২৩৮০

পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার রহমতের ব্যাপকতা

২৩৮০-[১৭] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ তা’আলার এ কালাম, ’’ফামিনহুম যা-লিমুন লিনাফসিহী, ওয়া মিনহুম মুকতাসিদুন্, ওয়া মিনহুম সা-বিকুন বিল্ খইর-ত’’ (অর্থাৎ- বান্দাদের মধ্যে কেউ নিজের প্রতি যুলম করে, তাদের মধ্যে কেউ ভালো মন্দ উভয়ই করে, আবার কেউ কল্যাণের দিকে অগ্রবর্তী হয়।)- (সূরা আল ফা-ত্বির ৩৫ : ৩২)। এরা সকলেই জান্নাতে যাবে। (ইমাম বায়হাক্বী তাঁর ’’কিতাবুল বা’সি ওয়ান্ নুশূর’’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন)[1]

وَعَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَوْلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: (فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِنَفْسِهِ وَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سابقٌ بالخيراتَ) قَالَ: كُلُّهُمْ فِي الْجَنَّةِ . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي كِتَابِ الْبَعْثِ وَالنُّشُورِ

ব্যাখ্যা: وَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ অধিকাংশ অবস্থায় এবং অধিকাংশ সময়ে ‘আমল করে।

وَمِنْهُمْ سَابِقٌ بِالْخَيْرَاتَ অর্থাৎ- ‘‘আমলের বিষয়ের প্রতি মানুষকে শিক্ষা এবং দিক-নির্দেশনা দেয়।’’ একমতে বলা হয়েছে, নিজের প্রতি অবিচারকারী বলতে কতক ওয়াজিব কাজে বাড়াবাড়িকারী, কতক হারাম কাজে জড়িত। আর ‘‘মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী’’ বলতে যে ব্যক্তি ওয়াজিবসমূহকে আদায় করে, হারামসমূহকে বর্জন করে, কখনো কতক মুস্তাহাব বিষয়কে বর্জন করে এবং কতক মাকরূহ বিষয় সম্পাদন করে। আর ‘‘কল্যাণে অগ্রগামী’’ বলতে ওয়াজিব ও মুস্তাহাব কাজ সম্পাদনকারী এবং হারাম, মাকরূহ ও কতক বৈধ কাজ বর্জনকারী। এক মতে বলা হয়েছে, অবিচারকারী বলতে যে সৎ ‘আমল ও অসৎ ‘আমলকে মিশিয়ে দেয়। নাসাফী বলেন, এ ব্যাখ্যাটি কুরআনের অনুকূল, কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আর মুহাজিরদের থেকে যারা অগ্রগামী প্রথম’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ১০০)। এরপর বলেন, ‘‘আর অন্যরা তাদের গুনাহসমূহের ব্যাপারে স্বীকৃতি দিল’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ১০২)। অতঃপর বলেন, ‘‘আর অন্যরা আল্লাহর নির্দেশ পালনে বিলম্বকারী’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ১০৬)।

একমতে বলা হয়েছে, ‘‘নিজের প্রতি অবিচার করা’’ বলতে নাফসে্র উপর অবিচার করাকে সমর্থন করা, নাফসকে কেবল প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা এবং নাফসে্র জন্য যা কল্যাণকর তা নষ্ট করা। সুতরাং অধিক আনুগত্যকে বর্জনকারী বর্জন পরিমাণ সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিবেচনায় নিজের প্রতি অবিচারকারী, আল্লাহ তার ওপর যা আবশ্যক করেছেন যদিও সে তা সম্পাদন করে থাকে এবং যা থেকে আল্লাহ তাকে নিষেধ করেছেন যদিও তা বর্জন করে থাকে। আর (مقتصد) বা মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী বলতে যে ব্যক্তি ধর্মের বিষয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে, বাড়াবাড়ি ও শিথিলতার দিকে ধাবমান হয় না। পক্ষান্তরে ‘‘অগ্রগামী’’ বলতে ঐ ব্যক্তি যে ধর্মের বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে অন্যের অগ্রগামী হয়েছে আর এ ব্যক্তিই তিন ব্যক্তির মাঝে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। এ তিন ব্যক্তির তাফসীরে আরো অনেক উক্তি আছে, সা‘লাবী ও অন্যান্যগণ যা উল্লেখ করেছেন।

(قَالَ: كُلُّهُمْ فِى الْجَنَّةِ) সর্বনামটি তিন ব্যক্তির দিকে প্রত্যাবর্তনশীল। হাদীসটি হাফেয ইবনু কাসীর ত্ববারানীর রিওয়ায়াতে এ অর্থে উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ- ‘‘তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তাদের প্রত্যেকেই এ উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত।’’

শাওকানী একে ফাতহুল কদীরে (৪র্থ খণ্ডে ৩৪১ পৃষ্ঠাতে) উল্লেখ করেছেন এবং তিনি এটিকে ত্ববারানী ও ইবনু মারদুওয়াইহি-এর দিকে সম্বন্ধ করেছেন। আর বায়হাক্বী (তাদের প্রত্যেকে এ উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের প্রত্যেকে জান্নাতে যাবে।) এ অর্থে উল্লেখ করেছেন।

