হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৪৬৭৯

পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - করমর্দন ও আলিঙ্গন

৪৬৭৯-[৩] বারা’ ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন দু’জন মুসলিম একত্র হয়, অতঃপর পরস্পর করমর্দন করে, তখন তারা পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]

আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন দু’জন মুসলিম মিলিত হয়ে পরস্পর করমর্দন করে, আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন তাদের উভয়কেই ক্ষমা করে দেয়া হয়।

عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلَّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَتَفَرَّقَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ قَالَ: «إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ فَتَصَافَحَا وَحَمِدَا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَاهُ غفر لَهما»

ব্যাখ্যাঃ (قَبْلَ أَنْ يَتَفَرَّقَا) অর্থাৎ মুসাফাহার পর স্বশরীরে পৃথক হওয়ার পূর্বে গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। অপর বর্ণনায় রয়েছে, তাদের গুনাহ গাছের পাতার ন্যায় ঝরে যায়।

উল্লেখ্য এক হাতে মুসাফাহ্ করা সুন্নাত। অর্থাৎ সাক্ষাতের সময় হোক বা কেনা-বেচার সময় হোক দুই জনের দুই হাত দ্বারা মুসাফাহ্ করা সুন্নাত। হানাফী, শাফি‘ঈ ও হাম্বালী ‘আলিমগণ এ ব্যাখ্যা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন। ফকীহ শায়খ মুহাম্মাদ আমীন ওরফে ইবনু আবিদীন স্বীয় رد المختار على الله المختار নামক গ্রন্থে বলেনঃ উত্তম হলো ডান হাতে মুসাফাহ্ করা। কারণ ভালো কাজে ডান পক্ষই অবলম্বন করা শ্রেয়। সে কারণ ‘‘বাহরুল আমীন’’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, হাজরে আসওয়াদ হলো আল্লাহর ডান পক্ষ। এর দ্বারা আল্লাহ তার বান্দার সাথে মুসাফাহ্ করেন। আর মুসাফাহ্ ডানই হয়। শায়খ জিয়াউদ্দীন হানাফী নকশবন্দী তাঁর শারাহ لوامع العقول নামক গ্রন্থে বলেন, শারী‘আতে সুন্নাত পালনের আদাব হলো, উভয় পক্ষের ডান হাতকে নিযুক্ত করা। সুতরাং সেটা বাম হাতের দ্বারা বাম হাতের অথবা ডান হাতে বাম হাতে সমাধা করলে হবে না। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) ডান হাতে মুসাফাহ্ করাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলেছেন।

শায়খুল আলম রববানী সায়্যিদ ‘আবদুল কাদির জিলানী তাঁর ‘‘গুনিয়াতুত্ তালিবীন’’ গ্রন্থে বলেনঃ যে সব কাজ ডান হাত দ্বারা করতে হয় এবং যা বাম হাত দ্বারা সম্পাদিত করতে হয় তা পৃথক। ডান হাত দ্বারা কতক কাজ করা মুস্তাহাব। যেমন- খাওয়া, পান করা, মুসাফাহ্ করা এবং উযূ করা, জুতা ও কাপড় ডান দিক থেকে শুরু করা। সাক্ষাতের সময় বা বায়‘আতের সময় হোক মুসাফাহ্ উভয়ের ডান হাত দ্বারা করা সুন্নাত।

১ম দলীল : ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেন, হাসসান ইবনু নূহ বলেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসরকে বলতে দেখেছি, তিনি বলেন, তোমরা আমার এ হাতকে দেখছ, আর আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আমার হাতের তালুকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতের তালুর উপর রেখেছি- (সানাদ সহীহ)। অন্য বর্ণনায় আছে, তোমরা আমার এ হাতকে দেখছ যে, আমি এর দ্বারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মুসাফাহ্ করেছি- (সানাদ মুত্তাসিল)।

আর উমামাহ্-এর হাদীসে রয়েছে, تَمَامُ التَّحِيَّةِ الْأَخْذُ بِالْيَدِ وَالْمُصَافَحَةُ بِالْيُمْنٰى ডান হাতে মুসাফাহ্ করার মাধ্যমে সালাম পরিপূর্ণতা লাভ করে।

২য় দলীল : ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ মুসলিমে ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললাম, আপনি ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি আপনার নিকটে বায়‘আত করব।

মুসনাদে আহমাদে সহীহ সনদে বর্ণিত। আবূ গাদিয়া বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে বায়‘আত করেছি। আবূ সা‘ঈদ বলেনঃ আমি তাকে বললাম, ডান হাত দ্বারা? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। মুসনাদে আহমাদে আনাস ইবনু মালিক-এর হাদীসে রয়েছে, আনাস বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে সাধ্যমত শুনার ও পালন করার জন্য আমার এ হাত অর্থাৎ ডান হাত দিয়ে বায়‘আত করেছি।

