হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৫৫৯২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা

৫৫৯২-[২৭] সাওবান (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আমার হাওয ’আদান থেকে বালকা’র ’উম্মানের মধ্যবর্তী দূরত্ব পরিমাণ হবে। তার পানি দুগ্ধ অপেক্ষা সাদা ও মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং তার পানপাত্রের সংখ্যা আকাশের নক্ষত্রের মতো অগণিত। যে তা থেকে এক ঢোক পান করবে, সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। উক্ত হাওযের কাছে সর্বপ্রথম ঐ সকল গরীব মুহাজিরীনগণ আসবে, যাদের মাথার চুল অগোছালো, পরনের কাপড়-চোপড় ময়লা, সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলাগণকে যাদের সাথে বিবাহ দেয়া হয় না এবং তাদের জন্য (গৃহের) দরজা খোলা হয় না। [আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ এবং ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসটি গরীব]

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْحَوْض والشفاعة )

عَن ثَوْبَانَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «حَوْضِي مِنْ عَدَنٍ إِلَى عُمَّانَ الْبَلْقَاءِ مَاؤُهُ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ وَأَكْوَابُهُ عَدَدُ نُجُومِ السَّمَاءِ مَنْ شَرِبَ مِنْهُ شَرْبَةً لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهَا أَبَدًا أَوَّلُ النَّاسِ وُروداً فقراءُ المهاجرينَ الشُّعثُ رؤوساً الدُّنْسُ ثِيَابًا الَّذِينَ لَا يَنْكِحُونَ الْمُتَنَعِّمَاتِ وَلَا يُفْتَحُ لَهُمُ السُّدَدُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ سندہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 275 ح 22725) و الترمذی (2444) و ابن ماجہ (4303) * السند منقطع ، العباس بن سالم لم یسمعہ من ابی سلام ، انظر سنن ابن ماجہ (4303) و احادیث مسلم (2301)، (5990) و ابن حبان (الموارد : 2601) وغیرھما تغنی عنہ

ব্যাখ্যা: কিয়ামতের দিন প্রত্যেক নবীর একটা করে হাওয হবে। অত্র হাদীসে নবী (সা.) -এর হাওযের পরিধি ও অন্যান্য কতিপয় গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন, আমার হাওয এডেন (আদন) থেকে বালকার আম্মান-এর মধ্যবর্তী দূরত্ব পরিমাণ হবে। ‘আদন (এডেন) হলো ইয়ামানের সীমান্তে ভারত সাগর সংলগ্ন একটি স্থান। আম্মান হলো সিরিয়ার বালকা শহরের একটি স্থান। এখানে হাওযে কাওসারের প্রশস্ততা চিহ্নিত করার জন্য দু'টি স্থানের কথা বলা হয়েছে। অন্য হাদীসে, আয়লাহ্ থেকে সন্’আ পর্যন্ত। আবার হারিসার হাদীসে সন্'আ থেকে মদীনার দূরত্বের কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন বর্ণনার দ্বারা কেবল হাওযে কাওসারের দীর্ঘতা অথবা প্রশস্ততা বুঝানোই উদ্দেশ্য, হুবহু সীমা বর্ণনা উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহর রাসূল প্রত্যেক ব্যক্তিকে সহজভাবে বুঝানোর জন্য তার পরিচিত জায়গার নাম উচ্চারণ করেছেন।
হাদীসের বাণী, “তার পানি দুধের চেয়েও অধিক সাদা” এতে ইশারা রয়েছে যে, সাদা সবচেয়ে পছন্দনীয় রং। অবশ্য কেউ কেউ স্বভাবগতভাবে হলুদকে প্রিয় মনে করে থাকে।
‘তা মধুর চেয়েও মিষ্টি, এর অর্থ মধুর চেয়েও সুস্বাদু। এছাড়াও এতে রয়েছে বান্দার জন্য আরোগ্য বিধান।
‘তার পানপাত্রসমূহ আকাশের নক্ষত্রসম', এ বাক্যে (أَكْوَابُ) শব্দটি (كُوْبٌ)-এর বহুবচন, অর্থ পেয়ালা, গ্লাস, পানপাত্র। এটা এমন হবে যার কোন হাতল এবং নল হবে না।
উম্মতে মুহাম্মাদী (সা.) - (সুন্নাতের অনুসারীরা) নবীজীর হাতে এখান থেকে এক পেয়ালা করে পানি পান করবে। যে এক পেয়ালা পান করবে সে জান্নাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আর পিপাসার্ত হবে না।
এ পানি পানকারীদের মর্যাদার স্তর হবে। সর্বপ্রথম স্তরের পানকারী হবে ঐ গরীব মুহাজির সাহাবীগণ যাদের চুলগুলো ছিল এলোমেলো উষ্কখুশকো, পরনে ছিল ময়লাযুক্ত পুরাতন ও ছিন্ন বস্ত্র, হতদরিদ্রতার কারণে কোন সম্পদশালী সম্ভ্রান্ত লোক তাদের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে চাইত না, তারা কোন বাড়ীতে গিয়ে ডাক দিলে তাদের জন্য বন্ধ দরজাও খোলা হত না। এরা সর্বপ্রথম হাওযে কাওসারের পানি এজন্য পান করবে যে, তারাই হলো বাহ্যিক এবং আত্মিকভাবে প্রকৃত পিপাসিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা দুনিয়াতে অধিক ক্ষুধার্ত থাকবে আখিরাতে তারাই হবে অধিক পরিতৃপ্ত। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
(کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا هَنِیۡٓـئًۢا بِمَاۤ اَسۡلَفۡتُمۡ فِی الۡاَیَّامِ الۡخَالِیَۃِ)
“(নির্দেশ হবে যে,) তোমরা সানন্দে খাও এবং পান কর ঐ সমস্ত কাজের বিনিময়ে যা তোমরা বিগত দিনে প্রতিদানের আশায় করেছিলে।” (সূরা আল হাককাহ্ ৬৯: ২৪)।
মুহাজির হলো যারা মক্কাহ্ থেকে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। হাদীসে বর্ণিত মুহাজির দ্বারা উদ্দেশ্য তারাই, যদিও বাড়ী-ঘর বা মাতৃভূমি থেকে যারাই হিজরত করেছে তারাই মুহাজির নামের অন্তর্ভুক্ত। মুহাজিরগণ আল্লাহর জন্য স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করেছেন, প্রাচুর্যতার উপর দারিদ্রতাকে বেছে নিয়েছেন, প্রসিদ্ধির চেয়ে নিজের দুর্বলতাকে, সম্মান-খ্যাতি ও ধন-সম্পদ আহরণের চেয়ে দুনিয়াবিরাগীকে পছন্দ করে নিয়েছেন আর আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে “ইলম ও ‘আমলেই নিমগ্ন থেকেছেন। ফলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা পুরস্কারকে অগ্রণী করবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২৪৪৪)