২৩৪৩

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৪৩-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দার প্রাণ (রূহ) ওষ্ঠাগত না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই আল্লাহ তার তওবা্ কবূল করেন। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه

ব্যাখ্যা: (إِنَّ اللّٰهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ) কারী বলেন, বাহ্যিক দৃষ্টিতে হাদীসাংশে তাওবাহ্ কবূলের ব্যাপারটি মুত্বলাক বা সাধারণভাবে, আর কতিপয় হানাফী একে কাফিরের সাথে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন।

আমাদের শায়খ বলেন, বাহ্যিকদৃষ্টিতে প্রথমটি নির্ভরযোগ্য।

(مَا لَمْ يُغَرْغِرْ) অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত তার আত্মা কণ্ঠনালীতে না পৌঁছবে, অতঃপর তা ঐ বস্ত্তর স্থানে পরিণত না হবে যার কারণে রুগী গড়গড় বা প্রতিধ্বনি করে থাকে। غر غرة বলা হয় পানীয় বস্ত্তকে মুখের মাঝে রাখা এবং কণ্ঠনালীর গোড়া পর্যন্ত পৌঁছানো এবং কণ্ঠনালীর ভিতরে না যাওয়া এবং ঐ বস্ত্ত যার কারণে প্রতিধ্বনি কারী প্রতিধ্বনি করে থাকে তাকে ‘আরবদের ভাষায় লাদূদ, লা‘ঊক এবং সা‘ঊত্ব বলা হয়। উদ্দেশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত পরকালের অবস্থাসমূহ প্রত্যক্ষ না করবে।

‘আল্লামা কারী বলেন, অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত সে মৃত্যু সম্পর্কে সুনিশ্চিত না হবে। কেননা মৃত্যু সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়ার পর ব্যক্তির তাওবাহকে তাওবাহ্ গণ্য করা হবে না।

এর সমর্থনে আল্লাহর বাণী, ‘‘আর যারা পাপ কর্ম করে এমনকি তাদের কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন বলে আমি এখন তাওবাহ্ করব তাদের কোন তাওবাহ্ নেই এবং কাফির অবস্থায় যারা মৃত্যুবরণ করে তাদের কোন তাওবাহ্ নেই।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৮)

তুরবিশতী বলেন, (مَا لَمْ يُغَرْغِرْ) এর অর্থ হল, যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাছে মৃত্যু আগমন না করবে। কেননা ব্যক্তির কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন সে প্রতিধ্বনি করে থাকে। অতঃপর যখন সে মৃত্যু, জীবন অবসান সম্পর্কে জানতে পারে, সুনিশ্চিত হতে পারে তখন তার তাওবাহ্ গ্রহণীয় নয়। তিনি বলেন, যদিও আমরা মৃত্যু উপস্থিত হওয়া ব্যক্তির দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন অসম্ভব সম্পর্কে নিশ্চিত এবং তার তাওবাহ্ কবূলের বিষয়টি অস্বীকার করি রহমাতের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এবং ব্যক্তি ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে তথাপিও আমরা আল্লাহর তরফ থেকে ঐ ব্যক্তির জন্য ক্ষমার আশা করব। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে শির্ক করার গুনাহ ক্ষমা করবেন না তবে শির্ক ছাড়া আরো যত গুনাহ আছে তা যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৮)। বুঝা গেল, স্বচক্ষে মৃত্যু দেখার সময় তাওবাহ্ উপকারে আসবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আল্লাহর কাছে কেবল ঐ সমস্ত লোকেদের তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দকর্ম করে, অতঃপর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল সুকৌশলী। আর ঐ সমস্ত লোকেদের তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে না যারা মন্দকর্ম করে এমনকি তাদের কাছে যখন মৃত্যু আগমন করে তখন বলে যে, আমি এখন তাওবাহ্ করব।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৭-১৮)

জমহূর মুফাসসিরীনদের নিকটে অনতিবিলম্বে তাওবাহ্ বলতে, স্বচক্ষে মৃত্যু দেখার পূর্বে তাওবাহ্ করা, অর্থাৎ- মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার পূর্বে তাওবাহ্ করা। ‘ইকরিমাহ্ বলেন, মরণের পূর্বে। যাহহাক বলেন, মালাকুল মাওতকে স্বচক্ষে দেখার পূর্বে। এ হল অনতিবিলম্বে তাওবাহকারীর অবস্থা। পক্ষান্তরে মৃত্যু সংঘটিত হওয়াকালে যে ব্যক্তি বলবে, আমি এখন তাওবাহ্ করব তার তাওবাহ্ গ্রহণ করা হবে না। কেননা ওটা আবশ্যকীয় তাওবাহ্ স্বেচ্ছাধীন না। কেননা সেই তাওবাহ্ পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পর, কিয়ামতের দিন এবং আল্লাহর শাস্তি স্বচক্ষে দেখার পর তাওবাহ্ করার মতো। একমতে বলা হয়েছে, অনতিবিলম্বে তাওবাহ্ করার অর্থ হল, গুনাহের উপর স্থির না হয়ে গুনাহের পরপরই তাওবাহ্ করা।