২৩৩৯

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ক্ষমা ও তাওবাহ্

২৩৩৯-[১৭] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সবসময় ক্ষমা চায়, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে বের হয়ে আসার পথ খুলে দেন এবং প্রত্যেক দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করেন। আর তাকে এমন রিযক দান করেন, যা সে কক্ষনো ভাবতেও পারেনি। (আহমদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَزِمَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ» . رَوَاهُ أحمدُ وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

ব্যাখ্যা: (مَنْ لَزِمَ الِاسْتِغْفَارَ) অর্থাৎ- যে অবাধ্যতা প্রকাশের মুহূর্তে ক্ষমা প্রার্থনা অবলম্বন করবে অথবা সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করবে তাহলে সে ঐ ব্যক্তির মাঝে গণ্য হবে যে ক্ষমা প্রার্থনার মুখাপেক্ষী। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যে তার ‘আমলনামাতে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা পাবে। অচিরেই এটি তৃতীয় অনুচ্ছেদে আসবে।

উল্লেখিত শব্দ আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান-এর। ইমাম আহমাদ, নাসায়ী, ইবনুস্ সুন্নী এবং হাকিম একে (من أكثر من الاستغفار) অর্থাৎ- যে বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।) এ শব্দে বর্ণনা করেছেন। আর এটি দ্বিতীয় অর্থটিকে সমর্থন করছে।

(مَخْرَجًا) অর্থাৎ- এমন এক পথ যা ব্যক্তিকে অধিক হারে ক্ষমা প্রার্থনা করার দরুন সুপ্রশস্ততা ও উপকার লাভের দিকে বের করে আনবে।

(وَرَزَقَه) অর্থাৎ- পবিত্র হালাল বস্ত্ত তাকে দান করবেন।

(مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ) অর্থাৎ- এমন এক দিক থেকে যার ধারণা ও আশা সে করত না এবং তার অন্তরে তা জাগত না। জাযারী বলেন, অর্থাৎ- এমনভাবে তাকে রিযক দেয়া হবে যা সে জানতো না এবং তার হিসাবে তা ছিল না।

হাদীসটিতে আল্লাহর এ বাণীর দিকে ইঙ্গিত আছে, অর্থাৎ- ‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ বের করবেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিযক দান করবেন যার পরিকল্পনাও সে করত না আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট’’- (সূরা আত্ব ত্বলাক ৬৫ : ২-৩)। মুত্তাক্বী এবং অন্যান্যগণ যখন ত্রুটিমুক্ত নন যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী আর ভুলকারী বা পাপীদের মাঝে সর্বোত্তম হল তাওবাহকারীগণ তখন এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশ্লেষণ তার দিকে ক্ষমা প্রার্থনা অবলম্বনের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করেছেন। আরো ঐ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, অবাধ্য ব্যক্তি যখন ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন মুত্তাক্বীতে পরিণত হয়। আর এটি মুত্তাকবী ব্যক্তির আবশ্যকীয় প্রতিদান।

ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনার হক আদায় করবে সে মুত্তাক্বীতে পরিণত হবে। আর এটি মূলত আল্লাহ এ বাণীর দিকে লক্ষ্য করে, অর্থাৎ- ‘‘অতঃপর আমি বললাম তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তাহলে তিনি তোমাদের ওপর অজস্র ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদেরকে দান করবেন উদ্যানসমূহ আরো দান করবেন ঝরণাসমূহ’’- (সূরা নূহ ৭১ : ১০-১২) । আর এতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে সবকিছু অর্জন হয়।