হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৫৯৫৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে

৫৯৫৯-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হলো এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার ঘরে, আমার পালার দিন এবং আমার বুক ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে হেলান দেয়া অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন। আর তাঁর ইন্তিকালের আগ মুহূর্তে আল্লাহ তা’আলা আমার মুখের লালার সাথে তাঁর মুখের লালাও মিশিয়ে দিয়েছেন। আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর মিসওয়াক হাতে আমার কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন আমার সাথে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। তখন আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঐ মিসওয়াকটির দিকে তাকাচ্ছেন। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি মিসওয়াক করতে চাচ্ছেন। অতএব আমি বললাম, আমি কি মিসওয়াকটি আপনার জন্য নেব? তিনি (সা.) মাথা নেড়ে হা-বোধক ইঙ্গিত করলেন। অতএব আমি মিসওয়াকটি তার কাছ হতে নিয়ে তাঁকে দিলাম। তা তার জন্য কষ্টকর হলো। তখন বললাম, আমি কি তাকে আপনার জন্য নরম করে দেব? তিনি (সা.) মাথা হেলিয়ে হ্যা-বোধক ইঙ্গিত করলেন। অতএব তখন আমি তাকে নরম করে দিলাম। অতঃপর তিনি (সা.) তা ব্যবহার করলেন। আর তাঁর সামনে একটি পাত্রে পানি রাখা ছিল। তাতে তিনি (সা.) উভয় হাত ঢুকিয়ে হাত দুটি দ্বারা আপন চেহারা মাসেহ করতে লাগলেন। এ সময় তিনি (সা.) বলছিলেন- লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, অবশ্য মৃত্যুর যন্ত্রণা ভীষণ। অতঃপর তিনি হাত উঠিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বলতে থাকলেন- ’ফি রফীকিল আলা-’ অর্থাৎ- উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সাথে (আমাকে মিলিত কর), এ কথা বলতে বলতে তিনি ইন্তিকাল করেন এবং তাঁর হাত নিচে নেমে আসে। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ مِنْ نِعَمِ اللَّهِ عَلِيٍّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُوِفِّيَ فِي بَيْتِي وَفِي يَوْمِي وَبَيْنَ سَحْرِي وَنَحْرِي وَإِنَّ اللَّهَ جَمَعَ بَيْنَ رِيقِي وَرِيقِهِ عِنْدَ مَوْتِهِ دَخَلَ عَلَيَّ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ وَبِيَدِهِ سِوَاكٌ وَأَنَا مُسْنِدَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَأَيْتُهُ يَنْظُرُ إِلَيْهِ وَعَرَفْتُ أَنَّهُ يُحِبُّ السِّوَاكَ فَقُلْتُ: آخُذُهُ لَكَ؟ فَأَشَارَ بِرَأْسِهِ أَنْ نَعَمْ فَتَنَاوَلْتُهُ فَاشْتَدَّ عَلَيْهِ وَقُلْتُ: أُلَيِّنُهُ لَكَ؟ فَأَشَارَ بِرَأْسِهِ أَنْ نَعَمْ فَلَيَّنْتُهُ فَأَمَرَّهُ وَبَيْنَ يَدَيْهِ رَكْوَةٌ فِيهَا مَاءٌ فَجَعَلَ يُدْخِلُ يَدَيْهِ فِي الْمَاءِ فَيَمْسَحُ بِهِمَا وَجْهَهُ وَيَقُولُ: «لَا إِلَهَ إِلَّا الله إِنَّ للموتِ سَكَراتٍ» . ثمَّ نصب يَده فَجَعَلَ يَقُولُ: «فِي الرَّفِيقِ الْأَعْلَى» . حَتَّى قُبِضَ ومالت يَده. رَوَاهُ البُخَارِيّ رواہ البخاری (4449) ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা: (وَفِي يَوْمِي) আমার দিনে'। অর্থাৎ আমার পালার দিনে যাতে করে আমি তার খিদমাত করে সম্মানিত হতে পারি। “জামিউল উসূল” গ্রন্থে এসেছে, যেদিন রাসূল (সা.) -এর মৃত্যু রোগের সূচনা মাথা ব্যথার মাধ্যমে হয়, সেদিন তিনি মা আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। অতঃপর যেদিন মাথাব্যথা ও অসুস্থতা বেড়ে গেল সেদিন তিনি মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। সে সময় রাসূল (সা.) তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীগণের নিকট অসুস্থতার দিনগুলো মা আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরে অবস্থানের জন্য সম্মতি ও আগ্রহ প্রকাশ করলে তারা সকলে তাকে অনুমতি প্রদান করেন। মৃত্যুরোগের তীব্রতা ১২ দিন ছিল। আর নবী (সা.) -এর মৃত্যু রবীউল আওয়াল মাসের সোমবার দিন চাশতের সময় হয়েছে। তারিখের ব্যাপারে কেউ কেউ ২ রবীউল আওয়াল বর্ণনা করেছেন। আবার বলা হয়েছে, তিনি ১২ রবীউল আওয়াল মৃত্যু বরণ করেছেন এবং অধিকাংশ বর্ণনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয়। (মিরক্কাতুল মাফাতীহ)

