২৯৩৮

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - কারো সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ঋণ ও ক্ষতিপূরণ

২৯৩৮-[১] সা’ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত পরিমাণ জমিন জোরজবরদস্তি দখল করেছে, কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাত তবক হতে ঐ পরিমাণ জমিন বেড়িরূপে পরিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْغَصْبِ وَالْعَارِيَةِ

عَن سعيد بْنِ زَيْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ ظُلْمًا فَإِنَّهُ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سبع أَرضين»

ব্যাখ্যা: অন্য বর্ণনাতে এসেছে, (مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ بِغَيْرِ حَقٍّ طَوَّقَهُ اللّٰهُ فِي سَبْعِ أَرَضِينَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ) অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমি গ্রাস করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সাত তবক জমিনের মাঝে বেষ্টন করে ফেলবেন।’’ বিদ্বানগণ বলেন, এতে সুস্পষ্ট যে, জমিন সাত স্তর বিশিষ্ট। আর তা আল্লাহ তা‘আলার سَبْعَ سَمٰوٰتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ অর্থাৎ- ‘‘সাতটি আকাশ এবং সে পরিমাণে জমিন’’- (সূরা আত্ব তালাক ৬৫ : ১২) এ আয়াতের অনুকূলে। পক্ষান্তরে সাদৃশ্যকে সাতটি আকৃতির সাথে ব্যাখ্যা করা বাহ্যিকতার বিপরীত। অনুরূপভাবে ঐ ব্যক্তির কথা বাহ্যিকতার বিপরীত যে বলে, হাদীসে সাত জমিন দ্বারা সাত অঞ্চল উদ্দেশ্য। বিদ্বানগণ একে বাতিল করে দিয়েছেন, কেননা ব্যাপারটি যদি এমনই হত তাহলে এ অঞ্চলের এক বিঘতের কারণে অন্য অঞ্চলের সমান্যতম পরিমাণও অবিচারকারীর গলাবদ্ধ স্বরূপ করা হত না যা জমিনের স্তরসমূহের বিপরীত, কেননা তা মালিকানার ক্ষেত্রে এ বিঘত পরিমাণের অধীন। সুতরাং যে এ জমিনের কোনো অংশের মালিক হবে সে তার মালিক হবে এবং জমি স্তর হতে তার নীচে যা আছে তারও মালিক হবে।

কাযী বলেনঃ জমিনসমূহের পুরু, এদের স্তরসমূহে ও এদের মাঝে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে যে হাদীস এসেছে তা সুদৃঢ় নয়, পক্ষান্তরে হাদীসে উল্লেখিত গলায় বেড়ি পরিয়ে দেয়া সম্পর্কে তারা বলেন, হাদীসের অর্থ এ হওয়ার সম্ভাবনা আছে যে, তাকে তা বহন করার দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হবে, আরও সম্ভাবনা রাখছে তার গর্দানে তা বেড়ির মতো করে দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘আলা বলেন, ‘‘যে সম্পদে তারা কৃপণতা অবলম্বন করেছে অচিরেই কিয়ামতের দিন তা তাদের গলায় বেড়ী স্বরূপ পরিয়ে দেয়া হবে।’’ (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৮)

একমতে বলা হয়েছে, এর অর্থ হলো জমি আত্মসাতের যে পাপ তা তার পাপ গলায় বেড়ী স্বরূপ করে দেয়া হবে। (শারহে মুসলিম ১১/১২শ খন্ড, হাঃ ১৬১০)

ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তৃতীয় হাদীসটি একে সমর্থন করছে, আল্লাহ তাকে ঐ জমিন খনন করতে দায়িত্ব চাপিয়ে দিবেন, পরিশেষে সে সাত জমিনের শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
শারহস্ সুন্নাহ্-তে আছে, বেড়ী স্বরূপ করার অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অন্যায়ভাবে দখলকৃত জমিতে ধসিয়ে দিবেন, ফলে দখলকৃত জমি তার গলায় বেড়ী স্বরূপ হয়ে যাবে। একমতে বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন ঐ জমিন বহন করাকে বেড়ী স্বরূপ করা হবে। অর্থাৎ- তাকে চাপিয়ে দেয়া হবে, ফলে তা হবে কষ্টসাধ্যের বেড়ী, প্রথাগত বেড়ী না, সালিম তার পিতা হতে যা বর্ণনা করেছেন তার আলোকে এ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (مَنْ أَخَذَ مِنَ الْأَرْضِ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّه خُسِفَ بِه يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلٰى سَبْعِ أَرَضِينَ) অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে জমিনের কোনো অংশ গ্রাস করবে তা সহ তাকে কিয়ামতের দিন সপ্তজমিন পর্যন্ত ধসিয়ে দেয়া হবে।’’ এটা আহমাদ হতে বুখারীর বর্ণনা। আর এভাবেও সমন্বয় করা যায় যে, অবিচারকারীর সাথে ঐ সকল ধরনের আচরণ করা হবে। অথবা নিযার্তনকারী ও নির্যাতিত ব্যক্তির বিভিন্নতার কারণে কঠোরতা ও দুর্বলতার দিক দিয়ে শাস্তিকেও বিভিন্ন রকম করা হবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)