হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৪০৯১

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

৪০৯১-[২৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মায়ের যাবাহ পেটের ভিতরের বাচ্চারও যাবাহ। (আবূ দাঊদ, দারিমী)[1]

الْفَصْلُ الثَّانِي

وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «ذَكَاةُ الْجَنِينِ ذَكَاةُ أُمِّهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والدارمي

ব্যাখ্যাঃ উক্ত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, (ذَكَاةُ الْجَنِينِ ذَكَاةُ أُمِّه) অর্থাৎ ভ্রূণকে যাবাহ করা হলে, তার মাকে যাবাহ করা। তালখিস গ্রন্থে বলা হয়েছে, যে যাবাহ দ্বারা মা হালাল হয়ে যাবে সেই যাবাহ দ্বারাই তার ভ্রূণও হালাল হয়ে যাবে ভ্রূণ তার মায়ের অনুসারী হওয়ার কারণে। কেননা ভ্রূণ তার মায়ের একটি অংশ। সুতরাং তার মাকে যাবাহ করার দ্বারা তার পুরা অঙ্কন যাবাহ হয়ে যাবে।

ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কোন সাহাবী অথবা কোন ‘আলিম এটা বলেননি যে, যাবাহ করা ছাড়া ভ্রূণ খাওয়া যাবে। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আলাদাভাবে যাবাহ করার ছাড়া ভ্রূণ খাওয়া যাবে না।

মুনযিরী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, কিছু আহনাফের মতে, মাকে যাবাহ করাটা তার ভ্রুণের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং ভ্রূণ বের হওয়ার পর তাকে নতুন করে আলাদাভাবে যাবাহ করতে হবে। তবে এ হাদীসের তাফসীরে ইমামদের থেকে যে উক্তিটি সংরক্ষিত তা হলো ভ্রূণ যাবাহ হয়ে যাবে তার মাকে যাবাহ করা দ্বারাই। অর্থাৎ আলাদাভাবে ভ্রূণকে আবার যাবাহ করার প্রয়োজন নেই।

ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কোন সাহাবী, কোন তাবি‘ঈ অথবা কোন ‘আলিম থেকে এ মত বর্ণিত হয়নি যে, ভ্রূণ নতুন করে আলাদাভাবে যাবাহ করা ছাড়া খাওয়া যাবে না। তবে শুধুমাত্র ইমাম আবূ হানীফাহ্ বলেন, ভ্রূণকে আলাদাভাবে যাবাহ করতে হবে। ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেনঃ ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-এর অনুসারীগণ তার এ কথার উপর একমত হয়েছেন বলে আমি মনে করি না।

এ বিষয়ে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে একটি হাদীস বর্ণিত আছে, আর তা হলো (ذَكَاة الْجَنِين ذَكَاة أُمّه أَشْعَرَ أَوْ لَمْ يُشْعِر) অর্থাৎ ভ্রুণের মাকে যাবাহ করার দ্বারাই ভ্রুণের যাবাহ করা হয়ে যাবে। ইমাম দারাকুত্বনী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসের দু’টি ত্রুটি রয়েছে।

১. হাদীসটি মাওকূফ।

২. এ হাদীসটি ইসাম ইবনু ইউসুফ মুবারক ইবনু মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেছেন।

আর ইমাম বুখারী, মুবারক ইবনু মুজাহিদকে দুর্বল বলেছেন। কিন্তু ইমাম আবূ হাতিম আর্ রাজী বলেনঃ আমি তার এ হাদীসের ব্যাপারে কোন সমস্যা দেখছি না। অর্থাৎ সে দুর্বল হলেও তার এ হাদীস ঠিক আছে। আর তার হাদীসের কিছু শব্দ এই আছে যে, (فَإِنَّ ذَكَاته ذَكَاة أُمّه)। সুতরাং এ অংশটুকুই এ সকল লোকেদের এ ব্যাখ্যাকে বাতিল করে যারা বলে ভ্রূণকেও তার মায়ের মতো যাবাহ করতে হবে, এছাড়া খাওয়া যাবে না।

শায়খ শামসুদ্দীন ইবনুল কইয়্যূম (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তাদের এ ব্যাখ্যা (ভ্রূণকে তার মায়ের মতো যাবাহ করা ছাড়া খাওয়া যাবে না) বাতিল কয়েকটি কারণে,

