১১৪১

পরিচ্ছেদঃ ২৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম

১১৪১-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক ইমামের পূর্বে (রুকূ’ সিজদা্ হতে) মাথা উঠায় সে-কি এ বিষয়ের ভয় করে না যে, আল্লাহ তা’আলা তার মাথাকে পরিবর্তন করে গাধার মাথায় পরিণত করবেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ مَا عَلَى الْمَأْمُومِ مِنَ الْمُتَابَعَةِ وَحُكْمِ الْمَسْبُوْقِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا يَخْشَى الَّذِي يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الْإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللَّهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حمَار»

ব্যাখ্যা: (أَمَا يَخْشَى) নিশ্চয়ই এ কাজের কর্তা চেহারা বিকৃতির স্থানে রয়েছে এবং সে এর উপযুক্ত। সুতরাং তার উচিত এ শাস্তিকে ভয় করে চলা। এ ক্ষেত্রে ভয় না করে থাকার কোন সুযোগ নেই। এ অংশটুকু ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে যে, এ কাজের কর্তা এ শাস্তির উপযুক্ত হবে এবং ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে না যে, যে ব্যক্তি এ কাজ করবে অকাট্যভাবে এ শাস্তি তার ওপর আরোপিত হবে। আল্লাহর কৃপার দরুন অনেক শাস্তি বান্দার ওপর আরোপিত হয় না; এ অবস্থা তার বিপরীতের উপর প্রমাণ বহন করে না। কেননা কতক এমন শাস্তি আছে বান্দা যার উপযুক্ত হয় এমতাবস্থায় পালনকর্তা আল্লাহ তা থেকে পাশ কেটে যান, ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তিনি অনেক অপরাধ থেকে পাশ কেটে চলেন’’।

(الَّذِىْ يَرْفَعُ رَأْسَه) যে তার মাথা রুকূ', সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) থেকে উঠায়। হাদীসটি রুকূ', সাজদার ব্যাপারে ব্যাপক উদ্ধৃতি। পক্ষান্তরে আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে ‘‘যে ব্যক্তি তার মাথা উঠায় এমতাবস্থায় ইমাম সাজদারত’’ এ শব্দের মাধ্যমে আলোচনাতে সাজদাকে নির্দিষ্ট করা যথেষ্টতার উপর ক্ষান্ত হওয়া অধ্যায়ের আওতাভুক্ত। আর তা হল একই হুকুমের ক্ষেত্রে অংশীদার এমন দু’টি বিষয়ের একটিকে উল্লেখ করা আর তা ঐ সময় যখন উল্লেখ করা বিষয়ের এমন কোন বৈশিষ্ট্য থাকবে যাতে উল্লেখ করা একটি বিষয়ের উল্লেখ একই হুকুমে অংশীদার দু’টি বিষয়কে বুঝাতে যথেষ্ট হবে। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে রুকূ‘র হুকুম রেখে সাজদার হুকুম বর্ণনা করা উভয়ের হুকুম একই হুকুমের আওতাভুক্ত হওয়াতে আর তা হল ইমামের অগ্রগামী হওয়া। দু’টি বিষয়ের একই হুকুমের আওতাভুক্ত হওয়ার উদাহরণ আল্লাহর বাণীতেঃ ‘‘এমন পোষাকসমূহ যা তোমাদের উত্তপ্ততা থেকে রক্ষা করবে’’- (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ৮১)। অর্থাৎ ঠান্ডা থেকেও রক্ষা করবে। বিপরীত বিষয়ের উল্লেখ করা হয়নি। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে রুকূ‘র উল্লেখ না করে শুধু সাজদার উল্লেখ এ কারণে যে, বিনয়-নম্রতা প্রকাশ করণে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা)-রুকূ' অপেক্ষা নিকটবর্তী হয় সাজদারত অবস্থায়। অপর দিকে রুকূ‘ ও সাজদার জন্য অবনত হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের অগ্রগামী হওয়ার ক্ষেত্রে মারফূ‘ সূত্রে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক ত্ববারানী ও রাযযার সংকলিত হাদীসে ধমক বর্ণিত হয়েছে। আর তা হল যে ব্যক্তি ইমামের আগে তার মাথাকে উঁচু নীচু করে তার সামনের কেশ গুচ্ছ শায়ত্বনের (শয়তানের) হাতে। হায়সামী মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ-এর ২য় খন্ডে ৭৮ পৃষ্ঠাতে বলেনঃ এর সানাদ হাসান। মালিক এবং ‘আবদুর রাযযাক্ব তার থেকে মাওকূফরূপে বর্ণনা করেন। হাফিয বলেন, আর তা মাহফূজ বা সংরক্ষিত।

