১০৮৬

পরিচ্ছেদঃ ২৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতের কাতার সোজা করা

১০৮৬-[২] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে চেহারা ফিরালেন এবং বললেন, নিজ নিজ কাতার সোজা করো এবং পরস্পর গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়াও! নিশ্চয় আমি আমার পেছনের দিক হতেও তোমাদেরকে দেখতে পাই। (বুখারী; বুখারী ও মুসলিমের মিলিত বর্ণনা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের কাতারগুলোকে পূর্ণ করো। আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই।)[1]

بَابُ تَسْوِيَةِ الصَّفِّ

وَعَن أنس قَالَ: أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَأَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِوَجْهِهِ فَقَالَ: «أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ وَتَرَاصُّوا فَإِنِّي أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ. وَفِي الْمُتَّفَقِ عَلَيْهِ قَالَ: «أَتِمُّوا الصُّفُوف فَإِنِّي أَرَاكُم من وَرَاء ظَهْري»

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ‘ইক্বামাত ও সালাতে প্রবেশের মাঝে কথা বলা জায়িয এ কথার প্রমাণ রয়েছে এবং কাতার সোজা করা ওয়াজিব এ কথার প্রমাণ রয়েছে। এক বর্ণনাতে বুখারী বৃদ্ধি করছেনঃ

وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنَكَبَه بِمَنْكِبِ صَاحِبِه وَقَدَمَه بِقَدَمِه.

অর্থাৎ আমাদের কেউ তার সাথীর কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতেন।

হুমায়দ থেকে মা‘মার এর এক বর্ণনাতে আছে, قال أنس: فلقد رأيت أحدنا إلى اخره (অর্থাৎ আনাস (রাঃ) বলেন, আমি আমাদের কাউকে দেখেছি হাদীসের শেষ পর্যন্ত) আনাস (রাঃ)-এর এ পরিষ্কার বিবরণ ঐ উপকারিতা দিচ্ছে যে, নিশ্চয় পায়ের সাথে পা, কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ছিল আর কাতার ঠিক করা ও সোজা করা থেকে কি উদ্দেশ্য সে বিবরণের উপর প্রমাণ উপস্থাপন হচ্ছে। মা‘মার আর এক বর্ণনাতে বৃদ্ধি করে বলেন, যদি আজ তাদের কারো সাথে আমি এটা করি অবশ্যই সে পলায়ন করবে যেন সে অবাধ্য খচ্চর।

আমি (লেখক) বলব, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ (تَرَاصُّوْا) তোমরা পরস্পর এঁটে দাঁড়াও। অপর বাণীঃ (رَصُّوْا صُفُوْفَكُمْ) অর্থাৎ তোমরা তোমাদের কাতার গুলোকে এঁটে দাও। অপর বাণীঃ (سُدُّوا الْخَلَلَ، وَلَا تَذَرْوُا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ) অর্থাৎ তোমরা পরস্পরের মাঝের ফাঁকা বন্ধ করে দাও এবং শায়ত্বনের (শয়তানের) জন্য ফাঁকা রেখনা। নু‘মান বিন বাশীর-এর উক্তি (আমি লোকটিকে দেখলাম তার কাঁধ তার সাথীর কাঁধের সাথে মিলাতে..... শেষ পর্যন্ত) আনাস (রাঃ)-এর উক্তিঃ (وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكَبَه بِمَنَكَبِ صَاحِبِه) আমাদের কেউ তার কাঁধ তার সাথীর কাঁধের সাথে মিলাতো..... শেষ পর্যন্ত। উল্লেখিত সকল হাদীস পরিষ্কারভাবে ঐ কথার উপর প্রমাণ করছে যে, কাতার ঠিক করা, সোজা করা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীরা একই পদ্ধতিতে কাতারে পরস্পরের মাঝের ফাঁকা বন্ধ করে কাঁধে কাঁধ, পায়ে পা মিলিয়ে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো।

আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সাহাবীগণ এমন করত। পরবর্তীতে সাহাবী ও তাবি‘ঈদের যুগে এ ধরনের ‘আমল ছিল। অতঃপর মানুষ এ ব্যাপারে অমনোযোগী হয়ে যায়। বর্তমান অন্ধ অনুকরণকারী মুকাল্লিদরা জামা‘আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের সময় দু’ মুসল্লীর মাঝে এক বিঘত বা তার চাইতেও বেশি ফাঁক রেখে দেয় কখনো তারা এত বেশি ফাঁক রাখে যে, আরেকজন ব্যক্তি সে ফাঁকে দাঁড়াতে পারবে। যখন কোন হাদীস অনুসারী ব্যক্তি কোন মুকাল্লিদের সাথে দাঁড়িয়ে পায়ের সাথে পা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর চেষ্টা করে তখন মুকাল্লিদ সুন্নাতকে বর্জন করে হাদীস অনুসারী হতে আলাদা হয়ে যায়।

তার দু’ পাকে মিলিয়ে নেয়। আবার কখনো মুকাল্লিদ তার প্রতি বক্র দৃষ্টিতে তাকায় বরং কখনো বন্য গাধার মতো করে পলায়ন করে। ফায়জুল বারী গ্রন্থের লেখক বলেন, ফুক্বাহা আরবাআর কাছে কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানো থেকে উদ্দেশ্য হল উভয় মুসল্লীর মাঝে এমন ফাঁক রাখা যাবে না যাতে অন্য তৃতীয় আরেকজন সেখানে প্রবেশ করে নেয়। তিনি বলেন, আমি একাকী ও জামা‘আতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে সালাফদের নিকট কোন পার্থক্য পাইনি যে, ব্যক্তির দু’ পায়ের মাঝে ফাঁক করে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে একাকী সালাত আদায় অপেক্ষা তারা জামা‘আতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের দু’ পায়ের মাঝে অধিক ফাঁক করে দাঁড়াতেন। এ মাসআলাটি শুধু গাইরে মুকাল্লিদীনেরা অস্তিত্ব দিয়েছেন অথচ এ ব্যাপারে তাদের কাছে (إلزاق) শব্দ ছাড়া অন্য কোন দলীল নেই। যার অর্থ মিলিয়ে দাঁড়ানো।

পরিশেষে বলা যায় উপরোক্ত হাদীস থেকে আমাদেরকে কাঁধে কাঁধ, পায়ে পা মিলিয়ে দাঁড়ানোর শিক্ষা নিতে হবে। প্রাসঙ্গিক কথা যদি আমরা জামা‘আতের সাথে সালাতে দাঁড়ানোর সময় আমাদের দু’ পায়ের মাঝে অধিক মাত্রায় ফাঁক রাখি তাহলে আমাদের পক্ষে কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