১. হাদীসের পূর্বাপরের আলোচনা সেই ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করে। কেননা সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিল সেই ধরনের ভ্রূণ সম্পর্কে যা ছাগল বা এ জাতীয় প্রাণীর পেটে পাওয়া যায়। যদি পাওয়া যায় তাহলে তারা সেটা খাবে নাকি ফেলে দিবে? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খাওয়ার ব্যাপারে ফায়সালা দিলেন। ভ্রূণ মৃত হওয়ার কারণে তা খেতে তাদের যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল তা তিনি দূর করে দিলেন। কেননা তার মাকে যাবাহ করার দ্বারাই তার যাবাহ হয়ে গেছে। তা ছাড়াও ভ্রূণ তার মায়েরই একটি অংশ হাত, কলিজা ও মাথার ন্যায়। আর যাবাহকৃত প্রাণীর প্রতিটি অঙ্গ আলাদা আলাদাভাবে যাবাহ করার প্রয়োজন হয় না। সুতরাং ভ্রূণ যতক্ষণ তার মায়ের গর্ভে থাকবে ততক্ষণ সেটি তার অংশ হিসেবেই গণ্য হবে। যাবাহের ক্ষেত্রে ভ্রুণের জন্য আলাদা কোন হুকুম হবে না। অতএব, যখন মাকে যাবাহ করা হবে তখন সেই যাবাহ তার প্রতিটি অংশের জন্য যথেষ্ট হবে। আর তার অংশের মধ্যে ভ্রূণও রয়েছে।

তাই এটাই হলো স্পষ্ট ক্বিয়াস বা নীতিমালা যেহেতু এ মাসআলাহ্ সম্পর্কে স্পষ্ট কোন দলীল নেই।

২. উত্তর অবশ্যই প্রশ্ন অনুপাতে হতে হবে। সাহাবীগণ এক্ষেত্রে যাবাহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেননি যে, তার উত্তরে বলা হবে ভ্রূণকে যাবাহ করতে হবে যেমনিভাবে মাকে যাবাহ করা হয়। বরং তারা জিজ্ঞেস করেছিলেন ভ্রূণ খাওয়া সম্পর্কে যা তারা যাবাহ করার পর কখনো কখনো পেটে পায়। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হালাল হিসেবে খাওয়ার অনুমতি দিলেন এবং তার মায়ের যাবাহকেই তার ভ্রুণের যাবাহ হিসেবে গণ্য করলেন। তাই ভ্রূণকে আলাদা হিসেবে যাবাহ করার প্রয়োজন নেই।

৩. সকল মানুষদের মাঝে সাহাবীগণই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশ্য সবচেয়ে ভালো বুঝতেন। তারা এ হাদীস থেকে বুঝেছেন যে, মাকে যাবাহ করার দ্বারাই ভ্রুণের যাবাহ হয়ে যাবে। আলাদাভাবে তাকে যাবাহ করতে হবে না। বরং তা যাবাহ করা ছাড়াই খাওয়া যাবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক বলেনঃ সাহাবীগণ বলতেন, যদি গর্ভে থাকা ভ্রূণ সম্পর্কে জানা যায় তাহলে তার মাকে যাবাহ করার দ্বারাই তার ভ্রুণের যাবাহ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সকলের মত এটাই ছিল।

ইবনুল মুনযির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ভ্রূণ যাবাহ করা ছাড়া খাওয়াই লোকেরা বৈধ হিসেবে দেখত। আর এ ব্যাপারে কেউ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন বলে আমরা জানি না। কিন্তু যখন নু‘মান ইবনু সাবিত (ইমাম আবূ হানীফাহ্) আসলেন তখন তিনি বললেনঃ ভ্রূণ আলাদাভাবে যাবাহ করা ছাড়া খাওয়া যাবে না। কারণ একটি প্রাণী যাবাহ করাটা দু’টি প্রাণী যাবাহ করার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না।

৪. শারী‘আতে এটা স্বীকৃত যে, বিভিন্ন পশুকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে যাবাহ করা হয়ে থাকে। যেমন শিকারী পশুকে যে কোন স্থানে আঘাত করে রক্ত বের করার মাধ্যমেও যাবাহ করা হয়ে যায়। আর এটা জানা কথা যে, মাকে যাবাহ করা ছাড়া তার ভ্রূণকে যাবাহ করা অসম্ভব। তাই এ ক্ষেত্রে মাকে যাবাহ করার দ্বারাই তার ভ্রূণও যাবাহ হয়ে যাবে। তার জন্য আলাদাভাবে যাবাহের প্রয়োজন নেই।

