২৫১৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

২৫১৬-[১২] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীদের জন্যে ’যুলহুলায়ফাহ্’-কে, শাম বা সিরিয়াবাসীদের জন্য ’জুহফাহ্’-কে আর নাজদবাসীদের জন্য ’ক্বরনুল মানাযিল’-কে এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ’ইয়ালাম্‌লাম্’-কে মীকাত নির্দিষ্ট করেছেন। এসব স্থানগুলো এ সকল স্থানের লোকজনের জন্য আর অন্য স্থানের লোকেরা যখন এ স্থান দিয়ে আসবে তাদের জন্য, যারা হজ্জ/হজ বা ’উমরার ইচ্ছা করে। আর যারা এ সীমার ভিতরে অবস্থান করবে, তাদের ইহরামের স্থান হবে তাদের ঘর- এভাবে ক্রমান্বয়ে কাছাকাছি লোকেরা স্বীয় বাড়ি হতে এমনকি মক্কাবাসীরা ইহরাম বাঁধবে মক্কা হতেই। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: وَقَّتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَهْلِ الْمَدِينَةِ: ذَا الْحُلَيْفَةِ وَلِأَهْلِ الشَّامِ: الْجُحْفَةَ وَلِأَهْلِ نَجْدٍ: قَرْنَ الْمَنَازِلِ وَلِأَهْلِ الْيَمَنِ: يَلَمْلَمَ فَهُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِ أَهْلِهِنَّ لِمَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ فَمَنْ كَانَ دُونَهُنَّ فَمُهَلُّهُ مِنْ أَهْلِهِ وَكَذَاكَ وَكَذَاكَ حَتَّى أهل مَكَّة يهلون مِنْهَا

ব্যাখ্যা: যুলহুলায়ফাহ্ঃ মদীনার নিকটবর্তী একটি প্রসিদ্ধ স্থান। ইমাম নাবাবীর মতে মসজিদে নাবাবী হতে এর দূরত্ব ছয় মাইল। ইবনু হাযম-এর মতে এর দূরত্ব মদীনাহ্ হতে চার মাইল। এখানে ‘‘বী’রে ‘আলী’’ নামক একটি কূপ রয়েছে। বর্তমানে এ স্থানটি আব্ ইয়ারে ‘আলী নামে পরিচিত। এটিই মদীনাহবাসীদের মীকাত।

জুহফাহ্ঃ মক্কা হতে উত্তর-পশ্চিম দিকে ১২০ মাইল দূরে অবস্থিত একটি স্থান। মরক্কো, মিসর ও সিরিয়ার অধিবাসীগণের এটি মীকাত। বর্তমানে উক্ত স্থানটি চেনার বিশেষ কোন নিদর্শন না থাকার কারণে লোকজন রাবেগ নামক স্থান থেকে ইহরাম বেঁধে থাকেন।

ক্বরনুল মানাযিলঃ মক্কা হতে ৪২ মাইল পূর্বে একটি পাহাড়ী এলাকার নাম। এটি নাজদবাসীদের মীকাত।

ইয়ালামলাম্ঃ মক্কা থেকে ৩০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত একটি পাহাড়। এটি ইয়ামানবাসীদের মীকাত। পাকভারত উপমহাদেশের সমুদ্রপথে গমনকারী যাত্রীগণও ইয়ামানে উপনীত হয়ে এ ইয়ালামলাম পাহাড়ের দক্ষিণে অবস্থানকালে ইহরাম বাঁধেন।

(هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتٰى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِ أَهْلِهِنَّ) উক্ত বর্ণিত মীকাত তাদের জন্য যাদের জন্য তা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদেরও জন্য এগুলো মীকাত যারা এর অধিবাসী নয় অথচ এ পথেই তারা অতিক্রম করে। যেমন- একজন বাংলাদেশী যিনি মদীনাতে অবস্থান করছেন তিনি যদি হজ্জ/হজ করতে চান তাহলে তার মীকাত যুলহুলায়ফাহ্। অথচ তার প্রকৃত মীকাত উড়োজাহাজে ক্বরনুল মানাযিল আর সমুদ্র পথে ইয়ালামলাম্।

(لِمَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ) ‘‘যে ব্যক্তি হজ্জ/হজ অথবা ‘উমরা করতে চায়’’। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হজ্জ/হজ অথবা ‘উমরাতে গমনেচ্ছু ব্যক্তির জন্য ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করা বৈধ নয়। তবে কোন ব্যক্তি যদি হজ্জ/হজ অথবা ‘উমরা করার ইচ্ছা ব্যতিরেকে সফরে গমন করে তার জন্য ইহরাম ছাড়াই এ মীকাতগুলো অতিক্রম করা বৈধ। তবে এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে।

(১) ইমাম যুহরী, হাসান বাসরী, ইমাম শাফি‘ঈ-এর একটি ক্বওল, ইবনু ওয়াহ্ব-এর বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম মালিক এবং দাঊদ ইবনু ‘আলী ও তাদের অনুসারীদের মতে ইহরাম ব্যতীত মক্কাতে প্রবেশে কোন ক্ষতি নেই।

(২) ‘আত্বা ইবনু আবী রবাহ, লায়স ইবনু সা‘দ, সাওরী, আবূ হানীফা এবং তার অনুসারীবৃন্দ, বিশুদ্ধ বর্ণনানুযায়ী ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ-এর প্রসিদ্ধ মত, আহমাদ, আবূ সাওর প্রমুখদের মতে মীকাতের বাইরে অবস্থানকারীদের জন্য ইহরাম ব্যতিরেকে মক্কাতে প্রবেশ করা বৈধ নয়।

কেউ যদি ইহরাম ছাড়াই প্রবেশ করে তবে খারাপ কাজ করল তবে এজন্য ইমাম শাফি‘ঈর মতে কোন প্রকার কাফফারা নেই। আর ইমাম আবূ হানীফার মতে কাফফারাহ স্বরূপ হজ্জ/হজ অথবা ‘উমরা করতে হবে।

(فَمَنْ كَانَ دُونَهُنَّ فَمُهَلُّه مِنْ أَهْلِه) আর যে ব্যক্তি মীকাতের অভ্যন্তরের অধিবাসী স্বীয় আবাসই তার ইহরাম বাঁধার স্থান। অর্থাৎ- তাকে মীকাতের বাইরে যেয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে না বরং স্বীয় আবাসস্থল থেকেই ইহরাম বাঁধবে।

(وَأَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ) আর মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকেই ইহরাম বাঁধবে। এ বিধান হজের জন্য খাস।

মক্কাহ্বাসী যদি ‘উমরা করতে চায় তবে হারাম এলাকার বাইরে গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে। যেমনটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে তান্‘ঈমে প্রেরণ করেছিলেন ‘উমরা-এর ইহরাম বাঁধার জন্য।

মীকাতে যাওয়াব পূর্বেই ইহরাম বাঁধা যাবে কি-না? এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মাঝে ভিন্নমত রয়েছে।

ইবনু হাযম বলেনঃ কারো জন্য বৈধ নয় যে, মীকাতে পৌঁছার পূর্বেই হজ্জ/হজ অথবা ‘উমরার জন্য ইহরাম বাঁধবে। কেউ যদি মীকাতে পৌঁছার পূর্বেই ইহরাম বাঁধে। অতঃপর মীকাত অতিক্রম করে তবে তার হজ্জ/হজ বা ‘উমরা কোনটাই হবে না। তবে মীকাতে পৌঁছার পর যদি নতুন করে ইহরামের নিয়্যাত করে তাহলে তার ইহরাম বিশুদ্ধ হবে।

জমহূর ‘উলামাগণের মতে মীকাতে পৌঁছাবার পূর্বেই ইহরাম বাঁধলে তা বৈধ হবে বরং হানাফী এবং শাফি‘ঈ উলামাগণের মতে, মীকাতে পৌঁছার পূর্বে ইহরাম বাঁধা উত্তম। ইমাম মালিক-এর মতে মীকাতে পৌঁছাবার পূর্বে ইহরাম বাঁধা মাকরূহ। আর এ অভিমতটিই অধিক সঠিক। আল্লাহই ভাল জানেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