হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৪২৪৯

পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে

৪২৪৯-[৭] আনাস (রাঃ) অথবা অন্য কেউ বর্ণনা করেন। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ -এর নিকট (গৃহে প্রবেশের) অনুমতি চেয়ে ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’ বললেন। উত্তরে সা’দ (রাঃ) ’’ওয়া ’আলাইকুমুস্ সালা-মু ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’ বললেন। কিন্তু (আস্তে জবাব দিয়ে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শুনালেন না। এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার সালাম করলেন এবং সা’দ (রাঃ)-ও তিনবার জবাব দিলেন। কিন্তু (একবারও) তাঁকে সালামের জবাব শুনালেন না, ফলে (সালামের জবাব না পাওয়ায়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলেন।

তখন সা’দ (রাঃ) তাঁর পশ্চাতে ছুটে এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোক, আপনি যতবারই সালাম করেছেন, আমার উভয় কান তা শুনেছে, আর আমি তার জবাবও সাথে সাথে দিয়েছি; কিন্তু আমি (স্বেচ্ছায়) তা আপনাকে শুনাইনি আমার ইচ্ছা ছিল। আপনার সালাম ও বারাকাত (-এর দু’আ) বেশি বেশি লাভ করার। অতঃপর সকলেই গৃহে প্রবেশ করলেন এবং সা’দ (রাঃ) তাঁর সম্মুখে কিশমিশ পেশ করলেন। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খেলেন। খাওয়া শেষ করে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের খাদ্য হতে নেক্কার লোকেরা আহার করুক, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তোমাদের জন্য ইস্তিগফার করুক এবং সায়িম (রোযাদারগণ) তোমাদের কাছে ইফতার করুক। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ أَوْ غَيْرِهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَأْذَنَ عَلَى سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ فَقَالَ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ» فَقَالَ سَعْدٌ: وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَلَمْ يُسْمِعِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى سَلَّمَ ثَلَاثًا وَرَدَّ عَلَيْهِ سَعْدٌ ثَلَاثًا وَلَمْ يُسْمِعْهُ فَرَجَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاتَّبَعَهُ سَعْدٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي مَا سَلَّمْتَ تَسْلِيمَةً إِلَّا هِيَ بِأُذُنِي: وَلَقَدْ رَدَدْتُ عَلَيْكَ وَلَمْ أُسْمِعْكَ أَحْبَبْتُ أَنْ أَسْتَكْثِرَ مِنْ سَلَامِكَ وَمِنَ الْبَرَكَةِ ثُمَّ دَخَلُوا الْبَيْتَ فَقَرَّبَ لَهُ زَبِيبًا فَأَكَلَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ: «أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ» . رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ»

ব্যাখ্যাঃ (أَنْ أَسْتَكْثِرَ مِنْ سَلَامِكَ وَمِنَ الْبَرَكَةِ) ‘‘আপনার সালাম ও বারাকাত বেশি বেশি লাভ করার ইচ্ছা করেছি’’ অর্থাৎ আপনার সালাম ও আপনার কথা। বলা হয়ে থাকে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দেয়ার পর ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’-ও মিলাতেন। এখান থেকে তাই স্পষ্ট হয়।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)বলেনঃ এখানে শিক্ষণীয় দিক হলো, এ রকম (বারাকাতের) উদ্দেশ্য থাকলে সালামের উত্তর না শুনিয়ে বলাও মুস্তাহাব। তবে এ কথায়ও প্রশ্ন থেকে যায়। তা হলো, সালামের জবাব না শুনিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ওয়াজিব আদায় হয় না। এর জওয়াব এই যে, হয়ত বা সা‘দ (রাঃ) যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছু নিয়েছিলেন তখন তার সালামের জওয়াব দিয়েছিলেন শুনিয়ে।

(أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ) ‘‘তোমাদের খাদ্য হতে নেককার লোকেরা আহার করেছে’’।

মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটি হতে পারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু‘আ। আবার হতে পারে সংবাদ। আর আবরার এই গুণাবলীটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে। কারণ তিনিই তো সর্বোত্তম নেককার।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কেউ এটা বললে সেটি হবে দু‘আ। কারণ, কেউ নিজেকে সৎলোক বলে পরিচয় করালে তা জায়িয হবে না। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখনিঃসৃত বাণী- আবরার (নেকলোকগণ) দ্বারা সম্ভবত সম্মান-মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে নিজের শানে ব্যবহার করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً

‘‘নিশ্চয় ইব্রাহীম একাই এক উম্মাত ছিল’’- (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ১২০)।

এখানে ইব্রাহীম (আ.)-এর শানে যেমন বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে তেমনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের শানে আবরার বহুবচন ব্যবহার করেছেন। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এরূপ সম্ভাবনা আছে।

(وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ) ‘‘সিয়াম পালনকারীগণ তোমাদের নিকট ইফতার করুক’’।

এখান থেকে বুঝা যায়, এটি শুধুই দু‘আ, কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায়ের নিকট ইফতার করতেন তখন তাদের জন্য দু‘আ করতেন। এটাও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো বাড়ীতে ইফতার করে তাদের জন্য এ দু‘আটি করতেন। মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