৩০০৪

পরিচ্ছেদঃ ২৩. বনূ নাযীরের ঘটনা প্রসঙ্গে

৩০০৪। ’আব্দুর রাহমান ইবনু কা’ব মালিক (রহঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী সূত্রে বর্ণনা করেন, কুরাইশ কাফিররা ’আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই এবং তার মূর্তিপূজক সহযোগী আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকদের প্রতি পত্র প্রেরণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মদীনায় ছিলেন। এটি বদর যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। (চিঠিতে লিখা ছিলো) ’’আমাদের এক ব্যক্তিকে (নবী) তোমরা আশ্রয় দিয়েছো। ’আমরা আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরো বা বহিস্কার করো। অন্যথায় ’আমরা সম্মিলিতভাবে তোমাদেরকে আক্রমণ করবো, তোমাদের যুদ্ধবাজ লোকদের হত্যা করবো এবং তোমাদের নারীদেরকে বন্দী করবো।’’ চিঠিটি ’আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ও তার মূর্তিপূজক সঙ্গীদের নিকট পৌঁছলো তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ঐক্যবদ্ধ হলো।

এ সংবাদ পেয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে বললেনঃ তোমাদের কাছে কুরাইশদের চরমপত্র এসেছে। আসলে তারা তোমাদের ততটা ক্ষতি করতে পারবে না যতটা ক্ষতি তোমরা নিজেরা নিজেদের জন্য ডেকে আনবে। কেননা তোমরা নিজেদের ভাই-বন্ধু ও সন্তানদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইছো। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ কথা শুনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। এ কথা কুরাইশ কাফিরদের নিকট পৌঁছলে বদর যুদ্ধের পর কুরাইশ কাফিররা ইয়াহুদীদের প্রতি লিখলোঃ তোমরা অস্ত্রে সসজ্জিত ও দুর্গের অধিকারী ব্যক্তি। তোমরা আমাদের সাথীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, নতুবা ’আমরা এই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। তখন আমাদের ও তোমাদের নারীদের দাসী বানানোর মাঝে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।

ইয়াহুদীদেরকে লেখা এ পত্রের কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবহিত হলেন। বনূ নাযীর গোত্রের লোকেরা বিশ্বাসঘাতকতা করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লোক পাঠিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললো, আপনি আপনার তিরিশজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে বের হন এবং ’আমরাও আমাদের তিরিশজন আলিম সাথে নিয়ে বের হই। ’আমরা উভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে মিলিত হবো। তারা আপনার (ধর্মের) কথা শুনবে। তারা আপনার কথা শুনে আপনার প্রতি ঈমান আনলে ’আমরাও আপনার প্রতি ঈমান আনবো।

তিনি সাহাবীদেরকে তাদের এ প্রস্তাবের কথা জানালেন। পরের দিন সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সৈন্যসহ তাদের নিকট গিয়ে তাদেরকে অবরোধ করে বললেনঃ আল্লাহর শপথ! তোমরা আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমি তোমাদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হবো না। কিন্তু তারা চুক্তিবদ্ধ হতে রাজি না হওয়ায় সেদিনই তিনি তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেন। পরের দিন তিনি সৈন্যবাহিনী নিয়ে বনূ নাযীরকে ছেড়ে বনূ কুরাইয়াকে অবরোধ করে তাদেরকে সন্ধির জন্য আহবান করেন। তারা তাঁর সাথে চুক্তিবদ্ধ হলো। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে পরের দিন তিনি সৈন্যবাহিনী নিয়ে বনূ নাযীরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলেন। তারা দেশত্যাগ করতে সম্মত হয়ে দেশত্যাগ করে। তাদের উটের পিঠে ঘরের দরজা, চৌকাঠ ইত্যাটি যতটা মালামাল নেয়া সম্ভব নিলো।

বনূ নাযীরের বাগান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালিকানায় এলো। আল্লাহ তাঁকে বিশেষভাবে এ বাগানটি দান করলেন এবং শুধু তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট করলেন। মহান আল্লাহ তা’আলাঃ ’’আল্লাহ যে সম্পদ তাদের দখল থেকে বের করে তাঁর রাসূলকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা ঘোড়া বা উট হাঁকাওনি।’’[সূরা আল-হাশরঃ ৬]

