ। হাদীসটির সনদে ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুর রহমান ও খাদীফ নামে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে।
তা সত্ত্বেও অত্র দুর্বল হাদীসে একক ব্যক্তির হাত তুলে দু‘আ প্রমাণিত হয়, দলবদ্ধভাবে দু‘আ প্রমাণিত হয় না।
২) আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত, একদা রসূল (ﷺ) সালাম ফিরার পর ক্বিবলা মুখ হয়ে দু’হাত উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে পরিত্রাণ দাও। আইয়াশ, ইবনু আবী রবী‘আহ, সালাম ইবনু হিশাম এবং দুর্বল মুসলিমদের পরিত্রাণ দাও। যারা কোন কৌশল জানে না। যারা কাফিরদের হাত হতে কোন পথ পায় না- ইবনু কাসীর ২য় খন্ড, পৃঃ ৫৫৫; সূরা নিসা ৯৭ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ)। হাদীসটি য‘ঈফ [ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব বৈরুত ছাপা ১৯৯৪), ৭/২৭৪ রাবী নং ৪৯০৫]
আলোচ্য হাদীসে ‘আলী ইবনু যায়দ ইবনু জাদ‘আন য‘ঈফ রাবী। [ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাক্বরীব বৈরুত ছাপা ১৯৮৮), পৃঃ ৪০১ রাবী নং ৪৭৩৪। এ ‘আলীকে শাইখ আলবানীও দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন, (দেখুন ‘‘যিলালিল জান্নাহ্’’ ৬৩০), ‘‘আল-ইসরা ওয়াল মি‘রাজ’’ পৃঃ ৫২) ও কিসসাতু মাসীহিদ দাজ্জাল’’ গ্রন্থে পৃঃ ৯৪) অন্য প্রসঙ্গে বর্ণিত একটি হাদীসে]
আলোচ্য হাদীসটি মুনকার তথা সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম সহ বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত সহীহ্ হাদীস বিরোধী। আবূ হুরাইরাহ রাযিঃ) বর্ণিত বুখারীর হাদীসে সালাতের মধ্যে রুকূ‘র পর দু‘আ করার কথা রয়েছে। অথচ এ দুর্বল হাদীসে সালামের পরের কথা রয়েছে। বুখারীর হাদীসে হাত তোলার কথা নেই, কিন্তু এ হাদীসে হাত তোলার কথা বলা হয়েছে। অথচ ঘটনা একটিই এবং দু‘আ হ’ল কুনূতে নাযিলা। (সহীহুল বুখারী হাঃ ২৯৩২, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৯৮, মুসলিম ৬৭৫, নাসাঈ ১০৭৪, আবূ দাঊদ ১৪৪২, ইবনু মাজাহ্ ১২৯৪, আহমাদ ৭৪১৫ ও দারেমী ১৫৯৫)
অতএব সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আর প্রমাণ পেশ করা শরীয়ত বিকৃত করার শামিল।
৩) ইবনু ‘আববাস বলেন, রসূল (ﷺ) বলেছেন, সালাত দু’ দু’ রাক‘আত এবং প্রত্যেক দু’রাক‘আতেই তাশাহহুদ, ভয়, বিনয় ও দীনতার ভাব থাকবে। অতঃপর তুমি ক্বিবলামুখী হয়ে তোমার দু’হাতকে তোমার মুখের সামনে উঠাবে এবং বলবে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! যে এরূপ করবে না তার সালাত অসম্পূর্ণ- (মিশকাত পৃঃ ৭৭, হাঃ ৮০৫ ‘সালাতের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ)। হাদীসটি য‘ঈফ। ‘আবদুল্লাহ ইবনু নাফি‘ ইবনিল আময়া য‘ঈফ রাবী। (আলবানী যঈফ আবী দাঊদ হাঃ ১২৯৬, য‘ঈফ ইবনে মাজাহ্ ১৩২৫, সহীহ্ ইবনে খুযায়মাহ্ ১২১২ য‘ঈফ), যঈফুল জামে‘ আস-সগীর হাঃ ৩৫১২; তাহক্বীক্ব মিশকাত হাঃ ৮০৫-এর টীকা নং ৩; তাক্বরীবুত তাহযীব পৃঃ ৩২৬, রাবী নং ৩৬৫৮)
হাদীসটি দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও এতে নফল সালাতের কথা বলা হয়েছে এবং এককভাবে দু‘আর কথা এসেছে।