ইবনু কাসীর বলেন, ‘আলী বিন আবূ তালহা ثُمَّ أَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِيْنَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর ক্ষেত্রে ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস থেকে বলেন, তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাত। তাদেরকে আল্লাহ প্রত্যেক এমন কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছেন যা তিনি অবতীর্ণ করেছেন। অতঃপর তাদের মাঝে যে অবিচারকারী তাকে তিনি ক্ষমা করবেন এবং তাদের মাঝে যে মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী তার হিসাব সহজভাবে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের মাঝে যে কল্যাণে অগ্রগামী সে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বিশুদ্ধ কথা হল নিজের প্রতি অবিচারকারী এ উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। এটাই ইবনু জারীর এর নির্বাচন। যেমন তা আয়াতের বাহ্যিক দিক। এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনেক হাদীস এসেছে। আর তা এমন সানাদে যার কতক কতককে শক্তিশালী করে। অতঃপর তিনি তা উল্লেখ করেছেন। তার থেকে একটি হল, উসামাহ্ বিন যায়দ-এর হাদীস যার ব্যাখ্যায় আমরা রত আছি। আরো একটি হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ সাঈ‘দ-এর হাদীস। নিশ্চয়ই তিনি

ثُمَّ أَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِيْنَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِنَفْسِه وَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ بِالْخَيْرَاتِ بِإِذْنِ اللّٰهِ

এ আয়াতের ব্যাপারে বলেন, এরা প্রত্যেকে একই স্তরের এবং তাদের প্রত্যেকে জান্নাতে যাবে। একে আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু জারীর এবং ইবনু আবী হাতিম সংকলন করেছেন, প্রত্যেকের সানাদে এমন বর্ণনাকারী আছে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ইবনু কাসীর বলেন, بمنزلة واحدة উক্তির অর্থ হল, অর্থাৎ- নিশ্চয়ই তারা এ উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত এবং তারা জান্নাতের অধিবাসী। যদিও জান্নাতে স্তরসমূহের ক্ষেত্রে তাদের মাঝে পার্থক্য আছে। সেগুলো থেকে আরো একটি হাদীস হল, আবূ দারদা (রাঃ)-এর হাদীস, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ثُمَّ أَوْرَثْنَا الْكِتَابَ الَّذِيْنَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِنَفْسِه وَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ بِالْخَيْرَاتِ بِإِذْنِ اللّٰهِ

সুতরাং যারা কল্যাণে অগ্রগামী তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে, পক্ষান্তরে যারা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেছে তারা ঐ সকল লোক যাদের সহজ হিসাব নেয়া হবে। আর যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছে তারা ঐ সকল লোক হাশরের মাঠে যাদের দীর্ঘ সময় হিসাব নেয়া হবে। অতঃপর আল্লাহ যাদেরকে তার রহমাতের মাধ্যমে সংশোধন করেছেন তারাই বলে থাকে [অর্থাৎ- ‘‘সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের থেকে চিন্তা দূর করেছেন, নিশ্চয়ই আমাদের প্রভু অত্যন্ত ক্ষমাশীল, বড়ই কৃতজ্ঞ’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩৪)] আয়াতের শেষ পর্যন্ত। আহমাদ, ইবনু জারীর, ইবনু আবী হাতিম, ইবনুল মুনযির, ত্ববারানী এবং ইবনু মারদুওয়াইহি একে সংকলন করেছেন, আর বায়হাক্বী একে (البعث) কিতাবে সংকলন করেছেন। এ হাদীসগুলোর কতক কতককে শক্তিশালী করে এবং এ হাদীসগুলোর দিকে প্রত্যাবর্তন করা ওয়াজিব। আর এগুলোর মাধ্যমে ঐ ব্যক্তির উক্তিকে প্রতিহত করা দরকার যে ব্যক্তি ‘‘নিজের প্রতি অবিচারকারী’’ উক্তিকে কাফিরের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আর অধ্যায়টিতে ‘উমার, ‘উসমান, ‘আলী, ‘আয়িশাহ্, ইবনু মাস্‘ঊদ ও অন্যান্যগণ থেকে অনেক আসার আছে।

হাফেয ইবনু কাসীর এবং শাওকানী তাদের তাফসীরদ্বয়ে এ সকল আসার উল্লেখ করেছেন এবং এগুলোর প্রত্যেকটি আয়াতের তাফসীরে জমহূর যে মত পেশ করেছেন তাকে সমর্থন করছে। নিশ্চয়ই তিনটি স্তর বলতে তারা উদ্দেশ্য করেছে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের থেকে যাদেরকে নির্বাচন করেছেন। আর তারাই হল এ উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত ঈমানের অধিকারী, তাদের প্রত্যেকেই মুক্তি পাবে, জান্নাতে প্রবেশ করবে।