১১৪৩

পরিচ্ছেদঃ ২৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম

১১৪৩-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা জামা’আতে শরীক হওয়ার জন্যে সালাতে আসলে আমাদেরকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) অবস্থায় পেলে তোমরাও সাজদায় যাও। আর এ সাজদাকে (কোন রাক্’আত) হিসেবে গণ্য করবে না। তবে যে লোক (ইমামের সাথে) এক রাক্’আতপ্রাপ্ত হবে সে সম্পূর্ণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পেয়ে গেল। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ وَنَحْنُ سُجُودٌ فَاسْجُدُوا وَلَا تَعُدُّوهُ شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً فقد أدْرك الصَّلَاة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: (فَاسْجُدُوا) হাদীসাংশে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, যে ব্যক্তি ইমামকে সাজদারত অবস্থাতে পাবে ঐ ব্যক্তির জন্য ইমামের সাথে সাজদাতে জড়িত হওয়া শারী‘আত সম্মত।

(وَلَا تَعُدُّوهُ) আবূ দাঊদে আছে (وَلَا تَعُدُّوهَا) স্ত্রী লিঙ্গের সর্বনাম দ্বারা। এভাবে মাজদুবনু তায়মিয়্যাহ্ মুনতাক্বা গ্রন্থে জাযারী জামি‘উল উসূল গ্রন্থে ৬ষ্ঠ খন্ডে ৪০৬ পৃষ্ঠাতে। অর্থ ঐ সাজদাকে তোমরা কিছু গণ্য করবে না।

(شَيْئًا) রাক্‘আত পাওয়া ইহকালের হুকুম বিবেচনায়। কেননা এতে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) পেলেও রুকূ‘ ছুটে যায় এবং এর মাধ্যমে পরকালের পুণ্য ছাড়া আর কিছু অর্জন হয় না।

(فَقَدْ أدْرَكَ الصَّلَاةَ) এক মতে বলা হয়েছে এখানে রাক্‘আত দ্বারা রুকূ‘ উদ্দেশ্য। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দ্বারা রাক্‘আত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকূ' পেল সে রাক্‘আত পেল অর্থাৎ ঐ রাক্‘আতটি তার জন্য বিশুদ্ধ হল। সে রাক্‘আতের মর্যাদা অর্জন করল। সুতরাং হাদীসটি জমহূরের মতের দলীল। তাদের মতে রুকূ‘রত অবস্থায় ইমামকে পাওয়া ঐ রাক্‘আত পাওয়া তবে এ মতের সামালোচনা করা হয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষে রাক্‘আত বলতে রাক্‘আতের সমস্ত অংশই উদ্দেশ্য। রুকূ' এবং রুকূ‘র পরের অংশের উপর রাক্‘আতের প্রয়োগ রূপকার্থে। কোন নিদর্শন ছাড়া মাজাযের দিকে প্রত্যাবর্তন করা যাবে না। যেমন বারা এর হাদীস কর্তৃক মুসলিমে এ ‘‘অতঃপর আমি তাঁর ক্বিয়াম (কিয়াম) পেয়ে রুকূ‘ করলাম, তাতে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করলাম, তারপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলাম। কেননা ক্বিয়াম, রুকূ' ও সাজদায় মুক্বাবালাতে রাক্‘আত সংঘটিত হওয়া একটি ক্বারীনাহ্। যা ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে যে, নিশ্চয় রাক্‘আত দ্বারা রুকূ' উদ্দেশ্য এবং এখানে এমন কোন নিদর্শন নেই যা রাক্‘আতের প্রকৃত অর্থ নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারে।’’ সুতরাং এ হাদীসাংশের মাধ্যমে ঐ ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করা ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকূ‘ পাবে সে ঐ রাক্‘আত পাবে’’ অস্পষ্টতা থেকে মুক্ত না।

