৫৪৮৬

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৮৬-[২৩] আবূ উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) - কে বলতে শুনেছি। (রাসূল [সা.] বলেছেন) নূহ আলাইহিস সালাম-এর পরে এমন কোন নবী আগমন করেননি, যিনি স্বীয় জাতিকে দাজ্জাল সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেননি। আমিও তদ্রূপ তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করছি। তারপর তিনি (সা.) আমাদেরকে তার বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বললেন, হয়তো তোমাদের কেউ, যে আমাকে দেখেছে অথবা যে আমার কথা শুনেছে, সে দাজ্জালকে পেতে পারে। তারা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল। তখন আমাদের অন্তরসমূহের অবস্থা কিরূপ হবে? বললেন, বর্তমানে যেরূপ আছে। অর্থাৎ আজ যেমন তখনো তেমন বা এটা অপেক্ষা শ্রেয়। (তিরমিযী ও আবূ দাউদ)

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَن أَي عُبَيْدَةَ بْنِ الْجَرَّاحِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ بَعْدَ نُوحٍ إِلَّا قَدْ أَنْذَرَ الدجالَ قومَه وإِني أُنذركموه» فرصفه لَنَا قَالَ: «لَعَلَّهُ سَيُدْرِكُهُ بَعْضُ مَنْ رَآنِي أَوْ سَمِعَ كَلَامِي» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَكَيْفَ قُلُوبُنَا يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: «مِثْلُهَا» يَعْنِي الْيَوْمَ «أوخير» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد حسن ، رواہ الترمذی (2234 وقال : غریب) و ابوداؤد (4756)

ব্যাখ্যা: (إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ بَعْدَ نُوحٍ إِلَّا قَدْ أَنْذَرَ الدجالَ) নূহ আলায়হিস সালাম-এর পর প্রত্যেক নবীই তাদের সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। নূহ আলায়হিস সালাম ও তার জাতিকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন কিন্তু তার পরবর্তীগণ আরো বেশি করে সতর্ক করেছেন। অত্র হাদীসে নূহ আলায়হিস সালাম-এর পর বলতে নূহ আলায়হিস সালাম কে বাদ দিয়ে নয় বরং তিনি সহ বুঝানো হয়েছে।
(لَعَلَّهُ سَيُدْرِكُهُ بَعْضُ مَنْ رَآنِي) যারা আমাকে দেখেছে তারা হয়তো অচিরেই দাজ্জালের দেখা পেতে পারে। অর্থাৎ তার আগমন অতি নিকটে। আর যারা আমার কথা শুনেছে তারাও অথবা যারা আমার হাদীস শুনেছে তথা যাদের কাছে আমার হাদীস পৌছেছে, তারাও দাজ্জালের দেখা পেতে পারে যদিও কিছু দিন দেরি হয়। হাদীসে উল্লেখিত (أو) অব্যয়টি বর্ণনাকারীর পক্ষ থেকে সন্দেহমূলক নয় বরং ধরণ উল্লেখ উদ্দেশ্য। তথা যারা আমাকে দেখেছে আমার কথা শুনেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

বিশেষ দ্রষ্টব্য:
সকল নবী 'আলায়হিস সালাম দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে এমনকি সলাতের মধ্যেও। তথাপি কুরআনুল কারীমে স্পষ্ট তার সম্পর্কে কোন স্পষ্ট বর্ণনা নেই, এর মধ্যে কি হিকমাত নিহিত রয়েছে? এর উত্তর কয়েকভাবে দেয়া যেতে পারে।
এক: আল্লাহ তা'আলার এই বাণীর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে: (... یَوۡمَ یَاۡتِیۡ بَعۡضُ اٰیٰتِ رَبِّکَ لَا یَنۡفَعُ نَفۡسًا اِیۡمَانُهَا لَمۡ تَکُنۡ اٰمَنَتۡ مِنۡ قَبۡلُ اَوۡ کَسَبَتۡ فِیۡۤ اِیۡمَانِهَا خَیۡرًا...)
“যেদিন তোমার রবের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন প্রকাশ পাবে সেদিন ঐসব ব্যক্তির ঈমান কোনই কাজে আসবে না যারা ইতোপূর্বে ঈমান আনয়ন করেনি এবং ঈমান অনুযায়ী সৎকাজ করেনি?”
(সূরা আল আ'আম ৬: ১৫৮)
ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর সুনান গ্রন্থে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনটি আলামত যখন প্রকাশ পাবে তখন ঐ সব ব্যক্তির ঈমান কোনই কাজে আসবে না যারা ইতোপূর্বে ঈমান আনেনি। দাজ্জালের আগমন, দাব্বাতুল আরয এবং সূর্য পশ্চিমদিক থেকে উদিত হওয়া।

দুই: পবিত্র কুরআনে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম -এর অবতীর্ণ হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন, আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ اِنۡ مِّنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ اِلَّا لَیُؤۡمِنَنَّ بِهٖ قَبۡلَ مَوۡتِهٖ) “আহলে কিতাবদের মধ্যে যত শ্রেণি রয়েছে তারা সবাই ঈমান আনবে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম -এর ওপর তাদের মৃত্যুর পূর্বেই।” (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৫৯)
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, “ঈসা আলায়হিস সালাম দাজ্জালকে হত্যা করবেন। আল্লাহ তা'আলা একজনের উল্লেখ দ্বারা তার বিপরীতটা উল্লেখ না করাকে যথেষ্ট মনে করেছেন।

তিন: আল্লাহ তা'আলা তাকে হীন ও তুচ্ছ ভেবে তার নাম কুরআনে উল্লেখ না করে তার পরবর্তী ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। যা পরোক্ষভাবে উল্লেখ হয়ে যায়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২২৩৪)