এ সম্পদ বিনা যুদ্ধে অর্জিত হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পদের অধিকাংশই মুহাজিরদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। দু’জন অভাবী আনসারকেও তিনি এর অংশ দিলেন, তবে অন্য আনসারদের এর অংশ দেননি। সম্পত্তির বাকী অংশ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাদাকাহর খাতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এ অংশ ফাতিমাহ (রাঃ)-এর বংশধরদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো।[1]

بَابٌ فِي خَبَرِ النَّضِيرِ

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ دَاوُدَ بْنِ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ رَجُلٍ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّ كُفَّارَ قُرَيْشٍ كَتَبُوا إِلَى ابْنِ أُبَيٍّ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ مَعَهُ الْأَوْثَانَ مِنَ الْأَوْسِ وَالْخَزْرَجِ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَئِذٍ بِالْمَدِينَةِ قَبْلَ وَقْعَةِ بَدْرٍ: إِنَّكُمْ آوَيْتُمْ صَاحِبَنَا، وَإِنَّا نُقْسِمُ بِاللَّهِ لَتُقَاتِلُنَّهُ، أَوْ لَتُخْرِجُنَّهُ أَوْ لَنَسِيرَنَّ إِلَيْكُمْ بِأَجْمَعِنَا حَتَّى نَقْتُلَ مُقَاتِلَتَكُمْ، وَنَسْتَبِيحَ نِسَاءَكُمْ، فَلَمَّا بَلَغَ ذَلِكَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أُبَيٍّ وَمَنْ كَانَ مَعَهُ مِنْ عَبَدَةِ الْأَوْثَانِ، اجْتَمَعُوا لِقِتَالِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا بَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِيَهُمْ، فَقَالَ: لَقَدْ بَلَغَ وَعِيدُ قُرَيْشٍ مِنْكُمُ الْمَبَالِغَ، مَا كَانَتْ تَكِيدُكُمْ بِأَكْثَرَ مِمَّا تُرِيدُونَ أَنْ تَكِيدُوا بِهِ أَنْفُسَكُمْ، تُرِيدُونَ أَنْ تُقَاتِلُوا أَبْنَاءَكُمْ، وَإِخْوَانَكُمْ فَلَمَّا سَمِعُوا ذَلِكَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَفَرَّقُوا، فَبَلَغَ ذَلِكَ كُفَّارَ قُرَيْشٍ، فَكَتَبَتْ كُفَّارُ قُرَيْشٍ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ إِلَى الْيَهُودِ: إِنَّكُمْ أَهْلُ الْحَلْقَةِ وَالْحُصُونِ، وَإِنَّكُمْ لَتُقَاتِلُنَّ صَاحِبَنَا، أَوْ لَنَفْعَلَنَّ كَذَا وَكَذَا، وَلَا يَحُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ خَدَمِ نِسَائِكُمْ شَيْءٌ، وَهِيَ الْخَلَاخِيلُ، فَلَمَّا بَلَغَ كِتَابُهُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَجْمَعَتْ بَنُو النَّضِيرِ بِالْغَدْرِ، فَأَرْسَلُوا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اخْرُجْ إِلَيْنَا فِي ثَلَاثِينَ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِكَ، وَلْيَخْرُجْ مِنَّا ثَلَاثُونَ حَبْرًا، حَتَّى نَلْتَقِيَ بِمَكَانِ الْمَنْصَفِ فَيَسْمَعُوا مِنْكَ، فَإِنْ صَدَّقُوكَ وَآمَنُوا بِكَ آمَنَّا بِكَ، فَقَصَّ خَبَرَهُمْ، فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ، غَدَا عَلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْكَتَائِبِ فَحَصَرَهُمْ، فَقَالَ لَهُمْ: إِنَّكُمْ وَاللَّهِ لَا تَأْمَنُونَ عِنْدِي إِلَّا بِعَهْدٍ تُعَاهِدُونِي عَلَيْهِ، فَأَبَوْا أَنْ يُعْطُوهُ عَهْدًا، فَقَاتَلَهُمْ يَوْمَهُمْ ذَلِكَ، ثُمَّ غَدَا الْغَدُ عَلَى بَنِي قُرَيْظَةَ بِالْكَتَائِبِ، وَتَرَكَ بَنِي النَّضِيرِ وَدَعَاهُمْ إِلَى أَنْ يُعَاهِدُوهُ، فَعَاهَدُوهُ، فَانْصَرَفَ عَنْهُمْ، وَغَدَا عَلَى بَنِي النَّضِيرِ بِالْكَتَائِبِ، فَقَاتَلَهُمْ حَتَّى نَزَلُوا عَلَى الْجَلَاءِ، فَجَلَتْ بَنُو النَّضِيرِ، وَاحْتَمَلُوا مَا أَقَلَّتِ الْإِبِلُ مِنْ أَمْتِعَتِهِمْ، وَأَبْوَابِ بُيُوتِهِمْ، وَخَشَبِهَا، فَكَانَ نَخْلُ بَنِي النَّضِيرِ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَاصَّةً، أَعْطَاهُ اللَّهُ إِيَّاهَا وَخَصَّهُ بِهَا، فَقَالَ: (وَمَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ، وَلَا رِكَابٍ) [الحشر: ٦] يَقُولُ: بِغَيْرِ قِتَالٍ، فَأَعْطَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْثَرَهَا لِلْمُهَاجِرِينَ، وَقَسَمَهَا بَيْنَهُمْ وَقَسَمَ مِنْهَا لِرَجُلَيْنِ مِنَ الْأَنْصَارِ، وَكَانَا ذَوِي حَاجَةٍ لَمْ يَقْسِمْ لِأَحَدٍ مِنَ الْأَنْصَارِ غَيْرِهِمَا، وَبَقِيَ مِنْهَا صَدَقَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّتِي فِي أَيْدِي بَنِي فَاطِمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا صحيح الإسناد