৪) খাল্লাদ ইবনু সায়িব হ’তে বর্ণিত, রসূল (ﷺ) যখন দু’আ করতেন, তখন তাঁর দু’হাত মুখের সামনে উঠাতেন- মাযমাউয যাওয়ায়েদ ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৯)। (হাদীসটি য‘ঈফ। হাফস্ ইবনু হাশি ইবনু ‘উত্বাহ্ য‘ঈফ রাবী। তাক্বরীবুত তাহযীব পৃঃ ১৭৪, রাবী নং ১৪৩৪)
৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস বলেন, রসূল (ﷺ)বলেছেন, তোমরা হাতের পেট দ্বারা চাও পিঠ দ্বারা চেয়ো না। অতঃপর তোমরা যখন দু‘আ শেষ কর তখন তোমাদের হাত দ্বারা চেহারা মুছে নাও’। [হাদীসটি দুর্বল, দেখুন ‘‘য‘ঈফ আবী দাঊদ’’ ১৪৮৫, উল্লেখ্য দাগ দেয়া অংশ বাদে হাদীসটি দুর্বল। দাগ দেয়া অংশটুকু সহীহ্, দেখুন ‘‘সহীহ্ আবী দাঊদ’’ ১৪৮৬, ‘‘সহীহ্ জামে‘ইস সাগীর’’ ৫৯৩, ৩৬৩৪ ও ‘‘ সিলসিলা আহাদীসিস সহীহাহ’’ ৫৯৫)।]
প্রকাশ থাকে যে, হাত তুলে দু‘আ করার পর হাত মুছার প্রমাণে কোন সহীহ হাদীস নেই। বিস্তারিত দেখুন- ইরওয়াউল গালীল ২/১৭৮-১৮২, হাঃ ৪৩৩ ও ৪৩৪-এর আলোচনা তাহক্বীক মিশকাত হাঃ ২২৫৫ এর টীকা নং ৪।
৬) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রসূল (ﷺ) যখন দু‘আ করতেন তখন দু’হাত উঠাতেন এবং দু’হাত দ্বারা চেহারা মুছে নিতেন- (আবূ দাঊদ, হাঃ ১৪৯২, মিশকাত হাঃ ২২৫৫)। হাদীসটি য‘ঈফ। আলোচ্য হাদীসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু লাহইয়াহ নামক রাবী য‘ঈফ। (যঈফ আবূ দাঊদ হাঃ ১৪৯২, পৃঃ ১১২; আউনুল মা‘বূদ ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৬০; তাক্বরীব পৃঃ ৩১৯ রাবী নং ৩৫৬৩)
৭) ‘আসওয়াদ ‘আমিরী তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, আমি রসূল (ﷺ)-এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করেছি। যখন তিনি সালাম ফিরালেন এবং ঘুরলেন তখন হাত উঠিয়ে দু‘আ করলেন। ইবনু আবী শায়বা ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৭)
প্রকাশ থাকে যে, رفع يديه ودعا রসূল (ﷺ) তাঁর দু’হাত উঠালেন এবং দু‘আ করলেন’ এ অংশটুকু মূল হাদীসে নেই (ইবনু আবী শায়বা) [ইবনু আবী শায়বা, আল-মুছান্নাফ বৈরুতঃ দারুল ফিকর, ১৯৮৯), ১/৩৩৭, ছালাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৬] মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী এবং আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তাঁরা নিজ নিজ গ্রন্থে হাদীসগুলো আলোচনা করেছেন। কিন্তু সহী জঈফের মানদন্ডে হাদীসগুলো সহীহ নয়। তাই এখনো যারা এ হাদীস বক্তব্য বা লিখনীর মাধ্যমে প্রচার করতে চাইবেন তাদেরকে অবশ্যই হাদীসের মূল কিতাব দেখে পরিত্যাগ করতে হবে অন্যথা তারা হবেন নাবীর উপর মিথ্যারোপকারী এবং মিথ্যা প্রচারকারী, যাদের পরিণতি ভয়াবহ’। (মুসলিম, মিশকাত হাঃ ১৯৮, ১৯৯ ‘ইলম অধ্যায়)
৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের একজন লোককে সালাত শেষের পূর্বে হাত তুলে দু‘আ করতে দেখলেন। যখন তিনি দু‘আ শেষ করলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের তাকে বললেন, রসূল (ﷺ) ছালাত শেষ না করা পর্যন্ত হাত তুলে দু‘আ করতেন না- মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৯)। হাদীসটি য‘ঈফ, মুনকার), সহীহ হাদীস বিরোধী। সহীহ হাদীসে সলা-তের মধ্যে রুকুর পর কুনুতে নাযেলা পড়ার সময় হাত তুলার কথা আছে- (আহমাদ, তাবরানী, সনদ ছহীহ, ইরওয়াল গালীল, ২/১৮১, হা/৮৩৮-এর আলোচনা দ্রঃ)। তবে সালাতের পর হাত তুলার কোন সহীহ হাদীস নেই।