(وَبَيْنَ سَحْرِي وَنَحْرِي) “আমার বুক ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে।” অর্থাৎ যখন রাসূল (সা.) -এর পবিত্র আত্মা তাঁর পবিত্র দেহ থেকে আলাদা হয়ে যায় তখন তিনি মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বুক ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে মাথা রেখে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, সাহার হলো পেটের উপরিভাগে কণ্ঠনালির সাথে সংযুক্ত স্থানকে। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নাহার হলো বুকের উপরিভাগে হার ঝুলানোর স্থান। ইবনু হাজার বলেন, আস সাও হলো বক্ষ। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, আমার বক্ষ ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে অর্থাৎ নবী (সা.) এই মৃত্যুবরণ করার সময় তার মাথা আমার বক্ষ ও গলার মাঝে ছিল। হাকিম ও ইবনু সা'দ-এর বর্ণনা যে, সে সময় রাসূল (সা.) -এর মাথা ‘আলী (রাঃ)-এর কোলে ছিল উক্ত বর্ণনার বিরোধী নয়। কেননা প্রথমত তারা দুজন যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে উক্ত রিওয়ায়াতকে বর্ণনা করেছেন তন্মধ্যে হতে কোন পদ্ধতিই এমন নয় যে, তা কোন ত্রুটি হতে মুক্ত। এ মত পোষণ করেন হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ)। দ্বিতীয়ত যদি উক্ত পদ্ধতিকে সঠিক মেনে নেয়াও হয় তাহলে তার এ ব্যাখ্যা করা হবে যে, রাসূল (সা.) -এর মাথা ‘আলী (রাঃ)-এর কোলে তার মৃত্যুর পূর্বে ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(إِنَّ للموتِ سَكَراتٍ) “নিশ্চয় মৃত্যুর কষ্ট ভীষণ।” অর্থাৎ মৃত্যুর যন্ত্রণা খুবই কষ্টের যে কোন মানুষের জন্য। তা নবী  রাসূলদের জন্যও কষ্টের। অতএব তোমরা সেই ভীষণ কষ্টের মুহূর্তের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর। আর আল্লাহর কাছে সহজ মৃত্যু কামনা কর। শামায়িলে তিরমিযীতে মা আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, মৃত্যুর সময় আমি রাসূল (সা.)-কে দেখলাম যে, তিনি ব্যস্ত আছেন তার পাশে রাখা পানির পাত্র থেকে দু’হাতে পানি দিয়ে তার মুখমণ্ডল মাসেহ করছেন আর বলছেন, হে আল্লাহ! আমাকে খারাপ মৃত্যু থেকে রক্ষা করুন। অথবা তিনি বলেন, মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে। আর তার এ কষ্টের কারণে তার মর্যাদা আরো বেশি করা হয়। তিনি তার হাতকে উঁচু করে দু'আ করার মতো করে অথবা ইশারা করার মতো করে আকাশের দিকে তুলে ছিলেন। আর বারবার বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমাকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সাথে মিলিত করুন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-
(وَ حَسُنَ اُولٰٓئِکَ رَفِیۡقًا) “আর তারা বন্ধু হিসেবে কতই না উত্তম”- (সূরা আন্ নিসা ৪: ৬৯)। বন্ধু হলো পথের সাথি। বলা হয় যে, আমার জন্য উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন স্থান নির্ধারণ করে দিন। আর সে স্থান বলতে তার জন্য নির্ধারিত মাকামে মাহমূদ উদ্দেশ্য। যার অর্থ আমাকে প্রতিষ্ঠিত থেকে যেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিন। জাওহারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আর রফীকিল আ'লা হলো, 'আল জান্নাত'। এ কথা বলেছেন ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ)। আর তা উচ্চ স্থান হওয়া থেকে খালি নয়। বলা হয়ে থাকে যে, আর রফীকিল আ'লা বলতে বুঝানো হয়েছে, আল্লাহর নামসমূহকে। কারণ তার মধ্যে নম্রতা ও দয়া আছে। এখানে (فعيل) শব্দটি (فاعل) অর্থে। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়াশীল। আর এখানে (في) শব্দটি যোগ করেছেন। অধিক নিকটবর্তী হওয়ার জন্য। এখানে তার রবের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও রবের একাত্মতার ঘোষণার প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)