(رَأْسَه رَأْسَ حمَار) মুসলিমের বর্ণনাতে আছে ‘‘তার আকৃতি গাধার আকৃতিতে’’ তার আরেক বর্ণনাতে আছে ‘‘আল্লাহ তার চেহারাকে গাধার চেহারাতে পরিণত করে দিবেন’’। হাফিয বলেনঃ স্পষ্ট যে, তা বর্ণনাকারীদের হস্তক্ষেপের কারণে। ক্বাযী ‘আয়ায বলেনঃ এই বর্ণনাগুলো ঐকমত্য সমর্থিত। কেননা চেহারা মাথার অন্তর্ভুক্ত এবং আকৃতির বৃহদাংশ তাতেই রয়েছে।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলবঃ হাদীসে ব্যবহৃত (الصورة) শব্দটি হাদীসে ব্যবহৃত (الوجه) এর উপরও ব্যবহার করা হয় পক্ষান্তরে (الرَأْسَ) এর বর্ণনাকারী অনেক এবং তা ব্যাপক ও নির্ভরযোগ্য। হাদীসে নির্দিষ্ট করে (الرَأْسَ) তথা মাথার উপর শাস্তি পতিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে কেননা মাথার মাধ্যমেই অপরাধ সংঘটিত হয় এবং তা ব্যাপক। একমতে বলা হয়েছে সুস্পষ্ট যে, বিভিন্ন ঘটনার কারণে বর্ণনা বিভিন্ন রকম। ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনায় এ ‘‘আল্লাহ তার মাথাকে কুকুরের মাথাতে পরিবর্তন করে দিবেন’’ এ শব্দের মাধ্যমে একে এবং এ শাস্তির ক্ষেত্রে মতানৈক্য করা হয়েছে। একমতে বলা হয়েছে, এ বিষয়টি রূপক অর্থগত নির্দেশের দিকে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন বোকা, গাধা যে গুণে গুণান্বিত। অর্থ আল্লাহ তাকে গাধার  মতো বোকা বানিয়ে দিবেন, সুতরাং তা রূপক অর্থগত বিকৃতি। ত্বীবী বলেন, ইমামের প্রতি যে অনুসরণের নির্দেশ করা হয়েছে সম্ভবত মুক্তাদী যখন তার প্রতি ‘আমল করবে না এবং ইমাম ও মুক্তাদীর কি অর্থ তা বুঝবে না তখন তাকে নির্বুদ্ধিতার ক্ষেত্রে গাধার সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার দেয়া হয়েছিল, অতঃপর সে দায়িত্বভার বহন করেনি তাদের দৃষ্টান্ত ঐ গাধার মতো যে পুস্তকের বোঝা বহন করে।’’

এবং এ রূপক অর্থকে প্রাধান্য দেয়া হবে আর তা এ কারণে যে, এ ধরনের কাজের কর্তা অনেক হওয়া সত্ত্বেও তাদের মাঝে বাহ্যিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়নি। এক মতে বলা হয়েছে এটি তার বাহ্যিক অবস্থার দিকে গড়াবে এবং উদ্দেশ্য বাহ্যিক আকৃতি পরিবর্তন। কেননা এ জাতির মাঝে প্রকাশ্য বিকৃতি ঘটতে কোন বাধা নেই। যেমন সহীহুল বুখারীর মাগাযী পর্বে আবূ মালিক আল আশ্‘আরী বর্ণিত হাদীস এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছে। কেননা তাতে বিকৃতির আলোচনা আছে এবং এর শেষে রয়েছে ‘‘আর অন্যদেরকে তিনি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত বানর ও শুকরে বিকৃত করে রাখবেন’’ এবং এ বিষয়টি বাহ্যিক অবস্থার উপর প্রয়োগ এ ‘‘আল্লাহ তার মাথাকে কুকুরের মাথায় পরিবর্তন করে দিবেন’’ শব্দে বর্ণিত ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনাকে শক্তিশালী করবে। গাধার নির্বুদ্ধিতার বিষয়ে তারা যা উল্লেখ করেছে এ বর্ণনার সাথে তার সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে এ হাদীসটি রূপক অর্থকে দূর করে দিচ্ছে বা অসম্ভবপর করে দিচ্ছে।