৯) ‘আবূ নুঈম বলেন, আমি ওমর ও ইবনু যুবায়ের -কে তাদের দু’হাতের তালু মুখের সামনে করে দু‘আ করতে দেখেছি’। অত্র হাদীসে মুহাম্মাদ ইবনু ফোলাইহ এবং তার পিতা তারা দু’জনই য‘ঈফ রাবী। (আল আদাবুল মুফরাদ তাহক্বীক্ব হা/৬০৯ পৃঃ ২০৮ ‘দু‘আয় দু’হাত তুলা অনুচ্ছেদ, পৃঃ ২০৮)
১০) আবূ হুরায়রা বলেন, আমি রসূল ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, যখন আদম সন্তানের কোন দল একত্রিত হয়ে কেউ কেউ দু‘আ করে আর অন্যরা আ-মীন বলে, আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করেন- (মুস্তাদরাক হাকেম, ৩/৩৯০ পৃঃ হা/৫৪৭৮ ‘ছাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা অধ্যায়; তারগীব ওয়া তারহীব, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯০)। হাদীসটি য‘ঈফ। (ইবনু লাহইয়াহ নামে রাবী দুর্বল। তাক্বরীবুত তাহযীব, পৃঃ ৩১৯ রাবী নং ৩৫৬৩)
১১) একদা আলী হাজরামী ছাহাবী লোকদের নিয়ে সলা-ত আদায় করেন। সলা-ত শেষে হাঁটু গেড়ে বসেন, লোকেরাও হাঁটু গেড়ে বসে। তিনি হাত তুলে দু‘আ করেন এবং লোকেরা তার সাথে ছিল- (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ, ৩য় জিলদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৩৩২)। অত্র ঘটনাটি ইতিহাসে বর্ণিত থাকলেও এর কোন সনদ নেই।
প্রকাশ থাকে যে, হাদীসের সনদ থাকা সত্ত্বও কোন রাবী য‘ঈফ হ’লে তার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। আর অত্র ঘটনাটির কোন সনদই নেই। তাহ’লে তা দলীলের যোগ্য হয় কী করে? এ বিবরণকে হাদীস বললে ছাহাবীর উপর মিথ্যারোপ করা হবে।
১২) হুসাইন ইবনু ওয়াহওয়াহ হ’তে বর্ণিত, ত্বালহা ইবনু বারায়া মৃত্যুবরণ করলে তাকে রাতে দাফন করা হয়। সকালে রসূল (ﷺ)-কে সংবাদ দেয়া হ’লে রসূল (ﷺ) এসে কবরের পার্শ্বে দাঁড়ান এবং লোকেরাও তাঁর সাথে সারিবদ্ধ হয়। অতঃপর তিনি দু’হাত তুলে বলেন, হে আল্লা-হ! ত্বালহা তোমার উপর সন্তুষ্ট ছিল, তুমি তার উপর রহমত বর্ষণ কর- (তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)। (হাদীসটি য‘ঈফ, মুনকার, সহীহ হাদীস বিরোধী)। সহীহ হাদীসে কবরের পাশে জানাযা পড়ার কথা রয়েছে। (বুখারী, ১ম খন্ড, ‘জানাযা’ অধ্যায়)। উল্লেখ্য কবর যিয়ারাতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিকে সালাম প্রদানের পরে একাকী হাত তুলে দু‘আ করার সমর্থনে সহীহ্ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে কবরকে সামনে না করে কিবলাকে সামনে করে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দু‘আ করতে হবে এবং দু‘আ শেষে হাত মুখে মুছবে না। দেখুন ‘‘আহকামুল জানায়েয’’ মাসআলা নং ১২০ ও পৃষ্ঠা নং ২৪৬।
১৩) তোফায়েল -এর গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তার সাথে হিজরত করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সে তার কাঁধের রগ কেটে ফেলে এবং মৃত্যুবরণ করেন। তোফায়েল একদা স্বপ্নে তাকে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? তিনি বললেন, নাবী ﷺ-এর নিকট হিজরত করার কারণে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তোফায়েল রাযিঃ) বললেন, আপনার দু’হাতের খবর কী? তিনি বললেন, আমাকে বলা হয়েছে, তুমি যে অংশ নিজে নষ্ট করেছ, তা আমি কখনো ঠিক করব না। এ স্বপ্ন তোফায়েল রাযিঃ) রসূল সা) -এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি তার জন্য দু’হাত তুলে ক্ষমা চাইলেন- হাদীসটি য‘ঈফ। (য‘ঈফ আদাবুল মুফরাদ হা/৬১৪, পৃঃ ২১০)
