২১৩৮

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২১৩৮-[৩০] হারিস আ’ওয়ার (রহঃ) বলেন, আমি (একদিন কূফার) মসজিদে বসা লোকজনের কাছে গেলাম। দেখলাম, লোকেরা আজে-বাজে কথায় ব্যস্ত। এরপর আমি ’আলী (রাঃ) এর কাছে গিয়ে এ খবর বললাম। তিনি বললেন, তারা এমন করছে? আমি জবাব দিলাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, (তবে) শুনো, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, সাবধান! শীঘ্রই পৃথিবীতে কলহ-ফাসাদ আরম্ভ হবে। আমি [’আলী] বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ থেকে বাঁচার উপায় কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর কিতাব, এতে তোমাদের আগের ও পরের খবর রয়েছে। তোমাদের ভিতরে বিতর্কের মীমাংসার পদ্ধতিও রয়েছে। সত্য মিথ্যার পার্থক্যও আছে। এটা কোন অর্থহীন কিতাব নয়। যে অহংকারী ব্যক্তি এ কুরআন ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা’আলা তার অহংকার চূর্ণ-বিচূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি এর বাইরে হিদায়াত সন্ধান করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এ কুরআন হলো আল্লাহর মজবুত রশি। জিকির ও সত্য সরল পথ।

কুরআন অবলম্বন করে কোন প্রবৃত্তি বিপথগামী হয় না। এর দ্বারা যবানের কষ্ট হয় না। এর দ্বারা প্রজ্ঞাবানগণ বিতৃষ্ণ হয় না। এ কুরআন বার বার পাঠ করায় পুরাতন হয় না। এ কুরআনের বিস্ময়কর তথ্য অশেষ। কুরআন শুনে স্থির থাকতে পারেনি জিনেরা। এমনকি তারা এ কুরআন শুনে বলে উঠেছিল, ’’শুনেছি আমরা এমন এক বিস্ময়কর কুরআন। যা সন্ধান দেয় সত্য পথের। অতএব ঈমান এনেছি আমরা এর উপর।’’ যে ব্যক্তি কুরআনের কথা সত্য বলে, যে এর উপর ’আমল করে, সে পুরস্কার পাবে। যে এর দ্বারা বিচার-ফায়সালা করে, ন্যায়বিচার করে, যে (মানুষকে) এর দিকে ডাকে, সে সত্য সরল পথের দিকেই ডাকে। (তাই এরূপ কুরআন ছেড়ে তারা কেন অন্য আলোচনায় বিভোর হচ্ছে?)। (তিরমিযী ও দারিমী। কিন্তু ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসের সানাদ মাজহূল [অপরিচিত]। আর হারিস আল আ’ওয়ার-এর ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে।)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ

وَعَنِ الْحَارِثِ الْأَعْوَرِ قَالَ: مَرَرْتُ فِي الْمَسْجِدِ فَإِذَا النَّاسُ يَخُوضُونَ فِي الْأَحَادِيثِ فَدَخَلْتُ عَلَى عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَأَخْبَرْتُهُ قَالَ: أَوَقَدْ فَعَلُوهَا؟ قلت نعم قَالَ: أما إِنِّي قَدْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول: «أَلا إِنَّهَا سَتَكُون فتْنَة» . فَقلت مَا الْمَخْرَجُ مِنْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «كتاب الله فِيهِ نبأ مَا كَانَ قبلكُمْ وَخبر مَا بعدكم وَحكم مَا بَيْنكُم وَهُوَ الْفَصْلُ لَيْسَ بِالْهَزْلِ مَنْ تَرَكَهُ مِنْ جَبَّارٍ قَصَمَهُ اللَّهُ وَمَنِ ابْتَغَى الْهُدَى فِي غَيْرِهِ أَضَلَّهُ اللَّهُ وَهُوَ حَبْلُ اللَّهِ الْمَتِينُ وَهُوَ الذِّكْرُ الْحَكِيمُ وَهُوَ الصِّرَاطُ الْمُسْتَقِيمُ هُوَ الَّذِي لَا تَزِيغُ بِهِ الْأَهْوَاءُ وَلَا تَلْتَبِسُ بِهِ الْأَلْسِنَةُ وَلَا يَشْبَعُ مِنْهُ الْعُلَمَاءُ وَلَا يَخْلِقُ على كَثْرَةِ الرَّدِّ وَلَا يَنْقَضِي عَجَائِبُهُ هُوَ الَّذِي لَمْ تَنْتَهِ الْجِنُّ إِذْ سَمِعَتْهُ حَتَّى قَالُوا (إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنا بِهِ) مَنْ قَالَ بِهِ صَدَقَ وَمَنْ عَمِلَ بِهِ أُجِرَ وَمَنْ حَكَمَ بِهِ عَدَلَ وَمَنْ دَعَا إِلَيْهِ هُدِيَ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ إِسْنَادُهُ مَجْهُولٌ وَفِي الْحَارِث مقَال

ব্যাখ্যা: এ ঘটনাটি কূফার একটি মসজিদে ঘটেছিল। লোকেরা মসজিদে কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আযকার ইত্যাদির পরিবর্তে অহেতুক কথাবার্তা কিস্‌সা-কাহিনীতে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। এ খবর খলীফাতুল মুসলিমীন ‘আলী (রাঃ) কে জানালে তিনি এ নিন্দনীয় কাজে বিস্ময় প্রকাশ করেন। অতঃপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস শুনালেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শীঘ্র পৃথিবীতে বিপর্যয় শুরু হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিপর্যয় থেকে বাঁচারও পন্থা বলে দিয়েছেন আর তা হলো আল্লাহর কিতাব আল কুরআনুল কারীম, অর্থাৎ- কুরআনুল কারীমকে আঁকড়ে ধরলে সকল ফিতনা ও বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। এতে যেমন রয়েছে পূর্ব জাতির নানা ঘটনাবহুল জীবন চিত্র ঠিক তেমনি রয়েছে পরবর্তী সত্য ভবিষ্যদ্বাণী, অর্থাৎ- কিয়ামতের শর্ত বা আলামত; তার ভয়াবহ দৃশ্য ইত্যাদি।

ইসলাম ও শারী‘আতের সকল ভিত্তি মূল হলো এই কুরআন। সত্যমিথ্যার প্রভেদকারী, এতে কোন মিথ্যা অহেতুক অনর্থক কথা নেই। অহংকারবশে যদি কেউ এ কুরআনের উপর ঈমান ও ‘আমল ত্যাগ করে তাহলে আল্লাহ তার গর্দান মটকিয়ে তাকে ধ্বংস করে দিবেন।

আল্লাহর মারিফাত অর্জনে আল কুরআন হলো অতীব মজবুত রশ্মি, প্রজ্ঞাপূর্ণ নাসীহাত এবং সরল সঠিক পথ। এ পথ অবলম্বন করলে কেউ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। অনারবী ভাষা-ভাষীর জন্যও এর পাঠ-পঠন কষ্টকর নয়। এর তথ্যসমূহ অতীব বিস্ময়কর। জিনেরা এ কুরআনের তিলাওয়াত শুনে বিস্ময়াভিভূত হয়ে ঈমান আনয়ন করেছে।