এক মতে বলা হয়েছে এর অর্থ হল যে ব্যক্তি সালাতের এক রাক্‘আত পাবে সে ইমামের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পাবে। অর্থাৎ তার জন্য জামা‘আতের সাওয়াব অর্জন হবে। একে সমর্থন করছে এ ‘‘যে ব্যক্তি সালাতের এক রাক্‘আত পেল সে মর্যাদা লাভ করল’’ শব্দে আবূ হুরায়রার হাদীস। এক বর্ণনাতে আছে ‘‘সে সালাত ও তার মর্যাদা লাভ করল’’। ত্বীবী বলেনঃ এ হুকুমটি জুমু‘আর ক্ষেত্রে। আর এ ব্যক্তি সালামের পূর্বে সালাতের কিছু অংশ পেলে জামা‘আতের সাওয়াব পাবে না। মালিক-এর মাজহাব সে পূর্ণ এক রাক্‘আত পাওয়া ছাড়া জামা‘আতের মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। চায় তা জুমু‘আর সালাতের ক্ষেত্রে হোক বা অন্য সালাতের ক্ষেত্রে হোক। একমতে বলা হয়েছে এর অর্থ হল যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাতের এক রাক্‘আত পাবে সে সালাত পাবে তথা ইমামের অনুগত হওয়া, আনুগত্যকে আঁকড়িয়ে ধরা ও অন্যান্য কারণে জামা‘আতে সালাত আদায়ের হুকুম লাভ করবে। একে সমর্থন করছে যা এ ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে এক রাকাআত পেল সে সালাত পেল’’ শব্দে বর্ণিত হয়েছে তা।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলবঃ কিতাবের হাদীসটির বাচনভঙ্গির বাহ্যিক দিক ঐ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করছে যে, রাক্‘আত দ্বারা রুকূ‘ উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে নিদর্শন হল রসূলের বাণীঃ ‘‘যখন তোমরা আগমন করবে আর আমরা সাজদারত অবস্থায় থাকব তখন তোমরা সেজদা করবে’’। এখানে প্রথমে সাজদার উল্লেখ, তারপর রাক্‘আতের উল্লেখ ঐ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করছে যে, এখানে রাক্‘আত দ্বারা রুকূ' উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে রসূলের বাণীতে আরও প্রমাণ রয়েছে ‘‘তোমরা তাকে কিছু গণ্য করবে না’’। অর্থাৎ ইমামের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) পাওয়ার হুকুমের বর্ণনা। দুনিয়ার হুকুমের বিবেচনাতে সে সাজদাকে রাক্‘আত পাওয়ার মাঝে গণ্য করা যাবে না। আর এটি নীচের বাক্যতে রুকূ' পাওয়ার হুকুম বর্ণিত হওয়াকে দাবি করছে। অর্থাৎ প্রথম বাক্যের রাক্‘আতকে রুকূ' গণ্য করা হবে এবং যে ব্যক্তি রুকূ' পাবে সে রাক্‘আত পাবে। পক্ষান্তরে শেষ বাক্যটিকে জামা‘আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের মর্যাদা বর্ণনার উপর অথবা তার হুকুম বর্ণনার উপর প্রয়োগ করা অসম্ভব বিষয়। কেননা তখন উভয় বাক্যের মাঝে কোন সামঞ্জস্যতা থাকবে না এবং জামা‘আতের সাওয়াব অর্জনও রুকূ' পাওয়ার উপর নির্ভর করে না। বরং সালাতের একটি অংশ পাওয়ার মাধ্যমে সে সাওয়াব অর্জন হবে। চাই তা জুমু‘আর সালাতের ক্ষেত্রে হোক বা অন্য সালাতের ক্ষেত্রে হোক।

অপর পক্ষে ‘‘সে মর্যাদা লাভ করল অথবা সে সালাত ও তার মর্যাদা লাভ করল’’। এ বর্ণনাটি আবূ হুরায়রার অন্য আরেকটি হাদীস। এটি দুর্বল বর্ণনা হওয়া সত্ত্বেও এতে প্রথম বাক্যটি নেই। এর উপর ভিত্তি করে কিতাবের হাদীসটি ‘‘যে রুকূ‘ পাবে সে রাক্‘আত পাবে’’ এর উপর প্রমাণ বহনে কোন অস্পষ্টতা নেই। বিশেষ করে যে ব্যক্তি বৈপরীত্য অর্থকে বিবেচনা করে ঐ ব্যক্তির মাজহাব অনুপাতে। কেননা প্রথম বাক্যটি তার অর্থের দিক দিয়ে ঐ কথার উপর প্রামাণ বহন করে যে, যে ব্যক্তি ইমামকে রুকূ‘ অবস্থায় পাবে সে ওটাকে রাক্‘আত গণ্য করবে। তবে হাদীসটি দুর্বল। যেমন অচিরেই জানা যাবে। এতে ‘‘সাহাবী যখন হাদীস বর্ণনা করে ঐ হাদীসের বিপরীত ‘আমল তখন ধর্তব্য হবে যার প্রতি সে ‘আমল করেছে তা’’ এমন কথা ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হয়ে যাচ্ছে।

অর্থাৎ এ কথা না বলা আবশ্যক হয়ে যাচ্ছে যে, যে ব্যক্তি রুকূ' পাবে সে রাক্‘আত পাবে। কেননা যা বর্ণনা করেছে আর বিপরীত ফাতাওয়া দিয়েছে। ইমাম বুখারী ‘‘জুয্উল ক্বিরাআতে’’ ৩৯ পৃষ্ঠাতে সংকলন করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রুকূ' করার পূর্বে ইমামকে ক্বিয়াম (কিয়াম) অবস্থায় পাওয়া ছাড়া তোমার জন্য যথেষ্ট হবে না’’। তারই আরেক শব্দে ৬৪ পৃষ্ঠাতে আছে তিনি বলেন, তুমি যখন সম্প্রদায়কে রুকূ' অবস্থায় পাবে তখন তাকে রাক্‘আত হিসেবে গণ্য করবে না। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আমার নিকট হক হল নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি ইমামকে রুকূ' অবস্থায় পাবে এবং তার সাথে রুকূ‘তে শরীক হবে সে ঐ রুকূ‘কে তার জন্য রাক্‘আত হিসেবে গণ্য করবে না। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