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত য‘ঈফ হাদীস সমূহের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে বুঝা যায় যে, কোন কোন সময় সলা-তের পর এককভাবে হাত তুলে দু‘আ করা যায়। কিন্তু য‘ঈফ হওয়ার কারণে হাদীসগুলো রসূল (ﷺ)-এর কি-না, তা স্পষ্ট নয়। সে কারণে এর উপর ‘আমল করা থেকে বিরত থাকা যরূরী। বাংলা লিখনী জগতের রত্ন মাওলানা আব্দুর রহীম বলেন, কেবলমাত্র সহীহ হাদীস ব্যতীত অন্য কোন হাদীস গ্রহণ করা যাবে না। এ কথায় হাদীসের সকল ইমাম একমত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। (হাদীস সংকলনের ইতিহাস, পৃঃ ৪৪৫)
সিরিয়ার মুজাদ্দেদ আল্লামা জামালুদ্দীন কাসেমী, ইমাম বুখারী, মুসলিম, ইয়াহইয়া, ইবনু মুঈন, ইবনুল আরাবী, ইবন হযম ও ইবনু তায়মিয়া রহঃ) সহ অনেক হাদীসের পন্ডিত দৃঢ়কণ্ঠে ব্যক্ত করেছেন, ফাযীলাত কিংবা আহকাম কোন ব্যাপারেই য‘ঈফ হাদীস ‘আমলযোগ্য নয়। (ক্বাওয়াইদুত তাওহীদ পৃঃ ৯৫)
যারা সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করার পক্ষে মত পোষণ করেন, তারা পবিত্র কুরআন থেকে কিছু আয়াত এবং কিছু য‘ঈফ হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। নিম্নে তাদের দলীল সমূহের পর্যালোচনা তুলে ধরা হ’ল।
কুরআন থেকে দলীলঃ
১) তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার নিকট দু‘আ কর, আমি তোমাদের দু‘আ কবূল করব। যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ‘ইবাদত হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরাহ্ মু’মিন ৬০)
২) হে নাবী! আমার বান্দারা যদি আমার সম্পর্কে নিকট জিজ্ঞেস করে, তাহলে আপনি বলে দিন যে, আমি তাদের নিকটেই আছি। যে আমাকে ডাকে, আমি তার ডাক শ্রবণ করি এবং তার ডাকে সাড়া দেই। কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার উপর ঈমান আনা উচিত। তবেই তারা সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে। (সূরাহ্ বাক্বারাহ ১৮৬)
৩) তোমরা তোমাদের রবকে ভীতি ও বিনয় সহকারে গোপনে ডাক, নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না। সূরাহ্ আ‘রাফ ৫৫)
৪) অতঃপর যখন অবসর পাও পরিশ্রম কর এবং তোমার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ কর। (সূরাহ্ ইনশিরাহ ৭-৮)
উল্লিখিত আয়াতসমূহ হাত তোলার প্রমাণে পেশ করা হয়। অথচ আয়াতসমূহের কোথাও হাত তোলার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। বরং সাধারণভাবে আল্লাহর নিকট প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে মাত্র। তাছাড়া কোন মুফাসসিরই উক্ত আয়াতসমূহের তাফসীর করতে গিয়ে হাত তুলার কথা বলেননি। এমনকি এ সম্পর্কিত কোন হাদীসও দলীল হিসেবে পেশ করেননি। সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, উপরে বর্ণিত আয়াতসমূহ ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করা প্রমাণ করে না। কাজেই হাত তুলে দু‘আ করার প্রমাণে অত্র আয়াতগুলো পেশ করা শরী‘আত বিকৃত করার নামান্তর মাত্র।
