৪৯১৪

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার

৪৯১৪-[৪] ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ অমুকের বাপের সন্তানরা আমার বন্ধু নয়; বরং আমার বন্ধু আল্লাহ তা’আলা এবং পুণ্যবান মু’মিনগণ। তবে হ্যাঁ, তাদের সাথে আমার আত্মীয়তা আছে, আমি তাদের সিক্ততার সাথে সিক্ত করি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْبِرِّ وَالصِّلَةِ

وَعَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ آل فُلَانٍ لَيْسُوا لِي بِأَوْلِيَاءَ إِنَّمَا وَلِيِّيَ اللَّهُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَلَكِنْ لَهُمْ رَحِمٌ أَبُلُّهَا بِبَلَالِهَا. مُتَّفق عَلَيْهِ

ব্যাখ্যাঃ لَيْسُوْا لِىْ بِأَوْلِيَاءَ এ কথাটির অর্থ হলো তারা আমার বন্ধুদের দলভুক্ত নয়। ইবনু ত্বীন (রহিমাহুল্লাহ) দাওয়ারদী থেকে বর্ণনা করেছেন, এ কথাটি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তারা যারা তাদের মধ্য থেকে ইসলাম গ্রহণ করেননি। অর্থাৎ এখানে সম্পূর্ণ বলে আংশিককে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। খত্ত্বাবী বলেনঃ হাদীসের এ অংশে বন্ধুত্বের যে অংশটিকে নিষেধ করা হয়েছে সেটি হলো নিকটাত্মীয় এবং বিশেষ বন্ধুত্বের অংশ। এখানে দীনের বন্ধুত্বকে নিষেধ করা হয়নি। উপরোক্ত দুই মতের প্রথম মতকে ইবনু ত্বীন প্রাধান্য দিয়েছে।

إِنَّمَا وَلِيِّىَ اللهُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ যারা সৎ তারাই নবীর বন্ধু যদিও বংশের দিক দিয়ে নবীর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক না থাকে। তারা নবীর কোন বন্ধু নয় যারা সৎ নয় যদিও তারা বংশের দিক দিয়ে নবীর নিকটাত্মীয়। ইমাম কুরতুবী বলেনঃ হাদীস থেকে বুঝা যায় বন্ধুত্বের মাপকাঠি কেবল দীন। সুতরাং মুসলিমই আমাদের বন্ধু কোন কাফির নয়, যদিও সে নিকটতম আত্মীয় হয় তথাপি সে বন্ধু হতে পারে না কারণ সে কাফির। ইবনু বাত্ত্বল বলেনঃ এ হাদীসে মুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করাকে ওয়াজিব করা হয়েছে আর কাফিরদের বন্ধুত্ব ছিন্ন করতে বলা হয়েছে যদিও সে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় হয়ে থাকে, কারণ তারা কাফির। তাই বংশসূত্র দাবী করে নিকটাত্মীয়রা যদি একই দীনের অন্তর্ভুক্ত না হয় তাহলে তারা পরস্পর পরস্পরের উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত হবে না এবং কোন বন্ধুত্ব অটুট থাকবে না। ইবনু বাত্ত্বল আরো বলেনঃ হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, আত্মীয়তার যে সম্পর্ক ছিন্ন করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা হলো শার‘ঈ আত্মীয়তার সম্পর্ক। অপরদিকে দীনের খাতিরে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তাই অমুসলিম আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে অবৈধ হবে না এবং সে গুনাহগার হবে না। আত্মীয় যদি অমুসলিম হয়ে থাকে তার সাথে দ্বীনের কোন সম্পর্ক না রেখে দুনিয়াবী সম্পর্ক ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া বৈধ।

হাফিয ইবনু হাজার ‘আস্ক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসের বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝা যায় যারা দীনী কর্মকাণ্ড-র ব্যাপারে সৎ নয় তাদের সাথেও বন্ধুত্ব করা যাবে না। কারণ হলো মু’মিন হওয়ায় পাশাপাশি সৎ ‘আমলকারী হতে হবে। কাফির আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক রাখার বিষয়টি শর্তযুক্ত, যদি এমন ধারণা হয় যে সে আর কুফরী থেকে ফিরে আসবে না ঠিক কিন্তু তার ঔরসজাত সন্তানের মধ্য থেকে কেউ না কেউ মুসলিম হতে পারে, তাহলে তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা যাবে।

তাফসীর বিশারদগণ صَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ তথা সৎ মু’মিনের ব্যাখ্যায় মতবিরোধ করেছেন।

কেউ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নবীগণ; কেউ বলেছেন, হলো সাহাবীগণ; কেউ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য মু’মিনগণ; কেউ কেউ বলেন, আবূ বকর, ‘উমার ও ‘উসমান ; কেউ বলেছেন শুধু আবূ বকর এবং ‘উমার । কেউ বলেছেন, এর দ্বারা শুধুমাত্র আবূ বকরই উদ্দেশ্য। কেউ বলেছেন, এর দ্বারা ‘উমার । কেউ ‘আলী -এর কথা বলেছেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯৯০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আমর ইবনুল আস (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