হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৫৫৬৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা

৫৫৬৮-[৩] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার হাওযের (উভয় পার্শ্বের) দূরত্ব আয়লাহ ও ’আদন-এর মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকেও অধিক। তার পানি বরফের চেয়ে অধিক সাদা এবং দুধমিশ্রিত মধুর তুলনায় অনেক মিষ্ট। তার পানপাত্রসমূহ নক্ষত্রের সংখ্যা অপেক্ষা অধিক। আর আমি আমার হাওযের কাওসারে আগমন করা থেকে লোকেদেরকে (অন্যান্য উম্মতদেরকে) তেমনিভাবে বাধা দেব, যেমনিভাবে কোন লোক তার নিজের হাওয থেকে অন্যের উটকে পানি পানে বাধা দিয়ে থাকে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেদিন কি আপনি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, সেদিন তোমাদের বিশেষ চিহ্ন থাকবে যা অন্যান্য উম্মাতের কারো জন্য হবে না। তোমরা আমার কাছে এমন অবস্থায় আসবে যে, তোমাদের মুখমগুল এবং হাত-পা উযূর কারণে উজ্জ্বল থাকবে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَوْض والشفاعة )

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ حَوْضِي أَبْعَدُ مِنْ أَيْلَةَ مِنْ عَدَنٍ لَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ الثَّلْجِ وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ بِاللَّبَنِ وَلَآنِيَتُهُ أَكْثَرُ مِنْ عَدَدِ النُّجُومِ وَإِنِّي لَأَصُدُّ النَّاسَ عَنْهُ كَمَا يَصُدُّ الرَّجُلُ إِبِلَ النَّاسِ عَنْ حَوْضِهِ» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَعْرِفُنَا يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ: «نَعَمْ لَكُمْ سِيمَاءُ لَيْسَتْ لِأَحَدٍ مِنَ الْأُمَم تردون عليّ غرّاً من أثر الْوضُوء» . رَوَاهُ مُسلم رواہ مسلم (36 / 247)، (581) ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের ব্যাখ্যার কিয়দংশ পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যায় অতিবাহিত হয়েছে, তার পূনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। এখানে হাওযে কাওসারের দৈর্ঘ্য বা প্রস্থের দূরত্ব আয়লাহ্ হতে ‘আদন-এর দূরত্বের চেয়েও বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। আয়লাহ্ হলো সিরিয়ার শেষ প্রান্তের একটি শহর যা ইয়ামান সাগরের নিকটে অবস্থিত। আর ‘আদন হলো ভারত মহাসাগরের সন্নিকটে ইয়ামানের প্রান্তসীমা। কোন কোন হাদীসে দূরত্বের সীমা বর্ণনা করতে গিয়ে আরো কয়েকটি স্থানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন ‘আদন থেকে আম্মান, আয়লা থেকে সন্'আ ইত্যাদি। এসবগুলো স্থানের দূরত্ব মোটামুটি একই আর তা হলো প্রায় একমাসের পথ বা তার চেয়ে একটু বেশি।
অতএব বর্ণনার ভিন্নতা দোষণীয় কিছু নয়। শ্রোতা সাধারণের অবস্থার আলোকে তাদের পরিচিত স্থানের ধারণা দিয়ে দূরত্ব বুঝানোই উদ্দেশ্য। কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা তো নিছক দৃষ্টান্ত মাত্র।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ও কতিপয় মানুষকে এখানে অর্থাৎ হাওযের পাড়ে আসতে বাধা দিবেন এবং তাদের তাড়িয়ে দিবেন। এরা হলো মুনাফিক, মুরতাদ। সামনের হাদীস থেকে বুঝা যায়, তারা বিদ'আতী। রাখাল যেমন অন্যের উটকে নিজের ঘাস-পানির হাওয বা বাসনে অংশগ্রহণের ভয়ে তাড়িয়ে দিয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও ঠিক তেমনিভাবে তাদের তাড়িয়ে দিবেন। কতিপয় সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! সেদিন কি আপনি আমাদের চিনতে পারবেন? এর অর্থ হলো সেদিন কি আপনি আমাদেরকে ঐ সকল মুনাফিক, মুরতাদ, বিদ্আতীদের মধ্য থেকে চিনে আলাদা করতে পারবেন এবং আপনার ঐ হাওযে কাওসারের পানি পান করাবেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ। তিনি (সা.) আরো বললেন, সেদিন তোমাদের বিশেষ চিহ্ন বা নিদর্শন থাকবে, যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
(سِیۡمَاهُمۡ فِیۡ وُجُوۡهِهِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ) “চিহ্নসমূহ তাদের মুখমণ্ডলের উপর সিজদার কারণে পরিস্ফুট হয়ে আছে...।” (সূরা আল ফাতহ ৪৮: ২৯)
যে চিহ্ন অন্য কোন উম্মতের মধ্যেই আর নেই। এছাড়াও তোমরা আমার নিকট দিয়ে এমন অবস্থায় অতিক্রম করবে যে, তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত-পা গুলো উযুর কারণে উজ্জ্বল হয়ে চমকাতে থাকবে। যা দেখে আমি তোমাদের অন্যদের থেকে বাছাই করে নিব।
অন্যান্য নবীদের শারী'আতেও উযূর বিধান ছিল এবং তাদের উম্মতগণ হয়তো বা উযূ করেছেন কিন্তু কোন নবীর উম্মতের মধ্যেই ঐ উজ্জ্বলতা প্রকাশ পাবে না, তবে নবীগণের মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে, অতএব তাদের কথা স্বতন্ত্র। (মিরকাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী ৩য় খণ্ড, ১১৭ পৃ., হা, ২৪৭)