ফরয সালাতের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করা সম্বন্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমগণের অভিমতঃ
১) আহমাদ ইবনু তায়মিয়াহ রহঃ)-কে ফরয সালাতের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা জায়েয কি-না জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,
‘ছালাতের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা বিদ‘আত। রসূলুল্লাহﷺ-এর যুগে এরূপ দু‘আ ছিল না। বরং তাঁর দু‘আ ছিল সালাতের মধ্যে। কারণ সলা-তের মধ্যে) মুসল্লী স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার সময় দু‘আ করা যথাযথ’। (মাজমূ‘আ ফাতাওয়া ২২/ ৫১৯ পৃঃ)
২) শায়খ আবদুল্লাহ বিন বায রহঃ) বলেন,
‘পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা স্পষ্ট বিদ‘আত। কারণ এরূপ দু‘আ রসূলুল্লাহﷺ-এর যুগে এবং তাঁর ছাহাবীদের যুগে ছিল না। যে ব্যক্তি ফরয সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করে সে যেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিরোধিতা করে’। (হাইয়াতু কেবারিল ওলামা ১/২৪৪ পৃঃ)
তিনি আরো বলেন,‘ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার প্রমাণে রসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে, কথা, কর্ম ও অনুমোদনগত (কাওলী, ফে‘লী ও তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আর একমাত্র রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সমস্ত কল্যাণ। সালাত আদায়ের পর ইমাম-মুক্তাদীর দু‘আ সম্পর্কে রসূল ﷺ-এর আদর্শ সুস্পষ্ট আছে, যা তিনি সালামের পর পালন করতেন। চার খলীফাসহ ছাহাবীগণ এবং তাবেঈগণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন। অতঃপর যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করবে, তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নির্দেশ ব্যতীত কোন আমল করবে তা পরিত্যাজ্য। কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ হাত তুলে আ-মীন আ-মীন বলবেন তাদের নিকটে এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে। অন্যথায় (তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হ’লে) তা পরিত্যাজ্য’। (হাইয়াতূ কেবারিল ওলামা ১/২৫৭)
৩) বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ আল্লামা শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী রহঃ) বলেন, দু‘আয়ে কুনূতে হাত তুলার পর মুখে হাত মুছা বিদ‘আত। সালাতের পরেও ঠিক নয়। এ সম্পর্কে যত হাদীস রয়েছে, এর সবগুলিই য‘ঈফ। এজন্য ইমাম আযউদ্দীন বলেন, সালাতের পর হাত তুলে দু‘আ করা মূর্খদের কাজ। (ছিফাতু ছালাতিন নাবী,০ পৃঃ ১৪১)
৪) শায়খ উসায়মিন রহঃ) বলেন, সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা বিদ‘আত। যার প্রমাণ রসূল (ﷺ) ও তাঁর সাহাবীগণ থেকে নেই। মুসল্লীদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকর করবে। (ফাতাওয়া উসায়মীন, পৃঃ ১২০)
৫) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহঃ) বলেন, ফরয সালাতের পর হাত তুলে দু‘আ করা ব্যতীত অনেক দু‘আই রয়েছে। (রফুস সামী পৃঃ ৯৫)
