৪৩৬২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪৩৬২-[৫৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এমন অবস্থায় দেখতে পেলেন যে, তখন আমার পরনে ছিল (গোলাপী রঙের) একটি কাপড়। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তাঁর এ প্রশ্ন হতে আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এটাকে অপছন্দ করেছেন। সুতরাং আমি তৎক্ষণাৎ ফিরে এলাম এবং কাপড়খানাকে জ্বালিয়ে ফেললাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার কাপড়টি কী করেছ? বললাম, তাকে জ্বালিয়ে ফেলেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি কেন তা তোমার পরিবারের কোন মহিলাকে পরিধান করালে না? কেননা তা মহিলাদের ব্যবহারে কোন দোষ নেই। (আবূ দাঊদ)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: رَآنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَى ثَوْبٌ مَصْبُوغٌ بِعُصْفُرٍ مُوَرَّدًا فَقَالَ: «مَا هَذَا؟» فَعَرَفْتُ مَا كَرِهَ فَانْطَلَقْتُ فَأَحْرَقْتُهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا صَنَعْتَ بِثَوْبِكَ؟» قُلْتُ: أَحْرَقْتُهُ قَالَ: «أَفَلَا كَسَوْتَهُ بَعْضَ أَهْلِكَ؟ فَإِنَّهُ لَا بَأْسَ بِهِ لِلنِّسَاءِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যাঃ এ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, হলুদ রং দ্বারা রঞ্জিত জামা পরিধান করা নারীদের জন্য জায়িয কিন্তু পুরুষের জন্য জায়িয নয়। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনুল কইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিসসী কাপড়, যা‘ফরান দ্বারা রঞ্জিত হলুদ-লাল কাপড় পরতে, স্বর্ণের আংটি (সীল) ব্যবহার করতে এবং রুকূ‘তে কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) কর্তৃক সহীহ মুসলিমেই হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ)-এর গায়ে হলুদ রং দ্বারা লাল রং করা দু’টি কাপড় দেখতে পান। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এগুলো কাফিরদের পোশাক। এগুলো তুমি পরবে না।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) কর্তৃক সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গায়ে দু’টি আসফার দ্বারা (লাল) রঙ করা কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) দেখতে পান। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমার আম্মা কি তোমাকে এ কাপড় পরতে নির্দেশ দিয়েছেন? আমি বললামঃ আমি কি কাপড় দু’টি ধুয়ে নেব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না, বরং কাপড় দু’টি পুড়িয়ে ফেল।’’ এ হাদীসগুলো প্রমাণ করে যে, লাল রঙের কাপড় পরিধান করা হারাম। যদিও লাল রঙের কাপড় পরিধানের বৈধতার পক্ষও কিছু বর্ণনা এসেছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৬৪)

উপরের হাদীসগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মুসলিম ফকীহগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। এ বিষয়ে ‘আল্লামা নাবাবী বলেনঃ হলুদ রং দ্বারা রঞ্জিত পোশাকের বিষয়ে ‘উলামায়ে কিরাম বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। সাহাবী, তাবি‘ঈ ও পরবর্তী যুগের অধিকাংশ ‘আলিম এরূপ পোশাক জায়িয ও মুবাহ বলেছেন। ইমাম শাফি‘ঈ, আবূ হানীফাহ্ ও মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-এর এ মত। তবে ইমাম মালিক বলেছেনঃ অন্য রঙের পোশাক উত্তম।

অন্য বর্ণনায় তিনি বলেনঃ বাড়িতে বা প্রাঙ্গণে এ পোশাক পরা জায়িয, কিন্তু সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে এরূপ পোশাক ব্যবহার মাকরূহ। কোন কোন ‘আলিম বলেছেনঃ এগুলো ব্যবহার করা মাকরূহ তানযীহী বা অনুচিত। নিষেধাজ্ঞা জ্ঞাপক হাদীসগুলোকে তাঁরা এ অর্থে গ্রহণ করেছেন। কারো মতে কাপড় বোনার পরে রং করলে তা নিষিদ্ধ হবে। কারো মতে শুধু হজ্জ ও ‘উমরার সময়ে তা নিষিদ্ধ।

এ হাদীস দ্বারা আরও সাব্যস্ত হয় যে, কোন কাপড়, পোশাক বা ব্যবহার্য সামগ্রী কোন একটি নির্দিষ্ট গ্রম্নপের লোকেদের জন্য নিষিদ্ধ হলেও অন্য কোন গ্রম্নপের লোকেদের জন্য তা ব্যবহার জায়িয হলে সেগুলো ধ্বংস না করে তাদেরকে দিয়ে দেয়া উচিত। এ হাদীসে দেখা যায় এই নির্দিষ্ট রঙের কাপড় পুরুষদের জন্য হারাম হলেও নারীদের জন্য হারাম নয়। [সম্পাদক]