তুহফাতুল আহ্ওয়াযী গ্রন্থকার বলেনঃ যদি তুমি বল ‘আমর ইবনুল ‘আস, আবূ গাদিয়া, আনাস ইবনু মালিক ও জারীর-এর হাদীস থেকে প্রমাণ হলো, বায়‘আতের সময় ডান হাত দ্বারা মুসাফাহ্ করা সুন্নাত, সাক্ষাতের সময় নয়। তবে এর উত্তরে আমি বলব, এসব হাদীস দ্বারা যেমন বায়‘আতের সময় ডান হাত দ্বারা মুসাফাহ্ সুন্নাত প্রমাণ হয় তেমনিভাবে সাক্ষাতের সময় ডান হাতে মুসাফাহ্ সুন্নাতও প্রমাণ হয়। কারণ বায়‘আতের মুসাফাহ্ ও সাক্ষাতের মুসাফাহ্ বাস্তবে এক ও অভিন্ন। এ দুয়ের মাঝে বাস্তবিক পার্থক্যের কোন দলীল নেই।

৩য় দলীল : মুসাফাহ্ হলো, هِيَ إِلْصَاقُ صَفْحِ الْكَفِّ بِصَفْحِ الْكَفِّ অর্থাৎ হাতের তালুর সাথে হাতের তালু মিলানো। অতএব মাসনূন মুসাফাহ্ হয়, উভয় পক্ষের এক হাতের দ্বারা হবে অথবা উভয়ের দুই হাত দ্বারা হবে। উভয় অবস্থা ধরে নেয়া যাক, এবার প্রথম অবস্থা তো হাদীসে স্পষ্ট। আর দ্বিতীয় অবস্থাতে ডান হাতের তালুর সাথে ডান হাতের তালু মিলানো এবং বাম হাতের তালুর সাথে বাম হাতের তালু মিলানো। অথচ আমাদেরকে শারী‘আত একটি মুসাফাহ্ করার নির্দেশ দিয়েছে দুই মুসাফাহ্ করার জন্য নয়। আর যদি উভয়ের ডান হাতের তালুর সাথে ডান হাতের তালু মিলানো এবং বাম হাতের তালুর সাথে ডান হাতের পিঠ মিলানো হয়, তাহলে ডান হাতের তালুর সাথে ডান হাতের তালু মিলানোকে মুসাফাহ্ বলা গেল। কিন্তু বাম হাতের তালুর সাথে ডান হাতের পিঠ মিলানোর কোন অর্থই হয় না। কারণ এ অবস্থাটি মুসাফাহার বাস্তবতার বাহিরে।

এক্ষণে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাদীস, عَلَّمَنِى النَّبِىُّ وَكَفِّىْ بَيْنَ كَفَّيْهِ التَّشَهُّدَ كَمَا يُعَلِّمُنِى السُّورَةَ مِنَ الْقُرْآنِ - (বুখারী ও মুসলিম)। এখানে এটা মুসাফাহার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। বরং এটা শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব ও মনোনিবেশ করার জন্য হাত ধরেছেন। যেমন এ ব্যাপারে ‘আল্লামা ফাযিল লাক্ষনবী তাঁর এক ফাতাওয়ার হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,

لَيْسَ ظَاهِرٌ أَنَّ است كه مُصَافَحَةٌ مُتَوَارَثَةٌ كه بِوَقْتِ تَلَاقِي مَسْنُونٍ است نبوده بدكه طريقه تعليميه بوده كه أكابر بِوَقْتِ اهتمام تعليم جيزي ازهردودست يايكدست دست اصاغر كرفته تعليم ميسازند

যার মর্মার্থ হলো, সহীহুল বুখারীতে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর যে হাদীসটা রয়েছে তা সাক্ষাতের সময়ে মাসনূন মুসাফাহ্ সম্পর্কে নয়। বরং এটা শিক্ষা দানের সময়ে গুরুত্ব দেয়ার জন্য হাত ধরা সম্পর্কে। যেমন বড়রা ছোটদের শিক্ষা দানের সময়ে করে থাকে। তারা ছোটদের এক অথবা দুই হাত ধরেন। আবার হানাফী ফকীহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন যে, আল্লাহর নবীর দুই হাতের মাঝে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর হাত ছিল তাশাহ্হুদ শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব ও মনোযোগ আকর্ষণের জন্য। শিক্ষাদানের সময় হাত ধরা সম্পর্কে অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন মুসনাদে আহমাদে আছে, আবূ কতাদাহ্ ও আবূ দাহ্মাহ্ বলেনঃ আমরা এক বেদুঈন লোকের নিকটে আসলাম। বেদুঈন লোকটি বলল, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে এমন কিছু শিক্ষা দিলেন যা আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন।

তিরমিযীতে রয়েছে, শিকল ইবনু হামীদ (রাঃ) বলেনঃ আমি রসূলের খেদমতে এসে বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে আশ্রয় প্রার্থনার উপায় অর্থাৎ تعوذ শিক্ষা দিন, যাতে আমি আশ্রয় চাইতে পারি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাতের তালু ধরলেন এবং বললেন, তুমি বল اللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي... الْحَدِيثَ ‘‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শুনার অনিষ্ট হতে...’’হাদীস। তিরমিযীর অপর বর্ণনায় রয়েছে, আবূ হুরায়রা  বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কে এমন আছ, যে এ বাক্যগুলো শিখবে এবং ‘আমল করবে? আমি বললাম, আমি, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন। তারপর পাঁচটি গুণে দিলেন এবং বললেন, اتَّقِ الْمَحَارِمَ تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ তুমি হারাম থেকে বেঁচে থাক তাহলে তুমি সর্বোত্তম বান্দায় পরিণত হবে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭২৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ বারা'আ ইবনু আযিব (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