৩০১৯

পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - হাদিয়া (উপহার) ও হিবার (অনুদান) প্রসঙ্গে

৩০১৯-[৪] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তাঁর পিতা তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে গেলেন, অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার এই সন্তানকে আমি একটি ক্রীতদাস দান করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি তোমার সব সন্তানকে এরূপে দান করেছ? তিনি বললেন, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে তুমি তা ফেরত নাও।

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে- তুমি কি চাও যে, তোমার সকল সন্তানেরা তোমার সাথে সমভাবে সদ্ব্যবহার করুক? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে এরূপ জায়িয হবে না। অপর বর্ণনায় আছে, নু’মান বলেছেনঃ আমার পিতা আমাকে কিছু দান করলেন। তখন (আমার মা) ’আম্রাহ্ বিনতু রওয়াহাহ্ (রাঃ) (আমার পিতাকে) বললেন, আমার এতে সম্মতি নেই যতক্ষণ না এতে আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাক্ষী রাখেন। অতঃপর আমার পিতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে বললেন, আমি ’আম্রাহ্ বিনতু রওয়াহাহ্’র গর্ভজাত আমার এই সন্তানকে একটি উপহার প্রদান করেছি।

কিন্তু ’আমরাহ্ আমাকে বলেছে, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে যেন সাক্ষী রাখি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি তোমার সকল সন্তানকে এর অনুরূপ দান করেছ? তিনি বললেন, না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমার সকল সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে সমানভাবে সদ্ব্যবহার কর। বর্ণনাকারী (নু’মান ) বলেন, সুতরাং তিনি ফিরে এসে স্বীয় দান ফিরিয়ে নিলেন। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি অন্যায়ের কাজে সাক্ষী হই না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابٌ فِى الْهِبَةِ وَالْهَدِيَّةِ

وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ أَنَّ أَبَاهُ أَتَى بِهِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي نَحَلْتُ ابْنِي هَذَا غُلَامًا فَقَالَ: «أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَ مِثْلَهُ؟» قَالَ: لَا قَالَ: «فَأَرْجِعْهُ» . وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّهُ قَالَ: «أَيَسُرُّكَ أَنْ يَكُونُوا إِلَيْكَ فِي الْبِرِّ سَوَاءً؟» قَالَ: بَلَى قَالَ: «فَلَا إِذن» . وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّهُ قَالَ: أَعْطَانِي أَبِي عَطِيَّةً فَقَالَتْ عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ: لَا أَرْضَى حَتَّى تشهد رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي أَعْطَيْتُ ابْنِي مِنْ عَمْرَةَ بِنْتِ رَوَاحَةَ عَطِيَّةً فَأَمَرَتْنِي أَنْ أُشْهِدَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «أَعْطَيْتَ سَائِرَ وَلِدِكَ مِثْلَ هَذَا؟» قَالَ: لَا قَالَ: «فَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْدِلُوا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ» . قَالَ: فَرَجَعَ فَرَدَّ عَطِيَّتَهُ. وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّهُ قَالَ: «لَا أشهد على جور»

ব্যাখ্যা: নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় তার পিতা তাকে নিয়ে আল্লাহর রসূলের কাছে আসলো। অতঃপর বলল, নিশ্চয় আমি আমার এ সন্তানকে আমার একটি দাস দান করেছি। অতঃপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার প্রত্যেক সন্তানকে কি এরূপ দান করেছ? তিনি বললেন, না। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (فَأَرْجِعْهُ)। এক বর্ণনায় বলেন, (فاردده) অর্থাৎ- তুমি তা ফিরিয়ে নাও। অন্য বর্ণনায় তাদের প্রত্যেকের প্রতি এরূপ করেছ? তিনি বললেন, না। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ন্যায়-ইনসাফ কর। নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) বলেন, ‘‘অতঃপর আমার পিতা ফিরে গিয়ে ঐ দান ফিরিয়ে নিলেন।’’ অন্য বর্ণনাতে আছে- আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাহলে তুমি আমাকে সাক্ষী রেখো না। কেননা আমি অন্যায়ের ব্যাপারে সাক্ষী হই না।’’ অন্য বর্ণনায় আছে- ‘‘তুমি আমাকে অন্যায়ের ব্যাপারে সাক্ষী রেখো না।’’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ ব্যাপারে আমাকে ছাড়া অন্যকে সাক্ষী রাখো।’’ অন্য বর্ণনাতে আছে, ‘‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেননা আমি সাক্ষী দেই না।’’ অন্য বর্ণনাতে আছে, ‘‘তিনি বলেন, আমার জন্য এটা উপযোগী না। নিশ্চয় আমি সত্য ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে সাক্ষী দেই না।’’

অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, দানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির উচিত তার সন্তানসমূহের মাঝে সমতা রক্ষা করা, তাদের প্রত্যেককে অন্যের মতো দান করা, কাউকে অতিরিক্ত না দেয়া। ছেলে-মেয়ের মাঝে সমতা রক্ষা করা। আমাদের কতক সাথীবর্গ বলেন, ছেলের জন্য মেয়ের দিগুণ থাকবে। বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ কথা হলো- হাদীসের বাহ্যিকতার দিকে লক্ষ্য করে উভয়কেই মাঝে সমানভাবে দান করবে। (শারহে মুসলিম ১১/১২শ খন্ড, হাঃ ১৬২৩)