৫. হাদীসের বাক্য (ذَكَاة الْجَنِين ذَكَاة أُمّه) অর্থাৎ মাকে যাবাহ করার অর্থ তার ভ্রুনকে যাবাহ করা। এ বাক্যটি ঠিক এই বাক্যের মতো যেটা বলা হয় (غِذَاء الْجَنِين غِذَاء أُمّه) অর্থাৎ ভ্রুণের খাবার হলো তার মায়ের খাবার। সুতরাং এ বাক্য থেকে যেটা বুঝা যায় তা হলো, ভ্রুণের জন্য আলাদা খাবারের প্রয়োজন নেই। ঠিক (ذَكَاة الْجَنِين ذَكَاة أُمّه) বাক্য দ্বারা বুঝা যায় যে, ভ্রুণের জন্য আলাদাভাবে যাবাহের প্রয়োজন নেই।

৬. ভ্রূণকে তার মায়ের মতো যাবাহ করা হবে যদি তা জীবিত অবস্থায় বের হয়। আর তখন তাকে আলাদাভাবে যাবাহ করা ছাড়া খাওয়া যাবে না।

কিন্তু কথা হলো সাহাবীগণ তো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ জীবিত ভ্রূণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেননি এবং তাদেরকে সেই উত্তরও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেননি। আর তাদের প্রশ্ন থেকেও এটা বুঝা যায় না এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উত্তরটা সেই ধরনের জীবিত ভ্রূণ সম্পর্কেও না।

সাহাবীগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছিলেন আমরা গরু, ছাগল যাবাহ করি। আর কখনো তাতে আমরা ভ্রূণ পাই। আমরা তা খাব নাকি ফেলে দিব? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উত্তরে বললেন, যদি তোমাদের ইচ্ছা হয় তাহলে খেতে পার। কেননা তার যাবাহ করাটা হলো তার মাকে যাবাহ করাই। তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন তা খাওয়া সম্পর্কে যে, সেটা তাদের জন্য খাওয়া হালাল হবে কিনা?

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য তা খাওয়ার ফায়সালা দিলেন এবং ভ্রূণ মৃত হওয়ার কারণে তাদের মাঝে যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল তা তিনি দূর করে দিলেন। এ কথা বলার মাধ্যমে যে, ভ্রুণের যাবাহ হয়ে যাবে তার মাকে যাবাহ করার দ্বারাই।

আর এটা স্পষ্ট যে, যদি (ذَكَاة الْجَنِين ذَكَاة أُمّه) এর অর্থ করা হয় ‘‘তোমরা ভ্রূণকে যাবাহ কর যেভাবে তার মাকে যাবাহ করতে হয়।’’ তাহলে প্রশ্ন আর উত্তরের সাথে মিল থাকে না। সুতরাং যদি ভ্রূণকে আলাদাভাবে যাবাহ করার প্রয়োজন হত, তাহলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, যদি ভ্রূণ জীবিত বের হয় তাহলে তোমরা তা যাবাহ করে খেতে পার। আর তাকে যাবাহ করার পদ্ধতি হলো তার মাকে যাবাহ করার মতোই।

কিন্তু বর্ণিত হাদীস ভ্রূণকে আলাদাভাবে যাবাহ করার কথা প্রমাণ করে না। والله أعلم (আল্লাহ এ ব্যপারে অধিক অবগত) (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৮৬৫)

মিরকাতের লেখক বলেনঃ শারহুস্ সুন্নাহ গ্রন্থে রয়েছে, এ হাদীসেই প্রমাণ রয়েছে যে, যদি কেউ কোন প্রাণী যাবাহ করে আর তাতে কোন মৃত ভ্রূণ পাওয়া যায় তাহলে তা খাওয়া হালাল। আর এটা হলো অধিকাংশ বিদ্বান সাহাবীগণের মত এবং তাদের পরবর্তী ‘আলিমদের মতও।

ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ)-ও এ মত পোষণ করেছেন। তবে তাদের কেউ কেউ ভ্রুণের মাঝে জীবন পাওয়াকে শর্ত করেছেন। যদি ভ্রূণ জীবিত অবস্থায় বের হয় তাহলে তাকে যাবাহ করতে হবে।

যায়নুল ‘আরব বলেনঃ যদি মাকে যাবাহ করার পরেই ভ্রূণ নাড়াচাড়া না করে তাহলে তা খাওয়া যাবে। কিন্তু যদি দীর্ঘ সময় নড়াচাড়া করার পর বন্ধ করে দেয় তাহলে তা খাওয়া হারাম। যদি ভ্রুণের কিছু অংশ বের হয়ে যায় আর সেই সময় তার মাকে যাবাহ করা হয় পরিপূর্ণভাবে ভ্রূণ বের হওয়ার আগেই তবুও তা খাওয়া বৈধ হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)