৫৮৩

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (সালাতের) সময়সমূহ

৫৮৩-[৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল আমীন খানায়ে ক্বা’বার কাছে দু’বার আমার সালাতে ইমামাত করেছেন। (প্রথমবার) তিনি আমাকে যুহরের সালাত আদায় করালেন, সূর্য তখন ঢলে পড়েছিল। আর ছায়া ছিল জুতার দোয়ালির (প্রস্থের) পরিমাণ। ’আসরের সালাত আদায় করালেন যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার এক গুণ হলো। মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) ইফত্বার করে। ’ইশার সালাত আদায় করালেন যখন ’শাফাক্ব অস্তমিত হলো। ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারীর জন্য পানাহার হারাম হয়।

দ্বিতীয় দিন যখন এলো তিনি আমাকে যুহরের সালাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার এক গুণ। ’আসরের সালাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ। মাগরিবের সালাত আদায় করালেন, সায়িমগণ (রোযাদাররা) যখন ইফত্বার করে। ’ইশার সালাত আদায় করালেন, তখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হয়েছে। এরপর তিনি ফাজর (ফজর) আদায় করালেন তখন বেশ ফর্সা। এরপর আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! এটাই আপনার পূর্বেকার নবীগণের সালাতের ওয়াক্ত। এ দুই সময়ের মধ্যে সালাতের ওয়াক্ত। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَّنِي جِبْرِيلُ عِنْدَ الْبَيْتِ مَرَّتَيْنِ فَصَلَّى بِيَ الظُّهْرَ حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَتْ قَدْرَ الشِّرَاكِ وَصَلَّى بِيَ الْعَصْرَ حِين كَانَ ظلّ كل شَيْء مثله وَصلى بِي يَعْنِي الْمغرب حِين أفطر الصَّائِم وَصلى بِي الْعشَاء حِينَ غَابَ الشَّفَقُ وَصَلَّى بِيَ الْفَجْرَ حِينَ حَرُمَ الطَّعَامُ وَالشَّرَابُ عَلَى الصَّائِمِ فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ صَلَّى بِيَ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَهُ وَصَلَّى بِيَ الْعَصْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَيْهِ وَصَلَّى بِيَ الْمَغْرِبَ حِينَ أَفْطَرَ الصَّائِمُ وَصَلَّى بِيَ الْعِشَاءَ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ وَصَلَّى بِيَ الْفَجْرَ فَأَسَفَرَ ثُمَّ الْتَفَتَ إِلَيَّ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ هَذَا وَقْتُ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِكَ وَالْوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ

ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে, মি‘রাজ হলো রাত্রে, ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নিয়ে আসলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায়। দিন আরম্ভ হলো। ঠিক দুপুর বেলায় আল্লাহর নির্দেশক্রমে জিবরীল (আঃ) পৌঁছলেন রসূলের নিকট। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পদ্ধতি ও সালাতের সময়গুলো বুঝিয়ে দেয়ার উদ্দেশে।

সুতরাং কা‘বাহ্ গৃহের নিকট জিবরীল (আঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিয়ে পরপর দু’দিন পাঁচ পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আদায় করলেন। উদ্দেশ্য ছিল সালাতের সময় কখন আরম্ভ হয় ও কখন শেষ হয় তা হাতে কলমে বুঝানো।

সুতরাং প্রথম দিন যখন সূর্য নিরক্ষরেখা হতে খুব সামান্য পরিমাণ পশ্চিম দিকে গড়ল এবং কোন জিনিসের ছায়া তার পূর্ব দিকে জুতার ফিতা অর্থাৎ- খুব সামান্য পরিমাণ দেখা দিলো তখন যুহর পড়লেন। উল্লেখ্য যে, সূর্য পশ্চিম দিকে গড়ার পর কোন বস্ত্তর ছায়া যতটুকু পরিমাণে দৃষ্টিগোচর হয়েছিল তা ছিল ঐ ঋতুতে এবং মক্কা নগরীতে খুব সামান্য পরিমাণে। মনে রাখার দরকার যে, এ ছায়াটি ঋতুভেদে এবং দেশভেদে কম বেশী হয়। অর্থাৎ- যে দেশগুলো নিরক্ষরেখার ঠিক সোজাসুজিতে আছে সে দেশগুলোতে এ ছায়াটি খুব কম পরিমাণে দেখা দেয় এবং যে দেশগুলো নিরক্ষরেখা হতে উত্তর দিকে দূরে আছে সে দেশগুলোতে এ ছায়াটি বেশী পরিমাণে দেখা দিবে।

অতঃপর যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলো তখন ‘আসর আদায় করলেন।

