১৯৫০

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্বামীর সম্পদ থেকে স্ত্রীর সদাক্বাহ্ করা

১৯৫০-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এসে বলল, আমার মা আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার মনে হয় তিনি কথা বলতে পারলে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করি তার সাওয়াব কি তিনি পাবেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ পাবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَدَقَةِ الْمَرْأَةِ مِنْ مَالِ الزَّوْجِ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أُمِّي افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ فَهَلْ لَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقت عَنْهَا؟ قَالَ: نعم

ব্যাখ্যা: (رَجُلًا) বলা হয়েছে, এই ব্যক্তি হলেন সা‘দ বিন ‘উবায়দাহ্ (রাঃ)। আল্লামা মুরক্বানী (রহঃ) বলেন, অনেকে দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন এ ব্যক্তির নাম সা‘দ বিন ‘উবায়দাহ্ (রাঃ)। তবে আল্লামা বাদরুদ্দীন আয়নী (রহঃ) অন্য মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

(أُمِّي) তার মায়ের নাম ছিল উমায়রা বিনতু মাস্‘ঊদ। (لَوْ تَكَلَّمَتْ) যদি কথা বলতে সক্ষম হতেন। (تَصَدَّقت) তার সম্পদ থেকে কিছু সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতেন অথবা তার মাল থেকে কাউকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার ওয়াসীয়াত করতেন।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসের বাহ্যিক অর্থ থেকে বুঝা যায়, তিনি কথা বলতে সক্ষম হননি তাই সদাক্বাহ্ (সাদাকা)ও দেননি। তবে ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মুয়াত্ত্বা, সুনানে নাসায়ী এবং মুসতাদারাক হাকিমে সা‘ঈদ বিন ‘আমর বিন শুরাহবিল বিন সা‘ঈদ বিন সা‘দ বিন ‘উবায়দাহ্ তার পিতা তার দাদা থেকে সূত্রে বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, একদা সা‘দ বিন ‘উবায়দাহ্ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কোন যুদ্ধে বের হলেন অপর দিকে তার মাতা মদীনায় মৃত্যুশয্যায় শায়িত হলেন তাকে বলা হল আপনি কিছু ওয়াসিয়াত করুন। অতঃপর তিনি বলছেন, কিসের মাধ্যমে ওয়াসিয়াত করবো মাল তো সব সা‘দ-এর মাল। অতঃপর সা‘দ যখন আগমন করলেন তাকে বিষয়টি জানানো হলো অতঃপর সা‘দ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করি তাহলে এর সাওয়াব কি তিনি পাবেন? অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ পাবেন। তখন সা‘দ (রাঃ) বললেন, তাহলে আমি অমুক অমুক বাগান তার নামে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিলাম। তাহলে এ হাদীসে সা‘দ-এর মায়ের কথা বলার দলীল স্পষ্ট আর কিতাবের হাদীস থেকে বুঝা যায় তিনি কথা বলেননি, অতএব এ দু’টি হাদীসের সমন্বয় নিম্নোক্তভাবে করা সম্ভবঃ

১। কিতাব (মিশকাত) এর হাদীসখানাকে এভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনি সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়ার ব্যাপারে কথা বলেননি যদি বলতেন তাহলে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতেন তাহলে আমি এখন কি করবো?

২। সা‘দ বিষয়টি সম্পর্কে তথা মহিলাটির কাছ থেকে কি ঘটেছিল তা তিনি আদৌ জানতেন না আর অপরদিকে মুয়াত্ত্বা মালিক-এর কথা বলায় যে হাদীস পাওয়া যাচ্ছে তা বর্ণনা করেছেন সা‘ঈদ বিন ‘উবাদাহ্ অথবা মুরসাল সূত্রে তার ছেলে শুরাহবিল মোটকথা হাদীসের রাবী সা‘ঈদ হোক আর শুরাহবিল হোক কথা বলার ক্ষেত্রে হ্যাঁ সূচক বর্ণনার বর্ণনাকারী আর না সূচক বর্ণনার বর্ণনাকারী এক নয়।

হাদীসটি থেকে বুঝা যায়ঃ

* মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) জায়িয এবং এতে তার সাওয়াব হবে, বিশেষ করে সদাকাটি যখন মৃত ব্যক্তির সন্তান করবেন তখন আরো বেশি পৌঁছবে। অনুরূপভাবে দু‘আও পৌঁছবে। আর অন্য কিছুই মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে করলে তার সাওয়াব সে পায় না শুধুই এ দু’টি ব্যতীত যেমনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعى ‘‘মানুষের জন্য কিছুই নেই তবে যা সে চেষ্টা করে’’- (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ৩৯)। আর সন্তান তার চেষ্টার ফসল। সুতরাং সন্তান এগুলোর কাজ মৃত মা-বাবার পক্ষ থেকে আঞ্জাম দেয়া, তাহলে এর বাবা-মা পাবেন। অবশ্য দু‘আ এবং সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ব্যতীত অন্য কিছু পৌঁছায় কিনা সে ব্যাপারে ‘উলামায়ে কিরামের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। হানাফীগণ দু‘আর উপর কিয়াস করে বলেন, হ্যাঁ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) এবং দু‘আর মতো অন্যান্য সৎ ‘আমল ও মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছায়। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলবো এ ব্যাপারে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

* হাদীসটি থেকে আরো বুঝা যায় যিনি বা যারা হঠাৎ মারা গেলেন তাদের পক্ষ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা মুস্তাহাব। এ মর্মে ইমাম বুখারী তার সহীহুল বুখারীতে একটি অধ্যায়ও বেঁধেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