এ রূপক অর্থকে আরও অসম্ভব করে দিচ্ছে ভবিষ্যৎকালীন বিষয়ের মাধ্যমে শাস্তি বর্ণনা করা ও অর্জিত পরিবর্তনের উপর প্রমাণ বহনকারী শব্দের কারণে। যদি নির্বুদ্ধিতার কারণে গাধার সাথে মানুষের সাদৃশ্য দেয়া হত তাহলে অবশ্যই বলতেনঃ ‘‘তার মাথা গাধার মাথা’’ কেননা উল্লেখিত নির্বুদ্ধিতার গুণটি উল্লেখিত কাজ করার সময়ে ঐ কাজের কর্তার অর্জন হয়েছে, সুতরাং তার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎকালীন ক্রিয়া (يَخْشى) বলা ভাল হবে না। যদিও ঐ কাজটি নির্বুদ্ধিতার কারণে হওয়ায় তুমি এ কাজটি করলে নির্বুদ্ধিতায় পতিত হবে। পক্ষান্তরে রূপক অর্থকে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে কারণ স্বরূপ যা বলা হয়েছে তা হলঃ ইমামের আগে কাজ করার কর্তা অনেক হওয়া সত্ত্বেও তাদের মাঝে বাহ্যিক পরিবর্তন সাধিত হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে নিশ্চয় হাদীসের মাঝে এমন কিছু নেই যা ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে যে, ঐ শাস্তি সংঘটিত হবেই বরং ঐ কাজের কর্তা শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে এবং ঐ কাজটি হওয়া সম্ভব এর উপর প্রমাণ বহন করছে। যাতে ঐ কাজের মুহূর্তে শাস্তি সংঘটিত হতে পারে। তবে কোন কিছুর সম্মুখীন হওয়া থেকে ঐ জিনিস সংঘটিত হওয়া আবশ্যক না। আমরা প্রথম হাদীসের ব্যাখ্যাতে এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছি। তবে হাদীসের বাহ্যিক দিক ইমামের পূর্বে মাথা উঠানোরে অবৈধতাকে দাবি করছে।

আর তা এ কারণে যে, ইমামের পূর্বে মাথা উঠানোর ক্ষেত্রে বিকৃতির হুমকি দেয়া হয়েছে। আর তা অত্যন্ত কঠিন শাস্তি। আর এ ব্যাপারে ইমাম নাবাবী শারহুল মুহাযযাবে দৃঢ় মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং হারাম বলে আখ্যা দিয়েছেন। অধিকাংশ ‘আলিমগণ ঐ মতের উপর রয়েছে যে, এ কাজের কর্তা পাপী হবে তবে তার সালাত যথেষ্ট হবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নষ্ট হয়ে যাবে।

ইমাম আহমাদ এক বর্ণনাতে ও আহলে যাহির এ ব্যাপারে উক্তি করেছেন আর তা ঐ অবস্থার উপর ভিত্তি করে যে, নিষেধাজ্ঞা এবং চেহারা বিকৃতির হুমকি সালাতের বিশৃঙ্খলাকে দাবি করে। আর এ অধ্যায়ের দ্বিতীয় হাদীস আনাসের হাদীসে রুকূ‘, সিজদা্, ক্বিয়াম (কিয়াম), বৈঠকে ইমামের অগ্রগামী হওয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মুগনী কিতাবে ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি তার কিতাবে বলেন, এ হাদীসের কারণে যে ব্যক্তি ইমামের আগে সালাতে কোন কাজ করবে তার কোন সালাত নেই। তিনি বলেন, যদি তার কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) থাকত তাহলে তার জন্য সাওয়াবের আশা করা হত এবং তার ব্যাপারে শাস্তির আশংকা করা হত না। হাদীসে উম্মাতের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্ণাঙ্গ দয়া, তাদের কাছে হুকুম আহকাম ও যার কারণে তাদেরকে সাওয়াব বা শাস্তি দেয়া হবে তার বর্ণনা রয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি ইমামের সাথে সাথে কাজ করার উপর দলীল গ্রহণ করেছেন। অথচ এতে এ ব্যাপারে কোন প্রমাণ নেই। কেননা হাদীসটি তার ভাষ্যের মাধ্যমে মুক্তাদী ইমামের আগে কাজ করা নিষিদ্ধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। তার অর্থের মাধ্যমে ইমামের পর পর কাজ করার উপর প্রমাণ বহন করছে। পক্ষান্তরে ইমামের সাথে সাথে কাজ করার ব্যাপারে হাদীসে চুপ থাকা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