হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৫৮৮২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৮৮২-[১৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার দিবসে লোক পিপাসার্ত হয়ে পড়ল। সে সময় একটি চমড়ার পাত্র রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সামনে ছিল। তিনি (সা.) তা হতে উযূ করলেন। অতঃপর লোক তাঁর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনার চর্মপাত্রের পানি ছাড়া পান করার বা উযূ করার মত আমাদের কাছে কোন পানি নেই। তখন নবী (সা.) তাঁর হাত উক্ত পাত্রে রাখলেন। ফলে সাথে সাথেই তার আঙ্গুলগুলোর মধ্যবর্তী জায়গা হতে ঝরনাধারার মত পানি ফুটে বের হতে লাগল। জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা সেই পানি (তৃপ্তি সহকারে) পান করলাম এবং তা দিয়ে আমরা উযূ করলাম। জাবির (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, সংখ্যায় আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, একলাখ হলেও সে পানিই আমাদের জন্য যথেষ্ট হত। তবে তখন আমাদের সংখ্যা ছিল পনের শত। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ عَطِشَ النَّاسُ يَوْمَ الْحُدَيْبِيَةِ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ يَدَيْهِ رِكْوَةٌ فَتَوَضَّأَ مِنْهَا ثُمَّ أَقْبَلَ النَّاسُ نَحْوَهُ قَالُوا: لَيْسَ عَنْدَنَا مَاءٌ نَتَوَضَّأُ بِهِ وَنَشْرَبُ إِلَّا مَا فِي رِكْوَتِكَ فَوضَعَ النبيُّ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَدَه فِي الرِّكْوَةِ فَجَعَلَ الْمَاءُ يَفُورُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِهِ كَأَمْثَالِ الْعُيُونِ قَالَ فَشَرِبْنَا وَتَوَضَّأْنَا قِيلَ لِجَابِرٍ كَمْ كُنْتُمْ قَالَ لَوْ كُنَّا مِائَةَ أَلْفٍ لَكَفَانَا كُنَّا خَمْسَ عَشْرَةَ مِائَةً. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (4152) و مسلم (73 / 1856)، (4813) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

ব্যাখ্যা : উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর একটি বিশেষ মু'জিযার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যা হুদায়বিয়াতে ঘটেছিল। তখন সেখানে উপস্থিত সাহাবীদের সংখ্যা বিভিন্ন হাদীসে ১৪০০ এর কম-বেশি করে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তখন হুদায়বিয়াতে সাহাবীদের সংখ্যা ছিল চৌদ্দশত এর কিছু বেশি। তবে অতিরিক্ত সংখ্যাটি এমন ছিল না যা শতকে পৌঁছে যায়।
অতএব যারা তাদের সংখ্যা চৌদ্দশত বলে উল্লেখ করেছেন, তারা সেই অতিরিক্ত সংখ্যাকে বাদ দিয়েছেন। আর যারা পনের শত বলে উল্লেখ করেছেন তারা সেই অতিরিক্ত সংখ্যাকে শতক ধরেই হিসাব করেছেন। আবার কেউ কেউ ষোল শত বা সতের শত বলে উল্লেখ করেছেন। তারা হয়ত উক্ত দলের সাথে আগত শিশুদের ও অন্যান্য লোকদেরকেও হিসাব করেছেন।
ইবনু মারদুওয়াইহি ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, তাদের সংখ্যা ছিল পনের শত পঁচিশ জন। তারপরেও প্রকৃত বিষয়ে আল্লাহই অধিক অবগত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।

ফাতহুল বারীতে বলা হয়েছে যে, নবী (সা.) তাঁর হাত পাত্রে রাখলেন। আর পানি তাঁর আঙ্গুল দিয়ে বের হতে শুরু করল। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে যে, নবী (সা.) তার উযূর অতিরিক্ত পানি কুপে ঢেলে দিলেন। আর তখন কুপে পানি বেশি হতে লাগল।
এখানে বাহ্যিকভাবে উক্ত হাদীস দুটির মাঝে বৈপরীত্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই ইমাম ইবনু হিব্বান (রহ.) উক্ত হাদীস দুটির মাঝে বর্ণনা করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, হুদায়বিয়াতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাটি দু'বার ঘটেছে- ১) তার আঙ্গুল দিয়ে পানি বের হয়ে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২) তাঁর বরকতময় পানি কূপে ঢেলে দেয়ার কারণে তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এটিও হতে পারে যে, তাঁর আঙ্গুল থেকে পানি বের হওয়ার সময় তার হাত পাত্রে ছিল আর তারা সকলেই সেখান থেকে পানি নিয়ে উযূ করেছিল এবং পান করেছিল। তারপর পাত্রে থাকা অবশিষ্ট পানি কুপে ঢেলে দিতে বললেন। তা ঢেলে দেয়ার পর কূপের পানি বৃদ্ধি পেলো।  যেমন জাবির (রাঃ) নুবায়হি আল ‘আনাযী-এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছে যে, এক ব্যক্তি একটি পাত্রে অল্প পানি নিয়ে আসলো। সেই পানিটুকু ছাড়া অন্য কোন লোকের কাছে একটুও পানি ছিল না। সেই পানি আল্লাহর রাসূল (সা.) একটি পেয়ালায় ঢাললেন।
তারপর সেখান থেকে পানি নিয়ে ভালোভাবে উযু করলেন এবং পাত্রটি সেখানে রেখে চলে গেলেন। অতঃপর লোকেরা উক্ত পাত্রটির কাছে ভিড় করল। তখন রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা থাম। অতঃপর তিনি উক্ত পাত্রে হাত রাখলেন। তারপর বললেন, তোমরা পরিপূর্ণভাবে উযূ করো। উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন মানুষ দেখেছে যে, মানুষের আঙ্গুল দিয়ে ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে।
(دَلَائِلِ الْبَيْهَقِيِّ) (দালায়িলুল বায়হাক্কী) গ্রন্থে রয়েছে যে, নবী (সা.) কূপের গভীরে একটি তীর রাখতে আদেশ করলেন। তারপর যখন তা রাখলেন তখন কূপের পানি উথলিয়ে উঠল।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জীবদ্দশায় কম পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা বিভিন্ন সময়ই ঘটেছে। এটি ছিল মুহাম্মাদ (সা.) -এর মু'জিযাহ্। (ফাতহুল বারী হা. ৪১৫২)