উল্লেখ্য যে, কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলেই ‘আসরের সময় আরম্ভ হয়ে যায় এটাই হচ্ছে ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল এবং ইমাম আবূ হানীফার ছাত্র ইমাম আবূ ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ, ইমাম হাসান ও ইমাম যুফার-এর ফাতাওয়া। তাছাড়া হানাফী মাযহাবের গণ্যমান্য ‘আলিম ইমাম তাহাবীর ফাতাওয়াও এটাই। তাছাড়া ইমাম আবূ হানীফার ছাত্র ইমাম হাসান স্বীয় উস্তায (উস্তাদ) ইমাম আবূ হানীফার কাছ হতে একটি উক্তি বা ফাতাওয়া বর্ণনা করেছেন যে, কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলেই ‘আসরের সময় শুরু হয়ে যায়। ইমাম আবূ হানীফার এ ফাতাওয়া হানাফী মাযহাবের সাধারণ কিতাবের মধ্যে দেখা যায়। তাছাড়া হুবহু এ ফাতাওয়াটি ইমাম মুহাম্মাদ ইমাম আবূ হানীফার পক্ষ হতে বর্ণনা করেছেন ‘‘আল মাবসুত’’ নামক কিতাবের মধ্যে।

কিন্তু জনসাধারণের মাঝে এ ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফার যে ফাতাওয়া প্রসিদ্ধ আছে তা হচ্ছে এই যে, কোন জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর ‘আসরের সময় শুরু হয়। হানাফী মাযহাবের একজন বড় ‘আলিম মাওলানা ‘আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌবী সাহেব স্বীয় কিতাব ‘‘আত্ তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ’’-এর মধ্যে বলেছেন যে, ইনসাফের কথা হচ্ছে এই যে, ছায়া সমপরিমাণের হাদীসগুলো স্বীয় অর্থ প্রকাশের দিক দিয়ে পরিষ্কার ও সানাদগত দিক দিয়ে সহীহ এবং ছায়া দ্বিগুণের হাদীসগুলোতে এ কথা পরিষ্কার করে বলা হয়নি যে, ছায়া দ্বিগুণ না হলে ‘আসরের সময় আরম্ভ হয় না। যারা ছায়া দ্বিগুণের কথা বলেছেন তারা হাদীসের মধ্যে ইজতিহাদ করে মাসআলাহ্ বের করেছেন। এ ইজতিহাদী মাসআলাহ্ ঐ পরিষ্কার হাদীসের সমক্ষক হতে পারে না যে হাদীসে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, ছায়া সমপরিমাণ হলে ‘আসরের সময় আরম্ভ হয়ে যায়।

এতক্ষণ পর্যন্ত আলোচনা হলো প্রথম দিনের ‘আসরের সময়ের কথা। এখন আরম্ভ হচ্ছে প্রথম দিনের মাগরিবের সময়। তো প্রথম দিন সূর্য পরিপূর্ণরূপে অস্তমিত হওয়ার পর পরই মাগরিব আদায় করলেন জিবরীল (আঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাথে নিয়ে।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর পশ্চিম গগণে সূর্যের লাল আভা গায়িব হওয়ার পর পরই আদায় করলেন ‘ইশা। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পর পরই আদায় করলেন ফাজর (ফজর)। এ হলো ২৪ ঘণ্টার পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়ের বিবরণ।

তারপর দ্বিতীয় দিন দুপুর হলো সূর্য পশ্চিম দিকে গড়ে গেল কিন্তু তৎক্ষণাৎ যুহর আরম্ভ করলেন না। কিছুক্ষণ বিলম্ব করার পর যখন কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার কাছাকাছি হলো তখন যুহর শুরু করলেন এবং ছায়া সমপরিমাণ হওয়ার সাথে সাথে সালাম ফিরিয়ে যুহর শেষ করলেন। এতে করে যুহরের জামা‘আত ও যুহরের সময় দু’টি একই সাথে সমাপ্ত হলো।

উল্লেখ্য যে, পরপর দু’দিন সালাত আদায় করে দেখানোর উদ্দেশ্যই ছিল এই যে, একটি সালাতের সময় আরম্ভ হচ্ছে কখন আর তা বুঝালেন প্রথম দিনে এবং ঐ সালাতটির সময় শেষ হচ্ছে কখন আর সেটা বুঝালেন দ্বিতীয় দিনে। তাছাড়া এর সাথে এ কথাও বুঝিয়ে দিলেন যে, যুহরের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় ‘আসরের সময় এবং এ দু’ সালাতের মাঝে সময়ের কোন গ্যাপও নেই এবং এ দু’ সালাত একই সময়ের মধ্যে একত্রিতও হয় না।

এ হলো দ্বিতীয় দিনের যুহরের সময়ের আলোচনা। দ্বিতীয় দিন যুহর সালাতের সালাম ফিরানোর পর পরই শুরু হয়ে গেল ‘আসরের সময়। কিন্তু সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথে ‘আসরের সালাত আরম্ভ করলেন না, কিছুক্ষণ বিলম্ব করলেন। যখন কোন জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হলো তখন ‘আসর আদায় করলেন।

আর মাগরিব আদায় করলেন সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই এবং ‘ইশা আদায় করলেন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ পার হওয়ার পর। ফাজর (ফজর) আদায় করলেন বিলম্ব করে, আলো হওয়ার পর।

এভাবে দু’দিন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পর জীবরীল (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, এ হলো পূর্বেকার নাবীগণের সালাতের সময়। অর্থাৎ- পূর্বেকার নাবীগণের সালাতের সময়ের মধ্যে এ রকমই প্রশস্ততা ছিল যেমন আপনার সালাতের সময়সমূহের মধ্যে প্রশস্ততা রয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