Narrated A man from the companions of the Prophet: AbdurRahman ibn Ka'b ibn Malik reported on the authority of a man from among the companions of the Prophet (ﷺ): The infidels of the Quraysh wrote (a letter) to Ibn Ubayy and to those who worshipped idols from al-Aws and al-Khazraj, while the Messenger of Allah (ﷺ) was at that time at Medina before the battle of Badr. (They wrote): You gave protection to our companion. We swear by Allah, you should fight him or expel him, or we shall come to you in full force, until we kill your fighters and appropriate your women. When this (news) reached Abdullah ibn Ubayy and those who were worshippers of idols, with him they gathered together to fight the Messenger of Allah (ﷺ). When this news reached the Messenger of Allah (ﷺ), he visited them and said: The threat of the Quraysh to you has reached its end. They cannot contrive a plot against you, greater than what you yourselves intended to harm you. Are you willing to fight your sons and brethren? When they heard this from the Prophet (ﷺ), they scattered. This reached the infidels of the Quraysh. The infidels of the Quraysh again wrote (a letter) to the Jews after the battle of Badr: You are men of weapons and fortresses. You should fight our companion or we shall deal with you in a certain way. And nothing will come between us and the anklets of your women. When their letter reached the Prophet (ﷺ), they gathered Banu an-Nadir to violate the treaty. They sent a message to the Prophet (ﷺ): Come out to us with thirty men from your companions, and thirty rabbis will come out from us till we meet at a central place where they will hear you. If they testify to you and believe in you, we shall believe in you. The narrator then narrated the whole story. When the next day came, the Messenger of Allah (ﷺ) went out in the morning with an army, and surrounded them. He told them: I swear by Allah, you will have no peace from me until you conclude a treaty with me. But they refused to conclude a treaty with him. He therefore fought them the same day. Next he attacked Banu Quraysh with an army in the morning, and left Banu an-Nadir. He asked them to sign a treaty and they signed it. He turned away from them and attacked Banu an-Nadir with an army. He fought with them until they agreed to expulsion. Banu an-Nadir were deported, and they took with them whatever their camels could carry, that is, their property, the doors of their houses, and their wood. Palm-trees were exclusively reserved for the Messenger of Allah (ﷺ). Allah bestowed them upon him and gave them him as a special portion. He (Allah), the Exalted, said: What Allah has bestowed on His Apostle (and taken away) from them, for this ye made no expedition with either camel corps or cavalry." He said: "Without fighting." So the Prophet (ﷺ) gave most of it to the emigrants and divided it among them; and he divided some of it between two men from the helpers, who were needy, and he did not divide it among any of the helpers except those two. The rest of it survived as the sadaqah of the Messenger of Allah (ﷺ) which is in the hands of the descendants of Fatimah (Allah be pleased with her).