৬) আল্লামা আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌভী রহঃ) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেন এবং মুক্তাদীগণ ‘আ-মীন’ ‘আ-মীন’ বলেন, এ প্রথা রসূল(ﷺ) এর যুগে ছিল না। (ফৎওয়ায়ে আব্দুল হাই, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০)
৭) আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী বলেন, অনেক স্থানেই এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে, ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা হয় যা রসূল (ﷺ) হ’তে প্রমাণিত নয়। (মা‘আরেফুস সুনান, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪০৭)
৮) আল্লামা আবুল কাসেম নানুতুবী রহঃ) বলেন, ফরয সলা-তের সালাম ফিরানোর পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিকৃষ্ট বিদ‘আত। (এমাদুদ্দীন পৃঃ ৩৯৭)
আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম ৬৯১-৮৫৬ হিঃ) বলেন, ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও রসূল (ﷺ)-এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই। [ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ বৈরুত ছাপা ১৯৯৬), ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪৯ ‘ফরয ছালাতের পর দু‘আ করা সম্পর্কে লেখকের মতামত’ অনুচ্ছেদ]
১০) আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী রহঃ) বলেন, ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেন, তা কখনও রসূল (ﷺ) করেননি এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও পাওয়া যায় না। (ছিফরুস সা‘আদাত, পৃঃ ২০)
১১) আল্লামা শাত্বেবী ৭০০ হিঃ) বলেন, শেষ কথা হ’ল এই যে, ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে রসূল (ﷺ) নিজেও মুনাজাত করেননি, করার আদেশও দেননি। এমনকি তিনি এটা সমর্থন করেছেন, এ ধরনেরও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। (আল-ই‘তেসাম, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৫২)
১২) আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন, নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে যে, রসূল (ﷺ) ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলেছেন, এরূপ কখনো দেখা যায় না। চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এ ধরনের কাজ, যা রসূল ﷺ করেননি, তাঁর সাহাবীগণ করেননি, নিঃসন্দেহে তা না করা উত্তম এবং করা বিদ‘আত। (মাদখাল, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৮৩)
১৩) আল্লামা আশরাফ আলী থানাবী (রহঃ) বলেন, ফরয সালাতের পর ইমাম সাহেব দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ এবং ইমাম গাবরহিনী বলেন, এ দু‘আকে সালাতের সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব মনে করা না জায়েয। (ইস্তিহবাবুদ দাওয়াহ পৃঃ ৮)
بَاب رَفْعِ الأَيْدِي فِي الدُّعَاءِ
قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ وَقَالَ الأُوَيْسِيُّ حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، وَشَرِيكٍ، سَمِعَا أَنَسًا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ.
Narrated Anas, "The Prophet (ﷺ) raised his hands (in invocation) till I saw the whiteness of his armpits."
