৪৪৩০

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪৩০-[১২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে নারীর ওপর আল্লাহর লা’নাত যে অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল মিশ্রিত করে কিংবা নিজ মাথায় কৃত্রিম চুল মিশ্রিত করায় এবং যে অন্যের গায়ে উল্কি করে অথবা নিজের গায়ে উল্কি করায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَعَنَ اللَّهُ الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ والواشمة والمستوشمة»

ব্যাখ্যাঃ (الْوَاصِلَةَ وَالْمُسْتَوْصِلَةَ) হলো ঐ নারী যে মহিলার চুলকে অন্যের চুলের সাথে সংযোগ করে দেয়। আর (المستوشمة) হচ্ছে যে নারী তার চুলকে অন্যের চুলের সাথে সংযোগ করে দেয়াকে কামনা করে। মোটকথা, যে মহিলা চুল সংযোগ করে এবং যে সংযোগ করে দেয়ার কাজে লিপ্ত থাকে উভয়ের ওপরই অভিশাপ।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসগুলো এ কথার ওপর স্পষ্ট যে, চুলের সংযোগ হারাম এবং যে কোন ধরনের চুলের সংযোগকারিণী ও সংযোগকামিনী উভয়ের ওপর অভিশাপ রয়েছে। এটাই বাহ্যিক নির্বাচিত মত। তবে আমাদের ইমামগণ এর বিস্তর ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, যদি মহিলা তার চুলের সাথে অন্য মানুষের চুল মিলায় তবে তা হারাম হওয়ার বেলায় কোন দ্বিমত নেই। চাই কোন নারীর চুল সংযুক্ত করুক বা কোন পুরুষের চুল, স্বামী বা তার মাহরাম ব্যক্তির চুল বা অন্য কারো চুল- এতে কোন দ্বিমত নেই। কেননা এগুলো হারাম হওয়ার হাদীসগুলো শর্তহীন ও ব্যাপক। এছাড়া মানুষের সম্মানের কারণে তার চুল বা যে কোন অঙ্গ দ্বারা উপকৃত হওয়া হারাম। বরং তার চোখ, নখ ও সমস্ত অঙ্গ দাফন করে দেয়া হবে। এরপর ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)-এর বরাতে বলেনঃ ‘উলামাগণ এ মাসআলায় মতানৈক্য করেন। ইমাম মালিক, ইমাম ত্ববারী এবং অনেকে বা অধিকাংশরা বলেনঃ যে কোন বস্তু দিয়ে চুলের সংযোগ নিষিদ্ধ। চাই মহিলা তা চুল দ্বারা সংযোগ করুক বা পশম দ্বারা বা কোন কাপড়ের টুকরো দ্বারা। তারা ইমাম মুসলিম কর্তৃক জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাকে তার মাথায় কোন কিছু সংযুক্ত করার কারণে ধমকি দেন। লায়স ইবনু সা‘দ বলেন, নিষেধ কেবল চুলের সাথে নির্ধারিত। পশম বা কাপড়ের টুকরোর সাথে নয়।

কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তবে চুলে রেশমের রঙিন সুঁতা বাঁধা এবং এ জাতীয় যা চুলের সাদৃশ্য নয় তা নিষেধ নয়। কেননা এটা সংযোগ নয় এবং তা সংযোগের উদ্দেশ্যেরও অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটা কেবল সৌন্দর্য ও রূপচর্চার জন্য।

কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ বর্ণিত হাদীসে চুলের সংযোগকে কাবীরাহ্ গুনাহের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কর্মে লিপ্ত ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে। হাদীসে এও রয়েছে যে, হারাম কাজে সহযোগিতাকারী হারামে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে পাপে শরীক, যেমন ‘ইবাদাতে সহযোগিতাকারী ব্যক্তি ‘ইবাদাতের সাওয়াবে শরীক।

(والواشمة والمستوشمة) الواشمة আরবী শব্দ وَشْمٌ থেকে ব্যুৎপত্তি। যার অর্থ : উল্কি আঁকা। অতএব الواشمة হলো ঐ মহিলা যে কাউকে উল্কি এঁকে দেয়, আর والمستوشمة ঐ মহিলা উল্কি আঁকার আবেদন করে তথা উল্কি আঁকিয়ে নেয়। চুলের সংযোগের মতোই উভয়ের ওপর আল্লাহর অভিশাপ রয়েছে। তাই এ কর্মও হারাম।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা হারাম যে করে তার জন্য, যে করিয়ে নেয় তার জন্য এবং যে এটার আবেদন করে তার জন্য। অনেক সময় ছোট শিশুর বেলায় এমনটি করা হয়। তার ক্ষেত্রে যে করিয়ে দিয়েছে সে গুনাহগার হবে। ছোট বাচ্চা শারী‘আতের দায়বদ্ধতা মুক্ত হওয়ায় গুনাহগার হবে না। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, ২১২৪/১১৯)