পরিচ্ছেদঃ ৮০/২৪. কিবলামুখী না হয়ে দু‘আ করা।
৬৩৪২. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আহর দিনে খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের উপর বৃষ্টির জন্য দু’আ করুন। (তিনি দু’আ করলে) তখনই আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল এবং এমন বৃষ্টি হলো যে, মানুষ আপন ঘরে পৌঁছতে পারলো না এবং পরবর্তী জুমু’আহ পর্যন্ত এক নাগাড়ে বৃষ্টি হতে থাকলো। পরবর্তী জুমু’আহ্য় সেই লোক অথবা অন্য এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললোঃ আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাদের উপর মেঘ সরিয়ে নেন। আমরা তো ডুবে গেলাম। তখন তিনি দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের আশে-পাশে বর্ষণ করুন। আমাদের উপর আর) বর্ষণ করবেন না। তখন মেঘ বিক্ষিপ্ত হয়ে মদিনার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়লো। মদিনা্বাসীর উপর আর বৃষ্টি হলো না। [৯৩২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৮৯)
بَاب الدُّعَاءِ غَيْرَ مُسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَحْبُوبٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ بَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَسْقِيَنَا. فَتَغَيَّمَتِ السَّمَاءُ وَمُطِرْنَا، حَتَّى مَا كَادَ الرَّجُلُ يَصِلُ إِلَى مَنْزِلِهِ، فَلَمْ تَزَلْ تُمْطَرُ إِلَى الْجُمُعَةِ الْمُقْبِلَةِ، فَقَامَ ذَلِكَ الرَّجُلُ أَوْ غَيْرُهُ فَقَالَ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَصْرِفَهُ عَنَّا، فَقَدْ غَرِقْنَا. فَقَالَ " اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا ". فَجَعَلَ السَّحَابُ يَتَقَطَّعُ حَوْلَ الْمَدِينَةِ، وَلاَ يُمْطِرُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ.
Narrated Anas:
While the Prophet (ﷺ) was delivering a sermon on a Friday, a man stood up and said, "O Allah's Messenger (ﷺ)! Invoke Allah to bless us with rain." (The Prophet (ﷺ) invoked Allah for rain.) So, the sky became overcast and it started raining till one could hardly reach one's home. It kept on raining till the next Friday when the same man or another man got up and said (to the Prophet), "Invoke Allah to withhold the rain from us, for we have been drowned (with heavy rain )." The Prophet (ﷺ) said, "O Allah! Let it rain around us and not on us." Then the clouds started dispersing around Medina and rain ceased to fall on the people of Medina.
পরিচ্ছেদঃ ৮০/২৬. আপন খাদিমের দীর্ঘজীবী হওয়া এবং অধিক মালদার হবার জন্য নাবী ﷺ -এর দু‘আ।
৬৩৪৪. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আনাস আপনারই খাদিম। আপনি তার জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করে দিন। আর তাকে আপনি যা কিছু দিয়েছেন তাতে বারাকাত দিন। [১৯৮২] (আধুনিক প্রকাশনী- ,৫৮৯৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯১)
بَاب دَعْوَةِ النَّبِيِّصلى الله عليه وسلم لِخَادِمِه بِطُولِ الْعُمُرِ وَبِكَثْرَةِ مَالِه
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي الْأَسْوَدِ حَدَّثَنَا حَرَمِيٌّ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَتْ أُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ خَادِمُكَ أَنَسٌ ادْعُ اللَّهَ لَهُ قَالَ اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيمَا أَعْطَيْتَهُ.
Narrated Anas:
My mother said, "O Allah's Messenger (ﷺ)! Please invoke Allah on behalf of your servant." He said, "O Allah! Increase his wealth and children, and bestow Your Blessing on whatever You give him." a time of distress.
পরিচ্ছেদঃ ৮০/৩০. মৃত্যু আর জীবনের জন্য দু‘আ করা।
৬৩৫১. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা করবে না। আর যদি কেউ এমন অবস্থায় পড়ে যে, তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয়, তবে সে দু’আ করবেঃ হে আল্লাহ! যতদিন বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর হয়, ততদিন আমাকে জীবিত রাখো, আর যখন আমার জন্য মৃত্যুই কল্যাণকর হয় তখন আমার মৃত্যু দাও।[৫৬৭১; মুসলিম ৪৮/৪, হাঃ ২৬৮০, আহমাদ ১১৯৭৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৯৮)
بَاب الدُّعَاءِ بِالْمَوْتِ وَالْحَيَاةِ
حَدَّثَنَا ابْنُ سَلاَمٍ، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ صُهَيْبٍ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمُ الْمَوْتَ لِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ، فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ مُتَمَنِّيًا لِلْمَوْتِ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي ".
Narrated Anas:
Allah's Messenger (ﷺ) said," None of you should long for death because of a calamity that had befallen him, and if he cannot, but long for death, then he should say, 'O Allah! Let me live as long as life is better for me, and take my life if death is better for me.' "
পরিচ্ছেদঃ ৮০/৩৫. ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা।
৬৩৬২. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগল, এমনকি প্রশ্ন করে তাঁকে বিরক্ত করে ফেললো। এতে তিনি রাগান্বিত হলেন এবং মিম্বারে আরোহণ করে বললেনঃ আজ তোমরা যত প্রশ্ন করবে আমি তোমাদের সকল প্রশ্নেরই ব্যাখ্যা সহকারে জবাব দিব। এ সময় আমি ডানে ও বামে তাকাতে লাগলাম এবং দেখলাম যে, প্রতিটি লোকই নিজের কাপড় দিয়ে মাথা পেচিয়ে কাঁদছেন। এমন সময় একজন লোক, যাকে লোকের সঙ্গে বিবাদের সময় তার বাপের নাম নিয়ে ডাকা হতো না, সে প্রশ্ন করলোঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ হুযাইফাহ। তখন ’উমার বলতে লাগলেনঃ আমরা আল্লাহর রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রাসূল হিসেবে গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট। আমরা ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি ভাল মন্দের যে দৃশ্য আজ দেখলাম, তা আর কখনও দেখিনি। জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য আমাকে এত পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে যে, যেন এ দু’টি এ দেয়ালের পশ্চাতেই অবস্থিত।
রাবী ক্বাতাদাহ (রহ.) এ হাদীস উল্লেখ করার সময় এ আয়াতটি পড়তেন- (অর্থ) হে মু’মিনগণ! তোমরা সে সব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে। [৯৩; মুসলিম ৪৩/৩৭, হাঃ ২৩৫৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০৯)
بَاب التَّعَوُّذِ مِنْ الْفِتَنِ
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه سَأَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى أَحْفَوْهُ الْمَسْأَلَةَ فَغَضِبَ فَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَقَالَ " لاَ تَسْأَلُونِي الْيَوْمَ عَنْ شَىْءٍ إِلاَّ بَيَّنْتُهُ لَكُمْ ". فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ يَمِينًا وَشِمَالاً، فَإِذَا كُلُّ رَجُلٍ لاَفٌّ رَأْسَهُ فِي ثَوْبِهِ يَبْكِي، فَإِذَا رَجُلٌ كَانَ إِذَا لاَحَى الرِّجَالَ يُدْعَى لِغَيْرِ أَبِيهِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَبِي قَالَ " حُذَافَةُ "، ثُمَّ أَنْشَأَ عُمَرُ فَقَالَ رَضِينَا بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم رَسُولاً، نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْفِتَنِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا رَأَيْتُ فِي الْخَيْرِ وَالشَّرِّ كَالْيَوْمِ قَطُّ، إِنَّهُ صُوِّرَتْ لِي الْجَنَّةُ وَالنَّارُ حَتَّى رَأَيْتُهُمَا وَرَاءَ الْحَائِطِ ". وَكَانَ قَتَادَةُ يَذْكُرُ عِنْدَ الْحَدِيثِ هَذِهِ الآيَةَ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ).
Narrated Anas:
Once the people started asking Allah's Messenger (ﷺ) questions, and they asked so many questions that he became angry and ascended the pulpit and said, "I will answer whatever questions you may ask me today." I looked right and left and saw everyone covering his face with his garment and weeping. Behold ! There was a man who, on quarreling with the people, used to be called as a son of a person other than h is father. He said, "O Allah's Messenger (ﷺ)! Who is my father?" The Prophet (ﷺ) replied, "Your father is Hudhaifa." And then `Umar got up and said, "We accept Allah as our Lord, and Islam as (our) religion, and Muhammad as (our) Apostle; and we seek refuge with Allah from the afflictions." Allah's Messenger (ﷺ) said, " I have never seen a day like today in its good and its evil for Paradise and the Hell Fire were displayed in front of me, till I saw them just beyond this wall." Qatada, when relating this Hadith, used to mention the following Verse:-- 'O you who believe! Ask not questions about things which, If made plain to you, May cause you trouble. (5.101)